হুন্ডির চোখ দুবাই-সিঙ্গাপুরে

করোনাভাইরাসের মহামারির পর হঠাৎ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের আরব আমিরাতে গোল্ড ভিসা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। এই ভিসা পাওয়া যায় ১০ বছরের জন্য। সুবিধা হিসেবে আবাসনসহ সব খাতে বিনিয়োগ করা যায়, যে কোনোভাবে নেওয়া যায় অর্থ এবং সহজেই খোলা যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

 

কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কড়াকড়ি আরোপ হওয়ায় রুদ্ধ হয়েছে বেগমপাড়ার পথ। তাই সেখান থেকে অনেকে ফিরছেন দুবাইতে। তবে দুবাইয়ের পর রয়েছে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ীর বিনিয়োগ রয়েছে সেখানে। কীভাবে তারা অর্থ নিয়েছে সে প্রশ্ন রয়েছে জোরেশোরেই। কিন্তু উত্তর নিয়ে রয়েছে গোলকধাঁধা। হুন্ডির ছোট ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা সবসময়ই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে নজর দিতে হবে রাঘববোয়ালদের দিকে। তারা কীভাবে বিদেশে গিয়ে নিজেদের বিশালত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন তা খুঁজে দেখতে হবে। কিছুদিন আগে পি কে হালদারের ভারতে বিনিয়োগ দেখে নড়েচড়ে বসেছিল দেশের বিভিন্ন সংস্থা। তিনি ভারতে এত বড় বিনিয়োগ কীভাবে করলেন তার রহস্য এখনো বের হয়নি। পি কে হালদার তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তার ঋণ ১১০০ কোটি টাকা। ৩ হাজার কোটি টাকার বাকিটা অন্যদের। দেশে ফিরতে পারলে নিজের টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন পি কে হালদার। বলেছিলেন, বাকি টাকা কার ও কীভাবে ভারতে নিয়েছেন তার তথ্য দেবেন সরকারকে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি এখনো। জানা যায়, সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় বড় বিনিয়োগ নিয়েও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চোখ রেখেছে কারও কারও প্রতি। সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় সম্পদ কেনা নিয়ে তদন্ত হলেও কোনো অর্থ ফেরত আসেনি। তবে আরব আমিরাতকে ঘিরে এখন আলোচনা বেশি। শুধু বড় নয়, মাঝারি পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ ঘাঁটি করেছেন দুবাইতে। আলো ঝলমলে দুবাইয়ের আবাসন ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তারা কিনে নিচ্ছেন। দুবাইয়ের ইংরেজি ভাষার টেলার রিপোর্ট এবং আরবি ভাষার ইমারাত আল ইউমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুবাইয়ের আবাসন খাতে বাংলাদেশিরা ১২৩ মিলিয়ন দিরহাম বিনিয়োগ করেছেন। কভিডের দেড় বছরে এটিই সে দেশে বিদেশি কোনো দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা নেদারল্যান্ডসকেও হার মানিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের ধনাঢ্যরা ১১৭.৬৭ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। আর দুবাইয়ে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা ১১১.২৫ মিলিয়ন দিরহামের সমপরিমাণ বিনিয়োগ করে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। চীনের মতো দেশকেও এ ক্ষেত্রে হার মানিয়েছেন বাংলাদেশিরা। চীনের নাগরিকরা ১০৭.৯ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনেছেন। আর জার্মানির নাগরিকরা ১০৫ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। যেসব টাকা পাচার হয়ে দুবাই-সিঙ্গাপুর গেছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় ফেরত আসবে না অর্থনীতির স্বাভাবিক অবস্থায়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের আস্থাহীনতা বেড়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। এ জন্য পাচার বাড়ছে। এটা যথেষ্ট আতঙ্কের হলেও এখানে পর্যাপ্ত মনিটরিং নেই। মনিটরিং বাড়িয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া  ছাড়া পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয়। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘নির্বাচনকালীন কিছু সংস্কার প্রয়োজন, এরপর এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকবে না’

» সাকিবকে দ্রুত দেশে আসতে দিন, এখন পর্যন্ত দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সে: ইলিয়াস

» লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তারেক রহমান

» হাসনাতের আতিথিয়েতায় শহীদ পরিবার-আহতদের পাশাপাশি আমরাও সিক্ত

» সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশি মদ, ফেনসিডিল ও টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার

» শিশুদের ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দু’দলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত ,অন্তত ৫

