বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক

স্ট্রোক একটি ঘাতক ব্যাধি। প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারা যান ৫০ লাখ মানুষ। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ এটি। দিন দিন স্ট্রোক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশেও এ হার কিন্তু কম নয়। দেশে প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশন (বিএসএসএনআই) জাতীয় স্ট্রোক কনফারেন্সের আয়োজন করে। এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।

 

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত এ কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ, অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ, অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি, অধ্যাপক মো. বদরুল আলম ও অধ্যাপক আবু নাসার রিজভী।

 

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা যত দ্রুত করা সম্ভব তত ফলাফল ভালো হয়। এর চিকিৎসায় দেরি করলে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা স্ট্রোকের তিন ঘণ্টার মধ্যে বিএসএমএমইউতে এলে তাকে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর সাত দিন পরই তিনি হেঁটে বাড়ি চলে যান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোকের বিশ্বমানের চিকিৎসা হচ্ছে। দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্ট্রোকের চিকিৎসায় বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই।

 

তিনি আরও বলেন, আগামী বছর বিএমএসএসইউর বাজেটে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসার জন্য এক কোটি টাকা রাখা হবে। স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিউরোলজিস্টদের ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে এর চিকিৎসা বিস্তৃত করার জন্য বিএসএসএনআইকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক কাজী মহিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্ট্রোকের আধুনিক সব চিকিৎসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস) হাসপাতালে হচ্ছে। সরকারিভাবে অনেক কম খরচেই স্ট্রোকের সব আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে সরকারিভাবে একমাত্র নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়মিতভাবে আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এ হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

সোসাইটি অব নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। তিনি তরুণ নিউরোলজিস্টদের নিউরোইন্টারভেনশনে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন।

 

নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম মন্ডল বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল স্ট্রোক চিকিৎসায় দিকপালের কাজ করছে। যা স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা কয়েল অ্যাম্বোলাইজেশন, গ্লু অ্যাম্বোলাইজেশন সহজলভ্য করার জন্য সরকারিভাবে ২০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। নিনস হাসপাতালে খুব কম খরচে স্ট্রোকের বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের ছেলেরা স্ট্রোকের সব চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে ভাবতেই গর্বে বুক ভরে যায়।

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুভাষ কান্তি দে বলেন, যদি মুখ বেঁকে যায়, এক হাত অবশ হয়ে যায়, কথা জড়িয়ে যায় তাহলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিলে আইভি থ্রোম্বলাইসিস করাসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি মামুনুল হকের

» ডাকসু-জাকসুতে জালিয়াতি করে নির্দিষ্ট সংগঠনকে জয়ী করেছে কর্তৃপক্ষ: রিজভী

» আওয়ামী লীগের আরও ৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

» অটোরিকশা চুরির সময় গণপিটুনিতে যুবক নিহত

» স্বামী মারা গেলে নাকফুল খুলে ফেলা কি জরুরি?

» ট্রাক ও বাস থেকে ১৭৪ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ ৪জন গ্রেফতার

» ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি রাশেদের

» অনলাইন প্লাটফর্মে জুয়ায় জড়ালে কারাদণ্ড ও কোটি টাকা জরিমানা

» মোচার বড়া তৈরির রেসিপি

» ইনু-হানিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা ২৮ সেপ্টেম্বর

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক

স্ট্রোক একটি ঘাতক ব্যাধি। প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারা যান ৫০ লাখ মানুষ। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ এটি। দিন দিন স্ট্রোক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশেও এ হার কিন্তু কম নয়। দেশে প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশন (বিএসএসএনআই) জাতীয় স্ট্রোক কনফারেন্সের আয়োজন করে। এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।

 

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত এ কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ, অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ, অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি, অধ্যাপক মো. বদরুল আলম ও অধ্যাপক আবু নাসার রিজভী।

 

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা যত দ্রুত করা সম্ভব তত ফলাফল ভালো হয়। এর চিকিৎসায় দেরি করলে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা স্ট্রোকের তিন ঘণ্টার মধ্যে বিএসএমএমইউতে এলে তাকে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর সাত দিন পরই তিনি হেঁটে বাড়ি চলে যান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোকের বিশ্বমানের চিকিৎসা হচ্ছে। দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্ট্রোকের চিকিৎসায় বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই।

 

তিনি আরও বলেন, আগামী বছর বিএমএসএসইউর বাজেটে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসার জন্য এক কোটি টাকা রাখা হবে। স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিউরোলজিস্টদের ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে এর চিকিৎসা বিস্তৃত করার জন্য বিএসএসএনআইকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক কাজী মহিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্ট্রোকের আধুনিক সব চিকিৎসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস) হাসপাতালে হচ্ছে। সরকারিভাবে অনেক কম খরচেই স্ট্রোকের সব আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে সরকারিভাবে একমাত্র নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়মিতভাবে আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এ হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

সোসাইটি অব নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। তিনি তরুণ নিউরোলজিস্টদের নিউরোইন্টারভেনশনে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন।

 

নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম মন্ডল বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল স্ট্রোক চিকিৎসায় দিকপালের কাজ করছে। যা স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা কয়েল অ্যাম্বোলাইজেশন, গ্লু অ্যাম্বোলাইজেশন সহজলভ্য করার জন্য সরকারিভাবে ২০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। নিনস হাসপাতালে খুব কম খরচে স্ট্রোকের বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের ছেলেরা স্ট্রোকের সব চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে ভাবতেই গর্বে বুক ভরে যায়।

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুভাষ কান্তি দে বলেন, যদি মুখ বেঁকে যায়, এক হাত অবশ হয়ে যায়, কথা জড়িয়ে যায় তাহলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিলে আইভি থ্রোম্বলাইসিস করাসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com