বিচারাধীন বিষয়ের ‘অন মেরিট’, অর্থাৎ মামলার গুণাগুণ নিয়ে মন্তব্য করা বা সিদ্ধান্ত টানা থেকে বিরত থাকতে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, আদালত সংক্রান্ত প্রতিবেদন লিখতে গণমাধ্যমের কর্মীরা যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ (অফিসার) কর্মকর্তা, আদালতে উপস্থিত সরকার পক্ষের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
সংসদ সদস্য ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে দায়ের করা রিটের শুনানিতে এমন আদেশ এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা কি কেবল এই মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, নাকি যে কোনো মামলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, এমন প্রশ্ন রাখা হয় এই আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিকের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, এটি সবার জন্য প্রযোজ্য হবে। কোর্টে যে পর্যন্ত হয়েছে, সে পর্যন্ত লেখা যাবে।
আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনোভাবে রিপোর্ট করা যাবে কি না, সেটা জানতে দৃষ্টান্ত হিসেবে সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টানা হয়। সরকারি এই আইন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে রিপোর্ট করা যাবে কি না?
জবাবে সরকার পক্ষের এই আইনজীবী বলেন, পুরো রায় বের হলে তখন বিস্তারিত বলা যাবে।
সালাম মুর্শেদীর বাড়ি সংক্রান্ত এই মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনও একটি পক্ষ। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওভার অল সবার জন্যই ধরতে হবে। মানে কোর্ট প্রসেডিংস আপনি করবেন। কিন্তু কোনো ফাইন্ডিংস দিতে পারবেন না। আনলেস ইট ডেসক্রাইব জাজমেন্ট অ্যান্ড অর্ডার। যদিও এই মামলায় বলেছেন। কিন্তু ধরে নিতে হবে, সব ক্ষেত্রে।
এ মামলায় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের প্রসঙ্গটি যিনি এনেছেন, তিনি সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
অন মেরিটে নিউজ না করতে আদালতের আদেশটি কি কেবল এই মামলায় নাকি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই শুধু এ মামলায়। কারণ আমরা এই মামলা নিয়েই কথা বলছি। আমরা বাইরেরটা বলছি না।
আদেশের পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী গণমাধ্যমের একটা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেছেন, গণমাধ্যম অলরেডি রায় দিয়ে দিচ্ছে। কীভাবে রায় দেবে? এটা-তো আদালতে বিচারাধীন।
‘আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, গণমাধ্যমতো এ ধরনের কোনো রায় দিতে পারে না। যতক্ষণ এটা বিচারাধীন বিষয়। সাব জুডিস ম্যাটার কোর্টে নিষ্পত্তি হবে। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোর্ট প্রসেডিংস সাংবাদিকরা লিখতে পারবেন। কিন্তু কোনো ফাইন্ডিংস দিতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে কোনো সিদ্ধান্ত না হবে।’
তিনি আরও বলেন, কোর্ট প্রসেডিংস লিখতে গণমাধ্যমের কোনো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু গণমাধ্যমকে সজাগ থাকতে হবে যে, সে কোনো মতামত যাতে না দেয়। মতামত কোর্টই দেবেন। তখনই গণমাধ্যম লিখতে পারবে।
রিপোর্টে মতামত দেওয়া যায় না, সাংবাদিকতার নৈতিকতাও তাই বলে। তাহলে কেন মতামত দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাই হোক, মতামত দিতে পারবেন না। কোর্ট সেটাই বললেন।
আদালতের আদেশে যে তদন্ত হয়েছে, সেই তদন্তে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে। সেটি যদি গণমাধ্যম জানে, সেটি প্রকাশ করতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি গণমাধ্যমের এখতিয়ার। বিচারাধীন মামলায় গণমাধ্যম আগে ভারডিক্ট (রায়) দিতে পারে না।
‘মূলকথা, আপনারা রিপোর্ট করেন। রিপোর্ট করতে কোনো বাধা নেই। রাইট টু প্রফেশন। কিন্তু আপনাদের কোর্ট প্রসেডিংস করতে হবে।’
ওই মামলায় আদালতে গণপূর্ত সচিবের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, দুদকের পক্ষে মো. খুরশীদ আলম খান, রাজউকের পক্ষে জাকির হোসেন মাসুদ, সালাম মুর্শেদীর পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা শুনানি করেন। রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
মামলাটির আগামী ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখে এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুদককে সরবরাহ করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি ওই বাড়ি সংক্রান্ত রেকর্ড ১৬ জানুয়ারি বা তার পূর্বে আদালতে দাখিল করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব এবং রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো রকমের ব্যর্থতা ছাড়া এই নির্দেশনা মানতে আদেশে বলে দেওয়া হয়।
‘জালিয়াতি করে পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলে নেন সালাম মুর্শেদী’ শিরোনামে দৈনিকে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারাধীন বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার প্রসঙ্গটি শুনানিতে আসে। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম