ফারহান ইশরাকের কবিতা

মা-ঘ্রাণ

মা-ঘ্রাণে মহাকাশ এত ভারী, প্রিয়
মানবতা, মাতৃ-অবতার, পারবো না
চলিষ্ণুতার বিদ্যুতে পাড়ি দিতে?
পারবোই মুহূর্তিকায়, রণে, উত্তরণে!
রংধনুসুলভ সপ্তগামী সরণি প্রস্তুত
বেছে নেবার গরজে অধীর সারস
রেণুজবজব ডানা তালকানা? না, না
আছি, ক্যাকটাসের শুঁড়ে মিষ্টিজল
মায়ের গন্ধে বেতাল উৎসুক
কতমাত্রা উড়ালসম্ভব মোহ ভেঙে
মা গো, জাগো যদি মমতায়, বলো,
লক্ষ্মীশিশু, যা রে সরলরেখায়
বহুদূর, যেখানে পেরেক শুদ্ধতায়
রক্ত-ঝরঝর ডাকে মাভৈ মাভৈ!
কম-তো-উড়িনি ব্যথাপালকের ঝড়ে
টনটনে আগুনগানে গুনগুন
রোদপ্রহরে, শহরে বহরে, কিংবা
আস্ফালনে, ক্ষণনির্জনে খুব একা
গ্লাসে গ্লাসে ইক্ষু ইতিহাস, স্বাদুরস!
মাছি, ওরফে এই ত্রিকালদর্শী জানে
যাকে খুব কবিশব্দে ভর্ৎসনা…:
ছোবড়া ডিঙিয়ে রস, ওরফে মৃত্যু
মা গো, আতঙ্ক উজিয়ে অভিধান
নৌকাগভীর ধানে যাবোই সঙ্গে
সারাবেলা প্রজাতন্ত্রফুলে, গুঞ্জনে
কতই উড়েছি না না-বালগ দিনে
মেঘে মেঘে, ইস্পাতের দাঁতে
অসহ্য দাগ কেটে, হেঁটে…স্বপ্নসন্ধ্যায়,
দূরনিরিখ স্পর্ধায়, মরীচিকায়,
মাকে ভুলে ছলদ্রাঘিমায়, উপমায়
ব্যর্থ চিৎকারে: মা’য় ডাকে দুধপাতে?
জ্যোৎস্নাস্ফীত প্লেটে, রাঙা ভাত
ক্ষুধার প্রতীকে পৃথিবীমুখ এঁকে
ডাকছে কাকে মাতৃচুম্বক
স্বার্থে নয়, সারথীটানে স্নেহ-আহ্বানে
আকৃষ্ট শিশু যাবে অক্সিজেনভোরে
মা-ঘ্রাণে সারাবাংলাই ভারী
রেণুর ওজনে মাটিচুম্বী দিনরাত
মানচিত্র আর নদীতে তাঁর নাম
গ্রেনেড ভর্তি অ্যাভিন্যু-তল্লাট
নষ্টের তারাবাজি ডিঙোবেই
মমতাচুম্বক ডাকে কর্ম-উৎসবে
শিশুসুলভ যত লোহা, নিরুদ্বেগ
যাবে তো তাঁর কাছে, যাবে।
***

রক্তবাক্যে লেখা নদী

ড্রেজার ফিট করা চিত্রের পটভূমে
ভোর অথবা সন্ধ্যা নামক
আলোচনা-দীর্ঘশ্বাসে টানা-
গদ্য এত করুণাসুন্দর হতে পারে
দখল হারানো মাছ বা কচুরি ব্যতীত
অন্য কারো কাছে বিফল তর্জমা!
প্রতিবেদনের সকল পৃষ্ঠা
বেদনার ভারে
উল্টে দেখাতে পারবে
কোথায় কী লেখা?
মানুষ লেপ্টানো রোলার তৎপর
স্টিমের চাপে মোটা দাগে উন্নয়ন
লিখে গেছে!
টেবিলে বিলের কাগজ, তথাপিও
একটি সন্দেহ ঠান্ডা বাতাসে সাপ:
কাদার স্পর্শ কল্পনাও দুষ্কর
পুরোটাই রক্তভেজা, নানামাত্রিক
ভাঁজে
পাতালে হীরের ছুরি,
টঙ্কার খাড়া কানে
ভূমি আলোড়ন শুভদিন প্রত্যাশায়
চাপা পড়া উজ্জ্বলতা মাটিভেদী
হবে একদিন?
জলাবদ্ধ দিনে, নদীমাতৃক সভ্যতা
এবং পুরো জাতি কাঁদতে রাজি হবে?
নদীর জন্য একটি সংজ্ঞা-
জলের স্থবির অর্থ
পাশ কাটিয়ে
চলা
ছাপানো জোয়ার
সূর্যাস্ত ফলিত
স্বর্ণপ্যাপিরাসে
এই অর্থে নতুন দোলা অর্থবহ হবে?
অনর্থে তীর্থগামী কবি
নদীঅভিধান ভেঙে রক্তবাক্য
রচনায় অস্থির!

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিভিন্ন দূতাবাস থেকে কেন সরানো হলো রাষ্ট্রপতির ছবি?

» চিকিৎসকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

» ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারল বাংলাদেশ

» জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছে : এ্যানি

» জাতি আজ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, আসুন আমরা সংলাপে বসি : ড. তাহের

» মাই টিভি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীনকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার

» এ দেশে চরমপন্থা ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য যেন পরিণত হতে না পারে : তারেক রহমান

» বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের

» শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের কারিগর: তথ্য উপদেষ্টা

» নানী বাড়ি বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে যুবকের মৃত্যু

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফারহান ইশরাকের কবিতা

মা-ঘ্রাণ

মা-ঘ্রাণে মহাকাশ এত ভারী, প্রিয়
মানবতা, মাতৃ-অবতার, পারবো না
চলিষ্ণুতার বিদ্যুতে পাড়ি দিতে?
পারবোই মুহূর্তিকায়, রণে, উত্তরণে!
রংধনুসুলভ সপ্তগামী সরণি প্রস্তুত
বেছে নেবার গরজে অধীর সারস
রেণুজবজব ডানা তালকানা? না, না
আছি, ক্যাকটাসের শুঁড়ে মিষ্টিজল
মায়ের গন্ধে বেতাল উৎসুক
কতমাত্রা উড়ালসম্ভব মোহ ভেঙে
মা গো, জাগো যদি মমতায়, বলো,
লক্ষ্মীশিশু, যা রে সরলরেখায়
বহুদূর, যেখানে পেরেক শুদ্ধতায়
রক্ত-ঝরঝর ডাকে মাভৈ মাভৈ!
কম-তো-উড়িনি ব্যথাপালকের ঝড়ে
টনটনে আগুনগানে গুনগুন
রোদপ্রহরে, শহরে বহরে, কিংবা
আস্ফালনে, ক্ষণনির্জনে খুব একা
গ্লাসে গ্লাসে ইক্ষু ইতিহাস, স্বাদুরস!
মাছি, ওরফে এই ত্রিকালদর্শী জানে
যাকে খুব কবিশব্দে ভর্ৎসনা…:
ছোবড়া ডিঙিয়ে রস, ওরফে মৃত্যু
মা গো, আতঙ্ক উজিয়ে অভিধান
নৌকাগভীর ধানে যাবোই সঙ্গে
সারাবেলা প্রজাতন্ত্রফুলে, গুঞ্জনে
কতই উড়েছি না না-বালগ দিনে
মেঘে মেঘে, ইস্পাতের দাঁতে
অসহ্য দাগ কেটে, হেঁটে…স্বপ্নসন্ধ্যায়,
দূরনিরিখ স্পর্ধায়, মরীচিকায়,
মাকে ভুলে ছলদ্রাঘিমায়, উপমায়
ব্যর্থ চিৎকারে: মা’য় ডাকে দুধপাতে?
জ্যোৎস্নাস্ফীত প্লেটে, রাঙা ভাত
ক্ষুধার প্রতীকে পৃথিবীমুখ এঁকে
ডাকছে কাকে মাতৃচুম্বক
স্বার্থে নয়, সারথীটানে স্নেহ-আহ্বানে
আকৃষ্ট শিশু যাবে অক্সিজেনভোরে
মা-ঘ্রাণে সারাবাংলাই ভারী
রেণুর ওজনে মাটিচুম্বী দিনরাত
মানচিত্র আর নদীতে তাঁর নাম
গ্রেনেড ভর্তি অ্যাভিন্যু-তল্লাট
নষ্টের তারাবাজি ডিঙোবেই
মমতাচুম্বক ডাকে কর্ম-উৎসবে
শিশুসুলভ যত লোহা, নিরুদ্বেগ
যাবে তো তাঁর কাছে, যাবে।
***

রক্তবাক্যে লেখা নদী

ড্রেজার ফিট করা চিত্রের পটভূমে
ভোর অথবা সন্ধ্যা নামক
আলোচনা-দীর্ঘশ্বাসে টানা-
গদ্য এত করুণাসুন্দর হতে পারে
দখল হারানো মাছ বা কচুরি ব্যতীত
অন্য কারো কাছে বিফল তর্জমা!
প্রতিবেদনের সকল পৃষ্ঠা
বেদনার ভারে
উল্টে দেখাতে পারবে
কোথায় কী লেখা?
মানুষ লেপ্টানো রোলার তৎপর
স্টিমের চাপে মোটা দাগে উন্নয়ন
লিখে গেছে!
টেবিলে বিলের কাগজ, তথাপিও
একটি সন্দেহ ঠান্ডা বাতাসে সাপ:
কাদার স্পর্শ কল্পনাও দুষ্কর
পুরোটাই রক্তভেজা, নানামাত্রিক
ভাঁজে
পাতালে হীরের ছুরি,
টঙ্কার খাড়া কানে
ভূমি আলোড়ন শুভদিন প্রত্যাশায়
চাপা পড়া উজ্জ্বলতা মাটিভেদী
হবে একদিন?
জলাবদ্ধ দিনে, নদীমাতৃক সভ্যতা
এবং পুরো জাতি কাঁদতে রাজি হবে?
নদীর জন্য একটি সংজ্ঞা-
জলের স্থবির অর্থ
পাশ কাটিয়ে
চলা
ছাপানো জোয়ার
সূর্যাস্ত ফলিত
স্বর্ণপ্যাপিরাসে
এই অর্থে নতুন দোলা অর্থবহ হবে?
অনর্থে তীর্থগামী কবি
নদীঅভিধান ভেঙে রক্তবাক্য
রচনায় অস্থির!

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com