কেমন আছ সুচিত্রা?

ভোর পাঁচটা বারো। অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। রিসিভ করতেই বুঝলাম, অপরপ্রান্তের মানুষটি বহু পুরনো। অনেকদিন আমাদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলেও তার ঘন নিঃশ্বাস জানান দিল, কেউ কেউ কখনও পুরনো হয় না। বরং না থেকেও সবটা জুড়ে থেকে যায়, বয়ে চলে বহতা নদীর মতো।

জানো, গতকালও না আমি সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। কাঁচের চুড়ি আর টিপ বিক্রি হচ্ছে দেখে ভীষণ মন খারাপ হলো, অর্ধসিদ্ধ আতপ চালের মতো। কারণ, কাঁচের চুড়ি তোমার খুব পছন্দের ছিল। প্রায়ই বায়না করতে হরেক রঙের চুড়ি এনে দিতে। আচ্ছা এখন তুমি কার কাছে বায়না ধরো? আর কাকে দিয়েই বা আটকাও শাড়ির সেফটিপিন?

কি বলছি এসব আবোল-তাবোল? কোন অধিকারেই বা বলছি? আমি তো এখন তোমার বারান্দায়, ঝরে পড়া এক অতীত ফুল। যে কিনা অনাদর-অবহেলা আর অর্থ-বৈভবের অভাবে ঝরে গেছে, যেতে বাধ্য হয়েছে।

আচ্ছা সময় পেলে কি তুমি ওই পুকুর পাড়টাতে গিয়ে এখনও আলতা পায়ে বসো? খোলা চুলে পাখিদের গান শোনো? আর খুব বেশি মন খারাপ হলে জানালা দিয়ে পাশের বকুল গাছটার দিকে এখনও কি শুন্য দৃষ্টিতে তাকাও? আছে এসব অভ্যেস? নাকি বইয়ের মলাট বদলের মতো সব বদলে ফেলেছ?

টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি, তুমি এখন আর আগের মতো নেই। কালবৈশাখীর বিপরীতে বনে গেছো, দীঘির শান্ত জল। মিস্টার বিন, থ্রি স্টুডেজ কিংবা গোপাল ভাঁড়-নন্টে ফন্টেতেও হাসো না। জোৎস্নার পরিবর্তে তোমার মুখে আজ, কেবলই গাঢ় অন্ধকার।

ধূর, আমি বোধহয় একটু বেশিই কল্পনা করে ফেলছি। টেলিপ্যাথির দোহাই দিয়ে তুমিহীনতার প্রলাপ বকছি।

জানো সুচিত্রা, তোমার একসময়ের এই প্রাণের মানুষটাও আজ ভালো নেই। কেউ এখন আর রুটিন করে তাকে ওষুধ খাইয়ে দেওয়ার কথা, বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে বের হওয়া কিংবা রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা বলে না।

অনিয়মের নিয়মে বাঁধা পড়ে তাই, প্রায়ই এখন তাকে হাসপাতালে ছুটতে হয়। কাঁধে পুরো পরিবারের দায়িত্ব, সঙ্গে তুমি নেই। সবমিলিয়ে জিন্দালাশ হয়ে প্রসবী পৃথিবীর যৌনাঙ্গের ভেতর দিয়ে হাঁটছে, দৌঁড়াচ্ছে আর হোঁচট খাচ্ছে। পরক্ষণেই ভাবছে, জীবনটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিংবা ডিসকভারি চ্যানেল থেকে কম কিসে?

যাইহোক, তুমি নিজের যত্ন নিও। সময় মতো ওষুধ খেও। আর রাস্তা পারাপারের সময়, অবশ্যই দেখেশুনে পার হইয়ো। আরেকটা কথা তো বলাই হলো না। ঘুমানোর আগে অবশ্যই অবশ্যই চশমা খুলে ঘুমিও।

আর অনধিকার চর্চা না করে, আজ তবে এ পর্যন্তই। ফের হয়তো আবার এভাবে খোলা চিঠি লেখা হবে। লাল-নীল-হলুদ খামে না পাঠিয়ে মনের ডাকবক্সে পোস্ট করে লেখা হবে, তুমি কেমন আছো সুচিত্রা?

ততক্ষণ অবধি না হয় তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনো কিংবা বুঁদ হয়ে যাও ড. জাফর ইকবালে। বিশ্বাস করো, আমি একটুও অভিযোগ রাখব না। একটুও না। আর ঝগড়া? সে তো ভুলেও না। কারণ, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। আজও, এখনও, ঠিক আগের মতোই…

লেখক: ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান, গণমাধ্যমকর্মী । সূএ: ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পাঁচ থানায় একযোগে অভিযান, অস্ত্র উদ্ধার

» মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা হত্যা, মূলহোতাসহ গ্রেফতার ২জন

» সংবিধান পুনর্লিখনে গণপরিষদ-আইনসভা নির্বাচন একই হতে হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ

» শেখ হাসিনা নির্বাচনকে জাদুঘরে পাঠিয়েছিল

» কেমন গয়না পছন্দ করেন মিমি?

