আগমীকাল কর্নেল অলির ৮৪তম জন্মদিন

আগমীকাল ১৩ মার্চ (রবিবার) লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের ৮৪তম জন্মদিন। অলি আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৩ই মার্চ। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশে। তার বাবার নাম আমানত ছাফা এবং মায়ের নাম বদরুননেছা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম বীর বিক্রম খেতাবধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদ ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার তিনি অন্যতম স্বাক্ষী।

 

১৯৭১ সালে অলি আহমদ কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন।

 

১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল অলি আহমদের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দুই ভাগে ছিলেন এবং সামনে ও পেছনে ছিল তাদের প্রতিরক্ষা। সম্ভাব্য যুদ্ধের সব ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করে অলি আহমদ পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যান। তখন তিনি দেখতে পান, ফাঁকা রাস্তায় সীতাকুণ্ড থেকে তীব্র বেগে একটি জিপ আসছে। জিপে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম এবং অন্য একজন। তারা দুজন অলিকে জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের দেখে ফেলেছে। দুই মিনিট পর অলি ফাঁকা রাস্তায় দেখতে পান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি জিপ ও ট্রাকবহর আসছে এবং দুই শ গজ দূরে থেমে গুলি শুরু করে তারা। অলির ৫০ গজ দূরে মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন দু-তিনজন সহযোদ্ধা। তার নির্দেশে তারা পাকিস্তানি বহরের একদম পেছনের গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পাঁচ গজের মধ্যে এলএমজি নিয়ে পজিশনে ছিলেন তার আরেক যোদ্ধা। তিনি তাকে বলেন জিপ লক্ষ করে গুলি করতে। গজ বিশেক দূরে ছিল মর্টার দল। তারা মাঝের ট্রাক লক্ষ করে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। তিনি নিজে রিকোয়েললেস রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করেন। আরআরের ছিল মাত্র দুটি গোলা। একটি আমগাছের ডালে লাগায় কোনো ক্ষতি হয়নি পাকিস্তানিদের। দ্বিতীয়টি সরাসরি আঘাত হানে ট্রাকে। খবর পেয়ে আরও পাকিস্তানি সেনা সেখানে আসে এবং যুদ্ধে যোগ দেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। অলি আহমদ দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে কম পরিমাণ অস্ত্র এবং সহযোদ্ধা নিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেন। মু্ক্িতযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সাহসীকতার জন্য তিনি ‘বীর বিক্রম’ উপাধীতে ভূষিত হন।
জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি সেনাবাহিনীতে তার চাকুরী ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দান করেন। তখন তার আরো ৯ বছর চাকুরী ছিল। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী হন। যমুনা সেতুর কাজ তার সময়েই শুরু হয়। দীর্ঘকাল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পর ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন।

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেফতার

» ‘ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে ইরান’

» দুপুরের মধ্যে ঢাকাসহ ৯ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

» আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকা-মার্কেট বন্ধ

» ৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ

» রাজনৈতিক দলপন্থি না হয়ে আপনারা বাংলাদেশপন্থি পুলিশ হয়ে ওঠেন : হাসনা

» দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি ‘স্যাক্রিফাইস’ করেছে বিএনপি: তারেক রহমান

» রংপুরে ১৭ বছর পর ৪ জুলাই জামায়াতের সমাবেশ

» খুনিদের বিচার না হলে সব থানা পটিয়া হয়ে উঠবে: সারজিস

» ‘হাতপাখার সমাবেশ’ বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ : ফারুক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আগমীকাল কর্নেল অলির ৮৪তম জন্মদিন

আগমীকাল ১৩ মার্চ (রবিবার) লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের ৮৪তম জন্মদিন। অলি আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৩ই মার্চ। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশে। তার বাবার নাম আমানত ছাফা এবং মায়ের নাম বদরুননেছা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম বীর বিক্রম খেতাবধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদ ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার তিনি অন্যতম স্বাক্ষী।

 

১৯৭১ সালে অলি আহমদ কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন।

 

১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল অলি আহমদের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দুই ভাগে ছিলেন এবং সামনে ও পেছনে ছিল তাদের প্রতিরক্ষা। সম্ভাব্য যুদ্ধের সব ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করে অলি আহমদ পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যান। তখন তিনি দেখতে পান, ফাঁকা রাস্তায় সীতাকুণ্ড থেকে তীব্র বেগে একটি জিপ আসছে। জিপে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম এবং অন্য একজন। তারা দুজন অলিকে জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের দেখে ফেলেছে। দুই মিনিট পর অলি ফাঁকা রাস্তায় দেখতে পান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি জিপ ও ট্রাকবহর আসছে এবং দুই শ গজ দূরে থেমে গুলি শুরু করে তারা। অলির ৫০ গজ দূরে মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন দু-তিনজন সহযোদ্ধা। তার নির্দেশে তারা পাকিস্তানি বহরের একদম পেছনের গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পাঁচ গজের মধ্যে এলএমজি নিয়ে পজিশনে ছিলেন তার আরেক যোদ্ধা। তিনি তাকে বলেন জিপ লক্ষ করে গুলি করতে। গজ বিশেক দূরে ছিল মর্টার দল। তারা মাঝের ট্রাক লক্ষ করে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। তিনি নিজে রিকোয়েললেস রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করেন। আরআরের ছিল মাত্র দুটি গোলা। একটি আমগাছের ডালে লাগায় কোনো ক্ষতি হয়নি পাকিস্তানিদের। দ্বিতীয়টি সরাসরি আঘাত হানে ট্রাকে। খবর পেয়ে আরও পাকিস্তানি সেনা সেখানে আসে এবং যুদ্ধে যোগ দেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। অলি আহমদ দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে কম পরিমাণ অস্ত্র এবং সহযোদ্ধা নিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেন। মু্ক্িতযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সাহসীকতার জন্য তিনি ‘বীর বিক্রম’ উপাধীতে ভূষিত হন।
জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি সেনাবাহিনীতে তার চাকুরী ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দান করেন। তখন তার আরো ৯ বছর চাকুরী ছিল। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী হন। যমুনা সেতুর কাজ তার সময়েই শুরু হয়। দীর্ঘকাল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পর ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেন।

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com