জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দিনব্যাপী শিশু-কিশোর আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন শিশু-কিশোরদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শিশু-কিশোর আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে এই আনন্দমেলা শুরু হয়। পরে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয় ও জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
আনন্দমেলায় আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিশু-কিশোররা বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ দৃশ্য ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিষয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য বয়সভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এসকল প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিকেরও বেশি শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বক্তব্য প্রদান করেন এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপনে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন। রাষ্ট্রদূত মুহিত তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং নিপীড়িত-বঞ্চিত শোষিত মানুষের অধিকার আদায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও নেতৃত্বের বিষয়সমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। একদিন শিশুরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সে ভালোবাসা থেকেই জাতিসংঘে শিশু সনদ গৃহীত হওয়ার প্রায় ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেন। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম স্নেহ ও ভালোবাসাকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত এ বছরের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’-এর উপর আলোকপাত করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে পরবর্তীতে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদশের শিশুদের উন্নয়ন ও সমান অধিকার রক্ষায় যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং বর্তমান প্রজন্মকে স্মার্ট, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলছেন। এসময় তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগ ও সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা একটি চলমান দর্শন এবং এই সোনার বাংলা দর্শনের ধারাবাহিকতার একটি অংশ হলো আজকের স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগ।
বক্তব্যের শেষে রাষ্ট্রদূত মুহিত নতুন প্রজন্মকে প্রবাসে থেকেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে জানা ও ধারণ করার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের গড়ে তোলায় অবদান রাখার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত মুহিতের বক্তব্যের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় আচার সম্পন্নের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করা হয়। সূএ :বাংলাদেশ প্রতিদিন