অ্যাডিনোভাইরাস কেন এত ভয়ংকর?

সংগৃহীত ছবি

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তিন বছর তাণ্ডব চালানো করোনাভাইরাস আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। ভারতের কলকাতা শহর নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভাইরাসটি। অ্যাডিনোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। হাসপাতাল এবং আইসিইউতে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়েই চলছে। কলকাতা ও জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ভয়াবহ এই চিত্র কোভিড-পরবর্তী সময়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে।

 

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে চলছে। পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে ভারতীয় শিশুদের।

নতুন আতঙ্ক অ্যাডিনোভাইরাস কেন এত ভয়ঙ্কর?

 

ডিসেম্বরে কলকাতায় অ্যাডিনোভাইরাস ছিল ২২ শতাংশের মতো। জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

 

শহর থেকে জেলা, সর্বত্রই হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীতে। অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর ভাইরাসটি কেন এতটা মারাত্মক হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন চিকিৎসকরাও। তবে কি পরিচিত ওই ভাইরাসের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে? যে কারণে করোনার মতো এই ভাইরাস শিশুদের ক্ষেত্রে কার্যত অতিমারির পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

 

ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গতকাল শনিবার সকালে সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শহরের মেডিকেল কলেজগুলির অধ্যক্ষ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আবার বছর দুয়েক পরে ফিরে আসা অ্যাডিনোভাইরাসের মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত কোনও পরিবর্তন ঘটেছে কি না, ইতিমধ্যেই তা জানার চেষ্টা শুরু করেছে নাইসেড।

 

জানা যাচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বছরধরে নাইসেডে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) ওপরে নজরদারি চালানো হয়। সেটি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ওপর নজরদারির জন্য হলেও, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট প্যানেলে আরও কতগুলি ভাইরাস আছে, যা পরীক্ষা করা হয়।

 

নাইসেডের সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে উদ্বেগের এমন চিত্র। জানা গেছে, ডিসেম্বরে অ্যাডিনোভাইরাস ছিল ২২ শতাংশের মতো। জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

 

শান্তা দত্ত বলেন, ‘এ রাজ্যেই আচমকা অ্যাডিনোভাইরাসের এত প্রকোপ কেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফোন আসছে। বিষয়টি জানতে অ্যাডিনোভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে।

 

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের স্থান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে দুই বছরের শিশুর সংখ্যাই সব থেকে বেশি।

 

স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকেও জানানো হয়েছে, রাজ্যে করোনার সময়ে শিশুদের চিকিৎসার জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা যেন পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়। অযথা যেন কোনও শিশুকে ‘রেফার’ করে শহরের হাসপাতালের উপরে চাপ তৈরি করা না হয়। প্রতিদিনই নমুনা পাঠাতে হবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে।

 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কী করণীয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সে বিষয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে।

 

বিসি রায় শিশু হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। খোলা হয়েছে ফিভার ক্লিনিক। যদিও সেই হাসপাতাল চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন সেখানকার রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তাঁর কথায়, ‘অযথা আতঙ্ক তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই। ভিতরে ঢুকলে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে যাবে।

 

অ্যাডিনোভাইরাস ইতিমধ্যেই কোভিড-পরবর্তী নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে বলেই মত অধিকাংশ চিকিৎসকের। শহরের একটি মেডিকেল কলেজের এক শিশুরোগ চিকিৎসক বলেন, ‘দু’বছরের কমবয়সী শিশুদের অতি দ্রুত রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হচ্ছে। অনেকের শারীরিক অবস্থা এত দ্রুত খারাপ হচ্ছে যে, ভেন্টিলেশন কিংবা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে।’ সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিটি ঘটনারই বিচার হবে: মির্জা ফখরুল

» খালাস পেলেন ফখরুল, খসরু ও রিজভী

» বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হয়ে যুবকের মৃত্যু

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

» ইরান ইস্যুতে ফোনালাপ করবেন বাইডেন-নেতানিয়াহু

» ‘দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছে সরকার’

» বিকেলে নাশতায় রাখুন চিকেন বাটার ফ্রাই

» অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল

» রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে জামায়াতের একগুচ্ছ প্রস্তাবনা

» বাসের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অ্যাডিনোভাইরাস কেন এত ভয়ংকর?

