ছবি সংগৃহীত
সুমাইয়া বেলায়েত এমি :
হাইমেন বা সতীচ্ছদ হলো একধরণের টিস্যু যা নারীর যোনিপথের সামনে অবস্থান করে। বেশিরভাগ নারীই সতীচ্ছদ নিয়ে জন্মান। কিন্তু সব নারীরই সতীচ্ছদ থাকে না। দুজন নারীর সতীচ্ছদের ধরণ কখনো এক হতে পারে না। ঠিক যেমন সব নারীর দৈহিক গড়ন এক নয়; তেমনি নারীর হাইমেনের গড়ন, আকৃতি ও পুরুত্ব বিভিন্ন ধরনের হয়। চলুন জেনে নিই হাইমেন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য-
সতীচ্ছদ কী?
সতীচ্ছদ বা হাইমেন যোনিমুখে অবস্থিত একটি ছোট ও পাতলা টিস্যুর টুকরো। এটি গর্ভাবস্থার বিকাশের পর্যায়ে অবশিষ্ট ভ্রূণের টিস্যু থেকে গঠিত হয়। জন্মের সময় হাইমেনের গঠন রিং আকৃতির হয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটির আকৃতিতে পরিবর্তন আসে। অনেকসময় হাইমেনের অনুপস্থিতি নারীর কুমারীত্ব হারানোর প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করা হয়। এই ধারণাটি আসলে ভুল। মূলত হাইমেন নরম ও স্থিতিস্থাপক টিস্যু দিয়ে তৈরি। নারীর বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ যেমন ব্যায়াম করা, বাইসাইকেল চালানো, নাচ করা, মাসিকের সময় ট্যাম্পুন ব্যবহার ইত্যাদি কারণে হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে।
হাইমেনের কাজ কী?
শরীরের অন্যান্য টিস্যুর যেমন নির্দিষ্ট কাজ আছে হাইমেনের তেমন কোন কাজ নেই। এটি একজন নারীর শরীর, স্বাস্থ্য বা প্রজনন ব্যবস্থাকে প্রাভাবিত করে না। কেউ কেউ মনে করে হাইমেন শরীরে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর বস্তু প্রবেশ রোধ করে। এই ধারণাটিও ভুল। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এটি নারীদের শরীরে কোনো সুবিধা বা কার্যকারিতা প্রদান করে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
সতীচ্ছদ কোথায় অবস্থিত?
বেশিরভাগ সময় সতীচ্ছদ যোনিমুখে অবস্থান করে। কখনও আবার এটি যোনিমুখের নিচের অংশকে আবৃত করে। অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এটি দুইভাগে বিভক্ত-
অ্যানুলার হাইমেন: এটি যোনিপথের পুরো অংশকে ঢেকে রাখে।
ক্রিসেন্টিক হাইমেন: এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির এবং যোনিমুখকে আংশিকভাবে ঢেকে রাখে।
নবজাতকরা সাধারণত অ্যানুলার হাইমেন নিয়ে জন্মায়। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রিসেন্টিক হাইমেনে পরিবর্তিত হয়। কিছু হাইমেন দীর্ঘ সময়ের জন্য যোনিমুখ ঢেকে রাখে। যা ঋতুস্রাব ও যৌনমিলনে বাধা সৃষ্টি করে।
হাইমেনের চারটি ধরণ যা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি
কিছু হাইমেন বা সতীচ্ছদ রয়েছে যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
ইম্পারফোরেট হাইমেন: এটি একটি বিরল প্রকৃতির হাইমেন যা যোনিমুখকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে। এই হাইমেন মাসিকের রক্ত নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি বয়ঃসন্ধির সময় মাসিক বন্ধ করে দিতে পারে। এই ধরনের হাইমেনের কারণে মাসিকের সময় পেটে ব্যথা অনুভূত হয় এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হয়।
মাইক্রোপারফোরেট হাইমেন: এটি একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির পাতলা পর্দা যা যোনিপথকে ঘিরে রাখে। হাইমেনাল মেমব্রেনটি হাইমেনাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত থাকে এবং কেন্দ্রে খুব ছোট একটি ছিদ্র থাকে। যার ফলে রোগীর ঋতুস্রাব নাও হতে পারে এবং যোনিপথে সহবাসে অক্ষমতা দেখা দেয়।
ক্রিবিফর্ম হাইমেন: এই অবস্থায় হাইমেনে খুব ছোট ছিদ্র থাকে যার ফলে রোগী সহবাস করতে বা যোনিপথে ট্যাম্পুন ঢুকাতে পারেন না। অনেকসময় আবার ঋতুস্রাব স্বাভাবিকভাবে হতেও পারে।
সেপ্টেড হাইমেন: এক্ষেত্রে হাইমেনের চারপাশে টিস্যুর একটি অতিরিক্ত ব্যান্ড তৈরি হয়। যার ফলে একটির বিপরীতে যোনিতে দুইটি ছিদ্র তৈরি হয়। রোগীর স্বাভাবিক মাসিক হলেও, সহবাসে অক্ষম হতে পারেন।
তবে এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বর্তমানে সার্জারির মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো দূর করা যায়।
সতীচ্ছদ ছিঁড়ে গেলে কী হয়?
বেশিরভাগ নারীই সতীচ্ছদ পর্দা ছিঁড়ে গেলে বুঝতে পারেন না। অন্যান্য টিস্যুর মতোই হাইমেন নরম ও স্থিতিস্থাপক। যা প্রসারিত হতে পারে। এটি প্রথম আঘাতে ছিঁড়ে না। বরং জীর্ণ হয়ে যায়। তখন কোনো নারী যদি ভারী কাজ করেন, তাহলে জীর্ণ হাইমেনটি ছিঁড়ে যায়। কেবল শারীরিক মিলনে সতীচ্ছদ ছিঁড়ে এমন ধারণা ভুল। ব্যায়াম, বাইসাইকেল চালানো, নাচ ইত্যাদি কারণেও এটি ছিঁড়তে পারে। অনেকসময় হাইমেন ছিঁড়ে গেলে যোনিপথে রক্তপাত হয় এবং হালকা ব্যথা অনুভূত হয়। একবার হাইমেন ছিঁড়ে গেলে এটি আর জোড়া লাগে না।
হাইমেন নিয়ে সতর্কতা
কেউ যদি দেখেন যে তার স্বাভাবিক ঋতুস্রাব বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সে যৌন মিলনে অক্ষম, যোনিপথে ট্যাম্পুন ঢুকাতে পারছেন না, তখন বুঝতে হবে যে তার হাইমেনে সমস্যা আছে। যোনিপথে বাড়তি চামড়া, উজ্জ্বল বর্ণের রক্ত, অস্বস্তি অনুভূত হওয়া ইত্যাদি হাইমেন ছিঁড়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। কখনো কখনো হাইমেনটি ছিঁড়ে যাওয়ার পর চামড়ার খণ্ডাংশ যোনীতে থেকে যায়। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি ডট কম