ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া (৪৭) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ ঘটনায় তৃতীয় লিঙ্গের নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে— সমকামী ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে ফেলে ইমতিয়াজকে হত্যা করেছে তারা।
সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুর গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এর আগে, গত ৭ মার্চ সন্তানদের স্কুল থেকে বাসায় দিয়ে কাজে বেরিয়ে নিখোঁজ হন স্থপতি ইমতিয়াজ। সম্ভাব্য সব যায়গায় খুঁজেও স্বামীকে না পেয়ে কলাবাগান থানায় জিডি করেন ইমতিয়াজের অসহায় স্ত্রী স্থপতি ফাহমিদা। গণমাধ্যমে কান্নারত কন্ঠে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের তো কোনো শত্রু নেই! তাহলে শত্রুহীন লোকটাকে এভাবে খুন করলো কারা?’
ঢাকার তেজগাঁও থানা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে ইমতিয়াজ। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন।
এ নিয়ে ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহামিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের একটি ঝোপের ভেতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, সমকামী ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তিন সন্তানের জনক ইমতিয়াজের পরিচয় হয় আলিফ নামের এক তরুণের সঙ্গে। তার ডাকে ৭ মার্চ দুপুরে ক্রিসেন্ট রোডের একটি বাসায় যান তিনি। বাসাটি ছিল আরাফাত ও তার তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গী মেঘের। সেখানে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমতিয়াজের ওপর হামলে পড়ে আরাফত, মেঘ এবং মুন্না। আটকে রেখে অর্থ দাবি করলে ইমতিয়াজ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে বেদম মারধর এবং অত্যাচারের শিকার হয়ে একপর্যায়ে মারা যান ইমতিয়াজ।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, তারা সমকামী এবং হিজড়া সদস্য। তারা একটি গে চ্যাটিং অ্যাপস এর মাধ্যমে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে টার্গেট করে রুম ডেটের কথা বলে বাসায় ডাকেন। তারপর বিভিন্ন কায়দায় তাদের ব্লাকমেইল করে টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় তারা।
ভিকটিম ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়া এর সঙ্গে আসামি আলিফের গে চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হয়। তারই সূত্র ধরে গত ৭ মার্চ দুপুরে আসামি আলিফকে ইমতিয়াজ ফোন করলে তাকে কলাবাগান থানার ক্রিসেন্ট রোডের আরাফাতের বাসায় যেতে বলা হয়। ইমতিয়াজ সেখানে গেলে আলিফ তাকে নিয়ে রুমের ভেতর আপত্তিকর অবস্থায় থাকাকালীন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার রুমে প্রবেশ করে ঐ ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভিকটিমকে মারধর শুরু করে এবং বড় অংকের অর্থ দাবি করে। ইমতিয়াজ টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা তার বুকে পিঠে আঘাত সহ প্রচণ্ড মারধর করে। যার কারণে ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে মগবাজার থেকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে আসে মেঘ। আরাফাত ডেকে আনে আনোয়ারকে। ইমতিয়াজের লাশ পেছনে ঢুকিয়ে সুবিধাজনক একটি স্থান খুঁজতে থাকে তারা। একসময় মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে লাশটি ফেলে যে যার মত গা ঢাকা দেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
ডিবির তেজগাঁও বিভাগের নেতৃত্বে টানা অপারেশনে গ্রেফতার হয় মেঘ, আনোয়ার ও মুন্না। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। তবে আরাফত আর আলিফ পালিয়ে গেছে ভারতে।
চক্রটি এভাবে ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে ফেলে বহু মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। সূএ: ডেইলি-বাংলাদেশ