সংগৃহীত ছবি

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তিন বছর তাণ্ডব চালানো করোনাভাইরাস আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। ভারতের কলকাতা শহর নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভাইরাসটি। অ্যাডিনোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। হাসপাতাল এবং আইসিইউতে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়েই চলছে। কলকাতা ও জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ভয়াবহ এই চিত্র কোভিড-পরবর্তী সময়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে।

 

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে চলছে। পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে ভারতীয় শিশুদের।

নতুন আতঙ্ক অ্যাডিনোভাইরাস কেন এত ভয়ঙ্কর?

 

ডিসেম্বরে কলকাতায় অ্যাডিনোভাইরাস ছিল ২২ শতাংশের মতো। জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

 

শহর থেকে জেলা, সর্বত্রই হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীতে। অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর ভাইরাসটি কেন এতটা মারাত্মক হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন চিকিৎসকরাও। তবে কি পরিচিত ওই ভাইরাসের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে? যে কারণে করোনার মতো এই ভাইরাস শিশুদের ক্ষেত্রে কার্যত অতিমারির পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

 

ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গতকাল শনিবার সকালে সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শহরের মেডিকেল কলেজগুলির অধ্যক্ষ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আবার বছর দুয়েক পরে ফিরে আসা অ্যাডিনোভাইরাসের মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত কোনও পরিবর্তন ঘটেছে কি না, ইতিমধ্যেই তা জানার চেষ্টা শুরু করেছে নাইসেড।

 

জানা যাচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বছরধরে নাইসেডে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) ওপরে নজরদারি চালানো হয়। সেটি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ওপর নজরদারির জন্য হলেও, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট প্যানেলে আরও কতগুলি ভাইরাস আছে, যা পরীক্ষা করা হয়।

 

নাইসেডের সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে উদ্বেগের এমন চিত্র। জানা গেছে, ডিসেম্বরে অ্যাডিনোভাইরাস ছিল ২২ শতাংশের মতো। জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

 

শান্তা দত্ত বলেন, ‘এ রাজ্যেই আচমকা অ্যাডিনোভাইরাসের এত প্রকোপ কেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফোন আসছে। বিষয়টি জানতে অ্যাডিনোভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে।

 

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের স্থান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে দুই বছরের শিশুর সংখ্যাই সব থেকে বেশি।

 

স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকেও জানানো হয়েছে, রাজ্যে করোনার সময়ে শিশুদের চিকিৎসার জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা যেন পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়। অযথা যেন কোনও শিশুকে ‘রেফার’ করে শহরের হাসপাতালের উপরে চাপ তৈরি করা না হয়। প্রতিদিনই নমুনা পাঠাতে হবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে।

 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কী করণীয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সে বিষয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে।

 

বিসি রায় শিশু হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। খোলা হয়েছে ফিভার ক্লিনিক। যদিও সেই হাসপাতাল চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন সেখানকার রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তাঁর কথায়, ‘অযথা আতঙ্ক তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই। ভিতরে ঢুকলে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে যাবে।

 

অ্যাডিনোভাইরাস ইতিমধ্যেই কোভিড-পরবর্তী নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে বলেই মত অধিকাংশ চিকিৎসকের। শহরের একটি মেডিকেল কলেজের এক শিশুরোগ চিকিৎসক বলেন, ‘দু’বছরের কমবয়সী শিশুদের অতি দ্রুত রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হচ্ছে। অনেকের শারীরিক অবস্থা এত দ্রুত খারাপ হচ্ছে যে, ভেন্টিলেশন কিংবা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে।’ সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com