হাটু ব্যথা ও ক্ষয় রোধে করণীয়

সংগৃহীত ছবি

 

ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান :জনাব জামান সাহেব এখন দাদা। নাতি-নাতনি নিয়ে তিনি ভালই কাটাচ্ছেন, কিন্তু কিছু দিন যাবৎ নামাজ পড়তে ও টয়লেট ব্যবহার করতে অসুবিধা বোধ করছেন তিনি। কারণ উঠতে বসতে জামান সাহেবের হাটুতে ব্যথা হয় এবং মাঝে মাঝে ফুলে উঠে।

 

জামান সাহেব এমন একটি হাড়ক্ষয়জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন যাকে সাধারণ মানুষ হাটু ব্যথা বলে থাকে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস আব নি’ বলা হয়। হাটু ব্যথা শুধু ক্ষয় জনিত রোগেই নয়, বিভিন্ন কারণে হাটু ব্যথা হতে পারে। যেমন রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, সেপটিক আথ্রাইটিস, গাউট, সোরিয়েটিক আথ্রাইটিস, এনকাইলজিং স্পন্ডাইলাইটিস, এসএলই ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি হাটু ব্যথা সাধারণত অস্থিক্ষয়ের জন্যই হয়ে থাকে। জোড়ার ভিতর আঠালো এক প্রকার পদার্থ থাকে যা জোড়াকে নড়াচড়া করেত সহজ করে। অনেক ক্ষেত্রে এই তরল পদার্থ শুকিয়ে গেলেও এই রোগ দেখা দেয। এ সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। অস্বাভাবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে আস্তে আস্তে রোগের লক্ষণ পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে হালকা গরম হওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা হওয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীতে হাটু নড়াচড়া করলে প্রচুর ব্যথা হয় রোগী নামাজ পড়তে, টয়লেট ব্যবহার করতে এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়। এভাবে চলতে থাকলে রোগী হাটুর কর্মক্ষমতা হারিয়ে হাটা চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়।

 

এছাড়া হাড় ও জোড়ার অন্যান্য রোগে, আঘাত পেলে, খেলোয়াড়দের খেলাধুলার সময় ভুল অবস্থানের জন্য হাটুতে আঘাত পেলে বা মচকালে অনেক সময় কোমরের অসুবিধার জন্য হাটুতে ব্যথা হতে পারে। তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের হাটু ব্যথা বেশি হয়। নারীদের সাধারণত ৪০ বৎসরের পর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেল হরমোনের তারতম্যের জন্য অস্থির কণিকা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে এব রোগ দেখা দিতে পারে।

 

চিকিৎসা : যেহেতু এ রোগের প্রধান কারণ ক্ষয়জনিত সমস্যা তাই এর প্রধান চিকিৎসা রিহেব-ফিজিও। তবে সে জন্য অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি রিহেব-ফিজিও চিকিৎসা অনেক ফলদায়ক। বিশেষজ্ঞ রিহেব-ফিজিও চিকিৎসকগণ রোগ নির্ণয়ের পাশাপিশি বিভিন্ন প্রকার বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার মধ্যে ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশন ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড, অতিলোহিত রশ্মি, ড্রাইনিডেলিং, মেগনেটোথেরাপি ও বিভিন্ন প্রকার ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এসময় এমন কি সারা জীবন রোগীকে কিছু উপদেশ মানতে হয়। যেমন ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন কমানো, নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম করা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট
ডিপিআরসি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা।

ফোন: ০১৯৮৯০০০২২২   ।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অবৈধ সরকারের ৩০০ এমপির বিরুদ্ধে একাই লড়াই করেছি: রুমিন ফারহানা

» জুনেলের শাস্তি না হলে আরও খুনি জন্মাবে: জামায়াত আমির

» আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» সাবেক সিইসি নুরুল হুদা আবারও চার দিনের রিমান্ডে

» অভিযানে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ১৬১৬

» ইসলামপুরে সনাতন ধর্মাবলম্ভীদের রথযাত্রা শুরু

» আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যাধুনিক লন্ড্রি সমাধান

» দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা    

» ইসলামপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা উৎসব শুরু

» মোংলায় পশুর নদীর চরে ফ্লাইঅ্যাশ বোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হাটু ব্যথা ও ক্ষয় রোধে করণীয়

সংগৃহীত ছবি

 

ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান :জনাব জামান সাহেব এখন দাদা। নাতি-নাতনি নিয়ে তিনি ভালই কাটাচ্ছেন, কিন্তু কিছু দিন যাবৎ নামাজ পড়তে ও টয়লেট ব্যবহার করতে অসুবিধা বোধ করছেন তিনি। কারণ উঠতে বসতে জামান সাহেবের হাটুতে ব্যথা হয় এবং মাঝে মাঝে ফুলে উঠে।

 

জামান সাহেব এমন একটি হাড়ক্ষয়জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন যাকে সাধারণ মানুষ হাটু ব্যথা বলে থাকে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস আব নি’ বলা হয়। হাটু ব্যথা শুধু ক্ষয় জনিত রোগেই নয়, বিভিন্ন কারণে হাটু ব্যথা হতে পারে। যেমন রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, সেপটিক আথ্রাইটিস, গাউট, সোরিয়েটিক আথ্রাইটিস, এনকাইলজিং স্পন্ডাইলাইটিস, এসএলই ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি হাটু ব্যথা সাধারণত অস্থিক্ষয়ের জন্যই হয়ে থাকে। জোড়ার ভিতর আঠালো এক প্রকার পদার্থ থাকে যা জোড়াকে নড়াচড়া করেত সহজ করে। অনেক ক্ষেত্রে এই তরল পদার্থ শুকিয়ে গেলেও এই রোগ দেখা দেয। এ সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। অস্বাভাবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে আস্তে আস্তে রোগের লক্ষণ পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে হালকা গরম হওয়া, ফুলে যাওয়া, ব্যথা হওয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীতে হাটু নড়াচড়া করলে প্রচুর ব্যথা হয় রোগী নামাজ পড়তে, টয়লেট ব্যবহার করতে এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়। এভাবে চলতে থাকলে রোগী হাটুর কর্মক্ষমতা হারিয়ে হাটা চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়।

 

এছাড়া হাড় ও জোড়ার অন্যান্য রোগে, আঘাত পেলে, খেলোয়াড়দের খেলাধুলার সময় ভুল অবস্থানের জন্য হাটুতে আঘাত পেলে বা মচকালে অনেক সময় কোমরের অসুবিধার জন্য হাটুতে ব্যথা হতে পারে। তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের হাটু ব্যথা বেশি হয়। নারীদের সাধারণত ৪০ বৎসরের পর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেল হরমোনের তারতম্যের জন্য অস্থির কণিকা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে এব রোগ দেখা দিতে পারে।

 

চিকিৎসা : যেহেতু এ রোগের প্রধান কারণ ক্ষয়জনিত সমস্যা তাই এর প্রধান চিকিৎসা রিহেব-ফিজিও। তবে সে জন্য অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি রিহেব-ফিজিও চিকিৎসা অনেক ফলদায়ক। বিশেষজ্ঞ রিহেব-ফিজিও চিকিৎসকগণ রোগ নির্ণয়ের পাশাপিশি বিভিন্ন প্রকার বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার মধ্যে ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশন ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড, অতিলোহিত রশ্মি, ড্রাইনিডেলিং, মেগনেটোথেরাপি ও বিভিন্ন প্রকার ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এসময় এমন কি সারা জীবন রোগীকে কিছু উপদেশ মানতে হয়। যেমন ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন কমানো, নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম করা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট
ডিপিআরসি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা।

ফোন: ০১৯৮৯০০০২২২   ।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com