অপারেশনের মাঝে লোডশেডিং, মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে শিশুর জন্ম দিল হাসপাতাল!

যান, যান, যতগুলো সম্ভব মো‌বাইল ফোন নিয়ে আসুন। পারলে টর্চ লাইট, মোমবাতি যা পাবেন নিয়ে আসুন— এক নিঃশ্বাসে প্রসূতির স্বামীকে কথাগুলো বলে গেলেন হাসপাতালের এক নার্স। অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে তখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তার স্ত্রী।

 

নার্সের এই কথাগুলি শুনেই যেন মাথায় বজ্রপাত হয়েছিল ওই ব্যক্তির। ঘুটঘুটে অন্ধকার গোটা হাসপাতাল জুড়ে। এতগুলো মোবাইল বা মোমবাতি জোগাড় করবেন কী ভাবে? কিন্তু জোগাড় তো তাকে করতেই হবে। না হলে স্ত্রী-সন্তানের জীবন বিপন্ন হতে পারে! এক মুহূর্ত না ভেবে মোবাইল ফোন জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অনেক কষ্টে কয়েকটি জোগাড়ও করে ফেলেছিলেন। শেষমেশ মোবাইলের টর্চের আলোতেই অস্ত্রোপচার হয় তার স্ত্রীর। জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি সন্তান। ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের নারসিপতনমের এনটিআর হাসপাতালের।

বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় দশটা। প্রসবযন্ত্রণা উঠেছিল সুকন্যার। তাকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যাওয়া হয়। সবে অস্ত্রোপচারের কাজ শুরু করবেন চিকিৎসকরা, হঠাৎই গোটা হাসপাতাল জুড়ে নেমে এল অন্ধকার। বিদ্যুৎবিভ্রাট! গোটা হাসপাতাল জুড়ে তখন হাঁসফাঁস অবস্থা। সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল অপারেশন থিয়েটারে। এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যেখানে জেনারেটর থাকা প্রয়োজন। ছিল না তা-ও। সব মিলিয়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল রোগী থেকে চিকিৎসকদের মধ্যে।

 

অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে তখন বেশ কয়েক জন প্রসূতি। এক এক করে অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু সুকন্যার অস্ত্রোপচার শুরু করতে গিয়েই বিদ্যুৎ চলে যায়। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে তখন অপেক্ষা করছিলেন সুকন্যার স্বামী। ওটি-র দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন এক নার্স এবং এক জন চিকিৎসক। তারা সুকন্যার স্বামীকে বলেন, “এখনই বেশ কয়েকটি মোবাইল জোগাড় করুন। পারলে টর্চ এবং মোমবাতিও নিয়ে আসুন।” সুকন্যার স্বামী এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “ওঁরা তো বলে গেলেন, কিন্তু রাতে এত মোবাইল জোগাড় করব কী করে? শুধু আমার স্ত্রী নয়, আরও অনেক মহিলারই এক অবস্থা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ভেবেই শিউরে উঠছি। তখন একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরছিল আমার স্ত্রী, সন্তানকে বাঁচাতে হবে।” তার পর মোবাইল জোগাড় করে চিকিৎসকদের হাতে তুলে দেন। সেই আলোতেই অস্ত্রোপচার করেন তারা।

 

অন্ধ্রপ্রদেশে গত কয়েক দিন ধরেই বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে না পারায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ ছাঁটার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু তার জেরে যে ভাবে স্বাভাবিক জনজীবন থেকে আপৎকালীন পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে একটা ক্ষোভের আবহ তৈরি হয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজারতেলেঙ্গানা টুডে

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ

» রাজনৈতিক দলপন্থি না হয়ে আপনারা বাংলাদেশপন্থি পুলিশ হয়ে ওঠেন : হাসনা

» দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি ‘স্যাক্রিফাইস’ করেছে বিএনপি: তারেক রহমান

» রংপুরে ১৭ বছর পর ৪ জুলাই জামায়াতের সমাবেশ

» খুনিদের বিচার না হলে সব থানা পটিয়া হয়ে উঠবে: সারজিস

» ‘হাতপাখার সমাবেশ’ বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ : ফারুক

» নতুন বাংলাদেশে নতুন করে চাঁদাবাজ হতে দেওয়া যাবে না: হাসনাত

» কোনো স্বৈরাচার চিরকাল ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না: নাহিদ

» যখনই গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে, বিএনপি সোচ্চার হয়েছে: তারেক রহমান

» রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঠাল খেলেন নাহিদ-হাসনাত-সার্জিসরা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অপারেশনের মাঝে লোডশেডিং, মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে শিশুর জন্ম দিল হাসপাতাল!

যান, যান, যতগুলো সম্ভব মো‌বাইল ফোন নিয়ে আসুন। পারলে টর্চ লাইট, মোমবাতি যা পাবেন নিয়ে আসুন— এক নিঃশ্বাসে প্রসূতির স্বামীকে কথাগুলো বলে গেলেন হাসপাতালের এক নার্স। অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে তখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তার স্ত্রী।

 

নার্সের এই কথাগুলি শুনেই যেন মাথায় বজ্রপাত হয়েছিল ওই ব্যক্তির। ঘুটঘুটে অন্ধকার গোটা হাসপাতাল জুড়ে। এতগুলো মোবাইল বা মোমবাতি জোগাড় করবেন কী ভাবে? কিন্তু জোগাড় তো তাকে করতেই হবে। না হলে স্ত্রী-সন্তানের জীবন বিপন্ন হতে পারে! এক মুহূর্ত না ভেবে মোবাইল ফোন জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অনেক কষ্টে কয়েকটি জোগাড়ও করে ফেলেছিলেন। শেষমেশ মোবাইলের টর্চের আলোতেই অস্ত্রোপচার হয় তার স্ত্রীর। জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি সন্তান। ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের নারসিপতনমের এনটিআর হাসপাতালের।

বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় দশটা। প্রসবযন্ত্রণা উঠেছিল সুকন্যার। তাকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যাওয়া হয়। সবে অস্ত্রোপচারের কাজ শুরু করবেন চিকিৎসকরা, হঠাৎই গোটা হাসপাতাল জুড়ে নেমে এল অন্ধকার। বিদ্যুৎবিভ্রাট! গোটা হাসপাতাল জুড়ে তখন হাঁসফাঁস অবস্থা। সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল অপারেশন থিয়েটারে। এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যেখানে জেনারেটর থাকা প্রয়োজন। ছিল না তা-ও। সব মিলিয়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল রোগী থেকে চিকিৎসকদের মধ্যে।

 

অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে তখন বেশ কয়েক জন প্রসূতি। এক এক করে অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু সুকন্যার অস্ত্রোপচার শুরু করতে গিয়েই বিদ্যুৎ চলে যায়। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে তখন অপেক্ষা করছিলেন সুকন্যার স্বামী। ওটি-র দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন এক নার্স এবং এক জন চিকিৎসক। তারা সুকন্যার স্বামীকে বলেন, “এখনই বেশ কয়েকটি মোবাইল জোগাড় করুন। পারলে টর্চ এবং মোমবাতিও নিয়ে আসুন।” সুকন্যার স্বামী এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “ওঁরা তো বলে গেলেন, কিন্তু রাতে এত মোবাইল জোগাড় করব কী করে? শুধু আমার স্ত্রী নয়, আরও অনেক মহিলারই এক অবস্থা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ভেবেই শিউরে উঠছি। তখন একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরছিল আমার স্ত্রী, সন্তানকে বাঁচাতে হবে।” তার পর মোবাইল জোগাড় করে চিকিৎসকদের হাতে তুলে দেন। সেই আলোতেই অস্ত্রোপচার করেন তারা।

 

অন্ধ্রপ্রদেশে গত কয়েক দিন ধরেই বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে না পারায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ ছাঁটার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু তার জেরে যে ভাবে স্বাভাবিক জনজীবন থেকে আপৎকালীন পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে একটা ক্ষোভের আবহ তৈরি হয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজারতেলেঙ্গানা টুডে

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com