ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ও সাম্প্রদায়িকতার ছোবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া’র উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে রাবিশ বিন স্থাপন করা হয়েছে। দুইটি ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এক: যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে পরিবেশ রক্ষার্থে নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনাসমূহ ফেলতে ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভুদ্ধ করা।
দুই: মনের সাম্প্রদায়িক আবর্জনাকেও কাল্পনিক রাবিশ বিনে বিসর্জন দেওয়া।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম যৌথভাবে রাবিশ বিন প্রোজেক্টের উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক প্রমুখ।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক তারিক জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশ অনেক দিয়েছে, এখন আমাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের ঋণ কিছুটা হলেও ফেরত দেওয়া। আমরা যারা অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকি, তারা জানি কীভাবে এখানকার সাধারণ মানুষ পরিবেশ রক্ষায় সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে চলেছে।
এখানকার প্রত্যেকটা বাড়িতে বা অফিসে নিজস্ব অর্থে কেনা মুখবন্ধ রাবিশ বিন থাকে। এটা পূর্ণ হয়ে গেলে বাড়ির গ্যারেজে বা বাইরের এক কোণায় থাকা সিটি কাউন্সিলের বিনে স্থানান্তর করা হয়, যেটা সপ্তাহান্তে সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যায়। এখানকার লাল, সবুজ ও হলুদ বিনে জমানো উচ্ছিষ্ট পুনরুৎপাদনযোগ্য ও পচনশীল পণ্য প্রতি সপ্তাহে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে এখনই এত সুন্দর ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব না হলেও কোথাও না কোথাও শুরু তো করতে হবে! তাই এই উদ্যোগ নেওয়া।
সংগঠনটির সভাপতি জুলফিকার আহমেদ বলেন, সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য না। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠিত। সমগ্র বিশ্ব যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা যাচ্ছি পশ্চাদমুখী, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে দেশের আপামর জনগণের ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে একটা গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতার বিষপাপ ছড়াচ্ছে।
‘আমরা অ্যালামনাইরা চাই, আমাদের বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা ধার্মিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার পার্থক্যের ব্যাপারে সবসময় সচেতন ও সাম্প্রয়িকতার বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকবে। তাই আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আসুন আমরা ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সবাই মিলে আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করি; সবাই সমস্বরে বলি ‘আসুন আমরা আবর্জনা এবং সাম্প্রদায়িকতা দুটোই রাবিশ বিন-এ ফেলি’।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামানাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
‘আবর্জনা যেমন ক্যাম্পাসকে ময়লা করে, তেমনই সাম্প্রদায়িকতা মানুষকে ও সমাজকে দূষিত করে’ মন্তব্য করে রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, এই রাবিশ বিন স্থাপনের মাধ্যমে এখানে একটা বার্তা দেওয়া হয়ছে। সেটি হলো- ‘আসুন আমরা আবর্জনা ও সাম্প্রদায়িকতা দুটোই এখানে ফেলি’।
আবর্জনা যেমন আমাদের ক্যাম্পাস ময়লা করছে, তেমনই সাম্প্রদায়িকতা মানুষকে ও সমাজকে দূষিত করছে। তাই এ দুটোকে যদি এখানে ফেলতে পারি তাহলে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো। বঙ্গবন্ধু যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিল সেটা গড়ে উঠবে। তাহলে বাংলাদেশ সকল মানুষের হবে, মানবিক হবে ও জনতার হবে।
‘রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া’ অস্ট্রেলিয়াকেন্দ্রিক রাবির সাবেক ছাত্রছাত্রীদের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হয়।