কী দোষ ছিল প্রীতির?

ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান:   এ যেন সিনেমার দৃশ্য! রাস্তায় যানজটে বসে থাকা অবস্থায় হুট করে শুরু গোলাগুলি। রিকশায় বসে থাকা রাজধানীর বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের নিরীহ শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি লক্ষ্যবস্তু না হলেও বুলেট তাকেই ভেদ করে দিয়ে নিভিয়ে দিল একটি পরিবারের স্বপ্ন, আগামী সবই। আদরের সন্তানকে হারিয়ে বিলাপই এখন সম্বল তার বাবা-মায়ের। এমনকি চান না মেয়ে হত্যার বিচারও।

 

কিন্তু কেন? কেউ কি জানার চেষ্টা করেছি? নাকি ফেসবুকে স্ক্রল করার মতো এ ঘটনাকেও সবাই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি? একবার ভাবুন তো, পরবর্তী গুলি যে আমার-আপনার বুক ভেদ করবে না, তার কি গ্যারান্টি?

 

শুধু রাজনৈতিক দ্বন্দের বলি কেন কোনো মৃত্যুই সুখকর নয়, পরম বেদনার। হৃদয় ছিঁড়ে যাওয়ার। যা কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। এরপরও আমরা শান্ত হচ্ছি না। বরং নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছি। মানছি, প্রীতিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়নি, এরপরও তো লাগলো। এখন কেউ পারবে তাকে বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিতে? বলুন…

 

কী দোষ ছিল সবে জীবন শুরু করা প্রীতির? সে তো কোনো সাতপ্যাঁচে ছিল না। তাহলে কেন প্রভাবশালী মহলের আধিপত্য বিস্তারের বলি হলো সে? আছে উত্তর?

 

কেউ কেউ হয়তো বলবেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাই হয়ে আসছে। প্রীতির ঘটনাও তেমন। প্রীতি যদি আপনার মেয়ে-বোন কিংবা পরিবারের কেউ হতো, তখন কি আপনি নিশ্চুপ হয়ে থাকতেন? কখনই না। আসলে কি জানেন তো, দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে আমরা কেউই কিছু করতে নারাজ, এটাই হলো বাস্তবতা। এটাই হলো মূল কথা। এভাবেই চলছে, চলে আসছে। রীতিমত সবাই আমরা এটাকে একটা ঐতিহ্যে পরিণত করে ফেলেছি। কিছু হলেই চুপ থাকছি। নীরবে চোখের জল ফেলছি। ভাবছি, কি হবে প্রতিবাদ করে?

 

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার একটি কথা বলেন- অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় পাবে না। ছাড় পায়ওনি কিন্তু। নজিরও আছে একাধিক। তাই মনে হয়, আর হাত-পা গুঁটিয়ে বসে না থেকে, নীরবে-নিভৃতে না কেঁদে সরব হওয়া উচিত এবং সেটি অবশ্যই আইন মোতাবেক। নাহলে এভাবেই প্রীতিরা হারিয়ে যেতে থাকবে। একের পর এক, হাজারের পর হাজার। আর সেই কাতারের পরবর্তী শিকার হয়তো আমার-আপনার পরিবারই হতে যাচ্ছে। তাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবেন নাকি আইনের দ্বারস্থ হতে প্রীতির কারখানার শ্রমিক বাবার পাশে দাঁড়াবেন, সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেখানে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা, কারো নেই। কারো।

 

প্রীতির আত্মা শান্তি পাক। তার হত্যার ন্যায্য বিচার হোক, এটাই কামনা। সঙ্গে এটাও চাওয়া, তার পরিবারের দেখভালটা যদি রাষ্ট্র করে, যেটা প্রীতি তাদের টানাটানির সংসারের পালে একটুখানি স্বচ্ছলতার বাতাস বইয়ে দিতে চেয়েছিল এপ্রিলের এক তারিখে চাকরিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে, তাহলে খুবই ভালো হতো।

 

সবশেষে ভূপেন হাজারিকার ‘শরৎ বাবুর খোলা চিঠি’র গানের মতো করে বলি, আমার এ আর্তি সংশ্লিষ্টদের কানে পৌঁছবে কিনা জানি না। তবু আশা বেঁধে রাখি। আশা বাঁধতে দোষ কোথায়?

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও গীতিকার   সূএ:ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ধমক দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করতে চাইলে বিএনপি সহ্য করবে না : ফারুক

» পিআর ইস্যুতে যা বললেন মঈন খান

» ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» আসিফের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দেশের স্বার্থে বন্দর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

» বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৩৫৩ জন গ্রেফতার

» হজ শেষে ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫১৩ হাজি

» জামালপুরে নারী এগিয়ে চলা প্রকল্পের সভা অনুষ্ঠিত

» জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে  মোরেলগঞ্জে বিএনপির বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি

» ইসলামপুরে রহিম মেম্বার হত্যা সন্দেহে দুইজন আটক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কী দোষ ছিল প্রীতির?

ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান:   এ যেন সিনেমার দৃশ্য! রাস্তায় যানজটে বসে থাকা অবস্থায় হুট করে শুরু গোলাগুলি। রিকশায় বসে থাকা রাজধানীর বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের নিরীহ শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি লক্ষ্যবস্তু না হলেও বুলেট তাকেই ভেদ করে দিয়ে নিভিয়ে দিল একটি পরিবারের স্বপ্ন, আগামী সবই। আদরের সন্তানকে হারিয়ে বিলাপই এখন সম্বল তার বাবা-মায়ের। এমনকি চান না মেয়ে হত্যার বিচারও।

 

কিন্তু কেন? কেউ কি জানার চেষ্টা করেছি? নাকি ফেসবুকে স্ক্রল করার মতো এ ঘটনাকেও সবাই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি? একবার ভাবুন তো, পরবর্তী গুলি যে আমার-আপনার বুক ভেদ করবে না, তার কি গ্যারান্টি?

 

শুধু রাজনৈতিক দ্বন্দের বলি কেন কোনো মৃত্যুই সুখকর নয়, পরম বেদনার। হৃদয় ছিঁড়ে যাওয়ার। যা কম-বেশি আমাদের সবারই জানা। এরপরও আমরা শান্ত হচ্ছি না। বরং নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছি। মানছি, প্রীতিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়নি, এরপরও তো লাগলো। এখন কেউ পারবে তাকে বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিতে? বলুন…

 

কী দোষ ছিল সবে জীবন শুরু করা প্রীতির? সে তো কোনো সাতপ্যাঁচে ছিল না। তাহলে কেন প্রভাবশালী মহলের আধিপত্য বিস্তারের বলি হলো সে? আছে উত্তর?

 

কেউ কেউ হয়তো বলবেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাই হয়ে আসছে। প্রীতির ঘটনাও তেমন। প্রীতি যদি আপনার মেয়ে-বোন কিংবা পরিবারের কেউ হতো, তখন কি আপনি নিশ্চুপ হয়ে থাকতেন? কখনই না। আসলে কি জানেন তো, দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে আমরা কেউই কিছু করতে নারাজ, এটাই হলো বাস্তবতা। এটাই হলো মূল কথা। এভাবেই চলছে, চলে আসছে। রীতিমত সবাই আমরা এটাকে একটা ঐতিহ্যে পরিণত করে ফেলেছি। কিছু হলেই চুপ থাকছি। নীরবে চোখের জল ফেলছি। ভাবছি, কি হবে প্রতিবাদ করে?

 

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার একটি কথা বলেন- অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় পাবে না। ছাড় পায়ওনি কিন্তু। নজিরও আছে একাধিক। তাই মনে হয়, আর হাত-পা গুঁটিয়ে বসে না থেকে, নীরবে-নিভৃতে না কেঁদে সরব হওয়া উচিত এবং সেটি অবশ্যই আইন মোতাবেক। নাহলে এভাবেই প্রীতিরা হারিয়ে যেতে থাকবে। একের পর এক, হাজারের পর হাজার। আর সেই কাতারের পরবর্তী শিকার হয়তো আমার-আপনার পরিবারই হতে যাচ্ছে। তাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবেন নাকি আইনের দ্বারস্থ হতে প্রীতির কারখানার শ্রমিক বাবার পাশে দাঁড়াবেন, সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেখানে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা, কারো নেই। কারো।

 

প্রীতির আত্মা শান্তি পাক। তার হত্যার ন্যায্য বিচার হোক, এটাই কামনা। সঙ্গে এটাও চাওয়া, তার পরিবারের দেখভালটা যদি রাষ্ট্র করে, যেটা প্রীতি তাদের টানাটানির সংসারের পালে একটুখানি স্বচ্ছলতার বাতাস বইয়ে দিতে চেয়েছিল এপ্রিলের এক তারিখে চাকরিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে, তাহলে খুবই ভালো হতো।

 

সবশেষে ভূপেন হাজারিকার ‘শরৎ বাবুর খোলা চিঠি’র গানের মতো করে বলি, আমার এ আর্তি সংশ্লিষ্টদের কানে পৌঁছবে কিনা জানি না। তবু আশা বেঁধে রাখি। আশা বাঁধতে দোষ কোথায়?

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও গীতিকার   সূএ:ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com