হিজাব এবং অন্যান্য জরুরি বিষয়

তসলিমা নাসরিন :  ১. ঠিক করে হিজাব না পরার অপরাধে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনীকে পুলিশেরা পিটিয়ে মেরে ফেলার অপরাধে দেশে বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে, সরকারের নারীবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলনের ১১ দিন পার হয়েছে। ইরানের পুলিশ এ পর্যন্ত ইরানজুড়ে ঘটেচলা হিজাববিরোধী সেই আন্দোলনের ৭৬ জনকে হত্যা করেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। তাতেও আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি। তারপরও মেয়েরা রাস্তায় বেরিয়ে মাথা থেকে হিজাব খুলে শূন্যে উড়িয়েছে, হিজাব ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। হিজাব ছাড়া নারী, জীবন, মুক্তি লেখা পোস্টার নিয়ে রাস্তায় দুর্বিনীত হেঁটে গেছে। যে কোনও সময় গুলি এসে ঝাঁজরা করে দেবে বুক জেনেও হেঁটেছে।

 

হানানে কিয়ান ২৩ বছর বয়সী তরুণী, তারও বুক ঝাঁজরা হয়ে গেছে পুলিশের গুলিতে, তার অপরাধ সে হিজাব পরেনি। ২১ বছর বয়সী তরুণী হাদিস নাজাফির বুকে মুখে মাথায় ছটি গুলি করা হয়েছে। সে যখন তার দীর্ঘ রেশমি চুলে হাতখোঁপা করে আন্দোলনে যোগ দিতে যাচ্ছিল, তখন। নারীর মুক্তির জন্য কিছু বলার আগেই মৃত্যু হলো হাদিস নাজাফির, উচ্ছল উজ্জ্বল প্রাণবন্ত তরুণীর। এরকম আরও অনেক কুড়ি-একুশ-বাইশ বছরের ইরানি তরুণীকে হত্যা করছে সরকার। প্রগতিশীলতার আর প্রতিভার কী যে অপচয়!

 

ইরানের ধর্মান্ধ সরকার দেশের সৎ সাহসী সচেতন তরুণ প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দিতে চাইছে। না, ধর্মান্ধ মৌলবাদী সরকারকে না হটিয়ে নারীর মুক্তি সম্ভব নয়।

ইরানি মেয়েরা লাঠির মাথায় গত কয়েক বছর যাবৎ তাদের সাদা স্কার্ফ উড়িয়ে দিয়ে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এবার তারা তাদের দীর্ঘ চুল লাঠির মাথায় বেঁধে উড়িয়েছে। এটিই আজ ইরানের জাতীয় পতাকা।

 

বারো শ আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে প্রচুর সাংবাদিকও আছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনীর জানাজার পর ইরানের আশিটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এক হয়ে বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো ইরানের সরকারকে ভায়োলেন্স বন্ধ করতে বলছে। কিন্তু বললে কি আর কাজ দেয়? সুন্নি মৌলবাদ যেমন ক্ষমতায় থাকার জন্য সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে ভায়োলেন্স করে শিয়া মৌলবাদও ঠিক একই কাজ করে। ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে, মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে, মানবাধিকারকে বিদেয় করতে, নারীর অধিকারের সর্বনাশ করতে ধর্মান্ধ অপশক্তি চিরকালই ভায়োলেন্সের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে ভায়োলেন্সের ব্যবহার কোনও সভ্য দেশই মেনে নেবে না। সমালোচনা করবেই। এবং এই একবিংশ শতাব্দিতে পৃথিবীর উন্নত এবং সভ্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে শত্রুতা করে একা একা বাঁচাও সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে ইরানের মৌলবাদী সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্রে এবং নারীর অধিকারে বিশ্বাসী সরকারের ক্ষমতায় আসা অত্যন্ত জরুরি। মৌলবাদের কবল থেকে ইরান এবং ইরানের জনগণকে মুক্তি দিতে হলে এ ছাড়া আর কোনও পথ নেই।

