লেখক মোঃ ফিরোজ খান : নয়না তুমি কেমন আছো??তোমার কালো দুটি চোখ বলছে তুমি ভালো নেই!কেনো নয়না?তোমার তো অনেক ভালো থাকার কথা ছিলো, আমার হাত দুটি ছেড়ে যখন চলে যাচ্ছিলে তখন তো বলে ছিলে তুমি তোমার মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছো আর কোনো দিন আমাকে নিয়ে ভাববেনা তুমি। তুমি অনেক সুখের আশায় আমার ভালোবাসা অসিকার করে চলে গেলে তবে আছ কি হলো তোমার?
এক জোড়া নীল চোখ সমুদ্রের বিশাল ঢেউ তুলে সুনামির মতো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘটনার শুরু দু’মাস আগে।
রাত এগারোটায় আমার কাজ শেষ হয়। তার দশ মিনিট পরই আমার রুটের বাস এসে থামে। আমার কাজ থেকে ঠিক দুই স্টপ পরেই মেয়েটিও উঠে নিয়ম করে।
তার মাথায় দীঘল সোনালী চুল। তার অদ্ভুত কমনীয় ত্বকে ঝর্ণার পানির সতেজতা। সে যখন হেটে এসে আমার সামনের সিটটায় বসে তখন তার সোনালী চুলগুলো আরব দেশীয় ঘোড়ার কেশরের মত ঢেউ খেলতে থাকে। আর তার সুগভীর অয়াত নীল চোখে মহাশুন্যের কালো গহ্বরের গভীরতা। কে জানে সেখানে হারিয়ে গেছে কত পুরুষ!
শুধু মেয়েটিকে দেখব বলে আমি মাঝেমাঝে ছুটির দিনেও কাজে গিয়ে বসে থাকি। আমার কলিগেরা হাসাহাসি করে। বলে,”কি হে বন্ধের দিনে এখানে কি করছো?
আমিও কৌতুক করে বলি,”তোমাদের না দেখে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারি না জানেমান।”
আমি জানি মেয়েটির চোখে চোখ পড়ার পর থেকেই আমি আর আমি নেই। আমি বদলে গেছি। আমার প্রতিটি মুহুর্ত কাটে তাকে ভেবে। আমি তার সোনালী চুলে হাত বুলিয়ে দেই। তার মোহনীয় ত্বকে নাক দিয়ে দাগ কেটে যাই। তার দীর্ঘ গ্রীবায় আঁকি আলতো চুমুর পরশ।
অদ্ভুত এক ভালো লাগায় আমি ছেয়ে থাকি সারাক্ষণ। ভাবি বাস্তবে না হোক সে আছে আমার কল্পনায়। এটাই কি কম পাওয়া? এমনভাবে কাউকে কোনদিন ভালবাসিনি। বিশুদ্ধ ভালবাসায় যে সুখ পৃথবীর আর কোন কিছুর সাথে তার তুলনা হয় না।
সেদিনও কাজ শেষে বাসে চেপে বসেছি। আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি মেয়েটি কখন উঠবে। সামান্য সময়ের অপেক্ষা। তাতেই আমার মনে হয় অনন্ত কাল। দুই স্টপ পরে বাস থামে। সোনালী চুলে ঢেউ তুলে উঠে আসে মেয়েটি। আমি দম বন্ধ করে তাকিয়ে থাকি।
আমার ভুবন কাঁপিয়ে দিয়ে আমার পাশে এসে বসে মেয়েটি। মিষ্টি করে হেসে বলে,”তোমাকে দৈনিক দেখি।”
নিজেকে কোনমতে সামলে বলি,”আমিও তোমাকে দৈনিক দেখি।”
হাত বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটি বলে,”আমি নয়না। তুমি?”
হাত মিলিয়ে বলি,”আমি নয়ন”
নয়নার সাথে দারুন কথা জমে যায় আমার। জানতে পারি সে এদিকেই কোথাও নাইট শিফটে জব করে। তবে আজ তার কাজ নেই। বন্ধের দিন রাতে সে বাসে একা একা ঘুরে বেড়ায়। একথা সেকথায় কখন আমার বাসার স্টপেজে চলে এসেছি টের পাইনি।
আমি কাতর গলায় বলি,”আমাকে এখানে নামতে হবে।”
সেও উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”এখানে আমিও নামবো।”
বাস থেকে নামতে নামতে জিজ্ঞাস করি,”এখন কই যাবে?”ঐ তো সামনের বিল্ডিংয়ের পরের বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় আমার বাসা।নয়ন” ও তাই নাকি আমিও তোমার বিল্ডিং থেকে কিছু দূরে হয়তোবা 2/3 মিনিট হেটে গেলেই আমার বাসা।ও কে তাহলে এখন চলি আবার দেখা হবে।
কে জানে ঐ দিনের যাওয়াই নয়নার শেষ যাওয়া!আমি আজও নয়নার কথা ভুলতে পারি না;মিষ্টি হাসি, ঠোঁটের নিচে কালো তিল,মায়াবী চোখ, হাসলে গালের নিচে টোল পরে।সেই নয়না কিভাবে ছলনাময়ী হতে পারে?ভালোবাসার মর্যাদা দিতে না পারলে কাউকে ভালোবাসার কথা বলতে নেই।নয়না তুমি ছলনাময়ী হতে পারো না আজও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কারো সঙ্গে ঘর করছো?কিভাবে সম্ভব?তুমি তো শুধুমাত্র আমাকে ভালোবেসে সারাটি জীবন একসাথে থাকতে চেয়েছিলে তাহলে কেনো কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলে না?
একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম তুমি তোমার বরকে নিয়ে সুখে শান্তিতে নেই!এক দুদিন পর পর তোমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়?আমি তো কখনও এটা আশা করিনি।আমি কষ্টের মধ্যে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে তোমাকে সবসময় সুখে শান্তিতে দেখতে চেয়েছি কেননা আমি যে আজও তোমাকে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি, আমার ভালোবাসার মধ্যে কোনো ভুল ছিলনা; তাইতো আজও ঐ বাস স্টোপেজে আজও অপেক্ষা করি যদি তুমি ফিরে এসে দৌড়ে ছুটে বাসে উঠে আমার ছিটের পাশে বসবে আর তোমার কোমলমতি হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার হাতে হাত রেখে মাথা আমার ঘাড়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়বে।কিন্তু তুমি আর কখনও আসবেনা।এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি আমার ভালবাসা ও সত্য।তুমি ভালো থেকো নয়না!আমি যেনো দূর থেকে শুনতে পাই আমার নয়না ভালো আছে সুখে শান্তিতে আছে।কখনও যেনো শুনতে না পাই যে আমার নয়না ভালো নেই; সুখে শান্তিতে নেই।
Facebook Comments Box