» দেশের জন্য কাজ করছেন নাকি আ’লীগকে পুনর্বাসনের অপেক্ষা : কর্নেল অলির

» দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ: জি এম কাদের

» নির্বাচন প্রলম্বিত করার পক্ষপাতী নয় এনসিপি: আখতার হোসেন

» বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন হবে : প্রধান উপদেষ্টা

» কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কেমন আছ সুচিত্রা?

ভোর পাঁচটা বারো। অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। রিসিভ করতেই বুঝলাম, অপরপ্রান্তের মানুষটি বহু পুরনো। অনেকদিন আমাদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলেও তার ঘন নিঃশ্বাস জানান দিল, কেউ কেউ কখনও পুরনো হয় না। বরং না থেকেও সবটা জুড়ে থেকে যায়, বয়ে চলে বহতা নদীর মতো।

জানো, গতকালও না আমি সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। কাঁচের চুড়ি আর টিপ বিক্রি হচ্ছে দেখে ভীষণ মন খারাপ হলো, অর্ধসিদ্ধ আতপ চালের মতো। কারণ, কাঁচের চুড়ি তোমার খুব পছন্দের ছিল। প্রায়ই বায়না করতে হরেক রঙের চুড়ি এনে দিতে। আচ্ছা এখন তুমি কার কাছে বায়না ধরো? আর কাকে দিয়েই বা আটকাও শাড়ির সেফটিপিন?

কি বলছি এসব আবোল-তাবোল? কোন অধিকারেই বা বলছি? আমি তো এখন তোমার বারান্দায়, ঝরে পড়া এক অতীত ফুল। যে কিনা অনাদর-অবহেলা আর অর্থ-বৈভবের অভাবে ঝরে গেছে, যেতে বাধ্য হয়েছে।

আচ্ছা সময় পেলে কি তুমি ওই পুকুর পাড়টাতে গিয়ে এখনও আলতা পায়ে বসো? খোলা চুলে পাখিদের গান শোনো? আর খুব বেশি মন খারাপ হলে জানালা দিয়ে পাশের বকুল গাছটার দিকে এখনও কি শুন্য দৃষ্টিতে তাকাও? আছে এসব অভ্যেস? নাকি বইয়ের মলাট বদলের মতো সব বদলে ফেলেছ?

টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি, তুমি এখন আর আগের মতো নেই। কালবৈশাখীর বিপরীতে বনে গেছো, দীঘির শান্ত জল। মিস্টার বিন, থ্রি স্টুডেজ কিংবা গোপাল ভাঁড়-নন্টে ফন্টেতেও হাসো না। জোৎস্নার পরিবর্তে তোমার মুখে আজ, কেবলই গাঢ় অন্ধকার।

ধূর, আমি বোধহয় একটু বেশিই কল্পনা করে ফেলছি। টেলিপ্যাথির দোহাই দিয়ে তুমিহীনতার প্রলাপ বকছি।

জানো সুচিত্রা, তোমার একসময়ের এই প্রাণের মানুষটাও আজ ভালো নেই। কেউ এখন আর রুটিন করে তাকে ওষুধ খাইয়ে দেওয়ার কথা, বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে বের হওয়া কিংবা রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা বলে না।

অনিয়মের নিয়মে বাঁধা পড়ে তাই, প্রায়ই এখন তাকে হাসপাতালে ছুটতে হয়। কাঁধে পুরো পরিবারের দায়িত্ব, সঙ্গে তুমি নেই। সবমিলিয়ে জিন্দালাশ হয়ে প্রসবী পৃথিবীর যৌনাঙ্গের ভেতর দিয়ে হাঁটছে, দৌঁড়াচ্ছে আর হোঁচট খাচ্ছে। পরক্ষণেই ভাবছে, জীবনটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিংবা ডিসকভারি চ্যানেল থেকে কম কিসে?

যাইহোক, তুমি নিজের যত্ন নিও। সময় মতো ওষুধ খেও। আর রাস্তা পারাপারের সময়, অবশ্যই দেখেশুনে পার হইয়ো। আরেকটা কথা তো বলাই হলো না। ঘুমানোর আগে অবশ্যই অবশ্যই চশমা খুলে ঘুমিও।

আর অনধিকার চর্চা না করে, আজ তবে এ পর্যন্তই। ফের হয়তো আবার এভাবে খোলা চিঠি লেখা হবে। লাল-নীল-হলুদ খামে না পাঠিয়ে মনের ডাকবক্সে পোস্ট করে লেখা হবে, তুমি কেমন আছো সুচিত্রা?

ততক্ষণ অবধি না হয় তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনো কিংবা বুঁদ হয়ে যাও ড. জাফর ইকবালে। বিশ্বাস করো, আমি একটুও অভিযোগ রাখব না। একটুও না। আর ঝগড়া? সে তো ভুলেও না। কারণ, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। আজও, এখনও, ঠিক আগের মতোই…

লেখক: ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান, গণমাধ্যমকর্মী । সূএ: ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com