নঈম নিজাম : দেখতে দেখতে বেলা বয়ে যায়। পেরিয়ে যায় সময়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার গৌরবগাথা ইতিহাসের সাক্ষী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স এখন ৭৫ বছর। সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৪ বছর পার করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। মানুষের সামনে তুলে ধরেছে নিজেদের আকাশছোঁয়া অতীত ইতিহাস। আন্দোলন, সংগ্রাম, গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের প্রবীণ এই রাজনৈতিক দলটি। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিঘেরা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সাফল্য অনেক। আবার ব্যর্থতাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় সাফল্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান। তারও আগে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফায় ছিল স্বাধীনতার বীজ। এ দলের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে গঠিত হয়েছিল প্রবাসী সরকার। পরিচালিত হয়েছিল মুক্তিসংগ্রাম।
স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার রেকর্ডও আওয়ামী লীগের। আবার জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতনও এ দলটি সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সূচনা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে। ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী ও তার এ-দেশীয় দোসররা মুহূর্তে চেহারা বদলে ফেলল। তারা অবস্থান নিল বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে। একসঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দেখল প্রতিপক্ষ হিসেবে। মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হতে থাকল ঢাকার নবাববাড়ি থেকে। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে জোর করে তুলে দিল ভারতমুখী জাহাজে। সেখানেও নিজের তৈরি করা বাড়িতে তিনি থাকতে পারলেন না। কর ফাঁকিসহ নানামুখী হয়রানিমূলক মামলায় সোহরাওয়ার্দীকে কলকাতা ছাড়তে হলো। তিনি চলে গেলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। শুরু করলেন আইন পেশা। ভারত বিভক্তির আগে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে রাজনীতি করতেন তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। দুজনের গভীর সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের প্রভাবের ধারাবাহিকতায় সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন। ধীরে ধীরে তাঁকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নতুন ধারায় প্রতিষ্ঠিত করলেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঢাকায় ছিলেন না। তাঁর অনুসরণকারীরা আগে থেকেই কঠিন বাস্তবতা বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁরা আলাদা অবস্থান নিতে থাকেন দলের ভিতরে। সবাই বুঝতে পেরেছিলেন ঢাকার নবাবদের খাঁচার ভিতরে বন্দি মুসলিম লীগ গণমানুষের পাশে থাকবে না। আর অভিজাত সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গণমানুষের পক্ষে থাকতে পারে না। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তানের শুরুতেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে ১৫০ মোগলটুলী হয়ে ওঠে তরুণ নেতাদের আলাদা ঠিকানা। রোজ গার্ডেনে বসেই সিদ্ধান্ত হয় আলাদা রাজনৈতিক দল গঠনের। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রোজ গার্ডেনে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। সারা দেশ থেকে ৩ শতাধিক প্রতিনিধি এতে যোগ দেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে। পাকিস্তানি নতুন শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে তিনিই সবার আগে পড়েছিলেন। সম্মেলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর বক্তব্যে দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি নতুন দল গঠনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে আওয়ামী মুসলিম লীগের যাত্রা হয়। কোষাধ্যক্ষ করা হয় ইয়ার মোহাম্মদ খানকে। সহসভাপতি ছিলেন আতাউর রহমান খান, আবদুস সালাম খান, সাখাওয়াত হোসেন, আলী আহমেদ ও আলী আমজাদ খান। কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু দলের প্রাণ হয়ে ওঠেন। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বেছে নিয়েছিলেন। স্পষ্টভাষী এই নেতা ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। পরে সাধারণ সম্পাদক হন। এ দায়িত্ব তিনি ১৩ বছর পালন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগকে। প্রগতিশীল নেতারা কঠিন বাস্তবতায় বুঝলেন, দলকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করতে হবে। দলের নাম থেকে বাদ দিতে হবে মুসলিম শব্দটি। মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে দলের নাম আওয়ামী লীগ করার সময় অনেকে দল ত্যাগ করেন। সমালোচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা পায় আওয়ামী লীগ নামটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভ্যন্তরীণ বিরোধে বারবার ভাঙনে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তিনটি ভাঙন দলকে বেশি সংকটে ফেলেছে। প্রথম ভাঙন ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের মাধ্যমে হয়। আন্তর্জাতিক কিছু নীতিমালার প্রশ্নে দলের ভিতরে মতবিরোধ দেখা দেয়। তারই জেরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দল ছাড়েন। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। আওয়ামী লীগের পরের বড় ভাঙনটি আসে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের সারা দেশের সাহসী নেতারা দল ছাড়েন। তারা আলাদা দল জাসদ গঠন করেন। জাসদের আড়ালের নেতা ছিলেন সিরাজুল আলম খান। সামনের নেতা ছিলেন মেজর (অব.) এম এ জলিল, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, হাসানুল হক ইনু, আ ফ ম মাহবুবুল হকসহ অনেকে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগের তরুণ নেতারা দল ছেড়ে বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচিতে নেমে পড়েন। মার্কিন দূতাবাসে হামলা, ভারতীয় হাইকমিশনারকে কিডন্যাপের চেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাওয়ের মতো নৈরাজ্যকর কর্মসূচি পালন করে জাসদ। তারা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেশে-বিদেশে। জাসদ এ সময় গণবাহিনী গঠন করে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। এ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে সৈনিক সংস্থা গঠন করেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এভাবে একটি সেনাবাহিনীর ভিতরে শৃঙ্খলাবিরোধী সংগঠন করার ঘটনা নজিরবিহীন। গণবাহিনীর নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন ৭ নভেম্বর অফিসার হত্যাকান্ড। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা এখনো মনে করেন, জাসদের ব্যাপক ধ্বংসাত্মক তৎপরতার কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের ডালপালার বিস্তার ঘটে। খুনিদের নিষ্ঠুরতার প্রস্তুতিও শুরু হয়। ইতিহাসের কাঠগড়ায় জাসদ এখনো নানা কারণে আলোচিত।
আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা ছিল আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠন। ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিরোধের জের এবারও দলের ভিতরে পড়ে। এর আগে জিয়াউর রহমানের শাসনকালে এক চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী করার। শেখ হাসিনা তখন ভারতে ছিলেন। দলের শীর্ষ নেতারা ভারতে গিয়ে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন সভানেত্রী করার কথা। তিনি সেই দায়িত্ব নিলেন। সে বছরই দেশে ফিরলেন। কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। এ সময় হুট করে দলে ভাঙনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিরোধের ধাক্কা মূল দলের ওপরও এসে পড়ে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবদুর রাজ্জাকের সারা দেশে অবস্থান ছিল। বিভক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গঠন করা হয় বাকশাল। বাকশাল তখন আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে এনেছিল। মেধাবী অনেক ছাত্রনেতা বুঝে না বুঝে জাসদের মতো যোগ দিয়েছিলেন বাকশালের জাতীয় ছাত্রলীগে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর সবার বিবেক জেগে ওঠে। ঐক্যের পক্ষে মতামত গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহিউদ্দিন আহমদ ও আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশালের নেতা-কর্মীরা আবার মূল দলে ফিরে আসেন। জাতীয় ছাত্রলীগ বিলুপ্ত হয়ে যায় মূলধারার ছাত্রলীগের সঙ্গে। জাসদের মতোই বাকশাল গঠন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক অপার রহস্য হয়ে আছে এখনো। কী কারণে কোন ষড়যন্ত্রে এমন হয়েছিল তা এখনো অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়।
