লেখক: শারমিন সুলতানা রিমি:
ইদানীং খুব কমন একটা বিষয় হল আত্মহত্যা। প্রায় প্রতিদিনই টিভি চ্যানেল খুললে বা ফেসবুকে ঢুকলেই দেখা যায় কেউ না কেউ আত্মহত্যা করেছে!
আশ্চর্যের ব্যাপার হল, সেখানে বয়স্কদের তুলনায় তরুনদের সংখ্যাই বেশি!!!
আশ্চর্য কেন বলেছি তা বলছি।
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই যত বড় বা বয়স্ক হবে, তত তার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। তবে দেখা যায় মানুষকে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি বেশি হতে হয়। সেই তিক্ততা একটা সময় বিষাদে পরিনত হয়…. যা মানুষটাকে জিন্দা লাশ বানিয়ে রাখে। তাই তিক্ততা বা বিষাদের পরিমান পরিমাপ করলে, একজন বয়স্ক ব্যক্তির আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার কথা। কারন আশাহত একটা মানুষের জীবনে আর কোন চাওয়া পাওয়া থাকেনা।
কিন্তু তরুনরা আত্মহত্যার দিকে বেশি ঝুঁকছে, কেন??
এই কেন এর উত্তর দিতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়….মাত্র কয়েকটা কারন বলছি…..
১/
বয়ঃসন্ধিকাল

২/
অতিরিক্ত আবেগ

৩/
অতিরিক্ত প্রত্যাশা

৪/
সবাইকে চোখবুঝে বিশ্বাস করার প্রবনতা

৫/
ফ্যামিলি প্রবলেম

৬/
একাকিত্ব

৭/
সেল্ফ রেসপেক্টের অভাব

৮/
সাপোর্টের অভাব

৯/
বাবা বা মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকা

১০/
ডিপ্রেশন

১১/
হীনহিন্মতা

১২/
ধর্মীয় অনুশাসনের উপস্থিতি না থাকা….

আমার কথাই বলি,আমি একজন প্রাপ্তবয়স্কা।
কিন্তু আমার মাঝেও যে এটা কখনো দেখা দেয়নি তা না। হয়তোবা একেক সময়ের ব্যাখ্যা একেক রকম ছিলো।
মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে,গলায় ফাঁস লাগাই,
আবার মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে হাতের উপর ব্লেড রেখে জাষ্ট একটা টান দিয়ে দেই,
কখনো কখনো মনে হয়েছে বিষ খেয়ে মৃত্যু অনেক শান্তির,
আবার কখনো কখনো মনে হয়েছে ১০ তলা ভবনের উপর থেকে লাফ দিয়ে পরলে হাড় ভাঙ্গার যে শব্দটা হবে বা মাথার খুলি যে চটাস করে ফেটে যাবে,
সেটাও একটা চমৎকার ব্যাপার হবে….
এখন ভাবতে পারেন, এগুলি মনে হবার কারন কি??
কারন যে আসলে কি, সেটা আমরা সঠিক করে কেউই জানিনা!!
একটা সময় মনে হয়েছে, সব মানুষের ভীড়েও আমি একা, আমার সাথে কথা বলা বা কথা শোনার মত কেউ নেই। চরম একাকিত্ব যাকে বলে!
আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের, প্রচুর হাসিখুশি। কিন্তু জানেন তো, হাসিখুশি মানুষগুলি নিজের সমস্যার কথা অন্যকে জানাতে পারেনা কিংবা বোঝাতে পারেনা। আর আত্মহত্যা করা ছেলে বা মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখেন, তার বাবা মা সেম কথাটি বলবে,
আমার মেয়ে/ছেলে তো খুব হাসিখুশি স্বভাবের ছিলো, সে কিভাবে এটা করলো!!
হাজারো মানুষের ভীড়ে নিজেকে একা বলে আবিস্কার করেছি। নিজের ভাল লাগা, মন্দ লাগা অন্যকে জানাতে চেয়েছি, কিন্তু মনে হয়েছে শোনার মত আসলে কেউই নেই।
একটা ব্যাপার কি জানেন, ১০০% পরিবারের মধ্যে মাত্র ৫% পরিবার সন্তান কে বুঝতে পারে বা বোঝার চেষ্টা করে। বাকি ৯৫% ই বুঝেনা তাদের কি করা উচিত।।
একটা মানুষ যখন আত্মহত্যা করে, তখন প্রচুর জ্ঞানী লোকের উদয় হয়। তখন তারা গম্ভীর গলায় বলে উঠবে,আত্মহত্যা মহাপাপ, এটা কোন সমাধান নয়।কিন্তু আপনি তার কাছে সমাধান জিগ্যেস করে দেখুন, আমি বাজি ধরতে রাজি, সে আপনাকে সঠিক ভাবে বলতে পারবেনা যে সমাধান টা কি?? কারন এর সমাধানের ব্যাপারে আমরা অনেক বেশি উদাসীন।






এগুলোই হলো মানুষের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
এইযে অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে গুলি চরম ডিপ্রেশনে ভোগে এর কারন কি??
প্রতিটা প্রবলেমই শুরু হয় পরিবার থেকে। সেটা প্রেম বলেন, পরকীয়া বলেন বা নির্যাতনের কথা বলেন!!
আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পাবেন, আত্মহত্যা করা বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরই ফ্যামিলি প্রবলেম।






প্রতিটা ফ্যামিলি যদি তার সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাদের সময় দেয়, তাহলে আমার মনে হয় আত্মহত্যার মত ঘটনা কমে যাবে….
কারন আপনার সন্তানটি যদি চরম হতাশায় নিমজ্জিত থাকে সেটা আপনার জানতে হলে আগে আপনাকে তার কাছাকাছি যেতে হবে। যেটা শাসন করে সম্ভব নয়।







যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহরূপে প্রকাশ পেয়েছে!!
আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন, জানার চেষ্টা করুন, অভয় দিন, সাহস দিন, হাসুন, প্রচুর হাসুন, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান, সময় দিন… এই সাপোর্ট গুলি তার মনে শান্তি এনে দিবে, সে হতাশায় নিমজ্জিত হবেনা।
মানুষ যখন বয়ঃসন্ধিতে থাকে, তখন তার আবেগ হয় আকাশ ছোঁয়া, হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায় তখন।
ভাল মন্দের হিসেব তারা করতে জানেনা।
অল্পতেই অভিমানী হয়, আবার অল্পতেই ভেঙে পরে।তাই সাপোর্ট দিন, পাশে থাকার চেষ্টা করুন।
প্রতিটা মানুষেরই একজন Imaginary friend বা কাল্পনিক বন্ধু থাকে। কিন্তু কাল্পনিক বন্ধুটি যে সবসময় তাকে ভাল বা উপকারি পরামর্শ দিবে ঠিক তা নয়…
সে মানুষেরই তৈরিকৃত একটি চরিত্র, মানে একজন মানুষের আরেকটি সত্তা, সেটা তো তারই তৈরি, মানে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিটিরই, সেটা তাকে ভাল পরামর্শ দিবে সেটা ভাবাও বোকামি। কারন একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি কখনো অন্যজনকে হতাশামুক্ত করতে পারেনা। তাই তার কাল্পনিক বন্ধুটিও তাকে টেনে তুলতে পারেনা।ফলাফল, যখন টেনে তুলতে ব্যর্থ হয়, সে আত্মহত্যা বা কোন অপরাধ করার পরামর্শ দেয়…স্বাভাবিক!!
মানুষের মনে কথা জমতে জমতে যখন পাহাড়সম হয়, তখন মানুষ যার প্রয়োজন বোধ করে তা হচ্ছে…….. কথাবন্ধু।
যার কাছে সমস্ত কিছু বলা যায়। বাবা মা,স্বামী স্ত্রী ইচ্ছে করলেই কথাবন্ধু হতে পারে।
তাই আপনারা প্লিজ কথাবন্ধু হয়ে দেখেন, সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।





জীবন অনেক সুন্দর… আমরা উভয়ে চাইলেই পারি, আরও সুন্দর করতে!!!
তাই আপনজনকে বোঝার চেষ্টা করুন।
ভাল থাকুক আপন ও ভালবাসার মানুষগুলি

Facebook Comments Box