ভোটের জন্য কে বেশি দরকার, আমলা না দলের কর্মী?

 হাসিনা আকতার নিগার : ক্ষমতার পালাবদলে সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু সরকারি সচিব-আমলা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আসন স্থায়ী। অবসর নেওয়া পর্যন্ত তারা হলো দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ‘মন্ত্রণালয় চালায় সচিব, মন্ত্রী নয় – এ প্রচলিত কথাটি বাস্তবিকভাবেই শতভাগ সত্য। একটা সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। সংসদ, মন্ত্রী, এমপি সবাই জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। তবে এ জনপ্রতিনিধিদের চালক হলেন সচিব-আমলারা। জাতীয়  সংসদে জনগণের কথা বলেন সাংসদগণ। সেখানে আইন প্রনয়ণ, বাজেট থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আর এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে যাদের প্রয়োজন তারা হলেন আমলা -সচিবরা। মন্ত্রী, এমপিরা প্রকল্পের চূড়ান্ত স্বাক্ষরদাতা কেবল।

 

যদি আরও সহজ করে বলতে হয় তাহলে বলতে হয়, ‘কোনো প্রকল্প বা সরকারি কার্যক্রম জনপ্রতিনিধিদের এককভাবে করার সুযোগ নেই। কারণ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক বিধিবিধানের কারণে জনপ্রতিনিধিরা আমলানির্ভর। যেমন একজন মন্ত্রী তার ইচ্ছে মত ফাইল স্বাক্ষর করে দিলেই কাজ হয় না। বরং তার চিন্তা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা ব্যাখ্যা করেন সরকারের সচিব-আমলা, কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে। এ কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা একজন সচিবের বিচক্ষণতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায় সরকারের উদ্দ্যেশকে ফলপ্রসূ করে তুলতে।

 

২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে সরগরম বাংলাদেশের রাজনীতি। এ নির্বাচন ঘিরে আমলাদের অনেক হিসেবে নিকেশ রয়েছে। তার কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি আওয়ামী সরকারের একটা বিশেষ অংশ হচ্ছে সরকারি আমলা সচিব থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আর এ সরকারের কাঁধে ভর করে তারা দুর্নীতির যে পাহাড় গড়েছে তার প্রমাণ পেয়েছে দেশের জনগণ নানাভাবে। সোজা কথায় বলা যায়, সরকারি আমলা, সচিব, পুলিশ এদের জন্য আওয়ামী সরকার আবার ক্ষমতা আসাটা সুবিধাজনক। এতে করে তারা তাদের মতো করে সরকারকে চালাতে পারবে। বিগত সময়ে দেখা গিয়েছে আমলা সচিব নির্ভর আওয়ামী সরকারের কাছে দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কারণ ভোট এখন সরকারি বাহিনীই সম্পন্ন করতে পারে তাদের ক্ষমতা দিয়ে। ভোটের জন্য নেতাকর্মীর না হলেও চলে। এর প্রমাণ মিলেছে বিগত নির্বাচনে।

 

আওয়ামী সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন হলেও জনগণের কাছে একমাত্র নির্ভরতার স্থল হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলাকার নির্বাচিত মন্ত্রী এমপিদের নিয়ে মানুষের রয়েছে নানা ধরনের ক্ষোভ আক্ষেপ। আবার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যথাযথ মূল্যায়ন পায় না বলে নিরব ভূমিকা পালন করে। আর সে সুযোগে দলে ভিড় করছে সুবিধাবাদী চরিত্রের ব্যক্তিরা। তারা আওয়ামী লীগের সিল লাগিয়ে ফায়দা নিচ্ছে সরকার থেকে আমলা মন্ত্রী এমপিদের হাত করে। এ অবস্থায় সরকার নিজের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। দল এবং দলীয় কর্মীদের দুর্নীতি মুক্ত রাখতে গিয়ে আমলাদের দুর্নীতি যে সীমাহীন আকারে বাড়ছে তা মানুষ এখন বুঝেও প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতিমুহূর্তে নিজেদের প্রমাণ করে আওয়ামী সমর্থক হিসাবে।

 

যার ফলে দেশের প্রতিটি সেক্টরের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকার ও জনগণ। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়েছিলে বারবার। পরিতাপের বিষয় হলো এ সরকারের আমলেই দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে মামলা হামলার স্বীকার হতে হয়েছিল মানুষকে। কারণ সরকার আমলা নির্ভরশীল। আমলাদের অনিয়ম দুর্নীতি সরকারের জন্য বড় দুর্বলতা।

 

গ্রামের প্রবাদ ‘শেয়ালের কাছে মুরগী ভাগা’ দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের।’ প্রধানমন্ত্রী ও  আওয়ামী লীগের দলনেত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা সোনার বাংলার নানা প্রকল্পে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা খিচুড়ি প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ ভ্রমণ, বালিশ কম্বলের নামে হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করেছে, যার জন্য সরকারের প্রতি জনগণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নিরবে নিভৃতে। কিন্তু সে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা করেনি সরকার। তার কারণ হলো বিগত নির্বাচনে সরকারি আমলা সচিবরা আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে। যা হয়তো ২০২৪ সালের নির্বাচনে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আমলা সচিবদের একটি দীর্ঘস্থায়ী সরকার প্রয়োজন তাদের ব্যক্তি স্বার্থে- এ কথাটা আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পারলে জনগণের কাছে যাবার সুযোগ হতো অনেক বেশি।

গত ২৮শে অক্টোবরের সংহিতার ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে যা অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপির তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার করতে গিয়ে সাধারণ জনগণকে হয়রানি করার তালিকাটাও জনগণের মনে ছবি আঁকছে। এ গ্রেফতারের কারণকে হাতিয়ার করে বিভিন্ন এলাকায় আর্থিক লেনদেন করছে দুর্নীতিগ্রস্ত বাহিনী ও ব্যক্তিরা। শেখ হাসিনার সরকারের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় লাগাম টানা দরকার ছিল বহু আগে, কিন্তু তারা তা করেনি। তবে আগামীতে ক্ষমতায় আসলে সবার আগে এ কাজটি করতে হবে। তা না হলে জনগণ দীর্ঘ মেয়াদি এ সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে।

সরকার যেমন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে, তেমনিভাবে সরকারি আমলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তারা বেতন ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে জনগণের করের অর্থ থেকে। তাই সরকারকে আমলা নির্ভর হবার আগে ভাবতে হবে জনগণের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার কথা। জনগণের মতামতের মূল্যায়ন করে সুষ্ঠু ভাবে দেশ পরিচালনা করতে হলে সবার আগে আমলাদের দুর্নীতিকে রোধ করতে হবে। তা না হলে আমলাদের কথাই সত্য বলে প্রমাণিত হবে ‘আমলারাই দেশে চালায় আর সরকারকে ক্ষমতায় আনে তারা। জনগণ, দলের নেতাকর্মীদের দরকার হয় না ভোটের জন্য।’

অন্যভাবে যদি সরকার পরিচালনার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয় সেখানে দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধি উভয়ের সম্পৃক্ততা ও সমন্বয় দরকার। সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামোত কেবলমাত্র জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। সমস্যা হলো  বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের মাঝেও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তারাও দুর্নীতিমুক্ত নয়। এ কারণে দেশের উন্নয়নের ধারায় আমলা ও জনপ্রতিনিধি উভয়কেই দুর্নীতির রাহুমুক্ত হতে হবে। সরকারকে একটা চেইনের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। সে চেইনে যদি অনিয়ম ও দুর্নীতির মরচে পড়ে তবে তার মেরামত করতে হবে সরকারকেই। কারণ দিন শেষে সকল দায়ভার নিতে হয় জনগণের নির্বাচিত সরকারকে। সেখানে আমলারা আড়াল হয়ে যায় কারণ তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। সুতরাং আমলা নির্ভর ভোটের মাধ্যমে সরকার হিসাবে  ক্ষমতা আসার চিন্তা পরিত্যাগ করে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করার পথে হাঁটতে হবে আওয়ামী লীগকে। কেননা জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার পরিবেশ তৈরি করে জনমুখী সরকার গঠন করাই দেশ এবং জনগণের জন্য উত্তম।

লেখক: কলামিস্ট

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ভাষা সৈনিক আজিজুল জলিল আর নেই

» লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৮২ বাংলাদেশি

» ভারত থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি দুই তরুণী আটক

» বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, স্থিতিশীল গরু-খাসি-মুরগি

» ফেসবুকে দোয়া চাওয়া যাবে কি?

» ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

» আইসিসির পরোয়ানা এখানে এলে গ্রেপ্তার হবেন নেতানিয়াহু : ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী

» নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেবেন রোববার

» বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন

» সরকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ভোটের জন্য কে বেশি দরকার, আমলা না দলের কর্মী?

 হাসিনা আকতার নিগার : ক্ষমতার পালাবদলে সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু সরকারি সচিব-আমলা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আসন স্থায়ী। অবসর নেওয়া পর্যন্ত তারা হলো দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ‘মন্ত্রণালয় চালায় সচিব, মন্ত্রী নয় – এ প্রচলিত কথাটি বাস্তবিকভাবেই শতভাগ সত্য। একটা সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। সংসদ, মন্ত্রী, এমপি সবাই জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। তবে এ জনপ্রতিনিধিদের চালক হলেন সচিব-আমলারা। জাতীয়  সংসদে জনগণের কথা বলেন সাংসদগণ। সেখানে আইন প্রনয়ণ, বাজেট থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আর এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে যাদের প্রয়োজন তারা হলেন আমলা -সচিবরা। মন্ত্রী, এমপিরা প্রকল্পের চূড়ান্ত স্বাক্ষরদাতা কেবল।

 

যদি আরও সহজ করে বলতে হয় তাহলে বলতে হয়, ‘কোনো প্রকল্প বা সরকারি কার্যক্রম জনপ্রতিনিধিদের এককভাবে করার সুযোগ নেই। কারণ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক বিধিবিধানের কারণে জনপ্রতিনিধিরা আমলানির্ভর। যেমন একজন মন্ত্রী তার ইচ্ছে মত ফাইল স্বাক্ষর করে দিলেই কাজ হয় না। বরং তার চিন্তা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা ব্যাখ্যা করেন সরকারের সচিব-আমলা, কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে। এ কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা একজন সচিবের বিচক্ষণতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায় সরকারের উদ্দ্যেশকে ফলপ্রসূ করে তুলতে।

 

২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে সরগরম বাংলাদেশের রাজনীতি। এ নির্বাচন ঘিরে আমলাদের অনেক হিসেবে নিকেশ রয়েছে। তার কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি আওয়ামী সরকারের একটা বিশেষ অংশ হচ্ছে সরকারি আমলা সচিব থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আর এ সরকারের কাঁধে ভর করে তারা দুর্নীতির যে পাহাড় গড়েছে তার প্রমাণ পেয়েছে দেশের জনগণ নানাভাবে। সোজা কথায় বলা যায়, সরকারি আমলা, সচিব, পুলিশ এদের জন্য আওয়ামী সরকার আবার ক্ষমতা আসাটা সুবিধাজনক। এতে করে তারা তাদের মতো করে সরকারকে চালাতে পারবে। বিগত সময়ে দেখা গিয়েছে আমলা সচিব নির্ভর আওয়ামী সরকারের কাছে দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কারণ ভোট এখন সরকারি বাহিনীই সম্পন্ন করতে পারে তাদের ক্ষমতা দিয়ে। ভোটের জন্য নেতাকর্মীর না হলেও চলে। এর প্রমাণ মিলেছে বিগত নির্বাচনে।

 

আওয়ামী সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন হলেও জনগণের কাছে একমাত্র নির্ভরতার স্থল হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলাকার নির্বাচিত মন্ত্রী এমপিদের নিয়ে মানুষের রয়েছে নানা ধরনের ক্ষোভ আক্ষেপ। আবার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যথাযথ মূল্যায়ন পায় না বলে নিরব ভূমিকা পালন করে। আর সে সুযোগে দলে ভিড় করছে সুবিধাবাদী চরিত্রের ব্যক্তিরা। তারা আওয়ামী লীগের সিল লাগিয়ে ফায়দা নিচ্ছে সরকার থেকে আমলা মন্ত্রী এমপিদের হাত করে। এ অবস্থায় সরকার নিজের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। দল এবং দলীয় কর্মীদের দুর্নীতি মুক্ত রাখতে গিয়ে আমলাদের দুর্নীতি যে সীমাহীন আকারে বাড়ছে তা মানুষ এখন বুঝেও প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতিমুহূর্তে নিজেদের প্রমাণ করে আওয়ামী সমর্থক হিসাবে।

 

যার ফলে দেশের প্রতিটি সেক্টরের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকার ও জনগণ। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়েছিলে বারবার। পরিতাপের বিষয় হলো এ সরকারের আমলেই দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে মামলা হামলার স্বীকার হতে হয়েছিল মানুষকে। কারণ সরকার আমলা নির্ভরশীল। আমলাদের অনিয়ম দুর্নীতি সরকারের জন্য বড় দুর্বলতা।

 

গ্রামের প্রবাদ ‘শেয়ালের কাছে মুরগী ভাগা’ দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের।’ প্রধানমন্ত্রী ও  আওয়ামী লীগের দলনেত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা সোনার বাংলার নানা প্রকল্পে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা খিচুড়ি প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ ভ্রমণ, বালিশ কম্বলের নামে হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করেছে, যার জন্য সরকারের প্রতি জনগণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নিরবে নিভৃতে। কিন্তু সে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা করেনি সরকার। তার কারণ হলো বিগত নির্বাচনে সরকারি আমলা সচিবরা আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে। যা হয়তো ২০২৪ সালের নির্বাচনে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আমলা সচিবদের একটি দীর্ঘস্থায়ী সরকার প্রয়োজন তাদের ব্যক্তি স্বার্থে- এ কথাটা আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পারলে জনগণের কাছে যাবার সুযোগ হতো অনেক বেশি।

গত ২৮শে অক্টোবরের সংহিতার ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে যা অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপির তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার করতে গিয়ে সাধারণ জনগণকে হয়রানি করার তালিকাটাও জনগণের মনে ছবি আঁকছে। এ গ্রেফতারের কারণকে হাতিয়ার করে বিভিন্ন এলাকায় আর্থিক লেনদেন করছে দুর্নীতিগ্রস্ত বাহিনী ও ব্যক্তিরা। শেখ হাসিনার সরকারের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় লাগাম টানা দরকার ছিল বহু আগে, কিন্তু তারা তা করেনি। তবে আগামীতে ক্ষমতায় আসলে সবার আগে এ কাজটি করতে হবে। তা না হলে জনগণ দীর্ঘ মেয়াদি এ সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে।

সরকার যেমন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে, তেমনিভাবে সরকারি আমলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তারা বেতন ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে জনগণের করের অর্থ থেকে। তাই সরকারকে আমলা নির্ভর হবার আগে ভাবতে হবে জনগণের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার কথা। জনগণের মতামতের মূল্যায়ন করে সুষ্ঠু ভাবে দেশ পরিচালনা করতে হলে সবার আগে আমলাদের দুর্নীতিকে রোধ করতে হবে। তা না হলে আমলাদের কথাই সত্য বলে প্রমাণিত হবে ‘আমলারাই দেশে চালায় আর সরকারকে ক্ষমতায় আনে তারা। জনগণ, দলের নেতাকর্মীদের দরকার হয় না ভোটের জন্য।’

অন্যভাবে যদি সরকার পরিচালনার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয় সেখানে দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধি উভয়ের সম্পৃক্ততা ও সমন্বয় দরকার। সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামোত কেবলমাত্র জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। সমস্যা হলো  বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের মাঝেও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তারাও দুর্নীতিমুক্ত নয়। এ কারণে দেশের উন্নয়নের ধারায় আমলা ও জনপ্রতিনিধি উভয়কেই দুর্নীতির রাহুমুক্ত হতে হবে। সরকারকে একটা চেইনের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। সে চেইনে যদি অনিয়ম ও দুর্নীতির মরচে পড়ে তবে তার মেরামত করতে হবে সরকারকেই। কারণ দিন শেষে সকল দায়ভার নিতে হয় জনগণের নির্বাচিত সরকারকে। সেখানে আমলারা আড়াল হয়ে যায় কারণ তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। সুতরাং আমলা নির্ভর ভোটের মাধ্যমে সরকার হিসাবে  ক্ষমতা আসার চিন্তা পরিত্যাগ করে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করার পথে হাঁটতে হবে আওয়ামী লীগকে। কেননা জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার পরিবেশ তৈরি করে জনমুখী সরকার গঠন করাই দেশ এবং জনগণের জন্য উত্তম।

লেখক: কলামিস্ট

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com