ক্ষণে ক্ষণে আওয়ামী লীগকে পরীক্ষার ভিতর দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে। মোকাবিলা করতে হয়েছে কঠিন সব পরিস্থিতি। জাতির পিতাকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ চরম প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে। একই পরিস্থিতি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়ে আওয়ামী লীগকে পড়তে হয়েছিল। অস্তিত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরিকল্পনায় ছিল। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি বাংলাদেশ নামের একটি দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। সেই কঠিন সময় আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করেছিল আন্দোলন- সংগ্রামের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে মানুষ নেমে এসেছিল রাজপথে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৯৬৯ সালে হয়েছিল গণ অভ্যুত্থান। পাকিস্তানিরা বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। পাশাপাশি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় দেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সারা দেশের ভোটের উত্তাল পরিবেশকে কাজে লাগায়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এ নির্বাচনের বিশাল বিজয়ের প্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। ১৯৭১ সালের শুরু থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মানুষ স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হয়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সদ্যস্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দেয়নি চক্রান্তকারী খুনিরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড আওয়ামী লীগকে তছনছ করে দেয়। সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। ইতিহাসের এ নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা প্রতিরোধ গড়তে না পারা। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাকে রক্ষা করতে পারেনি তখনকার কোনো বাহিনী। ব্যর্থতা ছিল সবার। সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতার দায় আওয়ামী লীগের। একদিন আগে ক্ষমতার উৎসবে ছিলেন নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি ছিল। খুনিরা শুধু ঢাকার কিছু এলাকায় ছিল। সারা দেশে তাদের অবস্থান ছিল না। প্রতিবাদের মিছিল গর্জে উঠলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারত। তার পরও ১৫ আগস্ট সকালে হুট করে কাপুরুষের মতো পালিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন নেতারা। অনেক নেতা ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কর্মীরা ছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এখন সবাই বড় কথা বলছেন। ব্যর্থতার দায় সেদিনের সব নেতাকে নিতেই হবে। ১৫ আগস্ট দলীয়ভাবে প্রতিরোধ হলে ৩ নভেম্বরের ঘটনা ঘটত না।
বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার শেখ হাসিনাকেও দল চালাতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে চার দশকের রাজনীতিতে। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় দল চালাতে গিয়ে শেখ হাসিনা বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। একুশ আগস্ট তাঁকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। আল্লাহ তাঁকে সেদিন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাঁর হাত দিয়ে এ দেশের জন্য ভালো কিছু কাজ করার জন্য। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি দেশকে এগিয়ে নিতে সময় পাননি। আজ তাঁর মেয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের আগামীর পথ এত সহজ নয়। আগামীতে এ দলের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। টানা ক্ষমতায় থাকলে জটিলতা তৈরি হয় রাজনৈতিক দলের ভিতরে-বাইরে। হিসাবনিকাশ হয় চাওয়া-পাওয়ার। সব হিসাব মেলানো যায় না। এতে তৈরি হয় অভিমান। ভোট এলে অভিমানীদের ক্ষোভ-দুঃখগুলো উথলে ওঠে। তখন অনেকের বেহিসাবি কর্মে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর খারাপ সময় দেখলে উড়ে এসে জুড়ে বসা হাইব্রিডরা কেটে পড়ে। অভিমানীরা সবকিছু বুকের ভিতরে আরেক দফা লুকিয়ে দলের জন্য বেরিয়ে আসে। কাজ করে দলের জন্য। বঙ্গবন্ধুর মেয়ের জন্য।
আদর্শের সঙ্গে আপস করা যায় না। আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সব ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে দলটিতে কাজ করতে হয়। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। আওয়ামী লীগকে কঠিন বাস্তবতায় থেকেই সব করতে হচ্ছে। চলার পথে ভুল বোঝাবুঝি তৈরির লোকের অভাব নেই। সতর্ক থাকতে হবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও।
বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রভুত্ব নয়, কারও সাথে বৈরিতা নয়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর এ নীতিমালা মেনে চলছে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ভূরাজনীতির নানামুখী তৎপরতায় সবকিছু ঠিক রাখা অনেক কঠিন। তার পরও কাঠিন্য জয় করতে হবে দলটিকে।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন