ডা. মাহবুবর রহমান: তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল কলমের মাধ্যমে। সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিবিধ ভাবনা ঠাঁই পেত তাঁর কলমে। সব ভাবনাই যে আমার ভাবনার সাথে মিলে যেত তা নয়। গণতন্ত্রের জন্য তা মঙ্গলজনকও নয়। তবে তিনি দেশ ও মানুষের কথা ভাবতেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য ভাবতেন। প্রচলিত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তি সুনাম আর শাসন ক্ষমতার চারিধারের রঙিন রোশনাই তাঁকে মন্ত্রমুগ্ধ করত না। তিনি চাইলে ক্ষমতাশীনদের সুনজর কেড়ে নিতে পারতেন। তাঁর কলমের সেই শক্তি ছিল। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের অলিগলিতে বিচরণ করে দুর্নীতির কানাগলির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। একজন দেশপ্রেমিক সংবাদকর্মীর সঠিক কাজটি তিনি বেছে নিয়েছিলেন।
তাঁর কলমের সাথে পরিচয়ের অনেক পরে তাঁর সাথে সরাসরি পরিচয় হয়েছিল অনুজপ্রতিম ডা রাকিবুল ইসলাম লিটুর মাধ্যমে। সেই পরিচয় দীর্ঘ পরিক্রমায় পরিণত হয়েছিল বিশ্বস্ত নির্ভরতায়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তার সমস্যাবলি, উত্তরণের উপায় এবং অপার সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন সময় কত আলোচনা হত তাঁর সাথে! ধীরে ধীরে আমার উপর তাঁর আস্থা, বিশ্বাস এবং নির্ভরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, পরিবারের সবাই আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের আওতায় চলে আসে। তিনি-সহ তাঁর তিন ভাইয়ের হৃদরোগ চিকিৎসা, হার্টে রিং স্থাপন আমার হাতেই সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁরা সবাই আমার আত্মার আত্মীয়ে পরিণত হয়েছিলেন।
প্রতিটি মানুষের জীবনে সাফল্য এবং ব্যর্থতা পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলে। তাঁর জীবনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তাঁর সাফল্য ছিল তিনি মানুষকে দুর্নীতিমুক্ত এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজ বিকেলে এমন স্বপ্নবাজ মানুষটি হঠাৎ করে আমাকে শেষবারের মত “বড়দা” ডাকটি না জানিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালেন। একজন পীর হাবিবের কণ্ঠ অকালে থেমে গেল কিন্তু তাঁর দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়বার স্বপ্নের মৃত্যু নেই।
লেখক : সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন