সমিতির নামে ৮ হাজার গ্রাহকের ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেই লাভ পাওয়া যাবে-এই আশায় দেশের ১০টিরও বেশি জেলার প্রায় আট হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সমিতিতে। কিন্তু বিনিয়োগের পর লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাই পাননি তারা। প্রতারিত হয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন এসব মানুষ। সমিতির নামে এভাবে হাজার হাজার মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।

 

এসব টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে থাকা সমিতিটির চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে (৫৩) গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতারণার অভিযোগে আজাদের নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন থানায় চেক জালিয়াতি ও প্রতারনাসহ সর্বমোট ৬০টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৩৬টি মামলার ওয়ারেন্ট আছে।

 

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

এর আগে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আজাদকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। আজাদ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামের খন্দকার রওশন আলীর ছেলে।

ajad2

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আজাদ প্রথমে ২০০৩ সালে ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে একটি সমিতি খুলে বসেন। সেটি ২০১২ সাল পর্যন্ত চলেছে। এরপর ২০১৩ সালে সেটির নাম বদলে রাখেন ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’। এবার এই সমিতির নামে ঋণ দিতে শুরু করেন আজাদ। তার সমিতিতে বিনিয়োগ করলেই লাভ আসবে- এমন প্রলোভনে পড়ে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় বাসিন্দারা বিনিয়োগ করতে থাকেন। আজাদ মানুষদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন জেলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দৃষ্টিনন্দন অফিস খুলতেন। তবে এই সমিতির পরিধি বাড়লে তিনি চেয়ারম্যান থাকার পাশাপাশি পরিচালনা কমিটিতে তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীকে রাখতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে আট হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়ে তারা ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান। বিষয়টি জানতে পেরে বিনিয়োগকারীরা ওইসব এলাকায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করতে থাকেন। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে

প্রতারক আজাদ জিজ্ঞাসাবাদে যা জানিয়েছেন

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আজাদ জানিয়েছেন, ‘২০০৩ সালে জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি খোলার পর সেটির শাখা কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার উপজেলায় খুলতে শুরু করেন। যার সভাপতি ছিলেন আবুল হাসেম ও সম্পাদক নাহারুল ইসলাম। প্রতারক চক্রটি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। ২০১৭ সালে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার হয়। এই সমিতিতে প্রতি গ্রাহক ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখেন।

 

২০১৭ সালে আজাদের হিসাব মতে গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। পরে গ্রাহকদের বিভিন্ন আশা দেখিয়ে তাদের সকল জামানতের অর্থ তুলে নেন আজাদ। ওই বছরের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে তার আঞ্চলিক সকল অফিস গুটিয়ে এবং সকল ফোন নম্বর একযোগে বন্ধ রেখে ঢাকার উত্তরায় পালিয়ে গা ঢাকা দেন। পালানোর সময় মাঠপর্যায়ে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ। যা তিনি আর সংগ্রহ করতে পারেননি।

ajad3

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারকৃতের সাথে আট শতাধিক কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদেরকে কোনো ধরনের বেতন দেওয়া হতো না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখানো হতো। এছাড়াও তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে নিয়মের বাইরে ডিপিএসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতো। তার এই প্রতিষ্ঠানটির টার্গেট গ্রুপ ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ। গ্রাহক বৃদ্ধির জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আকৃষ্ট করতেন। ফলে তারা রাতারাতি গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম হন। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন দেন। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। গ্রাহকদের সংগৃহীত অর্থ তারা নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন।

 

প্রতারণার টাকায় আজাদের যত সম্পদ

২০০৩ সালে ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ পরে ২০১৩ সালে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান খুলে ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন আজাদ। এছাড়াও তিনি ‘ঠিকানা লিভিং লিমিটেড’ নামে আরও একটি ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরি করে ক্রয়-বিক্রয় করতেন। যেটির নামে নিজের জেলা কুষ্টিয়াতে ১৫ বিঘা জমি, একটি ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন, একটি ইটের ভাটা এবং রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি কিনেছেন আজাদ। আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে তিনি ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়িও কিনেছেন। তার স্ত্রীর নামে পোস্ট অফিসে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং একটি প্রাইভেট ব্যাংকে তার দুই কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এছাড়াও নামে-বেনামে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে।

 

কে এই প্রতারক আজাদ

গ্রেফতার আজাদ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ছাত্র অবস্থায় ইটের ভাটার ব্যবসা, ঠিকাদারি ব্যবসা, কুষ্টিয়ার একটি স্থানীয় পত্রিকার প্রচার সম্পাদক এবং একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‌্যাব।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘নির্বাচনকালীন কিছু সংস্কার প্রয়োজন, এরপর এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকবে না’

» সাকিবকে দ্রুত দেশে আসতে দিন, এখন পর্যন্ত দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সে: ইলিয়াস

» লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তারেক রহমান

» হাসনাতের আতিথিয়েতায় শহীদ পরিবার-আহতদের পাশাপাশি আমরাও সিক্ত

» সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশি মদ, ফেনসিডিল ও টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার

» শিশুদের ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দু’দলের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত ,অন্তত ৫

» ড. ইউনূস ছাগল দিয়ে হালচাষের চেষ্টা করছেন : কনক সরওয়ার

» এপ্রিলে নির্বাচন মাথায় রেখে সময়মতো রোডম্যাপ দেবে ইসি: যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা

» বোমা হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকে হত্যার ঘটনায় ২জন গ্রেফতার

» বক্স অফিসে অক্ষয় ঝড়, ৩ দিনে ১০০ কোটির পথে ‘হাউসফুল ৫’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সমিতির নামে ৮ হাজার গ্রাহকের ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেই লাভ পাওয়া যাবে-এই আশায় দেশের ১০টিরও বেশি জেলার প্রায় আট হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সমিতিতে। কিন্তু বিনিয়োগের পর লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাই পাননি তারা। প্রতারিত হয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন এসব মানুষ। সমিতির নামে এভাবে হাজার হাজার মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।

 

এসব টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে থাকা সমিতিটির চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে (৫৩) গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতারণার অভিযোগে আজাদের নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন থানায় চেক জালিয়াতি ও প্রতারনাসহ সর্বমোট ৬০টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৩৬টি মামলার ওয়ারেন্ট আছে।

 

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

এর আগে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আজাদকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। আজাদ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামের খন্দকার রওশন আলীর ছেলে।

ajad2

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আজাদ প্রথমে ২০০৩ সালে ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে একটি সমিতি খুলে বসেন। সেটি ২০১২ সাল পর্যন্ত চলেছে। এরপর ২০১৩ সালে সেটির নাম বদলে রাখেন ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’। এবার এই সমিতির নামে ঋণ দিতে শুরু করেন আজাদ। তার সমিতিতে বিনিয়োগ করলেই লাভ আসবে- এমন প্রলোভনে পড়ে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় বাসিন্দারা বিনিয়োগ করতে থাকেন। আজাদ মানুষদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন জেলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দৃষ্টিনন্দন অফিস খুলতেন। তবে এই সমিতির পরিধি বাড়লে তিনি চেয়ারম্যান থাকার পাশাপাশি পরিচালনা কমিটিতে তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীকে রাখতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে আট হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়ে তারা ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান। বিষয়টি জানতে পেরে বিনিয়োগকারীরা ওইসব এলাকায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করতে থাকেন। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে

প্রতারক আজাদ জিজ্ঞাসাবাদে যা জানিয়েছেন

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আজাদ জানিয়েছেন, ‘২০০৩ সালে জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি খোলার পর সেটির শাখা কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার উপজেলায় খুলতে শুরু করেন। যার সভাপতি ছিলেন আবুল হাসেম ও সম্পাদক নাহারুল ইসলাম। প্রতারক চক্রটি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। ২০১৭ সালে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার হয়। এই সমিতিতে প্রতি গ্রাহক ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখেন।

 

২০১৭ সালে আজাদের হিসাব মতে গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। পরে গ্রাহকদের বিভিন্ন আশা দেখিয়ে তাদের সকল জামানতের অর্থ তুলে নেন আজাদ। ওই বছরের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে তার আঞ্চলিক সকল অফিস গুটিয়ে এবং সকল ফোন নম্বর একযোগে বন্ধ রেখে ঢাকার উত্তরায় পালিয়ে গা ঢাকা দেন। পালানোর সময় মাঠপর্যায়ে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ। যা তিনি আর সংগ্রহ করতে পারেননি।

ajad3

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারকৃতের সাথে আট শতাধিক কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদেরকে কোনো ধরনের বেতন দেওয়া হতো না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখানো হতো। এছাড়াও তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে নিয়মের বাইরে ডিপিএসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতো। তার এই প্রতিষ্ঠানটির টার্গেট গ্রুপ ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ। গ্রাহক বৃদ্ধির জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আকৃষ্ট করতেন। ফলে তারা রাতারাতি গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম হন। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন দেন। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। গ্রাহকদের সংগৃহীত অর্থ তারা নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন।

 

প্রতারণার টাকায় আজাদের যত সম্পদ

২০০৩ সালে ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ পরে ২০১৩ সালে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান খুলে ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন আজাদ। এছাড়াও তিনি ‘ঠিকানা লিভিং লিমিটেড’ নামে আরও একটি ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরি করে ক্রয়-বিক্রয় করতেন। যেটির নামে নিজের জেলা কুষ্টিয়াতে ১৫ বিঘা জমি, একটি ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন, একটি ইটের ভাটা এবং রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি কিনেছেন আজাদ। আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে তিনি ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়িও কিনেছেন। তার স্ত্রীর নামে পোস্ট অফিসে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং একটি প্রাইভেট ব্যাংকে তার দুই কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এছাড়াও নামে-বেনামে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে।

 

কে এই প্রতারক আজাদ

গ্রেফতার আজাদ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ছাত্র অবস্থায় ইটের ভাটার ব্যবসা, ঠিকাদারি ব্যবসা, কুষ্টিয়ার একটি স্থানীয় পত্রিকার প্রচার সম্পাদক এবং একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‌্যাব।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com