» ড. ইউনূস ছাগল দিয়ে হালচাষের চেষ্টা করছেন : কনক সরওয়ার

» এপ্রিলে নির্বাচন মাথায় রেখে সময়মতো রোডম্যাপ দেবে ইসি: যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা

» বোমা হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকে হত্যার ঘটনায় ২জন গ্রেফতার

» বক্স অফিসে অক্ষয় ঝড়, ৩ দিনে ১০০ কোটির পথে ‘হাউসফুল ৫’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হুন্ডির চোখ দুবাই-সিঙ্গাপুরে

করোনাভাইরাসের মহামারির পর হঠাৎ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের আরব আমিরাতে গোল্ড ভিসা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। এই ভিসা পাওয়া যায় ১০ বছরের জন্য। সুবিধা হিসেবে আবাসনসহ সব খাতে বিনিয়োগ করা যায়, যে কোনোভাবে নেওয়া যায় অর্থ এবং সহজেই খোলা যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

 

কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কড়াকড়ি আরোপ হওয়ায় রুদ্ধ হয়েছে বেগমপাড়ার পথ। তাই সেখান থেকে অনেকে ফিরছেন দুবাইতে। তবে দুবাইয়ের পর রয়েছে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ীর বিনিয়োগ রয়েছে সেখানে। কীভাবে তারা অর্থ নিয়েছে সে প্রশ্ন রয়েছে জোরেশোরেই। কিন্তু উত্তর নিয়ে রয়েছে গোলকধাঁধা। হুন্ডির ছোট ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা সবসময়ই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে নজর দিতে হবে রাঘববোয়ালদের দিকে। তারা কীভাবে বিদেশে গিয়ে নিজেদের বিশালত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন তা খুঁজে দেখতে হবে। কিছুদিন আগে পি কে হালদারের ভারতে বিনিয়োগ দেখে নড়েচড়ে বসেছিল দেশের বিভিন্ন সংস্থা। তিনি ভারতে এত বড় বিনিয়োগ কীভাবে করলেন তার রহস্য এখনো বের হয়নি। পি কে হালদার তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তার ঋণ ১১০০ কোটি টাকা। ৩ হাজার কোটি টাকার বাকিটা অন্যদের। দেশে ফিরতে পারলে নিজের টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন পি কে হালদার। বলেছিলেন, বাকি টাকা কার ও কীভাবে ভারতে নিয়েছেন তার তথ্য দেবেন সরকারকে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি এখনো। জানা যায়, সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় বড় বিনিয়োগ নিয়েও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চোখ রেখেছে কারও কারও প্রতি। সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় সম্পদ কেনা নিয়ে তদন্ত হলেও কোনো অর্থ ফেরত আসেনি। তবে আরব আমিরাতকে ঘিরে এখন আলোচনা বেশি। শুধু বড় নয়, মাঝারি পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ ঘাঁটি করেছেন দুবাইতে। আলো ঝলমলে দুবাইয়ের আবাসন ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তারা কিনে নিচ্ছেন। দুবাইয়ের ইংরেজি ভাষার টেলার রিপোর্ট এবং আরবি ভাষার ইমারাত আল ইউমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুবাইয়ের আবাসন খাতে বাংলাদেশিরা ১২৩ মিলিয়ন দিরহাম বিনিয়োগ করেছেন। কভিডের দেড় বছরে এটিই সে দেশে বিদেশি কোনো দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা নেদারল্যান্ডসকেও হার মানিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের ধনাঢ্যরা ১১৭.৬৭ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। আর দুবাইয়ে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা ১১১.২৫ মিলিয়ন দিরহামের সমপরিমাণ বিনিয়োগ করে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। চীনের মতো দেশকেও এ ক্ষেত্রে হার মানিয়েছেন বাংলাদেশিরা। চীনের নাগরিকরা ১০৭.৯ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনেছেন। আর জার্মানির নাগরিকরা ১০৫ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। যেসব টাকা পাচার হয়ে দুবাই-সিঙ্গাপুর গেছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় ফেরত আসবে না অর্থনীতির স্বাভাবিক অবস্থায়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের আস্থাহীনতা বেড়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। এ জন্য পাচার বাড়ছে। এটা যথেষ্ট আতঙ্কের হলেও এখানে পর্যাপ্ত মনিটরিং নেই। মনিটরিং বাড়িয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া  ছাড়া পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয়। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com