নীতি ভীতি

ছবি: সংগৃহীত

 

হানিফ সংকেত :আজকাল কিছু কিছু রীতিনীতি দেখে রীতিমতো ভীতি জাগে। যদিও আমরা সবাই চাই নীতির প্রতি সবার একটু প্রীতি থাক এবং নীতি মেনে যোগ্যতার বলেই মানুষ যোগ্য স্থানে যাক। তবে অনেকেরই এই নীতির প্রতি প্রীতি বেশ ভীতিকর। কারও আবার প্রীতিকর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন নীতির? এখন তো আবার নীতিরও নানান প্রকারভেদ আছে। সুনীতি, কুনীতি, দুর্নীতি, এরপর আছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি এমনই আরও অনেক নীতি। এসব নীতি প্রীতির পাশাপাশি রয়েছে স্বজনপ্রীতি। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আর এক নীতি ‘ভিসানীতি’, যে নীতি দেশে ঝড় তুলেছে। রাজনীতি আর ভিসানীতি এখন অনেকটা সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভিসানীতির প্রতি রয়েছে কারও প্রীতি, কারও ভীতি আবার কারও কাছে এই নীতি নীতিবিরুদ্ধ, কারও কাছে নীতিসংগত। আবার কিছু কিছু নীতি আছে যাকে বলা হয় শান্তির নীতি, স্বস্তির নীতি, আস্থার নীতি অর্থাৎ এক একটি এক এক রাস্তার নীতি। কিছু নীতিকথা, নীতিবাক্য বা কারও নীতিজ্ঞান নীতিসম্মত নয়। যেমন ‘সদা সত্য কথা বলিবে’- বহুল ব্যবহৃত একটি নীতিবাক্য। ‘সৎপথে চলুন’ কিংবা ‘সততাই মহৎ গুণ’-এসব নীতিবাক্য এখন অনেকটা স্মৃতি হয়ে গেছে। কবে শুনেছি সেটাই ভুলতে বসেছি, মেনে চলা তো দূরের কথা। কাল যেমন বদলায়, তেমনি কালের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় এসব নীতিকথা। বদলায় রীতি-নীতি, প্রেম-প্রীতি, ভয়-ভীতি, শিল্প-সংস্কৃতি কিংবা সম্প্রীতি এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে স্মৃতিও হয়ে যায় বিস্মৃতি। মূল্যবোধের অভাবে মানুষের স্বভাবে অনেক কিছুর প্রভাব পড়ে, তাই নিয়ম নীতি ভুলে বাঁকা পথে চলে মানুষগুলোই বদলে যায়। ধারণ করে ভিন্নরূপ, তখনই প্রশ্ন ওঠে-এরা কি ভদ্রলোক নাকি প্রবঞ্চক?

 

রাজনীতির কথাই ধরুন। এর মধ্যেও একটা নীতি আছে। আবার যারা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেন, তারা নেতা- এই নেতা এবং নীতিকে অনেকে সমার্থক করে ফেলেন। তখনই ওঠে আপত্তি, ঘটে বিপত্তি। মনে রাখতে হবে, নেতার কথাই নীতি নয়, নীতির ধারক হচ্ছেন নেতা। কারণ অনেক নেতার প্রিয় নীতির নাম দুর্নীতি, যা এখন মহামারির রূপ ধারণ করেছে। নীতি শব্দের পূর্বে ‘দু’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে এই শব্দটি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ নীতির খেলাপ। যা অন্যায়, অনিয়ম, নীতিবিরুদ্ধ সেটাই দুর্নীতি। প্রেম-ভালোবাসা, হিংসা-বিদ্বেষের মতো মানুষের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থান করছে সুনীতি ও দুর্নীতি। দুর্নীতি পরায়ণ হলেই মানুষ হয়ে ওঠে অমানুষ। দুর্নীতির প্রধান কারণ হচ্ছে লোভ। অক্সফোর্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক বুকম্যানের একটি উক্তি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে বটে; কিন্তু সবার লোভ মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়’। এই লোভের পাপে দেশে দেশে আর্থিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এখন অনেকেই দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নীতিজ্ঞানের অভাবে এসব ক্ষেত্রে পরিমিতি বোধেরও অভাব দেখা দিয়েছে। দুর্নীতির গতি আর নীতির দুর্গতি অতিশয় ক্ষতির প্রভাব ফেলছে সর্বত্র। নীতিহীন মানুষেরা সারাজীবন প্রীতিহীন রয়ে যায় মানুষের অন্তরে। কারণ মানুষ তাকেই ভালোবাসে যার নীতি ও আদর্শ আছে। সেজন্য রাজনীতিতেও দেখা যায় কেউ গালি খায়, কেউ তালি পায়। পায় ভালোবাসা ও সমর্থন। ফলে নীতিবানদের সঙ্গেই সবার প্রীতিময় সম্পর্ক থাকে। এখন আবার রাজনীতির মাঠে ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। অন্যসব ইস্যু ছাপিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে। সুতরাং রাজনীতির এই তর্ক-বিতর্ক, সুতর্ক-কুতর্ক জাতীয় আলোচনা বাদ দিয়ে একটু সমাজনীতিতে যাই।

আমাদের বিয়ে-শাদিতে সামাজিকভাবে কিছু নিয়মনীতি বা রীতিনীতি মানা হয়। আর বিয়ে-শাদির বিষয়টাই আনন্দ উৎসবের। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- সেই আনন্দটা কেমন হবে? সেজন্য কি বিদেশি রীতিনীতি অনুসরণ করতে হবে? নাকি আমাদের সংস্কৃতিকেই প্রাধান্য দিতে হবে? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, পত্র-পত্রিকায় দু-একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের আনন্দ-উৎসব পালনের যে দৃশ্য দেখলাম তাতে একটু কষ্টই পেলাম। এদের মধ্যে দু-একটি যারা জুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিত। এরা আবার মানুষকে অনেক কিছু শেখায়ও। অনেক রীতিনীতি, বিদ্যা-বুদ্ধি-যাকে বলা হয় মোটিভেশন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ের সময় এদের পাশ্চাত্য ঢঙে পরিবেশিত ‘কালা চশমা’ জাতীয় হিন্দি গানের সঙ্গে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় নৃত্য করতে দেখে তাদের অনুসারীরা কী শিখছে? এই প্রজন্মকে তারা কী শেখাচ্ছে? শুধু তাই নয়, বধূ বেশে কনেও দেখলাম নাচছে। আবার গর্ব করে বলছে, তাদের হান্ড্রেড মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। এটা কি কোনো শিক্ষামূলক ভিডিও যে, ভাইরাল হলে গর্ব করতে হবে? যদিও ভাইরাল শব্দটা ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে একটি পচনশীল শব্দ। আমি মনে করি, ভাইরাল একটি সিরিয়াস ভাইরাস। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেরই দু-তিন শ মিলিয়নের ভাইরাল ভিডিও রয়েছে, যা অপেশাদার কিছু ছেলেমেয়ে বানিয়েছে এবং যার অধিকাংশই রুচিশীল নয়। কিছু আছে প্র্যাঙ্ক ভিডিও। এসব ভাইরাল ভিডিওর সমাজে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারা সেটা চায়ও না। তাদের উদ্দেশ্য ব্যবসা করা। তাদের নীতি একটাই- যত বেশি ভিউ তত বেশি লাভ। তারা সমাজের রীতিনীতি অর্থাৎ সমাজনীতি নিয়ে চিন্তিত নয়। কিন্তু যারা সমাজে জ্ঞান দান করেন, শিক্ষার্থীদের নীতিকথা বলেন, সদুপদেশ দেন, দিকনিদের্শনা দেন, তাদের কাছ থেকে এসব ভাইরাল ভিডিও কারও কাম্য নয়।

 

আমাদের তো গর্ব করার মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সেই সংস্কৃতিকে ভালোবাসি, আমাকে আনন্দ দেয়। আর সেজন্য আমি আমার সন্তানের বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রটি করেছি নকশিকাঁথা দিয়ে। যেখানে অর্ধশতাধিক নকশি শিল্পী সুচের প্রতিটি ফোঁড়ে ফোঁড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের সংস্কৃতি। সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠিত বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র দিয়ে যন্ত্রসংগীতের ব্যবস্থা করেছি। ছিল একতারা, দোতারা, বাঁশি, ঢোল, তবলা, সানাই, করতাল, খমক, হারমোনিয়াম-এসব বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ বাদকবৃন্দ। আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন শামসেল হক চিশতী ওরফে চিশতী বাউল। প্রতিটি অতিথি এক ঝলক হলেও সেখানে থেমেছেন, হৃদয় দিয়ে উপভোগ করেছেন আমাদের মাটির গান-বাদ্য। আসলে এক একজনের আনন্দ এক এক রকম। আমাদের পারিবারিক-সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। ইদানীং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসব বিদেশি আদলে বিশেষ করে হিন্দি বা বলিউডি নাচ-গান বেশি দেখা যায়। এক অদ্ভুত বিকৃত শব্দ করে ডিজেরা এসব গান বাজিয়ে তরুণ-তরুণীদের মন ভিজিয়ে দেয়। অথচ আমাদের কত সুন্দর হলুদের গান আছে। ‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ-বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা করমচা রঙ বৌ’-কিন্তু এই প্রজন্মের এসব ডিজে প্রিয় ছেলেমেয়েদের অনেকেই বোধকরি এই গানই শোনেনি। অথচ ‘কালা চশমা’ শুনলেই তাদের লম্ফঝম্ফ শুরু হয়ে যায়। শুধু নাচ-গানই নয়, চোখেও থাকে কালা চশমা। থাকে বলিউড ছবির আদলে সাজসজ্জা, নৃত্য মুদ্রা। বলাবাহুল্য, শুনেছি এ জন্য তারা মহড়াও দিয়ে থাকে। আমি এক বিয়েতে দেখলাম বিয়ের কনে কিছু বান্ধবী পরিবেষ্টিত হয়ে নাচতে নাচতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছে। অথচ একসময় কনেকে দেখেছি শান্ত-নম্র-লাজুক ভঙ্গিতে হেঁটে আসছে, অভিভাবকরা লাজে নম্র কনেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আগে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় কনে তার মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদত। এখন সে দৃশ্য খুব কমই চোখে পড়ে। এখন আমরা অনেক স্মার্ট! যে জীবনে নাচেনি সেও হাজার হাজার লোকের সামনে নাচছে। আর এতে অনেকে আনন্দও পাচ্ছে।

 

প্রযুক্তির কল্যাণে অনেকেই এখন বিদেশি সংস্কৃতিকে নিজের করে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, আমরা অনেক কিছু দেখব কিন্তু নিজেরটাকে কখনো বিসর্জন দেব না। আমরা ভালোটা নেব, খারাপটা বর্জন করব। ইত্যাদিতে এ কথাগুলো আমরা প্রায়শ বলি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী গানগুলো আমাদের মতোই হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই এর পরিবর্তন হবে, তবে ঐহিত্য ধ্বংস করে নয়। আমরা গান ঠিক রেখে প্রয়োজনে এর বাদ্য-বাজনায় পরিবর্তন আনব, আধুনিক করব এবং অনেকে করছেও। এমনকি গত ইত্যাদির নেত্রকোনা পর্বে আমরা কুদ্দুস বয়াতি ও ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালাগানটি আধুনিক বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজিয়েছি। যা প্রশংসিত হয়েছে।

 

আমাদের সংস্কৃতি আমাদের অহংকার। কিন্তু আকাশ সংস্কৃতির যুগে-হুজুগে আমাদের জীবনযাত্রার প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে। আমাদের জাতিগত সত্তা নিয়ে আমাদের আত্মসম্মানবোধের অভাবের কারণেই এসবের প্রবণতা বেড়েছে। এক যুগ আগেও প্রযুক্তি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে ছিল না, তাই এসব বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের প্রভাবিত করতে পারেনি। তারপরও বলব নববর্ষ পালন উৎসব তো আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। সেখানে কিন্তু সবাই দেশীয় পোশাক পরেই যান। উৎসব মেলায় বাজতে থাকে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র। শিল্পীরা গাইতে থাকেন মাটির গান। সেখানেও গান শুনে দলে দলে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই নাচতে থাকে। কই সেখানে তো বলিউড মার্কা পোশাক বা ‘কালা চশমা’ জাতীয় গানের প্রয়োজন হয় না। সুতরাং আমাদের প্রতিটি সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানগুলোতে এভাবে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে থাকলে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

 

রাজনীতি, সমাজনীতির পরে একটু শিক্ষানীতির প্রসঙ্গে আসা যাক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ইত্যাদির নেত্রকোনা পর্বে আমরা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিলাম। শিক্ষকতা করতে করতে যিনি এখন একজন গণশিক্ষক। ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং দীর্ঘ চার দশক একাগ্রচিত্তে শিক্ষকতার পর অবসর নেন। আমাদের দেশে অনেক ‘স্যার’ আছেন যারা শিক্ষকতা করে স্যার হলেও তলে তলে আরও অনেক কিছু করেন। আমি না লিখলেও একটু চিন্তা করলেই আপনাদের চোখের সামনে সেসব স্যারদের চেহারাগুলো ভাসবে। অধ্যাপক যতীন সরকার সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ইত্যাদিতে শিক্ষাবিদ যতীন সরকার আমাদের শিক্ষানীতির দুর্বলতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আমার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ১৯৫৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেছেন, তখন পাসের হার ছিল ৩৮%। আর এখন এই হার পারলে ১০০ এর ওপরে চলে যায়। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, “আগের শিক্ষকরা শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রচুর পড়াশোনা করতেন।” তাঁর ‘শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধ’ গ্রন্থে লিখেছেন, “এখন আর কেউ শিক্ষার্থী নেই, সবাই পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীও নয়, যেন নম্বরার্থী।” তিনি আরও লিখেছেন, “এখনকার যুগে অধ্যবসায়ী বিদ্যার্থী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, চতুর পরীক্ষার্থী হলেই চলে। এক সময় পরীক্ষার্থীদের এ কাজে সহায়তা করার জন্য ‘নোট’, ‘ডাইজেস্ট বা সিউর সাকসেস’ নিয়ে এগিয়ে আসেন এক্সপার্ট হেডমাস্টার বা এক্সপেরিয়েন্সড প্রফেসররা। চতুরতায় আরও সম্প্রসারণের ফলে তারা ভাষার ভান্ডারে ‘গণ টোকাটুকি’ বলে একটি শব্দের সংযোজন ঘটায়। ফলে শিক্ষার যা হওয়ার তাই হয়েছে।” এ যুগে এসে দেখা যায়, কেউ কেউ আবার শিক্ষাকে কনটেন্ট বানিয়ে ফেলেছে। দেদার চলছে শিক্ষা নিয়ে কনটেন্ট ব্যবসা। ইউটিউব খুললেই শিক্ষকের ছড়াছড়ি, কেউ ব্ল্যাকবোর্ডে শেখাচ্ছে, কেউ অভিনয় করিয়ে শেখাচ্ছে, কেউ গল্প বলে শেখাচ্ছে। স্বল্প মেয়াদি মিনিটভিত্তিক এসব শিক্ষাকে অনেকে হাইব্রিড শিক্ষা হিসেবে দেখেন। এক সময় ক্রিকেট খেলা দেখেছি সাদা পোশাকের দীর্ঘমেয়াদি টেস্ট ক্রিকেট। এরপর ৫০ ওভার, এরপর বাণিজ্য ঢুকে গিয়ে শুরু হলো টি-টোয়েন্টি। এরপর দিনে দিনে আত্মপ্রকাশ করে ব্যক্তিগত দল। দলের মালিক হয় কোনো ধনকুবের কিংবা অভিনেতা, কেউবা ব্যবসায়ী। একসময় যে ক্রিকেট শুধু দেশের প্রতিনিধিত্ব করত সেটা হয়ে যায় বাণিজ্যিক খেলা। খেলোয়াড়দের কেউ কেউ হয়ে যান ব্যবসায়ী। ধৈর্যের পরীক্ষা রূপান্তরিত হয় অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশে। আর এই অস্থিরতা সবকিছুতেই দ্রুত ফলাফল চায়। সেটা রাস্তায় চলাচল থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য, মৎস্য চাষ কিংবা পোলট্রিফার্ম সব জায়গায় ঢুকে পড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই হাইব্রিডের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সবক্ষেত্রে এর ব্যবহার সঠিক নয়। এর পেছনে থাকে লাভ আর অর্থ উপার্জনের অস্থিরতা। শিক্ষা ক্ষেত্রেও এই অস্থিরতা প্রবেশ করেছে। এক ঘণ্টার ক্লাস এখন ৫/১০ মিনিটে আনার এক অভিনব প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ যেন হাইব্রিড শিক্ষা। অনেকে আবার এসব মডেল বা আদর্শকে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল উদ্ভাবনের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। শিক্ষা মননশীলতার বিষয়, স্থিতাবস্থায় মননশীলতার যে শিক্ষা গ্রহণ করা হয় তার সঙ্গে প্রযুক্তির এই ব্যবহারে সংক্ষিপ্ত শিক্ষা পদ্ধতির কোনো মিল তো দূরে থাক সূত্রও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কি আমাদের পূর্বসূরিরা কিংবা যতীন সরকারের মতো আদর্শ শিক্ষকরা অযথা সময় নষ্ট করতেন? মননশীলতা এক বা দুই দিনে গড়ে ওঠে না, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, শ্রদ্ধাবোধ আর শিক্ষকের শিক্ষণ পদ্ধতি একজন আদর্শ ছাত্র গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইদানীং ইউটিউবের কল্যাণে কিছু ব্যক্তিকে দেখা যায় যারা নিজেরাই বলেন আমি শিক্ষক কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের আচার-আচরণ, বাচনভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব কোনো কিছুতেই একজন আদর্শ শিক্ষক বলে মনে হয় না। বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এরা বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজে শিক্ষকরা হচ্ছেন অত্যন্ত আদর্শবান। সবার শ্রদ্ধার পাত্র। অন্যান্য জীবিকার চাইতে শিক্ষকের জীবিকা মহৎ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু আজকাল কিছু শিক্ষক নামধারী ব্যক্তিকে দেখলে এই গুণগুলো আছে বলে মনে হয় না। অনেক শিক্ষকই আছেন, যারা শিক্ষকসুলভ আচরণ করেন না। আবার সংবাদপত্রের পাতা খুললেও অনেক শিক্ষকের অসদাচরণের সংবাদ দেখা যায়। এতে শিক্ষক শব্দটির মর্যাদাহানি হয়। সুতরাং এটাও মনে রাখতে হবে, শিক্ষকতা করলেই সবাই শিক্ষক হয় না, আদর্শ শিক্ষক তো দূরের কথা।

