অসুস্থতায় গুনাহ মাফ ও দ্বিগুণ সওয়াব

অসুস্থতা ও সুস্থ থাকা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। এর সঙ্গে আল্লাহর আনুগত্য কিংবা নাফরমানির কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা নবি-রাসুলগণও অসুস্থ হতেন। অথচ তাঁরা ছিলেন সৃষ্টির সেরা মাখলুক। তবে মহান আল্লাহ বান্দাকে অসুস্থতা, দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এসব কিছুতে রয়েছে মুমিন বান্দার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। কিন্তু কেন?

 

মুমিন বান্দাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়, দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-আপদে পরীক্ষার সম্মুখীন হন আর তারা এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেন, আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রেখেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম। তখন তিনি অসুস্থ। আমি তাঁর শরীরে হাত দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার শরীরে অত্যন্ত জ্বর। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তোমাদের দুই জনের সমান জ্বরে ভুগছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম- তাহলে তো এতে আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব অর্থাৎ প্রতিদান। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। (বুখারি ও মুসলিম)

অসুস্থতায় শুধু দ্বিগুণ সওয়াব মিলে এমনটিই নয়, বরং আল্লাহ তাআলা অসুস্থতাকে ব্যক্তির গুনাহের কাফফার করেছেন। হাদিসে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সত্যের কাছাকাছি থাকো এবং সরল-সোজা পথে চলো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি একটি কাঁটাও বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পড়ে; তবে এ সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)

 

অসুস্থতা অশুভ নিদর্শন নয় বরং তাতে মুমিন বান্দার মর্যাদা বাড়ে। উন্নত স্তরে উপনীত হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি)

 

মনে রাখতে হবেঅসুস্থতা বা রোগ-ব্যাধির নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। যদি আল্লাহ না চান তবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কাউকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না। সুস্থও করতে পারে না। রোগ-ব্যাধি দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আবার সুস্থতা দান করার মালিকও আল্লাহ। হাদিসে পাকে এসেছে
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই বললে এক আরব বেদুঈন জিজ্ঞাসা করলো- ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? এরপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?
এবার নবিজী উত্তরে বললেন, তাহলে প্রথমটিকে (উট) কে রোগাক্রান্ত করেছিল? যে মহান আল্লাহ প্রথম উটকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন।’ (মুসলিম)

 

তবে মহান আল্লাহ কোনো রোগ-কে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তখন তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। হাদিসে পাকি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছিলেন-
‘অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না।’ (মুসলিম)

মুমিন মুসলমানের উচিত, অসুস্থতায় মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা ও ধৈর্যধারণ করা। এটিকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে নেওয়া। আর তাতে একাধারে মিলবে দ্বিগুণ সাওয়াব, গুনাহ থেকেও মিলবে মুক্তি আর বেড়ে যাবে মর্যাদা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থতা-অসুস্থতায়, বিপদ-আপদ কিংবা রোগ-ব্যধিতে তার উপর আস্থা ও ভরসা করার তাওফিক দান করুন। সর্বাবস্থায় উত্তম ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে প্রাইম ব্যাংক

» স্কুলে অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ আয়োজন করলো এনার্জিপ্যাক

» নওগাঁর মহাদেবপুরে আওয়ামীলীগের ৩ নেতা-কর্মী আটক

» নওগাঁর নিয়ামতপুরে ভাতিজার হাতে চাচা খুন

» বিক্রয়-এর নতুন উদ্যোগ – মোটরগাইড বাংলাদেশ

» আমরা ও একদিন মরে যাবো! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

» শেওড়াপাড়ায় জোড়া খুন : মাস্ক-ক্যাপ পরা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

» আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সব দলের সিদ্ধান্তে হয়েছে : প্রেস সচিব

» যুদ্ধ নয়, অজ্ঞতাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ করবে : কঙ্গনা

» ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ২১ মে

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অসুস্থতায় গুনাহ মাফ ও দ্বিগুণ সওয়াব

অসুস্থতা ও সুস্থ থাকা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। এর সঙ্গে আল্লাহর আনুগত্য কিংবা নাফরমানির কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা নবি-রাসুলগণও অসুস্থ হতেন। অথচ তাঁরা ছিলেন সৃষ্টির সেরা মাখলুক। তবে মহান আল্লাহ বান্দাকে অসুস্থতা, দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এসব কিছুতে রয়েছে মুমিন বান্দার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। কিন্তু কেন?

 

মুমিন বান্দাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়, দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-আপদে পরীক্ষার সম্মুখীন হন আর তারা এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেন, আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রেখেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম। তখন তিনি অসুস্থ। আমি তাঁর শরীরে হাত দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার শরীরে অত্যন্ত জ্বর। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তোমাদের দুই জনের সমান জ্বরে ভুগছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম- তাহলে তো এতে আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব অর্থাৎ প্রতিদান। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। (বুখারি ও মুসলিম)

অসুস্থতায় শুধু দ্বিগুণ সওয়াব মিলে এমনটিই নয়, বরং আল্লাহ তাআলা অসুস্থতাকে ব্যক্তির গুনাহের কাফফার করেছেন। হাদিসে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সত্যের কাছাকাছি থাকো এবং সরল-সোজা পথে চলো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি একটি কাঁটাও বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পড়ে; তবে এ সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)

 

অসুস্থতা অশুভ নিদর্শন নয় বরং তাতে মুমিন বান্দার মর্যাদা বাড়ে। উন্নত স্তরে উপনীত হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি)

 

মনে রাখতে হবেঅসুস্থতা বা রোগ-ব্যাধির নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। যদি আল্লাহ না চান তবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কাউকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না। সুস্থও করতে পারে না। রোগ-ব্যাধি দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আবার সুস্থতা দান করার মালিকও আল্লাহ। হাদিসে পাকে এসেছে
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই বললে এক আরব বেদুঈন জিজ্ঞাসা করলো- ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? এরপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?
এবার নবিজী উত্তরে বললেন, তাহলে প্রথমটিকে (উট) কে রোগাক্রান্ত করেছিল? যে মহান আল্লাহ প্রথম উটকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন।’ (মুসলিম)

 

তবে মহান আল্লাহ কোনো রোগ-কে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তখন তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। হাদিসে পাকি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছিলেন-
‘অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না।’ (মুসলিম)

মুমিন মুসলমানের উচিত, অসুস্থতায় মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা ও ধৈর্যধারণ করা। এটিকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে নেওয়া। আর তাতে একাধারে মিলবে দ্বিগুণ সাওয়াব, গুনাহ থেকেও মিলবে মুক্তি আর বেড়ে যাবে মর্যাদা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থতা-অসুস্থতায়, বিপদ-আপদ কিংবা রোগ-ব্যধিতে তার উপর আস্থা ও ভরসা করার তাওফিক দান করুন। সর্বাবস্থায় উত্তম ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com