 

২. কত কিছুর দিবস যে পালিত হচ্ছে। শুনলাম কাল নাকি ‘কন্যা দিবস’ ছিল। জানি না পুত্র দিবস বলে কোনও দিবস আছে কি না। আসলে পুত্র দিবস তো প্রায় প্রতিদিনই পালিত হয়। কন্যা যেহেতু অনেক সংসারেই অবহেলিত, তাই কন্যাকে মূল্য দেওয়ার জন্য, আমার ধারণা, একটি দিবস তৈরি করা হয়েছে। আমার কন্যাও নেই, পুত্রও নেই। যৌবনে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সন্তান না জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্তটি আমার সঠিক ছিল। ৭৮০ কোটি লোকে পৃথিবী উপচে পড়ছে, এই দুঃসময়ে আমি মনে করি জনসংখ্যা বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। যারা জন্মেছে তারা কি সবাই খেতে পরতে পাচ্ছে, শিক্ষা স্বাস্থ্য পাচ্ছে?

 

ইতর প্রাণীর মধ্যে বংশ বিস্তারের ইচ্ছেটা কিলবিল করে, এই কিলবিল ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করতে তারা পারে না। মানুষের মধ্যেও এই ইচ্ছেটি আছে, তবে এটি আরোপিত। আরোপিত বলেই এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছে নেই বলে সন্তান জন্ম দেয় না। কিছু মানুষ, আমার অবাক লাগে, মনে করে সন্তান জন্ম না দিলে তাদের জীবনই ব্যর্থ, অর্থহীন। তারা সন্তানের জন্য ইতর প্রাণীদের মতো কিলবিল করা ইচ্ছের আমদানি করে। আমার এক বোন উচ্চশিক্ষিতা, নামি কলেজের অধ্যাপিকা, কিন্তু সন্তান নেই বলে এমনই দুঃখে-কষ্টে ডুবে থাকে যে তার জীবনটিই সে উপভোগ করে না। তার এমন অর্থপূর্ণ জীবনটিকে সে যে অর্থহীন মনে করছে, এ দোষ কার বা কাদের? তার কানের কাছে যারা শৈশব থেকে গুনগুন করেছে সন্তান না জন্মালে জীবনের কোনও মানে নেই, দোষ নিশ্চয়ই তাদের অনেকটা, বাকি দোষ তাদেরও যারা যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে নারীবিদ্বেষী রীতিগুলোকে ভাঙার কোনও চেষ্টা করে না।

 

প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যদি প্রজননের প্রয়োজন পড়তো, কথা ছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে মানুষের আধিক্য একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। লক্ষ কোটি অরণ্য-নির্ভর প্রাণীর আবাসস্থল উড়িয়ে দিয়ে মানুষের জন্য শহর নগর বানাতে হয়েছে। পৃথিবীর কত প্রজাতি যে আমাদের মানুষ-প্রজাতির হিংস্রতা আর বোধবুদ্ধিহীনতার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই গ্রহে আমাদের যতটা অধিকার, ততটা অধিকার তো তাদেরও। অস্ত্রের জোরে কী অরাজকতাই না আমরা চালিয়েছি! আমরা পৃথিবীর বন জঙ্গল ধ্বংস করেছি, নদী সমুদ্র আকাশ বাতাস দূষিত করেছি আমাদের স্বার্থান্ধ জীবন যাপন এবং আমাদের অর্থহীন জনসংখ্যা দিয়ে। অনেকে মনে করেন, জ্ঞানীগুণীদের সন্তান জন্ম দেওয়া উচিত। কিন্তু বারবার প্রমাণিত হয়েছে, জ্ঞানীগুণীদের সন্তান জ্ঞানীগুণী হয় না। আর কত প্রমাণ দরকার! মৃত্যুতেই জীবনের চিরকালীন সমাপ্তি। বংশ রয়ে গিয়ে, রক্তের ছিটেফোঁটা রয়ে গিয়ে কারও কোনও লাভ হয় না।

