গ্রাহকসেবার মান না বাড়ানোর অভিযোগে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রথমে অপারেটরটিকে কোনো ধরনের নতুন সিম বিক্রি করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পরে গ্রামীণফোনের অনুরোধে ১৩ লাখ অব্যবহৃত সিম বিক্রির সুযোগ দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু আজ সেই সুযোগও রহিত করা হলো। ফলে গ্রামীণফোন নতুন-পুরনো কোনো সিমই বিক্রি করতে পারবে না।
রোববার (৬ নভেম্বর) বিকেলে বিটিআরসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বিটিআরসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা (চলতি বছরের মে পর্যন্ত) আট কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার। এই বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী থাকা সত্ত্বেও অপারেটরটির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এসেছে, তারা বিটিআরসি থেকে যে স্প্রেকট্রাম বরাদ্দ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও ঘনঘন কল ড্রপ, ফোরজি কভারেজ না বাড়ানো, বিটিআরসির পাওনা নিষ্পত্তি না করাসহ অপারেটটির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে কমিশন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা চেষ্টা করেও গ্রামীণফোনের সেবার মান ভালো করার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখিনি। তারা গ্রাহক বাড়াবে, কিন্তু সেবার মান বাড়াবে না- এটা হতে দেওয়া যাবে না। যতদিন না তারা সেবার মান ভালো করবে এবং তা সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত না হবে ততদিন গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা আসে গত ২৯ জুন। গ্রামীণফোনকে দেওয়া বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিটিআরসির পরীক্ষায় গ্রামীণফোনের সেবার মান সন্তোষজনক মনে হয়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটির সিম বিক্রি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এদিকে আজ রোববার মোবাইল ফোন অপারেটররা কী মানের সেবা দিচ্ছেন তা যাচাইয়ে অত্যাধুনিক কিউওএস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম চালু করেছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি কার্যালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এই সিস্টেমের উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে প্রথম দিকে কিছু মানুষের জন্য মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ঘরে ঘরে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী রয়েছে।
গ্রাহক বৃদ্ধি সাময়িক ব্যবসার হাতিয়ার হলেও দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই ব্যবসার জন্য গ্রাহক সন্তুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তিত প্রযুক্তির এই যুগে সেবার মানের দিকে নজর না দিলে গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হবে। এমএনপি চালু হওয়ায় নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর বদলানোর সুযোগ রয়েছে, তবে কোনো অপারেটরের গ্রাহক সেবার মান সন্তোষজনক নয়।
২০১৮ সালে তরঙ্গ নিলাম হলেও ২০২২ সালেও সেই তরঙ্গ পুরোপুরি রোলআউট করতে পারেনি মোবাইল অপারেটররা। ২০২২ সালের মধ্যে সে তরঙ্গ রোল আউট করার জন্য অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। বিটিআরসি গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা উন্নয়নশীল দেশের জন্য মাইলফলক বলেও জানান তিনি। মোবাইল ডাটার প্রাইস নির্ধারণ করে দিতে পারলে গ্রাহক উপকৃত হবে উল্লেখ করে তিনি ডাটা প্রাইস নির্ধারণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অপারেটরদের সেবার মান যাচাইয়ে বিটিআরসি আগে মাত্র একসেট যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ২০১৬ সালে কেনা ওই যন্ত্রপাতি স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সময়ের চাহিদার উপযোগী নয়। তাই সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে ও দ্রুত সময়ে বাইরে বা ভেতরে মানসম্মত সেবা যাচাইয়ে জার্মান কোম্পানি ‘রোডি অ্যান্ড স্যুয়ার্জ’ হতে এই উচ্চপ্রযুক্তির বেঞ্চমার্কিং যন্ত্রপাতি কিনেছে বিটিআরসি।
ইতোমধ্যে এসব যন্ত্রপাতি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার এবং তা পরিচালনায় জনবলকে প্রশিক্ষিতও করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। পুরো সিস্টেমটিতে দুই সেট ভেইক্যাল মাউনটেড এবং দুই সেট ব্যাকপ্যাক কোয়ালিটি অব সার্ভিস যন্ত্রপাতি রয়েছে। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটা প্রসেসিং এবং মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে স্মার্ট অ্যানালাইসিস এবং স্মার্ট মনিটর।
এই সিস্টেমের মাধ্যমে একইসঙ্গে দেশের চারটি স্থানে সেবার মান যাচাই করা যাবে। এতে একইসঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ভয়েস, ডেটা, ওটিটি, নেটওয়ার্ক কাভারেজ ইত্যাদি সেবার মান যাচাই করা যাবে।
দেশে বর্তমানে পাচটি টেলিকম অপারেটর রয়েছে। এর মধ্যে টেলিটক রাষ্ট্রায়ত্ত।