ভারত বাংলাদেশকে গরু না দিলেই বরং আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী পোল্ট্রি প্রফেশনাল বাংলাদেশ (পিপিবি) আয়োজিত প্রথম বাংলাদেশ পোল্ট্রি কনভেনশন-২০২৩ এর প্রথম দিনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পোল্ট্রি নয়, আমরা গবাদিপশুতেও এগিয়ে আছি। আমি যত বারই ভারত সফর করি, সেখানকার সরকার বলে তোমাদের গরু দেবো না। আমি বলি, আপনারা গরু দেওয়া বন্ধ করে দিলেই বরং আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। আমরা গবাদিপশুতে প্রায় স্বনির্ভরশীল। আপনারা বন্ধ করলেই পুরোপুরি হয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা রাতে বা দুপুরে মাংস বা ডিম না পেলে চলে না। পোল্ট্রি শিল্প একদিনে বেড়ে ওঠেনি। আমরা প্রায় ১৭ কোটি মানুষ এবং আমাদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে মাংস ও ডিমে। এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোল্ট্রি শিল্প বেড়ে উঠেছে। পোল্ট্রি শিল্পের প্রধান সমস্যা তারা বাজারে দাম ধরে রাখতে পারেন না। পোল্ট্রি খাদ্যের মূল উপাদান ভূট্টা ও গম। যা ২০-২৫ বছর আগেও এগুলো চাষ হতো না। এখন প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময়ই উদ্যমী। পোল্ট্রি শিল্প অনেক সংগ্রাম করেও এখনো টিকে আছে। আপনাদের নিজেদের ডিম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, আর খাদ্য বাড়ছে গাণিতিক হারে। এ কারণে ১৫-২০ বছরের মধ্যে ব্যাপক গ্যাপ হয়েছে। কৃষিবিদরা ভূমিকা না রাখলে একটা হাহাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। আমাদের যতটুকু সম্পদ তার পুরোপুরিই চাষাবাদে ব্যবহার করতে হবে।
‘আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও খামারি হয়ে গিয়েছি। আমি গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগিও চাষ করি। কৃষিবিদরা ১৫ দিন পরপর পরিদর্শন করেন। তাদের সফলতায় কোনো প্রাণীর আর অকাল মৃত্যু হয়নি।
অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক বেগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, ইউনিডো’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জাকি উজ জামান, পিপিবি’র উপদেষ্টা ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোছাদ্দেক হোসেন।
এসময় তারা বলেন, ৯০ দশকের শুরুর দিকে, মূলত ১৯৯২ সালে পোল্ট্রি শিল্পের বিপ্লব শুরু হয়েছে। আমরা বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু আমাদের খাদ্য রপ্তানিতে যেতে হলে খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্যের দিকে নজর দিতে হবে। বর্তমান সরকার চতুর্থ বিপ্লবের জন্য কাজ করছে। চতুর্থ বিপ্লবের জন্য আমাদের প্রযুক্তিতে আগাতে হবে। রপ্তানি করতে হলে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে পরিদর্শন করাতে হবে। আমাদের পোল্ট্রি নিরাপদ, পোল্ট্রির খাবার নিরাপদ- এটা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে দেশের দুই-তিনটি জেলাকে ‘পোল্ট্রি সেফ জোন’ হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।
তারা বলেন, বর্তমানে দেশে ৮৪ হাজার পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে এবং এর ওপর প্রায় দেড় কোটি মানুষের পেশা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর্থিক ক্ষতির কারণে প্রতিনিয়তই পোল্ট্রি ফার্মগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেন লস হচ্ছে সেটি নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। বলিষ্ঠ জাতি গঠনে নিয়ামক প্রাণিজ প্রোটিন। প্রাণিজ প্রোটিন সবার জন্য শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, প্রতি বছর শুধু পোল্ট্রি শিল্পের জন্যই ৭০ থেকে ৮০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য লাগে যাতে ৫৮-৬০ শতাংশ ভুট্টা এবং ১৮-২০ সয়াবিন কেক প্রয়োজন। পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচাতে খাদ্যের দাম, ভুট্টার দাম কমাতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ওষুধের ওপর ভর্তুকি দিতে হবে।