 

আজ এতকাল পরও নিজেকে আরেকবার ধন্যবাদ দিই, না পুত্র না কন্যা কিছুই জন্ম না দিয়ে আমি একটি স্বাধীন এবং অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করেছি বলে। তুমি সন্তান জন্ম দিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টা কোরো না। তুমি তোমার কাজ দিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ করো। তুমি কে, তুমি কী সেটাই বড়। সন্তান যে কেউ জন্ম দিতে পারে, যে কোনও গ মূর্খই; এ কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার নয়।

৩. বিদ্যাসাগরের জন্মবার্ষিকীতে ভাবছি-

বিদ্যাসাগরের মতো হিন্দু ধর্মের আরও কোনও সংস্কারক গত দুশো বছরে জন্মেছেন কি? কারও কথা তো জানি না। বিধবারা তো এখনও হবিষ্যি খান। একেবারে হবিষ্যি না হলেও মাছ মাংস বাদ দিয়ে খান। শাড়িও পরেন সাদা। একেবারে সাদা না পরলেও লাল রং এড়িয়ে চলেন। কপালে লাল টিপও পরেন না। এরকম আমি শিক্ষিত বাড়িতেই দেখেছি। বিধবার বিয়ে? হাজারে ক’টা হয় কে জানে!

 

মেয়েদের শিক্ষাটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিড ডে মিল জুটবে বলে, বা বিয়ের পাত্র জুটবে বলে। মেয়েরা পড়াশুনো করে বড় হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, স্বনির্ভর হবে, নিজের জীবন নিজেই পরিচালনা করবে- এমন মহৎ উদ্দেশে নয়।

 

ধর্মীয় কুসংস্কারে বিদ্যাসাগরের সময়ে সমাজ যতটা আচ্ছন্ন ছিল, তার চেয়ে তো এখন কিছু কম আচ্ছন্ন নয়।

 

জাত পাতের বিরুদ্ধেও তো লড়েছিলেন বিদ্যাসাগর। জাত পাত ওপরে ওপরে আজ নেই হয়তো, ভিতরে ভিতরে ঠিকই কিন্তু আছে।

 

বিদ্যাসাগরের বাংলা বর্ণ পরিচয়? কজন পড়ে আজকাল! বাচ্চারা তো অ আ ক খ নয়, এ বি সি ডি পড়ে। বাংলা শিখে নাকি কোনও লাভ নেই, তাই পড়ে না।

 

৪. বড় কিছু বাঙালি লেখক সম্পর্কে খুব গর্ব করে বলা হয় তাঁদের কোনও শত্রু নেই । শুনে আঁতকে উঠি আমি। শত্রু নেই, তাহলে কেমন লেখক তাঁরা, কী লেখেন যে শত্রু তৈরি হয়নি? তাঁরা এমন লেখা লেখেন, যে লেখা পড়ে সবাই খুশি থাকে। বামপন্থি ডানপন্থি কট্টরপন্থি নরমপন্থি সকলেই খুশি, ধনী গরিব নারীবিদ্বেষী নারীবাদী সকলেই খুশি, কেউ লেখার কোনও বিষয়ে আপত্তি করে না, মন খারাপ করে না, রুখে ওঠে না। কারণ আপত্তি করার, মন খারাপ করার বা রুখে ওঠার কিছু থাকে না তাঁদের লেখায়।

 

আমার ভয় হয় এমন লেখকের নাম শুনলেই। এই লেখকেরা এক নষ্ট সমাজে বাস করছেন, কিন্তু নষ্ট সমাজের নিন্দে করেন না, করলে নষ্ট সমাজের হর্তাকর্তারা তাঁদের পছন্দ করবেন না তাই। এই লেখকেরা বৈষম্যের মধ্যে বাস করেন, কিন্তু বৈষম্যের প্রতিবাদ করেন না, প্রতিবাদ করলে শত্রু তৈরি হবে, বৈষম্যে বিশ্বাস করা মানুষ তাঁদের ঘৃণা করবে এই ভয়ে। এই লেখকেরা বিস্তর জাতীয় পুরস্কার পান, বড় বড় সাহিত্য সভায় সভাপতিত্ব করেন, পুরু পুরু ফুলের মালা পরেন গলায়, উদ্বোধনের ফিতে কাটেন, প্রকাশকেরা এই লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ করেন। এই লেখকেরা নিষিদ্ধ হন না, বরং বিক্রি হন ভালো।

