অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে আদায় ১০৮ কোটি টাকা

অশ্লীল সংলাপ ও ভিডিও দেখিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে আদায় করা হয়েছে ১০৮ কোটি ৯৯ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৭ টাকা। ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ‘বিগো লাইভ’ ব্যবহার করে ভার্চুয়াল কারেন্সি ডায়মন্ড ও বিন্সের মাধ্যমে এসব টাকা আদায় করা হয়েছে। বিগো বাংলা লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

প্রায় ২১ মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা থাকা ২৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৪ টাকা অবরুদ্ধ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাকি ৭৯ কোটি ৩২ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৩ টাকা পাচার করা হয়েছে সিঙ্গাপুরে। ওই দেশে বিগো টেকনোলজি নামে থাকা কোম্পানির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এসব টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে সিআইডির এসআই সোহেল রানার করা মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিগো বাংলা লিমিটেড, বিগো বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়াও জি, বিগো বাংলার ডায়মন্ড ও বিন্সের রিসেলার এস এম নাজমুল হক, হোস্ট রিক্রুটার আরিফ হোসেন এবং মনসুন হোল্ডিং লিমিটেডসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন সহযোগী।

 

মামলার বাদী এসআই সোহেল রানা এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে মামলাটি করেন। অনুসন্ধানে যা পেয়েছেন তার সবই মামলার এজাহারে তুলে ধরেছেন তিনি।

 

এর আগে গত বছরের ১৩ জুন রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সোহেল রানা। ২৫ মে তাকে এই মানি লন্ডারিং মামলার আগে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় আসামি ছিলেন ওই চীনা নাগরিকসহ বিগো বাংলার কর্মী মোস্তাফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক ও আসমা উল হুসনা সেজুতী। তারা এখন কারাগারে।

 

সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগো বাংলা লিমিটেড ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়। বিগো বাংলার চেয়ারম্যান হলেন চীনা নাগরিক জাই জুহাং। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াও জি। পরিচালক হলেন লি জুয়েলিং। নিবন্ধনে এরা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং রপ্তানি, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, গেম ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার যন্ত্রাংশের উৎপাদন, ক্রয়/বিক্রয়, সব প্রকার ডিজিটাল পণ্য ক্রয়/বিক্রয়, সব রকমের সম্প্রচার সার্ভিস, ডিজিটাল মিডিয়া স্ট্রিমিং, ডিজিটাল সার্ভিস সম্পর্কিত ব্যবসা পরিচালনার কথা উল্লেখ করে। তারা লাইভ ভিডিও কিংবা চ্যাট ব্যবহার করে ডায়মন্ড ও বিন্সের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি। আর বিগো বাংলা লিমিটেড কোনো গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি না করে মনসুন হোল্ডিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে। পরে মনসুন হোল্ডিং পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান সূর্যমুখী লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে। মনসুন হোল্ডিং চুক্তি অনুযায়ী সূর্যমুখী লিমিটেডের মাধ্যমে নেওয়া টাকা বিগো লাইভের এইচএসবিসির এবং প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে পাঠাত।

 

এদিকে সিআইডিকে পাঠানো এক চিঠিতে সূর্যমুখী লিমিটেড জানিয়েছে, তারা বিগোর সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তি করেনি। তারা গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৩টি ট্রান্সজেকশনে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার ৬০১ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ ৯০ হাজার ১৯১ টাকা চার্জ কেটে রেখে মনসুন হোল্ডিং-এর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখার অ্যাকাউন্টে জমা করে দেয়। তবে এ সংক্রান্ত দেওয়া সিআইডির চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি মনসুন হোল্ডিং। এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) বা পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেমেন্ট অপারেটর না হওয়া সত্ত্বেও বিগো বাংলার প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা টাকা লেনদেন করেছে। সিআইডি বলছে, বিগো বাংলা লিমিটেড ২০১৯ সালে এস এম নাজমুল হকের সঙ্গে চুক্তি করে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ডায়মন্ড এবং বিন্সের রিসেলার। তিনি ডায়মন্ড ও বিন্স বিক্রির কোটি কোটি টাকা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) সংগ্রহ করে বিগো বাংলার অ্যাকাউন্টে কিছু অংশ জমা করতেন। আর বাকি সব নগদ টাকা ইয়াও জির কাছে জমা দিতেন। ইয়াও জি এসব টাকা জেসিকা এবং ঝাং লিনের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিঙ্গাপুরে পাঠাতেন। জেসিকা এবং ঝাং লিনের বাংলাদেশে অন্য ব্যবসা রয়েছে। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৮ জুলাই পর্যন্ত বিগো বাংলার প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৩ টাকা এবং এইচএসবিসির গুলশান শাখায় ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়েছে। এ দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৯৫১ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর বাকি টাকা আদালতের মাধ্যমে অবরুদ্ধ রেখেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। এস এম নাজমুল হকের ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ থেকে গত বছরের ৩ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৭ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৮১২ টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ওইসব অ্যাকাউন্টে মাত্র ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৯ টাকা স্থিতি রয়েছে। যা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। নাজমুল বাকি টাকা উত্তোলন করে ইয়াও জিকে নগদ দিয়েছেন। আর নাজমুলের এমএফএস বিকাশ ব্যক্তিগত ও মার্চেন্ড হিসাবে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে গত বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বিকাশ নম্বর থেকে মোট ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৭ হাজার ১৫৩ টাকা ক্যাশ ইন করা হয়েছে। এসব টাকাও উত্তোলন করে ইয়াও জিকে নগদ দিয়েছেন নাজমুল। যা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

