‘আমার পরিবারকে বলেন আমি বেঁচে আছি’

ছবি: সংগৃহীত

 

নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে। ওই ঘটনা মনে পড়লে এখন বুক কেঁপে ওঠে। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি। ও সময় কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।’

 

লিবিয়া উপকূলে নৌকা দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশি উদ্ধারকারীদের এভাবেই বলছিলেন। রোববারের সেই দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়া ১৭ জনকে সোমবার ইতালির সিসিলি দ্বীপে নিয়ে আসে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।

৩৩ বছর বয়সী সাইফুল বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা দুর্ঘটনার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১৭ জনের একজন তিনি। ইতালির গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি শেষ অবধি তীরে পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যাত্রা করা অনেককেই চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখেছি।

 

অ্যালার্ম ফোন নামের একটি সংস্থা সেই নৌকা দুর্ঘটনার খবর প্রথমে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল, যেন তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ইতালি কর্তৃপক্ষ সময়মতো তাতে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে অবশ্য একটি বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে অভিবাসীদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ১৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সেখান থেকে ৩০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে ইতালি কর্তৃপক্ষ।

 

উদ্ধার করার পর সাইফুলদের সিসিলির রাগুসা রাজ্যের পোৎসাল্লো দ্বীপে নিয়ে আসা হয়৷ তাদের বহনকারী নৌকাটি উল্টে গেলে তিনি সেটার ওপরে উঠতে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছেন। সিসিলিতে পৌঁছানোর পর তাই তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে তার। সেই ঘটনার আতঙ্ক সাইফুলের চোখে মুখে স্পষ্ট। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ রুক্ষ হতে শুরু করে। তখন কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।

তিনি জানান, নৌকায় সবাই একত্রিত হয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু ঠান্ডা বেশি হওয়ায় এবং ঢেউয়ের কারণে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঠান্ডা অসহনীয় ছিল। মানবপাচারকারীরা আমাদের নৌকায় তোলার সময় বলেছিল যে নৌকায় পানীয় জল এবং খাবার আছে। সেটা ছিল মিথ্যা কথা, যোগ করেন তিনি।

 

সিসিলির হাসপাতালে বসেই ইতালির সংবাদ সংস্থা আনসাকে সাক্ষাৎকার দেন সাইফুল। নৌকাটি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণ হিসেবে অশান্ত সমুদ্রের কথা জানান তিনি৷

 

সাইফুল বলেন, প্রত্যেকেই তখন চিৎকার করে সহায়তা চাচ্ছিলেন। আমি মরিয়াভাবে চেষ্টা করে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকাটি ধরে থাকতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি।

সাইফুলরা দুর্ঘটনায় পড়ার পর মোবাইলে নানাস্থানে অ্যালার্ম পাঠিয়েছিলেন। তাদের আশা ছিল কেউ না কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসবে। একপর্যায়ে একটি জাহাজ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে।

 

ইতালি প্রবেশের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমে লিবিয়ায় আসেন তিনি। এজন্য মানবপাচারকারীদের কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এই টাকা জমিয়েছিলেন সাইফুল।

 

তিনি বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রি ছিলাম। কিন্তু আমি সবসময় ইতালিতে আসার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমার একমাত্র আশা হচ্ছে আবারো পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া।  সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচনকে ভয় পায় বলেই ষড়যন্ত্রের পথে বিএনপি: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

» বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ পরিত্যক্ত

» বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের “ক্রস পার্টি পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন” প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

» স্যামসাং গ্যালাক্সি এম১২: সাশ্রয়ী মূল্যে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা

» দুবাইয়ে ‘প্রভাবশালী নারী’ অ্যাওয়ার্ড পেলেন আবিদা হোসেন

» বিয়ের আগেই হানিমুন উপভোগ করছেন মালাইকা

» বিএনপি এখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছে: ওবায়দুল কাদের

» রাজধানীতে লিফটের ফাঁকা থেকে পড়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

» ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০০ ছুঁই ছুঁই

» নির্যাতন-নিপীড়ন যত বাড়বে প্রতিবাদের গতি ততই তীব্র হবে: ফখরুল

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

‘আমার পরিবারকে বলেন আমি বেঁচে আছি’

ছবি: সংগৃহীত

 

নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে। ওই ঘটনা মনে পড়লে এখন বুক কেঁপে ওঠে। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি। ও সময় কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।’

 

লিবিয়া উপকূলে নৌকা দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশি উদ্ধারকারীদের এভাবেই বলছিলেন। রোববারের সেই দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়া ১৭ জনকে সোমবার ইতালির সিসিলি দ্বীপে নিয়ে আসে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।

৩৩ বছর বয়সী সাইফুল বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকা দুর্ঘটনার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১৭ জনের একজন তিনি। ইতালির গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি শেষ অবধি তীরে পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যাত্রা করা অনেককেই চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখেছি।

 

অ্যালার্ম ফোন নামের একটি সংস্থা সেই নৌকা দুর্ঘটনার খবর প্রথমে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল, যেন তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ইতালি কর্তৃপক্ষ সময়মতো তাতে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে অবশ্য একটি বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে অভিবাসীদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ১৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সেখান থেকে ৩০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে ইতালি কর্তৃপক্ষ।

 

উদ্ধার করার পর সাইফুলদের সিসিলির রাগুসা রাজ্যের পোৎসাল্লো দ্বীপে নিয়ে আসা হয়৷ তাদের বহনকারী নৌকাটি উল্টে গেলে তিনি সেটার ওপরে উঠতে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছেন। সিসিলিতে পৌঁছানোর পর তাই তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, নৌকা ডুবির ঘটনা পরিষ্কারই মনে আছে তার। সেই ঘটনার আতঙ্ক সাইফুলের চোখে মুখে স্পষ্ট। লিবীয় উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর সাগর ক্রমশ রুক্ষ হতে শুরু করে। তখন কেউ কেউ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।

তিনি জানান, নৌকায় সবাই একত্রিত হয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু ঠান্ডা বেশি হওয়ায় এবং ঢেউয়ের কারণে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঠান্ডা অসহনীয় ছিল। মানবপাচারকারীরা আমাদের নৌকায় তোলার সময় বলেছিল যে নৌকায় পানীয় জল এবং খাবার আছে। সেটা ছিল মিথ্যা কথা, যোগ করেন তিনি।

 

সিসিলির হাসপাতালে বসেই ইতালির সংবাদ সংস্থা আনসাকে সাক্ষাৎকার দেন সাইফুল। নৌকাটি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণ হিসেবে অশান্ত সমুদ্রের কথা জানান তিনি৷

 

সাইফুল বলেন, প্রত্যেকেই তখন চিৎকার করে সহায়তা চাচ্ছিলেন। আমি মরিয়াভাবে চেষ্টা করে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকাটি ধরে থাকতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই সাঁতার কাটতে জানতেন না। তাদের ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখেছি।

সাইফুলরা দুর্ঘটনায় পড়ার পর মোবাইলে নানাস্থানে অ্যালার্ম পাঠিয়েছিলেন। তাদের আশা ছিল কেউ না কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসবে। একপর্যায়ে একটি জাহাজ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে।

 

ইতালি প্রবেশের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমে লিবিয়ায় আসেন তিনি। এজন্য মানবপাচারকারীদের কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এই টাকা জমিয়েছিলেন সাইফুল।

 

তিনি বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রি ছিলাম। কিন্তু আমি সবসময় ইতালিতে আসার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমার একমাত্র আশা হচ্ছে আবারো পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া।  সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Design & Developed BY ThemesBazar.Com