সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

ফাইল ফটো

 

প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ।

 

বুধবার পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ হানিফ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, এই আইন সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এতদিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, তা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশরে অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা—এ বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়ে গেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনের সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি। বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে দুটি ধারা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাইবার নিরাপত্তা আইনে শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে।

 

আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত একধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদ চায়— ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মহড়া চালাবে ভারতের বিমানবাহিনী

» এনসিপির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান হলেন আদীব

» জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব করেছি: সারজিস আলম

» ১৭ বছর পর মাকে স্পর্শ করলেন জোবাইদা

» রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট চায় এনসিপি

» পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো সহায়তা চাননি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» তরুণদের রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» তরুণদের এআই প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে সরকার : আসিফ মাহমুদ

» জামালপুরে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কার্মশালা

» দেওয়ানগঞ্জে হরিণের কস্তুরী ও ভারতীয় প্রসাধনীসহ একজন গ্রেপ্তার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

ফাইল ফটো

 

প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ।

 

বুধবার পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ হানিফ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, এই আইন সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এতদিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, তা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশরে অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা—এ বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়ে গেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনের সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি। বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে দুটি ধারা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাইবার নিরাপত্তা আইনে শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে।

 

আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত একধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদ চায়— ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com