 

পরিশেষে ইত্যাদির সাক্ষাৎকারে বলা অধ্যাপক যতীন সরকারের একটি কথা দিয়েই শেষ করতে চাই এই লেখা। ইত্যাদিতে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘এখনকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘একটাই উপদেশ তাদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী পাঠ করতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে সত্যিকার শিক্ষা লাভ কত পরিশ্রমের, কত কষ্টের।’’ আসলেই আমাদের শিক্ষা এখন পরীক্ষামুখী, পাঠমুখী নয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার বাড়ানো যায় কিন্তু সত্যিকারের যোগ্য, দক্ষ ও শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলা যায় না।

 

আমরা বলি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর আর বিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের স্থান। কোচিং ক্লাস কিংবা ইউটিউবের ব্যবসায়িক কনটেন্ট সত্যিকার শিক্ষা লাভের স্থান নয়। মনে রাখতে হবে সুশিক্ষা হয় সৎ চিন্তায় এবং অনুসরণে। এমন কাউকে অনুসরণ করা উচিত নয় শিক্ষা বিস্তারের আড়ালে যার কোনো ব্যবসায়িক ধান্দা আছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আদর্শ। শুধু শিক্ষার্থীরই নয়, সমাজেরও। শিক্ষকের পঠন-পাঠন, বচন-বাচন, চলন-বলন, আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক যে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটায় তার অনুশীলন করেই বিকশিত হয় সমাজ। সব শিক্ষকই শিক্ষক নয়। সব শিক্ষকই আলোকিত করে না। সুতরাং ‘আলোকিত’ নয় ‘আলুকিত’ মানুষের পাল্লায় পড়ে শিক্ষার আলোও যদি ‘আলু’ হয়ে যায় তাহলে আলু যেমন মাটির নিচে জন্মে, শিক্ষারও তেমনি অকাল সমাধি ঘটবে।

 

প্রিয় পাঠক, শুরু করেছিলাম নীতি দিয়ে আমি ছোট্ট তিনটি নীতির কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি-রাজনীতি, সমাজনীতি আর শিক্ষানীতি। আসলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নৈতিকতা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, উন্নত নীতি আদর্শের স্পর্শে, পরামর্শে, উৎকর্ষের পথে এগিয়ে যায় মানুষ। তার ওপর স্থাপন করে বিশ্বাস। আমরা সেই বিশ্বাসেরই আশ্বাস পেতে চাই নীতিনির্ধারক প্রণীত বিভিন্ন নীতিমালা ও তার যথার্থ প্রয়োগের ওপর। তবেই নীতির প্রতি ভীতি নয় প্রীতি জন্মাবে সবার।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি আলালের

» থানায় এসে কেউ যেন সেবা বঞ্চিত না হয়: ডিএমপি কমিশনার

» ফ্যাসিস্ট শক্তি বিদায় হওয়ার পর আমরা আজ কথা বলতে পারছি

» অটোরিকশা চালকদের জুরাইন রেলগেট অবরোধ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ

» মাদক মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

» বিশেষ অভিযানে ২ দিনে কিশোর গ্যাং দলের সন্দেহে ১৯ জন আটক

» পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ওয়ান শুটারগান ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার

» ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: উপদেষ্টা আদিলুর রহমান

» ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

» ভাষা সৈনিক আজিজুল জলিল আর নেই

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নীতি ভীতি

ছবি: সংগৃহীত

 

হানিফ সংকেত :আজকাল কিছু কিছু রীতিনীতি দেখে রীতিমতো ভীতি জাগে। যদিও আমরা সবাই চাই নীতির প্রতি সবার একটু প্রীতি থাক এবং নীতি মেনে যোগ্যতার বলেই মানুষ যোগ্য স্থানে যাক। তবে অনেকেরই এই নীতির প্রতি প্রীতি বেশ ভীতিকর। কারও আবার প্রীতিকর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন নীতির? এখন তো আবার নীতিরও নানান প্রকারভেদ আছে। সুনীতি, কুনীতি, দুর্নীতি, এরপর আছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি এমনই আরও অনেক নীতি। এসব নীতি প্রীতির পাশাপাশি রয়েছে স্বজনপ্রীতি। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আর এক নীতি ‘ভিসানীতি’, যে নীতি দেশে ঝড় তুলেছে। রাজনীতি আর ভিসানীতি এখন অনেকটা সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভিসানীতির প্রতি রয়েছে কারও প্রীতি, কারও ভীতি আবার কারও কাছে এই নীতি নীতিবিরুদ্ধ, কারও কাছে নীতিসংগত। আবার কিছু কিছু নীতি আছে যাকে বলা হয় শান্তির নীতি, স্বস্তির নীতি, আস্থার নীতি অর্থাৎ এক একটি এক এক রাস্তার নীতি। কিছু নীতিকথা, নীতিবাক্য বা কারও নীতিজ্ঞান নীতিসম্মত নয়। যেমন ‘সদা সত্য কথা বলিবে’- বহুল ব্যবহৃত একটি নীতিবাক্য। ‘সৎপথে চলুন’ কিংবা ‘সততাই মহৎ গুণ’-এসব নীতিবাক্য এখন অনেকটা স্মৃতি হয়ে গেছে। কবে শুনেছি সেটাই ভুলতে বসেছি, মেনে চলা তো দূরের কথা। কাল যেমন বদলায়, তেমনি কালের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় এসব নীতিকথা। বদলায় রীতি-নীতি, প্রেম-প্রীতি, ভয়-ভীতি, শিল্প-সংস্কৃতি কিংবা সম্প্রীতি এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে স্মৃতিও হয়ে যায় বিস্মৃতি। মূল্যবোধের অভাবে মানুষের স্বভাবে অনেক কিছুর প্রভাব পড়ে, তাই নিয়ম নীতি ভুলে বাঁকা পথে চলে মানুষগুলোই বদলে যায়। ধারণ করে ভিন্নরূপ, তখনই প্রশ্ন ওঠে-এরা কি ভদ্রলোক নাকি প্রবঞ্চক?

 

রাজনীতির কথাই ধরুন। এর মধ্যেও একটা নীতি আছে। আবার যারা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেন, তারা নেতা- এই নেতা এবং নীতিকে অনেকে সমার্থক করে ফেলেন। তখনই ওঠে আপত্তি, ঘটে বিপত্তি। মনে রাখতে হবে, নেতার কথাই নীতি নয়, নীতির ধারক হচ্ছেন নেতা। কারণ অনেক নেতার প্রিয় নীতির নাম দুর্নীতি, যা এখন মহামারির রূপ ধারণ করেছে। নীতি শব্দের পূর্বে ‘দু’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে এই শব্দটি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ নীতির খেলাপ। যা অন্যায়, অনিয়ম, নীতিবিরুদ্ধ সেটাই দুর্নীতি। প্রেম-ভালোবাসা, হিংসা-বিদ্বেষের মতো মানুষের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থান করছে সুনীতি ও দুর্নীতি। দুর্নীতি পরায়ণ হলেই মানুষ হয়ে ওঠে অমানুষ। দুর্নীতির প্রধান কারণ হচ্ছে লোভ। অক্সফোর্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক বুকম্যানের একটি উক্তি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে বটে; কিন্তু সবার লোভ মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়’। এই লোভের পাপে দেশে দেশে আর্থিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এখন অনেকেই দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নীতিজ্ঞানের অভাবে এসব ক্ষেত্রে পরিমিতি বোধেরও অভাব দেখা দিয়েছে। দুর্নীতির গতি আর নীতির দুর্গতি অতিশয় ক্ষতির প্রভাব ফেলছে সর্বত্র। নীতিহীন মানুষেরা সারাজীবন প্রীতিহীন রয়ে যায় মানুষের অন্তরে। কারণ মানুষ তাকেই ভালোবাসে যার নীতি ও আদর্শ আছে। সেজন্য রাজনীতিতেও দেখা যায় কেউ গালি খায়, কেউ তালি পায়। পায় ভালোবাসা ও সমর্থন। ফলে নীতিবানদের সঙ্গেই সবার প্রীতিময় সম্পর্ক থাকে। এখন আবার রাজনীতির মাঠে ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। অন্যসব ইস্যু ছাপিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে। সুতরাং রাজনীতির এই তর্ক-বিতর্ক, সুতর্ক-কুতর্ক জাতীয় আলোচনা বাদ দিয়ে একটু সমাজনীতিতে যাই।

আমাদের বিয়ে-শাদিতে সামাজিকভাবে কিছু নিয়মনীতি বা রীতিনীতি মানা হয়। আর বিয়ে-শাদির বিষয়টাই আনন্দ উৎসবের। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- সেই আনন্দটা কেমন হবে? সেজন্য কি বিদেশি রীতিনীতি অনুসরণ করতে হবে? নাকি আমাদের সংস্কৃতিকেই প্রাধান্য দিতে হবে? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, পত্র-পত্রিকায় দু-একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের আনন্দ-উৎসব পালনের যে দৃশ্য দেখলাম তাতে একটু কষ্টই পেলাম। এদের মধ্যে দু-একটি যারা জুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিত। এরা আবার মানুষকে অনেক কিছু শেখায়ও। অনেক রীতিনীতি, বিদ্যা-বুদ্ধি-যাকে বলা হয় মোটিভেশন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ের সময় এদের পাশ্চাত্য ঢঙে পরিবেশিত ‘কালা চশমা’ জাতীয় হিন্দি গানের সঙ্গে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় নৃত্য করতে দেখে তাদের অনুসারীরা কী শিখছে? এই প্রজন্মকে তারা কী শেখাচ্ছে? শুধু তাই নয়, বধূ বেশে কনেও দেখলাম নাচছে। আবার গর্ব করে বলছে, তাদের হান্ড্রেড মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। এটা কি কোনো শিক্ষামূলক ভিডিও যে, ভাইরাল হলে গর্ব করতে হবে? যদিও ভাইরাল শব্দটা ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে একটি পচনশীল শব্দ। আমি মনে করি, ভাইরাল একটি সিরিয়াস ভাইরাস। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেরই দু-তিন শ মিলিয়নের ভাইরাল ভিডিও রয়েছে, যা অপেশাদার কিছু ছেলেমেয়ে বানিয়েছে এবং যার অধিকাংশই রুচিশীল নয়। কিছু আছে প্র্যাঙ্ক ভিডিও। এসব ভাইরাল ভিডিওর সমাজে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারা সেটা চায়ও না। তাদের উদ্দেশ্য ব্যবসা করা। তাদের নীতি একটাই- যত বেশি ভিউ তত বেশি লাভ। তারা সমাজের রীতিনীতি অর্থাৎ সমাজনীতি নিয়ে চিন্তিত নয়। কিন্তু যারা সমাজে জ্ঞান দান করেন, শিক্ষার্থীদের নীতিকথা বলেন, সদুপদেশ দেন, দিকনিদের্শনা দেন, তাদের কাছ থেকে এসব ভাইরাল ভিডিও কারও কাম্য নয়।

 

আমাদের তো গর্ব করার মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সেই সংস্কৃতিকে ভালোবাসি, আমাকে আনন্দ দেয়। আর সেজন্য আমি আমার সন্তানের বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রটি করেছি নকশিকাঁথা দিয়ে। যেখানে অর্ধশতাধিক নকশি শিল্পী সুচের প্রতিটি ফোঁড়ে ফোঁড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের সংস্কৃতি। সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠিত বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র দিয়ে যন্ত্রসংগীতের ব্যবস্থা করেছি। ছিল একতারা, দোতারা, বাঁশি, ঢোল, তবলা, সানাই, করতাল, খমক, হারমোনিয়াম-এসব বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ বাদকবৃন্দ। আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন শামসেল হক চিশতী ওরফে চিশতী বাউল। প্রতিটি অতিথি এক ঝলক হলেও সেখানে থেমেছেন, হৃদয় দিয়ে উপভোগ করেছেন আমাদের মাটির গান-বাদ্য। আসলে এক একজনের আনন্দ এক এক রকম। আমাদের পারিবারিক-সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। ইদানীং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসব বিদেশি আদলে বিশেষ করে হিন্দি বা বলিউডি নাচ-গান বেশি দেখা যায়। এক অদ্ভুত বিকৃত শব্দ করে ডিজেরা এসব গান বাজিয়ে তরুণ-তরুণীদের মন ভিজিয়ে দেয়। অথচ আমাদের কত সুন্দর হলুদের গান আছে। ‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ-বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা করমচা রঙ বৌ’-কিন্তু এই প্রজন্মের এসব ডিজে প্রিয় ছেলেমেয়েদের অনেকেই বোধকরি এই গানই শোনেনি। অথচ ‘কালা চশমা’ শুনলেই তাদের লম্ফঝম্ফ শুরু হয়ে যায়। শুধু নাচ-গানই নয়, চোখেও থাকে কালা চশমা। থাকে বলিউড ছবির আদলে সাজসজ্জা, নৃত্য মুদ্রা। বলাবাহুল্য, শুনেছি এ জন্য তারা মহড়াও দিয়ে থাকে। আমি এক বিয়েতে দেখলাম বিয়ের কনে কিছু বান্ধবী পরিবেষ্টিত হয়ে নাচতে নাচতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছে। অথচ একসময় কনেকে দেখেছি শান্ত-নম্র-লাজুক ভঙ্গিতে হেঁটে আসছে, অভিভাবকরা লাজে নম্র কনেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আগে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় কনে তার মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদত। এখন সে দৃশ্য খুব কমই চোখে পড়ে। এখন আমরা অনেক স্মার্ট! যে জীবনে নাচেনি সেও হাজার হাজার লোকের সামনে নাচছে। আর এতে অনেকে আনন্দও পাচ্ছে।

 

প্রযুক্তির কল্যাণে অনেকেই এখন বিদেশি সংস্কৃতিকে নিজের করে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, আমরা অনেক কিছু দেখব কিন্তু নিজেরটাকে কখনো বিসর্জন দেব না। আমরা ভালোটা নেব, খারাপটা বর্জন করব। ইত্যাদিতে এ কথাগুলো আমরা প্রায়শ বলি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী গানগুলো আমাদের মতোই হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই এর পরিবর্তন হবে, তবে ঐহিত্য ধ্বংস করে নয়। আমরা গান ঠিক রেখে প্রয়োজনে এর বাদ্য-বাজনায় পরিবর্তন আনব, আধুনিক করব এবং অনেকে করছেও। এমনকি গত ইত্যাদির নেত্রকোনা পর্বে আমরা কুদ্দুস বয়াতি ও ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালাগানটি আধুনিক বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজিয়েছি। যা প্রশংসিত হয়েছে।

 

আমাদের সংস্কৃতি আমাদের অহংকার। কিন্তু আকাশ সংস্কৃতির যুগে-হুজুগে আমাদের জীবনযাত্রার প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে। আমাদের জাতিগত সত্তা নিয়ে আমাদের আত্মসম্মানবোধের অভাবের কারণেই এসবের প্রবণতা বেড়েছে। এক যুগ আগেও প্রযুক্তি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে ছিল না, তাই এসব বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের প্রভাবিত করতে পারেনি। তারপরও বলব নববর্ষ পালন উৎসব তো আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। সেখানে কিন্তু সবাই দেশীয় পোশাক পরেই যান। উৎসব মেলায় বাজতে থাকে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র। শিল্পীরা গাইতে থাকেন মাটির গান। সেখানেও গান শুনে দলে দলে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই নাচতে থাকে। কই সেখানে তো বলিউড মার্কা পোশাক বা ‘কালা চশমা’ জাতীয় গানের প্রয়োজন হয় না। সুতরাং আমাদের প্রতিটি সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানগুলোতে এভাবে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে থাকলে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

 

রাজনীতি, সমাজনীতির পরে একটু শিক্ষানীতির প্রসঙ্গে আসা যাক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ইত্যাদির নেত্রকোনা পর্বে আমরা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিলাম। শিক্ষকতা করতে করতে যিনি এখন একজন গণশিক্ষক। ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং দীর্ঘ চার দশক একাগ্রচিত্তে শিক্ষকতার পর অবসর নেন। আমাদের দেশে অনেক ‘স্যার’ আছেন যারা শিক্ষকতা করে স্যার হলেও তলে তলে আরও অনেক কিছু করেন। আমি না লিখলেও একটু চিন্তা করলেই আপনাদের চোখের সামনে সেসব স্যারদের চেহারাগুলো ভাসবে। অধ্যাপক যতীন সরকার সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ইত্যাদিতে শিক্ষাবিদ যতীন সরকার আমাদের শিক্ষানীতির দুর্বলতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আমার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ১৯৫৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেছেন, তখন পাসের হার ছিল ৩৮%। আর এখন এই হার পারলে ১০০ এর ওপরে চলে যায়। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, “আগের শিক্ষকরা শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রচুর পড়াশোনা করতেন।” তাঁর ‘শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধ’ গ্রন্থে লিখেছেন, “এখন আর কেউ শিক্ষার্থী নেই, সবাই পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীও নয়, যেন নম্বরার্থী।” তিনি আরও লিখেছেন, “এখনকার যুগে অধ্যবসায়ী বিদ্যার্থী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, চতুর পরীক্ষার্থী হলেই চলে। এক সময় পরীক্ষার্থীদের এ কাজে সহায়তা করার জন্য ‘নোট’, ‘ডাইজেস্ট বা সিউর সাকসেস’ নিয়ে এগিয়ে আসেন এক্সপার্ট হেডমাস্টার বা এক্সপেরিয়েন্সড প্রফেসররা। চতুরতায় আরও সম্প্রসারণের ফলে তারা ভাষার ভান্ডারে ‘গণ টোকাটুকি’ বলে একটি শব্দের সংযোজন ঘটায়। ফলে শিক্ষার যা হওয়ার তাই হয়েছে।” এ যুগে এসে দেখা যায়, কেউ কেউ আবার শিক্ষাকে কনটেন্ট বানিয়ে ফেলেছে। দেদার চলছে শিক্ষা নিয়ে কনটেন্ট ব্যবসা। ইউটিউব খুললেই শিক্ষকের ছড়াছড়ি, কেউ ব্ল্যাকবোর্ডে শেখাচ্ছে, কেউ অভিনয় করিয়ে শেখাচ্ছে, কেউ গল্প বলে শেখাচ্ছে। স্বল্প মেয়াদি মিনিটভিত্তিক এসব শিক্ষাকে অনেকে হাইব্রিড শিক্ষা হিসেবে দেখেন। এক সময় ক্রিকেট খেলা দেখেছি সাদা পোশাকের দীর্ঘমেয়াদি টেস্ট ক্রিকেট। এরপর ৫০ ওভার, এরপর বাণিজ্য ঢুকে গিয়ে শুরু হলো টি-টোয়েন্টি। এরপর দিনে দিনে আত্মপ্রকাশ করে ব্যক্তিগত দল। দলের মালিক হয় কোনো ধনকুবের কিংবা অভিনেতা, কেউবা ব্যবসায়ী। একসময় যে ক্রিকেট শুধু দেশের প্রতিনিধিত্ব করত সেটা হয়ে যায় বাণিজ্যিক খেলা। খেলোয়াড়দের কেউ কেউ হয়ে যান ব্যবসায়ী। ধৈর্যের পরীক্ষা রূপান্তরিত হয় অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশে। আর এই অস্থিরতা সবকিছুতেই দ্রুত ফলাফল চায়। সেটা রাস্তায় চলাচল থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য, মৎস্য চাষ কিংবা পোলট্রিফার্ম সব জায়গায় ঢুকে পড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই হাইব্রিডের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সবক্ষেত্রে এর ব্যবহার সঠিক নয়। এর পেছনে থাকে লাভ আর অর্থ উপার্জনের অস্থিরতা। শিক্ষা ক্ষেত্রেও এই অস্থিরতা প্রবেশ করেছে। এক ঘণ্টার ক্লাস এখন ৫/১০ মিনিটে আনার এক অভিনব প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ যেন হাইব্রিড শিক্ষা। অনেকে আবার এসব মডেল বা আদর্শকে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল উদ্ভাবনের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। শিক্ষা মননশীলতার বিষয়, স্থিতাবস্থায় মননশীলতার যে শিক্ষা গ্রহণ করা হয় তার সঙ্গে প্রযুক্তির এই ব্যবহারে সংক্ষিপ্ত শিক্ষা পদ্ধতির কোনো মিল তো দূরে থাক সূত্রও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কি আমাদের পূর্বসূরিরা কিংবা যতীন সরকারের মতো আদর্শ শিক্ষকরা অযথা সময় নষ্ট করতেন? মননশীলতা এক বা দুই দিনে গড়ে ওঠে না, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, শ্রদ্ধাবোধ আর শিক্ষকের শিক্ষণ পদ্ধতি একজন আদর্শ ছাত্র গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইদানীং ইউটিউবের কল্যাণে কিছু ব্যক্তিকে দেখা যায় যারা নিজেরাই বলেন আমি শিক্ষক কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের আচার-আচরণ, বাচনভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব কোনো কিছুতেই একজন আদর্শ শিক্ষক বলে মনে হয় না। বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এরা বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজে শিক্ষকরা হচ্ছেন অত্যন্ত আদর্শবান। সবার শ্রদ্ধার পাত্র। অন্যান্য জীবিকার চাইতে শিক্ষকের জীবিকা মহৎ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু আজকাল কিছু শিক্ষক নামধারী ব্যক্তিকে দেখলে এই গুণগুলো আছে বলে মনে হয় না। অনেক শিক্ষকই আছেন, যারা শিক্ষকসুলভ আচরণ করেন না। আবার সংবাদপত্রের পাতা খুললেও অনেক শিক্ষকের অসদাচরণের সংবাদ দেখা যায়। এতে শিক্ষক শব্দটির মর্যাদাহানি হয়। সুতরাং এটাও মনে রাখতে হবে, শিক্ষকতা করলেই সবাই শিক্ষক হয় না, আদর্শ শিক্ষক তো দূরের কথা।

