চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে অসহায় ও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এদিকে তাদের দাপটে মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সকলকে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঠিক নজরদারির অভাবে এই কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দু’গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় (১০ জুলাই) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আরামবাগ এলাকায় নয়ন আলী নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত নয়ন আলীর পিতা বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে মামলার মূল আসামিসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতারের আওতায় আনার দাবিতে কয়েক দফা মানববন্ধন ও সমাবেশ করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে এলাকার মানুষ।
অন্যদিকে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল শুক্রবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের টিকরামপুর এলাকায় মোটরসাইকেল ওভারটেক করাকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাব্বিরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে শহরের এক নম্বর কলোনী মহল্লার কিশোর গ্যাংয়ের হোতা সুরাত আলীসহ তার দলবল। এসময় নিহত সাব্বিরের বন্ধু রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিকাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিককে আহত করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫ জন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে সদর মডেল থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূলহোতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১নং কলোনী পাড়ার মো. জিয়ার ছেলে সুরাত আলী (২০) ও কারিমের ছেলে সুরাজকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের, নিমতলা, এক নম্বর কলোনী, আরামবাগ, মাঝপাড়া, পিটিআই বস্তি, ভেলুর মোড় ও মসজিদপাড়া মহল্লায় ১৪ থেকে ২০ বঝর বয়সী একাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে এবং তারা মেয়েদের উত্যক্ত করাসহ মোবাইল ছিনতাই এমনকি ইয়াবা সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। সূত্রমতে, সম্প্রতি তারা জেলার এক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের মোবাইল ফোন ছিনতাই করতেও পিছপা হয়নি। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা একটি মোটরসাইকেলে দু’তিনজন উঠে বেপড়োয়া গতিতে চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের এমন কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই নাজেহালের শিকার হয়েছেন।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রায় সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ, তারা অবিলম্বে কিশোর গ্যাংয়ের মূলোৎপাটন করার জন্য আইন শৃংখলাবাহিনীর জোড়ালো হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রভাবশালীদের প্রতি কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, শহরে সন্ত্রাস ও মাদক নিমূর্লে কাজ করছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, পুলিশ তৎপর আছে বলেই সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটার সাথে সাথে মূল হোতাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে এবং অন্যদেরও গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন