কোনো কিছু পরম সত্য নয়

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরপরই এক শ-সোয়া শ নেতা-কর্মী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়েছিলাম। ভারত-বাংলা মৈত্রী সমিতি কলকাতার গড়ের মাঠে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিল। ১০-১৫টি ছোটবড় গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে রওনা হয়েছিলাম। অধ্যাপক রঞ্জিতকান্ত সরকার, আতোয়ার রহমান খান, ফারুক কোরাইশী, পল্লীগীতি সম্রাট গায়ক আবদুল আলীম, গীতিকার লোকমান হোসেন ফকির, ওস্তাদ ফারুক আহমেদ আরও অনেকেই সঙ্গী হয়েছিলেন। টাঙ্গাইল থেকে জামালপুর, সেখান থেকে বারাঙ্গাপাড়া-তুরা-মানকারচর-ধুবড়ি-কোচবিহার-জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি-মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর-মালদা হয়ে সে যাত্রায় কলকাতায় পৌঁছেছিলাম। বহরমপুরের পরে শত কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বাবলা গাছ। বহরমপুর থেকে শুনেছিলাম মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরের রাস্তার দুই পাশে যত পুরনো গাছ ছিল তার প্রতিটিতে দুজন-চারজন এমনকি আরও বেশি ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবীকে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। শত শত হাজার হাজার সিপাহির লাশ বাবলা গাছে ঝুলেছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পচে গলে নিঃশেষ হয়েছে। কিন্তু কোনো ভারতবাসী তাদের ভাইদের ফাঁসি দেওয়া লাশ নামিয়ে নিয়ে সৎকার করতে পারেনি। এ হলো ইংরেজ। কত অত্যাচার করেছে। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কেও ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৭৫৭ সালের পলাশীতে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। ১৮৫৭ সালে সেই বাংলায় দুর্গাপুরের ব্যারাকপুরে মঙ্গলপান্ডে প্রথম প্রতিবাদ করে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের শুভ সূচনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে বাহাদুর শাহ জাফরকে ভারত সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে বসিয়ে বিপ্লবীরা ইংরেজদের সফলভাবে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাধা সুসংগঠিত অস্ত্রবলে বলীয়ান ইংরেজদের বেশি সময় ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। দিল্লিতে তারা যারপরনাই ধ্বংসলীলা চালিয়ে ছিল। পুরনো দিল্লির খুনি দরোজায় ইংরেজরা বাহাদুর শাহ জাফরের কয়েকজন ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। শেষমেশ বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসনে বার্মা পাঠিয়েছিল। বার্মার রেঙ্গুনে নিঃস্ব রিক্ত অবস্থায় বাহাদুর শাহ জাফর ইন্তেকাল করেন। আল্লাহর কি অপার মহিমা সেই ব্রিটিশদের এখন প্রধান নেতা আমাদেরই ভারতীয় বংশো™ূ¢ত ঋষি সুনাক। এমনই হয়। শত বছর পর হয়তো দেখব জার্মানি-ফ্রান্স-ইতালি এমনকি আমেরিকায় কোনো বাঙালি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর বিপ্লবীদের ব্রিটিশের ভাষায় বিদ্রোহী বলা হতো, নিন্দিত করা হতো। কিন্তু আজ তারা কেউ নিন্দিত নয়, সবাই প্রশংসিত। তাই আজ যারা নিন্দিত, কাল তারা প্রশংসিত হতে পারে যদি তারা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করে। ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তারই চরম এবং পরমতম প্রমাণ।

 

গতকাল ছিল টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। কত বছর পর সম্মেলন হচ্ছে তা তারাই জানে। বাইরের লোকদের জানার খুব একটা সুযোগ নেই। ২০১৮ সালের ভোট চুরির নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য দলের যেসব নেতা-কর্মী অহেতুক নির্যাতিত হয়েছিল, মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় জেলে ছিল তাদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ৫ নভেম্বর সখিপুরে একটা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সবাইকে একত্রে সম্মান দেখাতে পারলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু এখন আর তেমন করার সুযোগ নেই। কেমন যেন সবকিছু ছাড়া ছাড়া। তাই শুধু কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সম্মান জানানো হয়েছে। বিএনপির দু-চার জন এসেছিলেন তা তাদের ব্যক্তিগত কাজে, রাজনৈতিক কারণে নয়। সভা শেষ হলে আওয়ামী লীগেরও দু-চার জন ঘুরে গেছেন। এতে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। একসময় সখিপুরের শতকরা ৮০ জন ছিল আমার মানুষ। এখনো অনেকেই ভালোবাসেন। অনেকে নিবিড়ভাবে রাজনীতির সঙ্গেও আছেন। আবার কিছু মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে ভাগ হয়ে গেছেন। টাঙ্গাইলে ছিলাম তাই আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলন খুবই নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছি। আগামী পর্বে সম্মেলন নিয়ে লিখব। মুক্তিযুদ্ধের সময় একা ছিলাম। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী এপ্রিলের ৩ তারিখের পরপরই দেশত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। তেমন কোনো নেতা ছিলেন না। পরিবারের সবাই ছোট। রহিমা কিছুটা বড় ছিল, কুমুদিনী কলেজে পড়ত। শুশু-শাহানা বেশ ছোট। আজাদ-মুরাদ আরও ছোট। আজাদের সাড়ে চার, মুরাদ ছয়-সাত বছর। বেলাল-বাবুল ওরাও বেশ ছোট। নিজের বলতে কেউ ছিল না। সাধারণ মানুষই ছিল আপনজন। বেশিদিন স্বস্তিতে থাকতে পারিনি। স্বাধীনতার পর থেকেই খোঁচাখুঁচি শুরু হয়েছিল। সারা দেশের কথা ছেড়েই দিলাম। শুধু টাঙ্গাইলের কথা যদি বলি আমাদের নেতারা আমাদের বাচ্চা রেখে গিয়েছিলেন, নাক দিয়ে দুধ পড়ার মতো বাচ্চা। কিন্তু কি এমন হলো মার্চ থেকে ডিসেম্বর সবকিছু বদলে গেল। পাকিস্তানের মানচিত্র বদলে বাংলাদেশ হলো। দুই শ কয়েকদিন পর নির্বাসন থেকে ফিরে নেতারা দেখলেন আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সব নেতা জনপ্রিয়তায় পিছে পড়ে গেছেন। কাদেরিয়া বাহিনীর একজন কমান্ডার কোনোখানে গেলে যদি ১০ হাজার লোক হয় সেখানে আমাদেরই নেতারা যারা ভারতে গিয়েছিলেন আমরা যাদের তখনো নেতা বলেই সম্মান করতাম। কিন্তু জনসাধারণ তেমন করতেন না। এতে নেতারা খুবই অসহায়বোধ করতেন। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্রহনন। আর এটা খুবই সত্য, প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অতি সাধারণ মানুষ ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিদ্যা-বুদ্ধি-ধনীর দুলাল খুব একটা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। আমার কথাই ধরুন না, আমার দলের যারা একটু শিক্ষিত ছিল তারা রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে ছুটতে পারেনি, ছোটেওনি। হ্যাঁ, একটা সুসংগঠিত দল গড়ে ওঠায় নানা জনের নানা কাজ ছিল। বেসরকারি প্রশাসন চালাতে গিয়ে অনেক শিক্ষিত যোদ্ধা সফলতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। কবি রফিক আজাদ, সায্যাদ কাদির, মাহবুব সাদিক, বুলবুল খান মাহবুব, আনোয়ারুল আলম শহীদ, আলী হোসেন, সোহরাব আলী খান আরজু, দাউদ খান, ফারুক আহমেদ, হামিদুল হক, শওকত মোমেন শাজাহান, খোরশেদ আলম আরও এ রকম কয়েক শ যোদ্ধা কেউ অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধ করেনি। কিন্তু দারুণ সফলতার সঙ্গে যুদ্ধে যা যা করতে হয় তা করেছে। নয়া মুন্সী, ওসমান গনির মতো আরও কিছু যোদ্ধা না থাকলে কাদেরিয়া বাহিনীর খাওয়া- থাকায় প্রচন্ড কষ্ট হতো। আমরা যে উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পরক্ষণেই নানাভাবে নির্যাতিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত হচ্ছিলাম। সবার ওপর বঙ্গবন্ধুর ওই রকম দুর্দান্ত নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব না থাকলে স্বাধীনতার পরপরই অনেক অঘটন ঘটত। বঙ্গবন্ধুর ওপর সবার এক দুর্বার আস্থা ছিল। তাই অতটা সর্বনাশ হয়নি। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে একটা মস্তবড় ওলটপালট হয়ে যায়। যেসব আওয়ামী লীগ নেতা প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অস্বীকার করে হয়রানি করছিলেন তারা যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কারণে আবার অথই পানিতে বা সাগরে পড়ে যান, তেমনি মুক্তিযোদ্ধারাও কোনো কূলকিনারা পান না। দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি না, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ না করে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। হত্যার পরপরই মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা আমাকে হত্যা না করে পারে না। আমাকে হত্যা তাদের করতেই হবে। রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো পথ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হত্যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, প্রতিবাদ করতেই হবে। তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়ে অসম্ভব কষ্টের জীবন কাটিয়েছি। মহান ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের পতনের পর এ যুগের মহাত্মা বিহারের জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুপ্রেরণায় জনতা পার্টি গঠিত হয় এবং ১৯৭৭-এ ভারতের নির্বাচনে জনতা পার্টি জয়লাভ করে। স্বাধীনতার ৩০ বছর পর কংগ্রেস ক্ষমতা হারায়। জনতা পার্টির নেতা হিসেবে মোরারজি দেশাই হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে দেখতে পারতেন না। ইন্দিরা গান্ধী যা করেছেন সবই ভুল সবই অন্যায় এ রকম একটি জঘন্য মনোভাব তার। ’৭৫-এর ৬-৭ হাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাকে মোরারজি দেশাই জিয়াউর রহমানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর ৪-৫ হাজার যোদ্ধা নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। তারপর ১৫ বছর নানাভাবে কাটিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ’৯০-এ দেশে ফিরেছিলাম। তার আগে ’৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রিয় বোন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন। এরপর অনেক উথালপাথাল গেছে। ১৯৯১-এ জেলে থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। আওয়ামী লীগে সব সময় যা হয় তখনো তা-ই হয়েছিল। সব সিটই আওয়ামী লীগ পাবে এ রকম মনে করে অনেক নেতা কলকাঠি নেড়েছিলেন। কাউকে কাউকে নির্বাচিত হতে না দেওয়ার কলকাঠি নেড়ে নিজেরাই বিপাকে পড়েছিলেন। কলকাঠি নাড়া নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

 

এই যে ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে হয়েছে এখানেও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এমন ছিল না। সব সিট তিনি গিলে খেতে চাননি। অতি উৎসাহীরা সব গিলে খেতে গিয়ে ২৯২টি আসন দখল করে নিয়েছিলেন। সেখানে ভোটের কোনো দরকার পড়েনি। আমরা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছিলাম। আমাদের ধারণা বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে যে নেতা রাজনীতি করেছেন তাঁর বঙ্গবন্ধুর মতো যৎসামান্য হলেও নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ড. কামাল হোসেন একজন বিখ্যাত মানুষ। কিন্তু নেতা নন। নেতৃত্ব করার যে সাধারণ গুণ থাকে তার অনেক কিছুই তাঁর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই সবার শেষে যেমন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলাম, তেমনি সবার আগে ঐক্যফ্রন্ট থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বেরিয়ে এসেছে। অন্যের কথা বলতে পারব না, বিশেষ করে আমরা আওয়ামী লীগ করি না সত্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিই করে যাবে। ’৯০-এ দেশে ফিরে যখন আওয়ামী লীগ করেছি, আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক নম্বর সদস্যের মর্যাদায় ছিলাম। আমি সে মর্যাদা রাখবার সব সময় চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন দেখেছি বোনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে কথা রাখে না, মানুষের প্রতি যত্নবান নয় তখন আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। ইদানীং অনেকেই মনে করে নেত্রী শেখ হাসিনার মতো দক্ষ যোগ্য আর দ্বিতীয় কোনো নেতা বাংলাদেশে নেই। নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের ভাই-বন্ধুরা এটা ভাবতেই পারেন। তাদের ভাবনা যথার্থ হতো যদি দেশে শান্তিশৃঙ্খলা থাকত, দরিদ্র মানুষ যদি স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে ভালোভাবে দুই মুঠো ভাত খেতে পারত, পরতে পারত তাহলে ঠিক ছিল। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলা হয় তার কিছুই ঠিক নয়। ১৮ কোটির মধ্যে ২-৪ লাখ মানুষ আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। তাদের বিত্তবৈভব বিবেচনা করে আর সবার উন্নতি ভাবা যায় না বা বিচার করা এক নয়। পাকিস্তানের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম এখন ২২ হাজার বা তারও বেশি ২-৪ লাখ পরিবার বাংলাদেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। কারও পাহাড়সমান লুটের টাকা কারও আবার মুখে ভাত দেওয়ার পয়সা নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই, স্বস্তি নেই। যেখানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রায় ঝিমিয়ে পড়েছিল, সফলভাবে মিটিং মিছিল করতে পারত না। মাত্র কিছুদিন তারা নানা জায়গায় সভা-সমাবেশ করছে। সাড়াও পাচ্ছে। বিশেষ করে গাড়ি-ঘোড়া রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের যেমন সহানুভূতি বেড়েছে তেমনি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও অনেকটা জিদ চেপেছে। চট্টগ্রামের পর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর সর্বশেষ বরিশালে যে ঘটনা ঘটেছে তা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এক দিনের ৩-৪ ঘণ্টার সভা সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ায় তিন দিনে গিয়ে ঠেকেছে। বালির বাঁধ দিয়ে যেমন ভয়াবহ বন্যা ঠেকানো যায় না, তেমনি রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষের চাওয়া-পাওয়া, দাবিদাওয়া দমিয়ে রাখা যায় না। লোহার কপাট দিয়ে মানুষের চাওয়া-পাওয়া বন্ধ করার চেষ্টায় অতীতে কেউ সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com         সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে: মাসুদ সাঈদী

» নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

» অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ চারজন মাদক চোরা কারবারি আটক

» সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, যা জানালেন বদিউল আলম

» ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান মঈন খানের

» কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়: আইজিপি

» সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

» বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পট লোন পেলেন সিলেটের সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা

» ‘ইউসিবি নাইট’ আয়োজনে গ্রাহক ও অংশীদারদের অব্যাহত সহযোগিতার স্বীকৃতি

» ইসলামপুর ওয়ার্ড কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কোনো কিছু পরম সত্য নয়

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরপরই এক শ-সোয়া শ নেতা-কর্মী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়েছিলাম। ভারত-বাংলা মৈত্রী সমিতি কলকাতার গড়ের মাঠে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিল। ১০-১৫টি ছোটবড় গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে রওনা হয়েছিলাম। অধ্যাপক রঞ্জিতকান্ত সরকার, আতোয়ার রহমান খান, ফারুক কোরাইশী, পল্লীগীতি সম্রাট গায়ক আবদুল আলীম, গীতিকার লোকমান হোসেন ফকির, ওস্তাদ ফারুক আহমেদ আরও অনেকেই সঙ্গী হয়েছিলেন। টাঙ্গাইল থেকে জামালপুর, সেখান থেকে বারাঙ্গাপাড়া-তুরা-মানকারচর-ধুবড়ি-কোচবিহার-জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি-মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর-মালদা হয়ে সে যাত্রায় কলকাতায় পৌঁছেছিলাম। বহরমপুরের পরে শত কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বাবলা গাছ। বহরমপুর থেকে শুনেছিলাম মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরের রাস্তার দুই পাশে যত পুরনো গাছ ছিল তার প্রতিটিতে দুজন-চারজন এমনকি আরও বেশি ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবীকে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। শত শত হাজার হাজার সিপাহির লাশ বাবলা গাছে ঝুলেছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পচে গলে নিঃশেষ হয়েছে। কিন্তু কোনো ভারতবাসী তাদের ভাইদের ফাঁসি দেওয়া লাশ নামিয়ে নিয়ে সৎকার করতে পারেনি। এ হলো ইংরেজ। কত অত্যাচার করেছে। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কেও ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৭৫৭ সালের পলাশীতে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। ১৮৫৭ সালে সেই বাংলায় দুর্গাপুরের ব্যারাকপুরে মঙ্গলপান্ডে প্রথম প্রতিবাদ করে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের শুভ সূচনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে বাহাদুর শাহ জাফরকে ভারত সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে বসিয়ে বিপ্লবীরা ইংরেজদের সফলভাবে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাধা সুসংগঠিত অস্ত্রবলে বলীয়ান ইংরেজদের বেশি সময় ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। দিল্লিতে তারা যারপরনাই ধ্বংসলীলা চালিয়ে ছিল। পুরনো দিল্লির খুনি দরোজায় ইংরেজরা বাহাদুর শাহ জাফরের কয়েকজন ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। শেষমেশ বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসনে বার্মা পাঠিয়েছিল। বার্মার রেঙ্গুনে নিঃস্ব রিক্ত অবস্থায় বাহাদুর শাহ জাফর ইন্তেকাল করেন। আল্লাহর কি অপার মহিমা সেই ব্রিটিশদের এখন প্রধান নেতা আমাদেরই ভারতীয় বংশো™ূ¢ত ঋষি সুনাক। এমনই হয়। শত বছর পর হয়তো দেখব জার্মানি-ফ্রান্স-ইতালি এমনকি আমেরিকায় কোনো বাঙালি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর বিপ্লবীদের ব্রিটিশের ভাষায় বিদ্রোহী বলা হতো, নিন্দিত করা হতো। কিন্তু আজ তারা কেউ নিন্দিত নয়, সবাই প্রশংসিত। তাই আজ যারা নিন্দিত, কাল তারা প্রশংসিত হতে পারে যদি তারা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করে। ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তারই চরম এবং পরমতম প্রমাণ।

 

গতকাল ছিল টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। কত বছর পর সম্মেলন হচ্ছে তা তারাই জানে। বাইরের লোকদের জানার খুব একটা সুযোগ নেই। ২০১৮ সালের ভোট চুরির নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য দলের যেসব নেতা-কর্মী অহেতুক নির্যাতিত হয়েছিল, মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় জেলে ছিল তাদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ৫ নভেম্বর সখিপুরে একটা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সবাইকে একত্রে সম্মান দেখাতে পারলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু এখন আর তেমন করার সুযোগ নেই। কেমন যেন সবকিছু ছাড়া ছাড়া। তাই শুধু কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সম্মান জানানো হয়েছে। বিএনপির দু-চার জন এসেছিলেন তা তাদের ব্যক্তিগত কাজে, রাজনৈতিক কারণে নয়। সভা শেষ হলে আওয়ামী লীগেরও দু-চার জন ঘুরে গেছেন। এতে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। একসময় সখিপুরের শতকরা ৮০ জন ছিল আমার মানুষ। এখনো অনেকেই ভালোবাসেন। অনেকে নিবিড়ভাবে রাজনীতির সঙ্গেও আছেন। আবার কিছু মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে ভাগ হয়ে গেছেন। টাঙ্গাইলে ছিলাম তাই আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলন খুবই নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছি। আগামী পর্বে সম্মেলন নিয়ে লিখব। মুক্তিযুদ্ধের সময় একা ছিলাম। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী এপ্রিলের ৩ তারিখের পরপরই দেশত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। তেমন কোনো নেতা ছিলেন না। পরিবারের সবাই ছোট। রহিমা কিছুটা বড় ছিল, কুমুদিনী কলেজে পড়ত। শুশু-শাহানা বেশ ছোট। আজাদ-মুরাদ আরও ছোট। আজাদের সাড়ে চার, মুরাদ ছয়-সাত বছর। বেলাল-বাবুল ওরাও বেশ ছোট। নিজের বলতে কেউ ছিল না। সাধারণ মানুষই ছিল আপনজন। বেশিদিন স্বস্তিতে থাকতে পারিনি। স্বাধীনতার পর থেকেই খোঁচাখুঁচি শুরু হয়েছিল। সারা দেশের কথা ছেড়েই দিলাম। শুধু টাঙ্গাইলের কথা যদি বলি আমাদের নেতারা আমাদের বাচ্চা রেখে গিয়েছিলেন, নাক দিয়ে দুধ পড়ার মতো বাচ্চা। কিন্তু কি এমন হলো মার্চ থেকে ডিসেম্বর সবকিছু বদলে গেল। পাকিস্তানের মানচিত্র বদলে বাংলাদেশ হলো। দুই শ কয়েকদিন পর নির্বাসন থেকে ফিরে নেতারা দেখলেন আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সব নেতা জনপ্রিয়তায় পিছে পড়ে গেছেন। কাদেরিয়া বাহিনীর একজন কমান্ডার কোনোখানে গেলে যদি ১০ হাজার লোক হয় সেখানে আমাদেরই নেতারা যারা ভারতে গিয়েছিলেন আমরা যাদের তখনো নেতা বলেই সম্মান করতাম। কিন্তু জনসাধারণ তেমন করতেন না। এতে নেতারা খুবই অসহায়বোধ করতেন। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্রহনন। আর এটা খুবই সত্য, প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অতি সাধারণ মানুষ ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিদ্যা-বুদ্ধি-ধনীর দুলাল খুব একটা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। আমার কথাই ধরুন না, আমার দলের যারা একটু শিক্ষিত ছিল তারা রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে ছুটতে পারেনি, ছোটেওনি। হ্যাঁ, একটা সুসংগঠিত দল গড়ে ওঠায় নানা জনের নানা কাজ ছিল। বেসরকারি প্রশাসন চালাতে গিয়ে অনেক শিক্ষিত যোদ্ধা সফলতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। কবি রফিক আজাদ, সায্যাদ কাদির, মাহবুব সাদিক, বুলবুল খান মাহবুব, আনোয়ারুল আলম শহীদ, আলী হোসেন, সোহরাব আলী খান আরজু, দাউদ খান, ফারুক আহমেদ, হামিদুল হক, শওকত মোমেন শাজাহান, খোরশেদ আলম আরও এ রকম কয়েক শ যোদ্ধা কেউ অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধ করেনি। কিন্তু দারুণ সফলতার সঙ্গে যুদ্ধে যা যা করতে হয় তা করেছে। নয়া মুন্সী, ওসমান গনির মতো আরও কিছু যোদ্ধা না থাকলে কাদেরিয়া বাহিনীর খাওয়া- থাকায় প্রচন্ড কষ্ট হতো। আমরা যে উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পরক্ষণেই নানাভাবে নির্যাতিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত হচ্ছিলাম। সবার ওপর বঙ্গবন্ধুর ওই রকম দুর্দান্ত নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব না থাকলে স্বাধীনতার পরপরই অনেক অঘটন ঘটত। বঙ্গবন্ধুর ওপর সবার এক দুর্বার আস্থা ছিল। তাই অতটা সর্বনাশ হয়নি। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে একটা মস্তবড় ওলটপালট হয়ে যায়। যেসব আওয়ামী লীগ নেতা প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অস্বীকার করে হয়রানি করছিলেন তারা যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কারণে আবার অথই পানিতে বা সাগরে পড়ে যান, তেমনি মুক্তিযোদ্ধারাও কোনো কূলকিনারা পান না। দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি না, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ না করে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। হত্যার পরপরই মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা আমাকে হত্যা না করে পারে না। আমাকে হত্যা তাদের করতেই হবে। রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো পথ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হত্যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, প্রতিবাদ করতেই হবে। তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়ে অসম্ভব কষ্টের জীবন কাটিয়েছি। মহান ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের পতনের পর এ যুগের মহাত্মা বিহারের জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুপ্রেরণায় জনতা পার্টি গঠিত হয় এবং ১৯৭৭-এ ভারতের নির্বাচনে জনতা পার্টি জয়লাভ করে। স্বাধীনতার ৩০ বছর পর কংগ্রেস ক্ষমতা হারায়। জনতা পার্টির নেতা হিসেবে মোরারজি দেশাই হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে দেখতে পারতেন না। ইন্দিরা গান্ধী যা করেছেন সবই ভুল সবই অন্যায় এ রকম একটি জঘন্য মনোভাব তার। ’৭৫-এর ৬-৭ হাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাকে মোরারজি দেশাই জিয়াউর রহমানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর ৪-৫ হাজার যোদ্ধা নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। তারপর ১৫ বছর নানাভাবে কাটিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ’৯০-এ দেশে ফিরেছিলাম। তার আগে ’৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রিয় বোন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন। এরপর অনেক উথালপাথাল গেছে। ১৯৯১-এ জেলে থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। আওয়ামী লীগে সব সময় যা হয় তখনো তা-ই হয়েছিল। সব সিটই আওয়ামী লীগ পাবে এ রকম মনে করে অনেক নেতা কলকাঠি নেড়েছিলেন। কাউকে কাউকে নির্বাচিত হতে না দেওয়ার কলকাঠি নেড়ে নিজেরাই বিপাকে পড়েছিলেন। কলকাঠি নাড়া নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

 

এই যে ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে হয়েছে এখানেও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এমন ছিল না। সব সিট তিনি গিলে খেতে চাননি। অতি উৎসাহীরা সব গিলে খেতে গিয়ে ২৯২টি আসন দখল করে নিয়েছিলেন। সেখানে ভোটের কোনো দরকার পড়েনি। আমরা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছিলাম। আমাদের ধারণা বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে যে নেতা রাজনীতি করেছেন তাঁর বঙ্গবন্ধুর মতো যৎসামান্য হলেও নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ড. কামাল হোসেন একজন বিখ্যাত মানুষ। কিন্তু নেতা নন। নেতৃত্ব করার যে সাধারণ গুণ থাকে তার অনেক কিছুই তাঁর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই সবার শেষে যেমন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলাম, তেমনি সবার আগে ঐক্যফ্রন্ট থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বেরিয়ে এসেছে। অন্যের কথা বলতে পারব না, বিশেষ করে আমরা আওয়ামী লীগ করি না সত্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিই করে যাবে। ’৯০-এ দেশে ফিরে যখন আওয়ামী লীগ করেছি, আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক নম্বর সদস্যের মর্যাদায় ছিলাম। আমি সে মর্যাদা রাখবার সব সময় চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন দেখেছি বোনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে কথা রাখে না, মানুষের প্রতি যত্নবান নয় তখন আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। ইদানীং অনেকেই মনে করে নেত্রী শেখ হাসিনার মতো দক্ষ যোগ্য আর দ্বিতীয় কোনো নেতা বাংলাদেশে নেই। নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের ভাই-বন্ধুরা এটা ভাবতেই পারেন। তাদের ভাবনা যথার্থ হতো যদি দেশে শান্তিশৃঙ্খলা থাকত, দরিদ্র মানুষ যদি স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে ভালোভাবে দুই মুঠো ভাত খেতে পারত, পরতে পারত তাহলে ঠিক ছিল। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলা হয় তার কিছুই ঠিক নয়। ১৮ কোটির মধ্যে ২-৪ লাখ মানুষ আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। তাদের বিত্তবৈভব বিবেচনা করে আর সবার উন্নতি ভাবা যায় না বা বিচার করা এক নয়। পাকিস্তানের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম এখন ২২ হাজার বা তারও বেশি ২-৪ লাখ পরিবার বাংলাদেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। কারও পাহাড়সমান লুটের টাকা কারও আবার মুখে ভাত দেওয়ার পয়সা নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই, স্বস্তি নেই। যেখানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রায় ঝিমিয়ে পড়েছিল, সফলভাবে মিটিং মিছিল করতে পারত না। মাত্র কিছুদিন তারা নানা জায়গায় সভা-সমাবেশ করছে। সাড়াও পাচ্ছে। বিশেষ করে গাড়ি-ঘোড়া রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের যেমন সহানুভূতি বেড়েছে তেমনি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও অনেকটা জিদ চেপেছে। চট্টগ্রামের পর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর সর্বশেষ বরিশালে যে ঘটনা ঘটেছে তা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এক দিনের ৩-৪ ঘণ্টার সভা সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ায় তিন দিনে গিয়ে ঠেকেছে। বালির বাঁধ দিয়ে যেমন ভয়াবহ বন্যা ঠেকানো যায় না, তেমনি রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষের চাওয়া-পাওয়া, দাবিদাওয়া দমিয়ে রাখা যায় না। লোহার কপাট দিয়ে মানুষের চাওয়া-পাওয়া বন্ধ করার চেষ্টায় অতীতে কেউ সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com         সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com