দেশে ব্যবহৃত অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ৯০% অকার্যকর হয়ে পড়েছে: গবেষণা

ছবি সংগৃহীত

 

মানবদেহে সংক্রমণ ঘটানো প্রধান জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যবহৃত অ্যাক্সেস অ্যান্ড ওয়াচ গ্রুপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

 

সোমবার দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানে ‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেন বিএসএমএমইউ-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।

 

অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে মূলত তিনটি গ্রুপে ভাগ করা যায়– এরমধ্যে একটি হল ‘অ্যাক্সেস গ্রুপ’, যা প্রাথমিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়; উচ্চ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ওয়াচ গ্রুপ’; এবং অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ দিয়ে প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা যায় না, এমন সংক্রমণের জন্য ‘রিজার্ভ গ্রুপ’ ব্যবহার করা হয়।

 

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ৭২,৬৭০ জন রোগীর ওপর চালানো এ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে অন্তত ৭৫% ইনফেকশন হয় টাইফয়েড, ই-কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবশিয়েলা ও সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাক্সেস ও ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ।

 

গবেষণায়  উঠে এসেছে,  আইসিইউয়ের রোগীদের যে অ্যান্টিবায়োটিকে চিকিৎসা চলতো, তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দিতে হচ্ছে। যেসব জীবাণু আগে শুধু আইসিইউতে মিলতো, তা এখন কমিউনিটিতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে এগোচ্ছে।

 

গবেষণা প্রসঙ্গে ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলোকে একেবারে শেষ ধাপ হিসেবে রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একান্ত বিপদে না পড়লে এই রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়।

 

কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি, অহরহ এসব রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। যেগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া উচিত, সেগুলো এখন হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডেই আমরা ব্যবহার করছি।

 

আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা রিজার্ভের যে এন্টিবায়োটিক গুলো এখনই ব্যবহার করে ফেলছি, এরপরে কিন্তু আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। সেই সময়ে কিন্তু আমাদেরকে অনেক বড় বিপদে পড়তে হবে। তখন দেখা যাবে, সাধারণ সর্দি-জ্বরেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। তখন কিন্তু সামান্য অসুখে আমাদের প্রাণ হারাতে হবে, বলেন তিনি।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর  ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে, করোনা থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইসরায়েলিদের থেকে ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের রক্ষা করুন: পলক

» ভিডিও: মেলেনি অ্যাম্বুলেন্স, শিশুর লাশ গামলায় করে নিয়ে গেলেন বাবা

» বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন সোনাক্ষী, পাত্র নিয়ে রহস্য!

» সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ দুইজন নিহত

» শহরের তুলনায় গ্রাম ও শিল্পাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়ছে: জিএম কাদের

» রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

» গরম কমলে বড়সড় আন্দোলনে নামার ঘোষণা মান্নার

» প্রত্যেক মানুষকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি

» ফের অস্থির ডিমের বাজার, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসেও

» অনন্যার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সারার প্রেমে আদিত্য!

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দেশে ব্যবহৃত অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ৯০% অকার্যকর হয়ে পড়েছে: গবেষণা

ছবি সংগৃহীত

 

মানবদেহে সংক্রমণ ঘটানো প্রধান জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যবহৃত অ্যাক্সেস অ্যান্ড ওয়াচ গ্রুপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

 

সোমবার দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানে ‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেন বিএসএমএমইউ-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।

 

অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে মূলত তিনটি গ্রুপে ভাগ করা যায়– এরমধ্যে একটি হল ‘অ্যাক্সেস গ্রুপ’, যা প্রাথমিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়; উচ্চ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ওয়াচ গ্রুপ’; এবং অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ দিয়ে প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা যায় না, এমন সংক্রমণের জন্য ‘রিজার্ভ গ্রুপ’ ব্যবহার করা হয়।

 

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ৭২,৬৭০ জন রোগীর ওপর চালানো এ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে অন্তত ৭৫% ইনফেকশন হয় টাইফয়েড, ই-কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবশিয়েলা ও সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাক্সেস ও ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ।

 

গবেষণায়  উঠে এসেছে,  আইসিইউয়ের রোগীদের যে অ্যান্টিবায়োটিকে চিকিৎসা চলতো, তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দিতে হচ্ছে। যেসব জীবাণু আগে শুধু আইসিইউতে মিলতো, তা এখন কমিউনিটিতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে এগোচ্ছে।

 

গবেষণা প্রসঙ্গে ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলোকে একেবারে শেষ ধাপ হিসেবে রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একান্ত বিপদে না পড়লে এই রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়।

 

কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি, অহরহ এসব রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। যেগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া উচিত, সেগুলো এখন হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডেই আমরা ব্যবহার করছি।

 

আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা রিজার্ভের যে এন্টিবায়োটিক গুলো এখনই ব্যবহার করে ফেলছি, এরপরে কিন্তু আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। সেই সময়ে কিন্তু আমাদেরকে অনেক বড় বিপদে পড়তে হবে। তখন দেখা যাবে, সাধারণ সর্দি-জ্বরেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। তখন কিন্তু সামান্য অসুখে আমাদের প্রাণ হারাতে হবে, বলেন তিনি।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর  ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে, করোনা থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com