 

পরিশেষে ইত্যাদির সাক্ষাৎকারে বলা অধ্যাপক যতীন সরকারের একটি কথা দিয়েই শেষ করতে চাই এই লেখা। ইত্যাদিতে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘এখনকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘একটাই উপদেশ তাদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী পাঠ করতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে সত্যিকার শিক্ষা লাভ কত পরিশ্রমের, কত কষ্টের।’’ আসলেই আমাদের শিক্ষা এখন পরীক্ষামুখী, পাঠমুখী নয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার বাড়ানো যায় কিন্তু সত্যিকারের যোগ্য, দক্ষ ও শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলা যায় না।

 

আমরা বলি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর আর বিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের স্থান। কোচিং ক্লাস কিংবা ইউটিউবের ব্যবসায়িক কনটেন্ট সত্যিকার শিক্ষা লাভের স্থান নয়। মনে রাখতে হবে সুশিক্ষা হয় সৎ চিন্তায় এবং অনুসরণে। এমন কাউকে অনুসরণ করা উচিত নয় শিক্ষা বিস্তারের আড়ালে যার কোনো ব্যবসায়িক ধান্দা আছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আদর্শ। শুধু শিক্ষার্থীরই নয়, সমাজেরও। শিক্ষকের পঠন-পাঠন, বচন-বাচন, চলন-বলন, আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক যে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটায় তার অনুশীলন করেই বিকশিত হয় সমাজ। সব শিক্ষকই শিক্ষক নয়। সব শিক্ষকই আলোকিত করে না। সুতরাং ‘আলোকিত’ নয় ‘আলুকিত’ মানুষের পাল্লায় পড়ে শিক্ষার আলোও যদি ‘আলু’ হয়ে যায় তাহলে আলু যেমন মাটির নিচে জন্মে, শিক্ষারও তেমনি অকাল সমাধি ঘটবে।

 

প্রিয় পাঠক, শুরু করেছিলাম নীতি দিয়ে আমি ছোট্ট তিনটি নীতির কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি-রাজনীতি, সমাজনীতি আর শিক্ষানীতি। আসলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নৈতিকতা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, উন্নত নীতি আদর্শের স্পর্শে, পরামর্শে, উৎকর্ষের পথে এগিয়ে যায় মানুষ। তার ওপর স্থাপন করে বিশ্বাস। আমরা সেই বিশ্বাসেরই আশ্বাস পেতে চাই নীতিনির্ধারক প্রণীত বিভিন্ন নীতিমালা ও তার যথার্থ প্রয়োগের ওপর। তবেই নীতির প্রতি ভীতি নয় প্রীতি জন্মাবে সবার।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com