কোমলমতি হাফেজদের কচি-কণ্ঠে বেজে উঠল পবিত্র কোরআনের সুর। বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সিলেট এবং ময়মনসিংহ আলোকিত হয়ে ওঠে কচিকাচা পবিত্র মুখগুলোর ঝলকে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় মেগা রিয়েলিটি শো’টি আয়োজন করেছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে একযোগে দুই বিভাগে প্রাথমিক বাছাইপর্বের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। উভয় বিভাগে ৩০ জন করে মোট ৬০ জন পেয়েছেন ‘ইয়েস কার্ড’।
সারা দেশে বিভিন্ন মাদরাসার অনুর্ধ্ব-১৫, পূর্ণ (৩০ পারা) হাফেজরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। হাফেজদের সম্মাননা জানানোর অংশ হিসেবে এই আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী রমজান মাসে। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নকে দেয়া হবে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া দ্বিতীয় পুরস্কার ৭ লাখ, তৃতীয় পুরস্কার ৫ লাখ, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার ২ লাখ টাকা করে। প্রত্যেককে সম্মাননাও দেয়া হবে। সেরা দশের বাকি ৫ জনও পাবেন আর্থিক পুরস্কার এবং সম্মাননা।
পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও ঢাকা বিভাগের দুই অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে অডিশন। এর মধ্যে মেঘনা (কুমিল্লা) ও চট্টগাম বিভাগে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। খুলনা ও ফরিদপুরে (পদ্মা) অডিশন হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি, বরিশালে অডিশন হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ জোনে যথাক্রমে আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অডিশন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেটে হাফেজদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি :
এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর ৭টা থেকে সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ও অডিটোরিয়াম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে হাফেজদের উপস্থিতিতে। অডিশনে অংশ নিতে ভোর থেকেই সিলেট বিভাগের চারটি জেলা থেকে আসা হাফেজদের ঢল নামে। সিলেট শহরের বিভিন্ন মাদরাসা থেকেও আসেন হাফেজরা। উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রতিযোগী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা নাম নিবন্ধন করেন। হাফেজদের পদচারণায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা সিলেট নগর একটু আগেভাগেই মুখর হয়ে ওঠে।
প্রতিযোগিতায় নিবন্ধনের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী শাহ মঞ্জুরুল হাকিম আয়ান বলেন, এখানে ১২টি বুথে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। শেষে ৩ শতাধিক হাফেজ অডিশনের জন্য উত্তীর্ণ হন। সেখান থেকে প্রথম পর্বের অডিশন শেষে ইয়েসকার্ড পান ৩০ জন হাফেজ।
ইয়েস কার্ড হাতে পেয়ে ৯ বছরের হাফেজ নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমার ওস্তাদ এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন আমাকে। ইনশাহআল্লাহ আমি চূড়ান্ত পর্বেও বিজয়ী হবো।’
রাহিয়ান হোসেনের বয়সও ৯ বছর। তিনিও ‘কুরআনের নূর’ মেগা প্রতিযোগিতার ইয়েস কার্ড পেয়েছেন। তার ওস্তাদ আয়েশা সিদ্দিকা ইন্টারন্যশনাল তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. ইমরান বলেন, ‘রাহিয়ান আমার ছাত্র। সে কোরআনের হাফেজ। বসুন্ধরা গ্রুপের এ আয়োজনের কথা শুনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে। শুকরিয়া, সে প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে ইয়েস কার্ড পেয়েছে। ইনশাহআল্লাহ সে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়ও বিজয়ী হবে।’
সিলেটের কাজির বাজার মাদরাসার হাফেজ ফয়সল আহমদ (১৫) আহমদ বলেন, ‘এ রকম বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। নিবন্ধনের জন্য অনেকক্ষণ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি।’
তাহফিজুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসা সিলেট শাখার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ ইবনে বাশার (১২) অডিশন শেষে জানালেন, ‘সুন্দর আয়োজন। আমি অডিশন দিয়ে এসেছি। সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে। আমাদের মাদরাসা থেকে পাঁচজন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন।’
মো. আদনান শরীফ এসেছেন জামিয়া মোহাম্মদীয়া দারুসুন্নাহ কুলাউড়া মাদ্রাসা থেকে এসেছেন, ১২ বছর বয়সেই কোরআন শরীফ মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন। তিনি জানান, হাফেজদের সম্মানে এতবড় আয়োজন হবেন কখন ভাবেননি। প্রথমবারের মত এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খুবই খুশি সে।
সিলেটের অডিশনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদীস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী, শায়খুল হাদীস মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম এবং মুফতি আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা।
ময়মনসিংহেও সফল আয়োজন :
ময়মনসিংহ বিভাগেও সকাল থেকে শুরু হয় জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাইপর্ব। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন সামনে রেখে সাজ সাজরব বিরাজ করছিল আগে থেকেই ময়মনসিংহ নগরীতে। জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় নিবন্ধন কার্যক্রম। সকাল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে ভিড় করেন প্রতিযোগী এবং তাদের শিক্ষকরা। ময়মনসিংহ নগরী ছাড়াও বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় ৩০০ প্রতিযোগী এতে অংশ নেন। সাতটি বুথে ১৪ জন বিচারক প্রাথমিকভাবে তাদের বাছাই করছেন। অডিশনের পরে এদের মধ্য থেকে ৩০ জনকে বাছাই করা হয়।
প্রতিযোগিতার সমন্বয়ক হাফেজ মাওলানা ক্বারী আবু সালেহ মো. মুসা বলেন, ঢাকা থেকে অতিথিরা এসেছেন। ময়মনসিংহের বিশিষ্ট আলেম-উলামারাও প্রতিযোগিতায় আছেন।
প্রতিযোগিতায় আসা সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার দাপুনিয়া জামিয়া তালেব আলী মাদরাসার হাফেজ রুহুল আমীন বলেন, প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপনা ভালো। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে তিনজন অংশ নিচ্ছে।
বখশীগঞ্জ তাহফীজুল কোরআন মাদরাসা থেকে এসেছে আটজন। প্রতিযোগীরা জানান, তাদের এখানে এসে বেশ ভালো লেগেছে। তারা ভালো করার জন্যই এসেছে। আশা করছে তারা বিজয়ী হবে।
হালুয়াঘাট উপজেলার নুরুল ক্বলম ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে চারজন এসেছে। ছেলেরা বিজয়ী হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ময়মনসিংহের অডিশনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ বেতারের ক্বারী এমদাদুল ইসলাম এবং ক্বারী লিয়াকত হোসেন।
Facebook Comments Box