 

৫. অনেকে বলে ‘ব্যক্তির সমালোচনা নয়, তার কাজের সমালোচনা করা উচিত’। কাজ বলতে লেখকের লেখার, শিল্পীর শিল্পকর্মের, ডাক্তারের ডাক্তারির, সম্পাদকের সম্পাদনার…। আমি কিন্তু ব্যক্তির সমালোচনারও পক্ষে। আমি একজন সিরিয়াল কিলারের চমৎকার প্রেমের গল্প পড়ে, বা একজন পিডোফাইলের চমৎকার নাটক দেখে তাদের গুণগান গাইতে চাই না। আমার অনুরাগী পাঠকরা অনেক সময় আমাকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে দুর্মুখদের বলেন, ‘ব্যক্তি তসলিমার কেন, তসলিমার লেখার সমালোচনা করুন’। আমার প্রশ্ন, ব্যক্তি তসলিমার সমালোচনা নয় কেন? আমার পক্ষের মানুষেরা ভয় পায় যেহেতু বিরোধীরা আমার চরিত্র মন্দ- এর উদাহরণ দিতে গিয়ে বলে, আমি একাধিক পুরুষের সঙ্গে শুয়েছি। যদিও একটি সম্পর্ক থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় কোনও সম্পর্কে আমি যাইনি, কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি, কিন্তু মেয়ে হয়ে আমি জীবনে একের বেশি সম্পর্ক করেছি- এ নিয়ে আপত্তি, ঘৃণাটা মূলত এ কারণেই। আমার বিপক্ষের এবং পক্ষের মানুষেরা যারা মানুষের চরিত্রের ভালো মন্দের এই সংজ্ঞা মানেন, তাদের উচিত আমাকে নিয়ে আপাতত দুশ্চিন্তা না করে নিজেদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করা, নিজেদের ভুলগুলো চিহ্নিত করা, নিজেদের শুধরে নেওয়া।

 

ব্যক্তি তসলিমা সম্পর্কে বিরোধীরা যা বলে তার কতটা সত্য, কতটা জেনে বলে, কতটা শুনে বলে, কতটা নিজের ভিতরের কূপমন্ডুকতা, নারীবিদ্বেষ, পৌরুষিক হিংসে-দ্বেষ, আর অজ্ঞতা থেকে বলে, সেটা কেউ পরিমাপ করে দেখে না। আমি কিন্তু যতটা নম্বর দিই ব্যক্তি তসলিমাকে, ততটা দিই না লেখক তসলিমাকে। লেখক তসলিমাকে আমি যদি ১০০য় ৪৫ দিই, ব্যক্তি তসলিমাকে ১০০য় ১০০ দিই। লেখক তসলিমার ৪৩টি বইয়ের মধ্য থেকে ২২টা কলাম, ১৫টা কবিতা, ৪টা ছোটগল্প, ৩টা আত্মজীবনী, ২টা উপন্যাস ছাড়া বিশেষ কিছু আমার ভালো লাগে না। বাকি লেখাগুলোয় অযত্ন, অবহেলা আর অদক্ষতা পাই। কিন্তু ব্যক্তি তসলিমার সমালোচনা করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁত খুঁজলেও খুঁত পাই না। মানুষটা সৎ, নিষ্ঠ, উদার। মানুষটাকে সোজা সরল পেয়ে অনেকে ঠকায়, মানুষটা কাউকে ঠকায় না। মানুষটা সবাইকে বিশ্বাস করে, ঠকতে ঠকতে নিঃস্ব হয়েও বিশ্বাস করে। মানুষটা অতি সাধারণ জীবনযাপন করে, শত প্রলোভনেও নিজের আদর্শ বিসর্জন দেয় না। মিথ্যে বলে না, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না। মানুষটা নিজের দুঃখে কাঁদে না, অন্যের দুঃখে কাঁদে।