 

এ ছাড়া বিগো বাংলার হোস্ট রিক্রুটার আরিফ হোসেনের সিটি ব্যাংকের গাজীপুর শাখায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৩ জুলাই পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৮০৬ টাকা জমা করা হয়েছে। আরিফ এর মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৬ টাকা উত্তোলন করে ইয়াও জিকে নগদ দিয়েছেন। আর বিগো বাংলার কর্মী সন্দেহভাজন মোস্তফা সাইফ রেজার ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এবং আসমা উল হুসনা সেজুতীর ব্যাংক এশিয়া ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তাদের বেতন-ভাতা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিগো অ্যাপের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিগো অ্যাপের ব্যবহারকারীদের বড় অংশ তরুণ-তরুণী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক। এই অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি আইডির নাম ব্রডকাস্টার। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করেন তরুণ-তরুণীরা। ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল কারেন্সি ডায়মন্ড কিংবা বিন্স কিনতে হয়। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে ডায়মন্ড কেনা যেত। আর বিগো বাংলার মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বিগো টেকনোলজি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেকনোলজি বিগোর যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আবারও কমল স্বর্ণের দাম

» জাপানে শক্তিশালী ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প

» হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে

» উদ্যমী ও অগ্রগামী মানুষদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করলো মানব কল্যাণ পরিষদ

» দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষায় দেবোত্তর সম্পদ আইন তৈরি করা হচ্ছে – ভূমিমন্ত্রী

» সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুসংহত করতে  হবে-ধর্মমন্ত্রী

» ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার আয়োজনে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্কলার্স কাপ ২০২৪’

» নতুন উদ্ভাবন বাজারে এলো বাংলা ভাষার প্রথম স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’

» বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, পরিষ্কার ধারণা ছিল : জিএম কাদের

» চিফ হিট অফিসার ডিএনসিসির কেউ নন : মেয়র আতিক

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে আদায় ১০৮ কোটি টাকা

অশ্লীল সংলাপ ও ভিডিও দেখিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে আদায় করা হয়েছে ১০৮ কোটি ৯৯ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৭ টাকা। ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ‘বিগো লাইভ’ ব্যবহার করে ভার্চুয়াল কারেন্সি ডায়মন্ড ও বিন্সের মাধ্যমে এসব টাকা আদায় করা হয়েছে। বিগো বাংলা লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

প্রায় ২১ মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা থাকা ২৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৪ টাকা অবরুদ্ধ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাকি ৭৯ কোটি ৩২ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৩ টাকা পাচার করা হয়েছে সিঙ্গাপুরে। ওই দেশে বিগো টেকনোলজি নামে থাকা কোম্পানির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এসব টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে সিআইডির এসআই সোহেল রানার করা মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিগো বাংলা লিমিটেড, বিগো বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়াও জি, বিগো বাংলার ডায়মন্ড ও বিন্সের রিসেলার এস এম নাজমুল হক, হোস্ট রিক্রুটার আরিফ হোসেন এবং মনসুন হোল্ডিং লিমিটেডসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন সহযোগী।

 

মামলার বাদী এসআই সোহেল রানা এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে মামলাটি করেন। অনুসন্ধানে যা পেয়েছেন তার সবই মামলার এজাহারে তুলে ধরেছেন তিনি।

 

এর আগে গত বছরের ১৩ জুন রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সোহেল রানা। ২৫ মে তাকে এই মানি লন্ডারিং মামলার আগে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় আসামি ছিলেন ওই চীনা নাগরিকসহ বিগো বাংলার কর্মী মোস্তাফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক ও আসমা উল হুসনা সেজুতী। তারা এখন কারাগারে।

 

সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগো বাংলা লিমিটেড ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়। বিগো বাংলার চেয়ারম্যান হলেন চীনা নাগরিক জাই জুহাং। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াও জি। পরিচালক হলেন লি জুয়েলিং। নিবন্ধনে এরা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং রপ্তানি, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, গেম ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার যন্ত্রাংশের উৎপাদন, ক্রয়/বিক্রয়, সব প্রকার ডিজিটাল পণ্য ক্রয়/বিক্রয়, সব রকমের সম্প্রচার সার্ভিস, ডিজিটাল মিডিয়া স্ট্রিমিং, ডিজিটাল সার্ভিস সম্পর্কিত ব্যবসা পরিচালনার কথা উল্লেখ করে। তারা লাইভ ভিডিও কিংবা চ্যাট ব্যবহার করে ডায়মন্ড ও বিন্সের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি। আর বিগো বাংলা লিমিটেড কোনো গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি না করে মনসুন হোল্ডিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে। পরে মনসুন হোল্ডিং পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান সূর্যমুখী লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে। মনসুন হোল্ডিং চুক্তি অনুযায়ী সূর্যমুখী লিমিটেডের মাধ্যমে নেওয়া টাকা বিগো লাইভের এইচএসবিসির এবং প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে পাঠাত।

 

এদিকে সিআইডিকে পাঠানো এক চিঠিতে সূর্যমুখী লিমিটেড জানিয়েছে, তারা বিগোর সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তি করেনি। তারা গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৩টি ট্রান্সজেকশনে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার ৬০১ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ ৯০ হাজার ১৯১ টাকা চার্জ কেটে রেখে মনসুন হোল্ডিং-এর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখার অ্যাকাউন্টে জমা করে দেয়। তবে এ সংক্রান্ত দেওয়া সিআইডির চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি মনসুন হোল্ডিং। এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) বা পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেমেন্ট অপারেটর না হওয়া সত্ত্বেও বিগো বাংলার প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা টাকা লেনদেন করেছে। সিআইডি বলছে, বিগো বাংলা লিমিটেড ২০১৯ সালে এস এম নাজমুল হকের সঙ্গে চুক্তি করে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ডায়মন্ড এবং বিন্সের রিসেলার। তিনি ডায়মন্ড ও বিন্স বিক্রির কোটি কোটি টাকা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) সংগ্রহ করে বিগো বাংলার অ্যাকাউন্টে কিছু অংশ জমা করতেন। আর বাকি সব নগদ টাকা ইয়াও জির কাছে জমা দিতেন। ইয়াও জি এসব টাকা জেসিকা এবং ঝাং লিনের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিঙ্গাপুরে পাঠাতেন। জেসিকা এবং ঝাং লিনের বাংলাদেশে অন্য ব্যবসা রয়েছে। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৮ জুলাই পর্যন্ত বিগো বাংলার প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৩ টাকা এবং এইচএসবিসির গুলশান শাখায় ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়েছে। এ দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৯৫১ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর বাকি টাকা আদালতের মাধ্যমে অবরুদ্ধ রেখেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। এস এম নাজমুল হকের ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ থেকে গত বছরের ৩ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৭ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৮১২ টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ওইসব অ্যাকাউন্টে মাত্র ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৯ টাকা স্থিতি রয়েছে। যা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। নাজমুল বাকি টাকা উত্তোলন করে ইয়াও জিকে নগদ দিয়েছেন। আর নাজমুলের এমএফএস বিকাশ ব্যক্তিগত ও মার্চেন্ড হিসাবে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে গত বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বিকাশ নম্বর থেকে মোট ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৭ হাজার ১৫৩ টাকা ক্যাশ ইন করা হয়েছে। এসব টাকাও উত্তোলন করে ইয়াও জিকে নগদ দিয়েছেন নাজমুল। যা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

 

এ ছাড়া বিগো বাংলার হোস্ট রিক্রুটার আরিফ হোসেনের সিটি ব্যাংকের গাজীপুর শাখায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৩ জুলাই পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৮০৬ টাকা জমা করা হয়েছে। আরিফ এর মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৬ টাকা উত্তোলন করে ইয়াও জিকে নগদ দিয়েছেন। আর বিগো বাংলার কর্মী সন্দেহভাজন মোস্তফা সাইফ রেজার ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এবং আসমা উল হুসনা সেজুতীর ব্যাংক এশিয়া ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তাদের বেতন-ভাতা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিগো অ্যাপের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিগো অ্যাপের ব্যবহারকারীদের বড় অংশ তরুণ-তরুণী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক। এই অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি আইডির নাম ব্রডকাস্টার। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করেন তরুণ-তরুণীরা। ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল কারেন্সি ডায়মন্ড কিংবা বিন্স কিনতে হয়। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে ডায়মন্ড কেনা যেত। আর বিগো বাংলার মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বিগো টেকনোলজি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেকনোলজি বিগোর যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com