একলা না হলে জীবনের রহস্য খোলাসা হয় না

মক্কার যে গলিতে শিশু মুহাম্মদ (সা.) বেড়ে উঠেছেন, তার পাশেই ছিল খানায়ে কাবা বা বায়তুল্লাহ শরিফ। হজের মৌসুম ছাড়াও খোদার ৩০টি দিন পুণ্যার্থীদের আনাগোনা ছিল কাবা শরিফে। আরবের ৩৬০টি গোত্রের আলাদা দেবতার মূর্তি ছিল কাবাঘরে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গোত্রের প্রার্থনার তারিখ থাকায় ভিড় লেগেই থাকত বায়তুল্লায়। ছেলেবেলা থেকেই তাই ভিড় দেখে অভ্যস্ত রসুল (সা.)। কিন্তু ভিড়ের মধ্যেও তিনি একলা বেড়ে উঠেছেন। সমবয়সী শিশু-কিশোর বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে অযথা আড্ডা বা খেলায় মজে যাওয়ার অভ্যাস তাকে কখনই পেয়ে বসেনি। একটু বড় হতেই চারপাশের প্রকৃতি, মানুষের মুখ, পায়ে হেঁটে চলা, ধনী-গরিবের জীবনমান, শিশুর হাসি, বৃদ্ধের ভাবনা, মূর্তির সামনে মানুষের লুটিয়ে পড়া, নারীর দুর্দশাগ্রস্ত জীবন ইত্যাদি রসুল (সা.)-এর চোখে আলাদা করে ধরা দিতে থাকে। বয়স যখন আরেকটু বাড়ল তখন এ পর্যবেক্ষণ নবী (সা.)-কে এতটাই আলোড়িত করল যে তিনি বুঝতে পারছিলেন না মানুষের এমন অশান্ত জীবনে শান্তি ফিরে আসবে কীসে? শুধু এ ভাবনা থেকেই রসুল (সা.) ২৫ বছর বয়সে হেরা গুহার চূড়ায় উঠে যান। ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবতে থাকেন মানুষের শান্তি, মানবতার মুক্তি এবং প্রকৃতির রহস্য নিয়ে। একে একে ১৫ বছর রসুল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন সাধনা করেন। প্রথম দিকে দিনের একটা বড় সময় রসুল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যান করেন। ধীরে ধীরে এ সময়টা বাড়তে থাকে। ১৫ বছর শেষে অর্থাৎ নবুয়ত প্রাপ্তির আগে আগে রসুল (সা.) মাসের পর মাস হেরা গুহায় নির্জনে বসে ধ্যান করেন। রসুল (সা.)-এর ৪০ বছর পূর্ণ হলে জিবরাইল (আ.) কোরআন নিয়ে অবতীর্ণ হন। প্রথমে রসুল (সা.) প্রচণ্ড ভয় পেলেও পরে যখন বিষয়টি তিনি বুঝতে পারলেন তখন নবুয়তের ভারী বোঝা কাঁধে তুলে নেন। মানুষকে দেখালেন মুক্তির পথ। শেখালেন বেঁচে থাকার সৌন্দর্য। ব্যাখ্যা করলেন প্রকৃতির নানান জটিল ধাঁধা।

 

রসুল (সা.)-এর হেরা গুহার নির্জন সাধনা থেকে বিশ্ববাসীর জন্য একটি বড় বার্তা রয়েছে। আজ আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে একলা থাকতে দিচ্ছে না। মানুষ যেন একাকিত্বের যন্ত্রণায় না ভোগে এজন্য হাজারো পথ-পদ্ধতি আবিষ্কার করছে। টিভি, নাটক, সিনেমা, খেলা, মোবাইলসহ হাজারো অ্যাপস রয়েছে যাতে করে মানুষ একাকিত্বের নির্মমতার মুখোমুখি না হয়। শুধু তাই নয়, স্কুলগুলোয় আমাদের শেখানো হয় মানুষ সামাজিক জীব, একা বাস করতে পারে না ইত্যাদি। কিন্তু একলা না হলে জীবনের রহস্য খোলাসা হয় না এ তীক্ষ্ণ সত্যটি এখন আমরা ভুলেই গেছি। মূলত যারা ভোগবাদী, ভোগের সাগরে যারা আকণ্ঠ নিমজ্জিত, দুনিয়ার জীবন শেষে ভিন্ন এক জীবনে যাদের বিশ্বাস নেই, তারাই শুধু একাকিত্বকে ভয় পায়। কারণ একলা মানেই মনের বিশ্রাম আর বিশ্রাম মানেই শান্তির খোঁজ। মনের শান্তি হলো অসীম স্রষ্টার সান্নিধ্যে। স্রষ্টা থাকেন জীবনের ওপারে। মন যখন জীবনের ওপারের ভাবনায় ডুব দিতে চায়, ভোগবাদী তখন ভয়ে কুঁকড়ে যায়। মৃত্যুকে সে ঘৃণা করে যেমন মাছ অপছন্দ করে ডাঙাকে। কিন্তু পানির ভিতরে নয় পানির ওপরই মাছের আসল জীবন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

» আওয়ামী লীগের শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

» বঙ্গবন্ধু সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন : খাদ্যমন্ত্রী

» ট্রাকচাপায় প্রকৌশলী নিহত

» অপহরণকারী চক্রের সদস্য সিরাজকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার

» কেনিয়ায় বৃষ্টি-বন্যায় নিহত বেড়ে ১৬৯

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ২১জন গ্রেপ্তার

» নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য শ্রমিক ও জনগণের জন্য অভিশাপ : ইনু

» শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : রিজভী

» যতবার সরকারে এসেছি ততবার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

একলা না হলে জীবনের রহস্য খোলাসা হয় না

মক্কার যে গলিতে শিশু মুহাম্মদ (সা.) বেড়ে উঠেছেন, তার পাশেই ছিল খানায়ে কাবা বা বায়তুল্লাহ শরিফ। হজের মৌসুম ছাড়াও খোদার ৩০টি দিন পুণ্যার্থীদের আনাগোনা ছিল কাবা শরিফে। আরবের ৩৬০টি গোত্রের আলাদা দেবতার মূর্তি ছিল কাবাঘরে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গোত্রের প্রার্থনার তারিখ থাকায় ভিড় লেগেই থাকত বায়তুল্লায়। ছেলেবেলা থেকেই তাই ভিড় দেখে অভ্যস্ত রসুল (সা.)। কিন্তু ভিড়ের মধ্যেও তিনি একলা বেড়ে উঠেছেন। সমবয়সী শিশু-কিশোর বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে অযথা আড্ডা বা খেলায় মজে যাওয়ার অভ্যাস তাকে কখনই পেয়ে বসেনি। একটু বড় হতেই চারপাশের প্রকৃতি, মানুষের মুখ, পায়ে হেঁটে চলা, ধনী-গরিবের জীবনমান, শিশুর হাসি, বৃদ্ধের ভাবনা, মূর্তির সামনে মানুষের লুটিয়ে পড়া, নারীর দুর্দশাগ্রস্ত জীবন ইত্যাদি রসুল (সা.)-এর চোখে আলাদা করে ধরা দিতে থাকে। বয়স যখন আরেকটু বাড়ল তখন এ পর্যবেক্ষণ নবী (সা.)-কে এতটাই আলোড়িত করল যে তিনি বুঝতে পারছিলেন না মানুষের এমন অশান্ত জীবনে শান্তি ফিরে আসবে কীসে? শুধু এ ভাবনা থেকেই রসুল (সা.) ২৫ বছর বয়সে হেরা গুহার চূড়ায় উঠে যান। ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবতে থাকেন মানুষের শান্তি, মানবতার মুক্তি এবং প্রকৃতির রহস্য নিয়ে। একে একে ১৫ বছর রসুল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন সাধনা করেন। প্রথম দিকে দিনের একটা বড় সময় রসুল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যান করেন। ধীরে ধীরে এ সময়টা বাড়তে থাকে। ১৫ বছর শেষে অর্থাৎ নবুয়ত প্রাপ্তির আগে আগে রসুল (সা.) মাসের পর মাস হেরা গুহায় নির্জনে বসে ধ্যান করেন। রসুল (সা.)-এর ৪০ বছর পূর্ণ হলে জিবরাইল (আ.) কোরআন নিয়ে অবতীর্ণ হন। প্রথমে রসুল (সা.) প্রচণ্ড ভয় পেলেও পরে যখন বিষয়টি তিনি বুঝতে পারলেন তখন নবুয়তের ভারী বোঝা কাঁধে তুলে নেন। মানুষকে দেখালেন মুক্তির পথ। শেখালেন বেঁচে থাকার সৌন্দর্য। ব্যাখ্যা করলেন প্রকৃতির নানান জটিল ধাঁধা।

 

রসুল (সা.)-এর হেরা গুহার নির্জন সাধনা থেকে বিশ্ববাসীর জন্য একটি বড় বার্তা রয়েছে। আজ আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে একলা থাকতে দিচ্ছে না। মানুষ যেন একাকিত্বের যন্ত্রণায় না ভোগে এজন্য হাজারো পথ-পদ্ধতি আবিষ্কার করছে। টিভি, নাটক, সিনেমা, খেলা, মোবাইলসহ হাজারো অ্যাপস রয়েছে যাতে করে মানুষ একাকিত্বের নির্মমতার মুখোমুখি না হয়। শুধু তাই নয়, স্কুলগুলোয় আমাদের শেখানো হয় মানুষ সামাজিক জীব, একা বাস করতে পারে না ইত্যাদি। কিন্তু একলা না হলে জীবনের রহস্য খোলাসা হয় না এ তীক্ষ্ণ সত্যটি এখন আমরা ভুলেই গেছি। মূলত যারা ভোগবাদী, ভোগের সাগরে যারা আকণ্ঠ নিমজ্জিত, দুনিয়ার জীবন শেষে ভিন্ন এক জীবনে যাদের বিশ্বাস নেই, তারাই শুধু একাকিত্বকে ভয় পায়। কারণ একলা মানেই মনের বিশ্রাম আর বিশ্রাম মানেই শান্তির খোঁজ। মনের শান্তি হলো অসীম স্রষ্টার সান্নিধ্যে। স্রষ্টা থাকেন জীবনের ওপারে। মন যখন জীবনের ওপারের ভাবনায় ডুব দিতে চায়, ভোগবাদী তখন ভয়ে কুঁকড়ে যায়। মৃত্যুকে সে ঘৃণা করে যেমন মাছ অপছন্দ করে ডাঙাকে। কিন্তু পানির ভিতরে নয় পানির ওপরই মাছের আসল জীবন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com