আজ জাতীয় গণহত্যা দিবস

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, বাঙালির ইতিহাসের কালরাত। জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, বীভৎস, ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় এক কালরাত। এ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

 

২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ওই দিন থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

 

২৫ মার্চ রাতে ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঘুমের। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয় হনন-উদ্যত নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়ে শহরময়। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হলো রাতের বাতাস। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব। হতচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে তারা বাঙালি নিধন শুরু করে।

২৫শে মার্চ রাত সোয়া ১টার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। তার আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তত্কালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতা ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬শে মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা যাবে। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাক আউটের আওতামুক্ত থাকবে।

 

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর পশ্চিম কমিটি ২৫ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টায় মিরপুরে নুরি মসজিদ জল্লাদখানা বধ্যভূমি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও মহানগর দক্ষিণ কমিটি সকাল ১১টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

 

অন্যদিকে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রী’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদযাপন কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ডিইউজের শ্রদ্ধা

» বিএমএম এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

» আজকের এই স্বাধীনতা**

» ইসলামপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

» বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

» পাঁচবিবিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

» ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি

» স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন সাকিব-তামিমরা

» কারিনা ‘আউট’, পূজা ‘ইন’

» ঈদে অনলাইনে যেভাবে কাটবেন ট্রেনের টিকিট

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আজ জাতীয় গণহত্যা দিবস

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, বাঙালির ইতিহাসের কালরাত। জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, বীভৎস, ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় এক কালরাত। এ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

 

২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ওই দিন থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

 

২৫ মার্চ রাতে ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঘুমের। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয় হনন-উদ্যত নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়ে শহরময়। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হলো রাতের বাতাস। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব। হতচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে তারা বাঙালি নিধন শুরু করে।

২৫শে মার্চ রাত সোয়া ১টার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। তার আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তত্কালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতা ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬শে মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা যাবে। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাক আউটের আওতামুক্ত থাকবে।

 

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর পশ্চিম কমিটি ২৫ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টায় মিরপুরে নুরি মসজিদ জল্লাদখানা বধ্যভূমি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও মহানগর দক্ষিণ কমিটি সকাল ১১টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

 

অন্যদিকে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রী’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদযাপন কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Design & Developed BY ThemesBazar.Com