সূত্র জানায়, একটি বেসরকারি কোম্পানি আমদানিকৃত ক্রুজ জাহাজের মাধ্যমে নৌপথে হজযাত্রী ও পর্যটক পরিবহনের আবেদন করার পর গত ২৯ জানুয়ারি সভা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই সভায় এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। এখন শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত পেলে কূটনৈতিক চ্যানেলে সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিমানে হজে যেতে সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হলেও জাহাজে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে হজযাত্রা সম্পন্ন করা যাবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, জাহাজে হজযাত্রার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা
হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেখানে ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেছে। তবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং সৌদি সরকারের সংশ্লেষ রয়েছে, সে কারণে আমরা নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। সেটি পাওয়া গেলে ধর্ম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। জানা গেছে, কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমদানি জাহাজে পর্যটক ও হজযাত্রা আয়োজনের প্রস্তাব দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তারা ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি অনুমোদিত ৩২ তলাবিশিষ্ট একটি জাহাজ আমদানি করে হজযাত্রা ও পর্যটক পরিবহনের কাজ করবে। এতে একসঙ্গে ৩ হাজার হজযাত্রী বহন করা যাবে। জাহাজে বিশাল একটি মিলনায়তন থাকবে, যেখানে একসঙ্গে ২ হাজার হজযাত্রী বসতে পারবেন। বছরে একবার (দুই মাস) হজযাত্রায় জাহাজটি ব্যবহৃত হলেও বাকি দশ মাস পর্যটক পরিবহনে পরিচালিত হবে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্সের এমডি এম এ রশিদ বলেন, জাহাজ আমদানির অনুমোদন পেলে এটি আট দিনে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাত্রী নিয়ে যাবে। আগে সমুদ্রপথে সৌদি যেতে এক মাসের মতো লাগলেও, এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ জাহাজগুলো উচ্চ গতিতে চলাচল করতে পারে। তিনি জানান, হজে বিমান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। জাহাজে যাত্রী আনতে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা ছাড় দিতে হবে। অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টাকায় হজে যাওয়ার সুযোগ মিলবে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সাল থেকে জাহাজে হজযাত্রা পরিচালনা করতে পারবেন বলে জানান কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্সের এমডি। জানা গেছে, বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, সুদানসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের মুসল্লিরা জাহাজে হজযাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন। ষাটের দশকে বাংলাদেশের মুসল্লিরা নৌপথে হজযাত্রা করতেন। পাকিস্তান থেকে ১৯৫২ সালে সমুদ্রপথে হজযাত্রী বহন শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে করাচি বন্দর থেকে হজযাত্রীদের নিয়ে এমভি শামস শেষবারের মতো যাত্রা করে। ১৯৯৫ সালে মুম্বাই থেকে সর্বশেষ হজযাত্রী বহন করে জাহাজ এমভি আকবরি। এরপর ভারতে থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। খরচ কমাতে দীর্ঘদিন পর এখন ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ভারত ও ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তান সমুদ্রপথে হজ এবং ওমরাহর যাত্রীদের জেদ্দায় পাঠানোর কথা ঘোষণা করে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের অনেক মুসল্লি ভারতের মুম্বাই এবং পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে জাহাজে করে হজের উদ্দেশ্যে সৌদির জেদ্দায় যেতেন বলে জানা গেছে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপথে হজযাত্রার জন্য একটি জাহাজ সংগ্রহ করলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো এ বিষয়ে আর উদ্যোগ নেয়নি। ২০১৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও সৌদি সরকার তাতে সম্মতি দেয়নি। তবে ওই বছর ভারত নৌপথে হজ পরিচালনার অনুমতি পায়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তখনকার ভারপ্রাপ্ত সচিব আনিছুর রহমান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারত থেকে মাত্র দুইবার একটা (সৌদি আরব) শিপ যাবে, তাতে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজারের বেশি লোক হবে না। আমাদের মন্ত্রী প্রস্তাবটি তুলেছিলেন কিন্তু আমরা তাদের (সৌদি সরকার) সম্মতি পাইনি। জাহাজে দিতে পারলে অবশ্যই হজযাত্রীদের চাপ কমে আসত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক লবিংয়ের মাধ্যমে নৌপথে হজযাত্রী পরিবহনের বিষয়ে সৌদিকে সম্মত করাতে পারে শেখ হাসিনা সরকার। তাতে সাশ্রয়ে হজের সুযোগ পাবেন অনেক মুসল্লি। বেঁচে যাবে মূল্যবান ডলার। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন