শায়লা জাবীন :প্রতি বছর ইস্টার উপলক্ষে চারদিন ছুটি পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। আমরা যারা বিদেশে স্থায়ীভাবে থিতু তারা আগেভাগেই ওই সময়ে পছন্দের গন্তব্যে বুকিং দিয়ে রাখি, নয়তো হোটেল/মোটেল বা হলিডে হাউস কিছুই খালি পাওয়া যায় না। গত দুই বছর ধরে করোনার জন্য লকডাউন থাকায় ঘোরাঘুরি একদমই বন্ধ ছিল।
এই বছর করোনার বিস্তার একটু কম বিধায় লকডাউন ছিল না কিন্তু ইস্টার হলিডের ছুটি গিয়ে ঠেকলো রোজার মাসে, তাই আর কোনো লম্বা হলিডে অনুষ্ঠান করা যায়নি। এর মাঝেই হঠাৎ করে অবাক করে দিয়ে সিডনি থেকে স্কুলফ্রেন্ডের সপরিবারে আগমন আমাদের রোজার আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিলো।
ইস্টার হলিডে হওয়ায় আমরা দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করে ফেললাম বন্ধুর পছন্দ ও সময়ের দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা প্রথম দিন। ওরা বিমানবন্দর থেকে আসার পরে গেলাম ডানডিনং রেঞ্জস ন্যাশনাল পার্ক। মেলবোর্ন সিটি থেকে দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত এই পাহাড়ের চূড়া খুবই সুন্দর একটা জায়গা, সুর্যদয় বা সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
এছাড়াও আমার বাসা থেকেও বেশ কাছে, এখানে রয়েছে ছোট ছোট কিছু পার্ক, বার-বি-কিউ করার সুব্যবস্থাসহ বাচ্চাদের খেলার প্লেগ্রাউন্ড, মেইজ গার্ডেন, ফাংশন সেন্টার এবং অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা। রেঞ্জসের একদম টপে আছে স্কাই হাই রেস্টুরেন্ট, যেখানে কফি স্নাকস ছাড়াও বিভিন্ন জিনিসের সুব্যবস্থা আছে।
আছে জায়ান্ট চেয়ার এবং মেজ এবং একটা উইশিং ওয়েল, কথিত আছে; এক ভদ্রলোক তার সন্তান হারিয়ে ফেলেছিল, এরপর খুঁজতে খুঁজতে এই উইশিং ওয়েলের কাছে এসে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করার পরেই পাশেই একটা অনেক পুরোনো গাছের কোটরে মাঝ দিয়ে সন্তানকে খুঁজে পান।
এরপর থেকে এই কুয়ার নাম উইশিং ওয়েল হয়ে যায়। অনেকেই কিছু মানত করে পয়সা ফেলে রেখে গেছে কুয়ার, ভাবতে অবাক লাগে এ ধরনের কিছু মিথ সব দেশেই রয়েছে। বাচ্চারা খুচরো পয়সার জন্য আবদার করলো, তারা কুঁয়োতে ফেলে নাকি উইশ করবে।
দিলাম…
ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম কি উইশ করলে?
বললো যেন সকালবেলা স্কুল যেতে না হয়!
শুনে হেসে ফেললাম, সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার বুঝে গেলাম কেন মানত করার পরেও সবার মানত পূরণ হয় না। বাকিদের মনের ইচ্ছে কি ছিল জানতে আর সাহসই পেলাম না, কি না কি শুনতে হয়। একজনের শুনেই আমার অবস্থা খারাপ। এরা স্কুলে না গেলে আমি অফিস যাবো কীভাবে?
কোটর ওয়ালা গাছেও উঠলো বাচ্চারা…
বেশ কিছু ছবি উঠানো হলো।
ছোট দিন, একটু পরেই ইফতারের সময়। তাই তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে নয়তো ড্যানডেনং ন্যাশনাল পার্ক দেখার আছে অনেক কিছুই, রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং হাইকিংয়ের ব্যবস্থা ওয়াকিং ট্রেইল, রডোডেনড্রন, টিউলিপ ফুলের বাগান, রোজেলা পাখির মেলা। অনেক।
সময় থাকলে যাওয়া যেত অলিন্দা ফলস বা পাফিঙ বিলি। অলিন্দা ফলসে যেতে একটু হাঁটতে হয় গাড়ি থামিয়ে, ছোট্ট একটা ফলস কিন্তু এত গহীন জঙ্গলে যে নিঃশব্দের ভেতরে পানির কলকল শব্দে মন হারিয়ে যায় আর পাফিঙ বিলিতে আছে সেই পুরোনোকালের কয়লার ইঞ্জিন ওয়ালা ট্রেন।
রেইন ফরেস্টের ফার্ন গাছের ভেতর দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে একে বেঁকে চলে সেই রেল গাড়ি, যেন রূপকথার জগৎ, এত সুন্দর যে লিখে বোঝানো কঠিন, কিছু সৌন্দর্য শুধু দুচোখ দিয়ে দেখা যায়, যত ভালো পিক্সেলের ক্যামেরা বা লেন্স হোক, ছবিতে ধরা দেয় না।
বাগানে ঢোকার আগে দেখেছিলাম, মেইঝ গার্ডেনের কাছে হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যাচ্ছিল। বাচ্চারা হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার জন্য বায়না ধরলো। আমার বান্ধবী কিনে দিলো সব বাচ্চাদের।
যতটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো ততটা বিরক্তি নিয়েই হাত মুখ আঠা বানিয়ে আর খাবো না বলে হাত ধুয়ে ফেলতে ছুটলো।
এইবার ফেরার পালা
যদিও ইচ্ছে করে না ফিরতে, তবুও ফিরতে যে হয়। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম