লাদেনের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয় ফখরুলের: সিটিটিসি

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি’র) সদস্য ফখরুল ইসলামের সঙ্গে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের একাধিকবার দেখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। যাকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফখরুল ছাড়াও হুজির আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 

গ্রেফতার অন্যরা হলেন- সাইফুল ইসলাম (২৪), সুরুজ্জামান (৪৫), আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬) । এ সময় তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেফতার ফখরুল পাকিস্তানে গিয়ে মুফতি জাকির নামে একজনের মাধ্যমে আল কায়েদার সদস্য হন। এরপর অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিখে আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আবারও পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছেন। ফখরুল অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনায় পারদর্শী।

 

আসাদুজ্জামান আরও জানান, ফখরুল ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচিতি হন। মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার।

 

জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ নিতে যান। সেখানে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র-অক ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন ফখরুল।

 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন ফখরুল। অনুশীলনের সময় অক ৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা দিতেন ফখরুল। এই সময়ে আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয় তার। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে আসেন।

 

আসাদুজ্জামান আরও জানান, গ্রেফতার হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস দিয়ে ‘মোরা সত্যের সৈনিক’ এর ‘অস্থায়ী মুসাফির’ ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি চালাতেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন এই অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করতেন। তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার মাধ্যমে তার সংগঠনের পরিচিত দুই একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশের ১৮ কোটি মানুষেরই পরিবেশ সচেতন হওয়া জরুরি: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

» জামায়াতের নিবন্ধন, প্রতীক ও ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আদালতের রায়ের কপির অপেক্ষায় ইসি

» ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে সসম্মানে যেতে পারেন : খন্দকার মোশাররফ

» পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছয়জন গ্রেফতার

» হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ৮৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ, সাক্ষী ৮১

» শীর্ষ মাদককারবারি গ্রেপ্তার

» ৬ দিনের রিমান্ড শেষে মমতাজ এখন কাশিমপুরে

» চাকরি অধ্যাদেশের কিছু ধারা অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে : ফাওজুল কবির খান

» বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ, ছুটে এলেন সারজিস

» আমরা ন্যায়বিচার চাই,ইনশাআল্লাহ একসঙ্গে আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করব : মাসুদ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

লাদেনের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয় ফখরুলের: সিটিটিসি

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি’র) সদস্য ফখরুল ইসলামের সঙ্গে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের একাধিকবার দেখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। যাকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফখরুল ছাড়াও হুজির আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 

গ্রেফতার অন্যরা হলেন- সাইফুল ইসলাম (২৪), সুরুজ্জামান (৪৫), আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬) । এ সময় তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেফতার ফখরুল পাকিস্তানে গিয়ে মুফতি জাকির নামে একজনের মাধ্যমে আল কায়েদার সদস্য হন। এরপর অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিখে আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আবারও পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছেন। ফখরুল অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনায় পারদর্শী।

 

আসাদুজ্জামান আরও জানান, ফখরুল ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচিতি হন। মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার।

 

জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ নিতে যান। সেখানে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র-অক ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন ফখরুল।

 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন ফখরুল। অনুশীলনের সময় অক ৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা দিতেন ফখরুল। এই সময়ে আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয় তার। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে আসেন।

 

আসাদুজ্জামান আরও জানান, গ্রেফতার হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস দিয়ে ‘মোরা সত্যের সৈনিক’ এর ‘অস্থায়ী মুসাফির’ ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি চালাতেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন এই অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করতেন। তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার মাধ্যমে তার সংগঠনের পরিচিত দুই একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com