ঘড়ির কাঁটা যে কারণে ডানে ঘোরে

ঘড়ি হচ্ছে সময় মাপার যত্ন। কথায় আছে, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সেই সময়ের পরিমাপক হিসেবে ঘড়ির কাঁটারও দম ফেলার সময় নেই। সে বয়েই চলে। তবে অনেকের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে, ঘড়ির কাঁটা কেন ডান দিকে ঘোরে? ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল ইংল্যান্ড বা ইউরোপের কোনো দেশে। 

 

প্রাচীনকালে সময় দেখার উপায় ছিল সূর্যঘড়ি। সবচেয়ে প্রাচীন যে ঘড়িগুলো, সেগুলোতে কিন্তু কাঁটার ঘোরাঘুরির কোনো বিষয় ছিল না। হ্যাঁ, সূর্যঘড়িই হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম ঘড়ি। এই সূর্যঘড়িও কিন্তু বিভিন্ন রকমের ছিল। সবচেয়ে প্রাচীন সূর্যঘড়ি বলা হয় মিসরীয়দের ওবেলিস্ককে। ধারণা করা হয়, মিসরীয়রা এই ঘড়ি বানানো শিখেছিল খ্রিস্টের জন্মেরও সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। এ রকম আরেকটা ঘড়িকে বলা হয় ‘শ্যাডো ক্লক’। ওটা বানিয়েছিল ব্যাবিলনীয়রা, খ্রিস্টের জন্মের হাজার দেড়েক বছর আগে।

 

ইংল্যান্ড পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে হওয়ায় সূর্য দক্ষিণ আকাশে হেলে থাকে। এ কারণে সূর্যঘড়ির যে দণ্ডের ছায়া দেখে সময় পরিমাপ করা হয়, সেই ছায়াটি বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘোরে। এর ফলে সেখানে স্থানটি উত্তর গোলার্ধে। ওখানে সূর্য যখন পূব থেকে পশ্চিমে যায়, তখন সূর্যঘড়ির দণ্ডের ছায়াটি বাম থেকে ডান দিকে ঘোরে। তাই ঘড়ি আবিষ্কারের সময় স্বাভাবিক ও অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তা অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে ঘোরানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

 

পশ্চিম-পূর্বের সঙ্গে বাম ও ডানের কী সম্পর্ক? এবার তাহলে একটা মানচিত্র নিয়ে বসা যাক। মানচিত্রের ওপরের দিকে একটা দিকনির্দেশক চিহ্ন আছে। এর পাশে লেখা থাকে এন বা নর্থ। মানে, মানচিত্রের ওপরের দিকটা হলো নর্থ, বাংলায় যাকে বলা হয় উত্তর। আর নিচের দিকটা হচ্ছে দক্ষিণ। তাহলে হিসাবে বাম দিকে পড়ে পশ্চিম আর ডান দিকে পূর্ব দিক। এই কারণেই ঘড়ির কাঁটা বাম দিক থেকে ডান দিকে যায়। মানে, আসলে এটা বাম থেকে ডানে না, বলা উচিত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়।

 

এখন, এই সূর্যঘড়িগুলোতে সময় দেখা হতো সূর্যের ছায়া দেখে। অর্থাৎ সময়-নির্দেশক যে কাঁটা বা দণ্ড, সেটা স্থির থাকত। সূর্যের আলোয় সে কাঁটার ছায়ার পরিবর্তন দেখেই সময় হিসাব করা হতো। আর এখনকার ঘড়িতে আবার উল্টো, এই কাঁটাগুলোই ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়। ছায়া দেখার কোনো বালাই নেই। এই রকম ঘড়ি, মানে যেই ঘড়িতে কাঁটা ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়, তেমন ঘড়ি প্রথম বানানো হয় ১৩ শতকে। তবে তখনই এই ঘড়িগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। হবে কী করে, তখনো যে মানুষের সময় দেখার তেমন দরকারই পড়েনি। সূর্য দেখেই মানুষ দিব্যি বুঝে নিত যে এখন সকাল না দুপুর, বিকেল না সন্ধ্যা। সময় নিয়ে এরচেয়ে বেশি মাথা ঘামানোর তেমন দরকারই ছিল না।

 

জানা যায়,৪০০ বছর পরে, ১৮ শতকে যখন কলকারখানায় মানুষের কাজ করার প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। তখন মানুষের নির্দিষ্ট করে সময় দেখার দরকার হতে শুরু করল। নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় যেতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাজে লাগতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি হবে, কারখানার নিয়মটাই যে তেমন! তখন সবার ওই কাঁটাওয়ালা ঘড়ির দরকার পড়ল, যাতে সবাই সময়মতো সব কাজ করতে পারে। ফলে ঘড়িও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠল।

 

তবে একটা বিষয় বলা যায়, ঘড়ি যদি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে আবিষ্কার হতো, তাহলে হয়তো ঘড়ির কাঁটা বাম দিকে ঘুরত। কারণ, দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যঘড়ির ছায়া উত্তর গোলার্ধের বিপরীত দিকে, অর্থাৎ ডান দিক থেকে বামের দিকে ঘুরতে থাকে। দেশে দেশে-যুগে যুগে যেখানে যে আবিষ্কার হয়, সেই আবিষ্কারের সঙ্গে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের যোগসূত্র অনেক সময়ই পাওয়া যায়। ঘড়ির কাঁটা ঘোরার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন বাকরখানির দোকান

» বিশ্বকে চমকে দিতে প্রস্তুত ইরানের এআই অস্ত্রভাণ্ডার

» দেশে ‘কেমন একটা অস্থিরতা চলছে’ : ফখরুল

» এবার পালাবেন কোথায় কাদের? থাকতে পারবেন না ১৯৫ দেশে!

» একেকটা ঝটিকা মিছিলে ৫/৬ জন ৩ মিনিট মিছিল করে চলে যায়, এতে চিন্তার কি আছে ?: প্রেস সচিব

» কৃষ্ণচূড়া ছুঁয়ে বৈশাাখী মেঘ

» রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

» কুরবানির ঈদে কমবে লোডশেডিং থাকবে না যানজট: ফাওজুল কবির

» দাবি পূরণ করেই ছাত্ররা ক্লাসরুমে ফিরবে নওগাঁর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

» সুন্দরবনের উপকূলে খাদ্যের সন্ধানে জনপদে লোকালয়ে কালোমুখো হনুমান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঘড়ির কাঁটা যে কারণে ডানে ঘোরে

ঘড়ি হচ্ছে সময় মাপার যত্ন। কথায় আছে, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সেই সময়ের পরিমাপক হিসেবে ঘড়ির কাঁটারও দম ফেলার সময় নেই। সে বয়েই চলে। তবে অনেকের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে, ঘড়ির কাঁটা কেন ডান দিকে ঘোরে? ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল ইংল্যান্ড বা ইউরোপের কোনো দেশে। 

 

প্রাচীনকালে সময় দেখার উপায় ছিল সূর্যঘড়ি। সবচেয়ে প্রাচীন যে ঘড়িগুলো, সেগুলোতে কিন্তু কাঁটার ঘোরাঘুরির কোনো বিষয় ছিল না। হ্যাঁ, সূর্যঘড়িই হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম ঘড়ি। এই সূর্যঘড়িও কিন্তু বিভিন্ন রকমের ছিল। সবচেয়ে প্রাচীন সূর্যঘড়ি বলা হয় মিসরীয়দের ওবেলিস্ককে। ধারণা করা হয়, মিসরীয়রা এই ঘড়ি বানানো শিখেছিল খ্রিস্টের জন্মেরও সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। এ রকম আরেকটা ঘড়িকে বলা হয় ‘শ্যাডো ক্লক’। ওটা বানিয়েছিল ব্যাবিলনীয়রা, খ্রিস্টের জন্মের হাজার দেড়েক বছর আগে।

 

ইংল্যান্ড পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে হওয়ায় সূর্য দক্ষিণ আকাশে হেলে থাকে। এ কারণে সূর্যঘড়ির যে দণ্ডের ছায়া দেখে সময় পরিমাপ করা হয়, সেই ছায়াটি বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘোরে। এর ফলে সেখানে স্থানটি উত্তর গোলার্ধে। ওখানে সূর্য যখন পূব থেকে পশ্চিমে যায়, তখন সূর্যঘড়ির দণ্ডের ছায়াটি বাম থেকে ডান দিকে ঘোরে। তাই ঘড়ি আবিষ্কারের সময় স্বাভাবিক ও অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তা অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে ঘোরানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

 

পশ্চিম-পূর্বের সঙ্গে বাম ও ডানের কী সম্পর্ক? এবার তাহলে একটা মানচিত্র নিয়ে বসা যাক। মানচিত্রের ওপরের দিকে একটা দিকনির্দেশক চিহ্ন আছে। এর পাশে লেখা থাকে এন বা নর্থ। মানে, মানচিত্রের ওপরের দিকটা হলো নর্থ, বাংলায় যাকে বলা হয় উত্তর। আর নিচের দিকটা হচ্ছে দক্ষিণ। তাহলে হিসাবে বাম দিকে পড়ে পশ্চিম আর ডান দিকে পূর্ব দিক। এই কারণেই ঘড়ির কাঁটা বাম দিক থেকে ডান দিকে যায়। মানে, আসলে এটা বাম থেকে ডানে না, বলা উচিত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়।

 

এখন, এই সূর্যঘড়িগুলোতে সময় দেখা হতো সূর্যের ছায়া দেখে। অর্থাৎ সময়-নির্দেশক যে কাঁটা বা দণ্ড, সেটা স্থির থাকত। সূর্যের আলোয় সে কাঁটার ছায়ার পরিবর্তন দেখেই সময় হিসাব করা হতো। আর এখনকার ঘড়িতে আবার উল্টো, এই কাঁটাগুলোই ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়। ছায়া দেখার কোনো বালাই নেই। এই রকম ঘড়ি, মানে যেই ঘড়িতে কাঁটা ঘুরে ঘুরে সময় জানান দেয়, তেমন ঘড়ি প্রথম বানানো হয় ১৩ শতকে। তবে তখনই এই ঘড়িগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। হবে কী করে, তখনো যে মানুষের সময় দেখার তেমন দরকারই পড়েনি। সূর্য দেখেই মানুষ দিব্যি বুঝে নিত যে এখন সকাল না দুপুর, বিকেল না সন্ধ্যা। সময় নিয়ে এরচেয়ে বেশি মাথা ঘামানোর তেমন দরকারই ছিল না।

 

জানা যায়,৪০০ বছর পরে, ১৮ শতকে যখন কলকারখানায় মানুষের কাজ করার প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। তখন মানুষের নির্দিষ্ট করে সময় দেখার দরকার হতে শুরু করল। নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় যেতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাজে লাগতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি হবে, কারখানার নিয়মটাই যে তেমন! তখন সবার ওই কাঁটাওয়ালা ঘড়ির দরকার পড়ল, যাতে সবাই সময়মতো সব কাজ করতে পারে। ফলে ঘড়িও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠল।

 

তবে একটা বিষয় বলা যায়, ঘড়ি যদি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে আবিষ্কার হতো, তাহলে হয়তো ঘড়ির কাঁটা বাম দিকে ঘুরত। কারণ, দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যঘড়ির ছায়া উত্তর গোলার্ধের বিপরীত দিকে, অর্থাৎ ডান দিক থেকে বামের দিকে ঘুরতে থাকে। দেশে দেশে-যুগে যুগে যেখানে যে আবিষ্কার হয়, সেই আবিষ্কারের সঙ্গে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের যোগসূত্র অনেক সময়ই পাওয়া যায়। ঘড়ির কাঁটা ঘোরার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com