ডিমের বাজারে তেলেসমাতি

ফাইল ছবি

 

সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় ডিমের দাম নিয়ে রীতিমতো তেলেসমাতি চলছে। ৭ আগস্ট থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গরিবের আমিষখ্যাত ডিমের দাম। এক ডজন ডিমের দাম ছাড়িয়েছে ১৬৫ টাকা, কোথাও বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। খুচরা দুটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই দাম বাড়তি। পোলট্রি শিল্প অ্যাসোসিয়েশন বলছে, করপোরেট ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ডিম ও মুরগির দাম বাড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিমের বাজারের কারসাজি খুঁজতে আজ থেকে সারা দেশে অভিযানে নামার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

 

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি হালি ডিম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গত বছর জুনেও ৮৬-৯০ টাকায় এক ডজন ডিম পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ১৪ মাসের ব্যবধানে    দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। খিলক্ষেতের খুচরা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগে এক ডজন লাল ডিম ১৪৪ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ টাকায়। কিনতেই হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। তার মধ্যে একটা ডিম ফেটে গেলে বা নষ্ট হলেই ১৩ টাকা লোকসান। হঠাৎ কেন ডিমের দাম এভাবে বাড়ছে সেটা আমরাই বুঝতে পারছি না। একদিকে বাজারে মাছ-মাংসের দাম চড়া, তার মধ্যে ডিমের দাম এভাবে বাড়ায় নিম্নআয়ের পরিবারগুলোয় আমিষের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা অপু বলেন, গত বছরও এক ডজন ডিম ৯০ টাকায় কিনেছি। এখন ১৭০ টাকা দাম। বাচ্চাকে প্রতিদিন সকালে একটা ডিম খাওয়াতাম, এখন সেটা বাদ দিয়েছি। মাছ-মাংসও খাওয়াতে পারছি না। খেয়ে-পরে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ডিমের দাম হঠাৎ বৃদ্ধির কারণ জানতে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদারকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য করপোরেট সিন্ডিকেট দায়ী। ফিডের দাম বাড়িয়ে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে তাদের দিতে চুক্তি করলে তারা কিছুটা কম দামে ফিড ও মুরগির বাচ্চা দেয়। অন্যথায় বেশি দামে ফিড কিনতে হয়। এ কারণে লোকসান দিতে গিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত। ফিড নিজেদের হওয়ায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম। ১৩ টাকায় বিক্রি করলেও লাভ থাকে। কিন্তু করে না। এসএমএস দিয়ে দাম বাড়ায়-কমায়। পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ১ কেজি ভুট্টার দাম ছিল ২৮ টাকা, ৫০ কেজির ১ বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ২৫০০ টাকা, ২০২২ সালের শুরুতেও ভুট্টার দাম একই থাকলেও ফিডের দাম বস্তায় ২০০ টাকা বাড়ে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লাগামহীন ফিডের দাম বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভুট্টার কেজি ৪১ টাকা হলে ফিডের ৫০ কেজি বস্তার দাম পৌঁছায় ৩ হাজার ৭৪০ টাকায়। মার্চে ভুট্টার দাম কমে ২৬ টাকার নিচে নামলেও ফিডের দাম কমানো হয় কেজিতে মাত্র ৩ টাকা। অথচ, বাড়ানো হয়েছিল কেজিতে ২০ টাকার বেশি। এখনো অনায়াসে প্রতি কেজি ফিডের দাম কমপক্ষে ১০ টাকা কমানো সম্ভব। তাহলে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ দেড় টাকা কমত। সরকারকে এটা দেখতে হবে। না হলে পোলট্রি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। ৫০ লাখ ক্ষুদ্র খামারি শেষ হয়ে যাবে। ডিম-মুরগি নিম্নআয়ের মানুষ খেতে পারবে না। এদিকে হঠাৎ ডিমের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডিমের আড়তে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মেসার্স নাসির অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ডিমের বড় একটি দোকানে ডিম কেনা এবং বিক্রির দামে বড় ফারাক দেখতে পেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়। ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে সারা দেশে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বড়াইগ্রামে চাঞ্চল্যকর জুঁই হত্যার ঘটনায় ৫ কিশোর গ্রেফতার

» স্বচ্ছ রাজনীতি চর্চা ও দূর্গম চরাঞ্চল উন্নয়নে আলোচনা সভা

» নতুন নামে পুরাতন ফ্যাসিবাদ ফিরে এসেছে: ছাত্রদল সভাপতি

» মালিকানা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই আমরা দীর্ঘদিন লড়াই করছি

» আওয়ামী লীগ কোনো ছোট শক্তি নয় : রাশেদ খান

» রেগে হেলমেট ফেলে দিলেন শাজাহান খান

» হামাসের হামলায় ৬ ইসরায়েলি সেনা হতাহত

» নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী তারিনের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

» সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টি

» দল নিবন্ধনে আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে আজ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ডিমের বাজারে তেলেসমাতি

ফাইল ছবি

 

সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় ডিমের দাম নিয়ে রীতিমতো তেলেসমাতি চলছে। ৭ আগস্ট থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গরিবের আমিষখ্যাত ডিমের দাম। এক ডজন ডিমের দাম ছাড়িয়েছে ১৬৫ টাকা, কোথাও বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। খুচরা দুটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই দাম বাড়তি। পোলট্রি শিল্প অ্যাসোসিয়েশন বলছে, করপোরেট ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ডিম ও মুরগির দাম বাড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিমের বাজারের কারসাজি খুঁজতে আজ থেকে সারা দেশে অভিযানে নামার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

 

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি হালি ডিম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গত বছর জুনেও ৮৬-৯০ টাকায় এক ডজন ডিম পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ১৪ মাসের ব্যবধানে    দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। খিলক্ষেতের খুচরা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগে এক ডজন লাল ডিম ১৪৪ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ টাকায়। কিনতেই হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। তার মধ্যে একটা ডিম ফেটে গেলে বা নষ্ট হলেই ১৩ টাকা লোকসান। হঠাৎ কেন ডিমের দাম এভাবে বাড়ছে সেটা আমরাই বুঝতে পারছি না। একদিকে বাজারে মাছ-মাংসের দাম চড়া, তার মধ্যে ডিমের দাম এভাবে বাড়ায় নিম্নআয়ের পরিবারগুলোয় আমিষের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা অপু বলেন, গত বছরও এক ডজন ডিম ৯০ টাকায় কিনেছি। এখন ১৭০ টাকা দাম। বাচ্চাকে প্রতিদিন সকালে একটা ডিম খাওয়াতাম, এখন সেটা বাদ দিয়েছি। মাছ-মাংসও খাওয়াতে পারছি না। খেয়ে-পরে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ডিমের দাম হঠাৎ বৃদ্ধির কারণ জানতে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদারকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য করপোরেট সিন্ডিকেট দায়ী। ফিডের দাম বাড়িয়ে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে তাদের দিতে চুক্তি করলে তারা কিছুটা কম দামে ফিড ও মুরগির বাচ্চা দেয়। অন্যথায় বেশি দামে ফিড কিনতে হয়। এ কারণে লোকসান দিতে গিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত। ফিড নিজেদের হওয়ায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম। ১৩ টাকায় বিক্রি করলেও লাভ থাকে। কিন্তু করে না। এসএমএস দিয়ে দাম বাড়ায়-কমায়। পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ১ কেজি ভুট্টার দাম ছিল ২৮ টাকা, ৫০ কেজির ১ বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ২৫০০ টাকা, ২০২২ সালের শুরুতেও ভুট্টার দাম একই থাকলেও ফিডের দাম বস্তায় ২০০ টাকা বাড়ে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লাগামহীন ফিডের দাম বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভুট্টার কেজি ৪১ টাকা হলে ফিডের ৫০ কেজি বস্তার দাম পৌঁছায় ৩ হাজার ৭৪০ টাকায়। মার্চে ভুট্টার দাম কমে ২৬ টাকার নিচে নামলেও ফিডের দাম কমানো হয় কেজিতে মাত্র ৩ টাকা। অথচ, বাড়ানো হয়েছিল কেজিতে ২০ টাকার বেশি। এখনো অনায়াসে প্রতি কেজি ফিডের দাম কমপক্ষে ১০ টাকা কমানো সম্ভব। তাহলে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ দেড় টাকা কমত। সরকারকে এটা দেখতে হবে। না হলে পোলট্রি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। ৫০ লাখ ক্ষুদ্র খামারি শেষ হয়ে যাবে। ডিম-মুরগি নিম্নআয়ের মানুষ খেতে পারবে না। এদিকে হঠাৎ ডিমের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডিমের আড়তে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মেসার্স নাসির অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ডিমের বড় একটি দোকানে ডিম কেনা এবং বিক্রির দামে বড় ফারাক দেখতে পেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়। ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে সারা দেশে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com