 

আমিই সবচেয়ে কাছ থেকে লেখক তসলিমা আর ব্যক্তি তসলিমাকে দেখেছি। এ আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, লেখক তসলিমা থেকে ব্যক্তি তসলিমা অনেক ওপরে।

 

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চার ডাকাত গ্রেফতার

» শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার

» দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান ফারুকের

» সেনাবাহিনীর অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

» যেসব এলাকায় আজ রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাস থাকবে না

» অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি উইমেনস চেম্বার অফ কমার্সের আয়োজন এলান গালা এন্ড চ্যারিটি ইভিনিং অনুষ্ঠিত

» ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত,আহত ২

» পাইরেসির শিকার শাকিব খানের ‘দরদ’

» এশিয়া কাপ জয়ের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ল বাংলাদেশ দল

» পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হিজাব এবং অন্যান্য জরুরি বিষয়

তসলিমা নাসরিন :  ১. ঠিক করে হিজাব না পরার অপরাধে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনীকে পুলিশেরা পিটিয়ে মেরে ফেলার অপরাধে দেশে বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে, সরকারের নারীবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলনের ১১ দিন পার হয়েছে। ইরানের পুলিশ এ পর্যন্ত ইরানজুড়ে ঘটেচলা হিজাববিরোধী সেই আন্দোলনের ৭৬ জনকে হত্যা করেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। তাতেও আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি। তারপরও মেয়েরা রাস্তায় বেরিয়ে মাথা থেকে হিজাব খুলে শূন্যে উড়িয়েছে, হিজাব ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। হিজাব ছাড়া নারী, জীবন, মুক্তি লেখা পোস্টার নিয়ে রাস্তায় দুর্বিনীত হেঁটে গেছে। যে কোনও সময় গুলি এসে ঝাঁজরা করে দেবে বুক জেনেও হেঁটেছে।

 

হানানে কিয়ান ২৩ বছর বয়সী তরুণী, তারও বুক ঝাঁজরা হয়ে গেছে পুলিশের গুলিতে, তার অপরাধ সে হিজাব পরেনি। ২১ বছর বয়সী তরুণী হাদিস নাজাফির বুকে মুখে মাথায় ছটি গুলি করা হয়েছে। সে যখন তার দীর্ঘ রেশমি চুলে হাতখোঁপা করে আন্দোলনে যোগ দিতে যাচ্ছিল, তখন। নারীর মুক্তির জন্য কিছু বলার আগেই মৃত্যু হলো হাদিস নাজাফির, উচ্ছল উজ্জ্বল প্রাণবন্ত তরুণীর। এরকম আরও অনেক কুড়ি-একুশ-বাইশ বছরের ইরানি তরুণীকে হত্যা করছে সরকার। প্রগতিশীলতার আর প্রতিভার কী যে অপচয়!

 

ইরানের ধর্মান্ধ সরকার দেশের সৎ সাহসী সচেতন তরুণ প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দিতে চাইছে। না, ধর্মান্ধ মৌলবাদী সরকারকে না হটিয়ে নারীর মুক্তি সম্ভব নয়।

ইরানি মেয়েরা লাঠির মাথায় গত কয়েক বছর যাবৎ তাদের সাদা স্কার্ফ উড়িয়ে দিয়ে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এবার তারা তাদের দীর্ঘ চুল লাঠির মাথায় বেঁধে উড়িয়েছে। এটিই আজ ইরানের জাতীয় পতাকা।

 

বারো শ আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে প্রচুর সাংবাদিকও আছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনীর জানাজার পর ইরানের আশিটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এক হয়ে বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো ইরানের সরকারকে ভায়োলেন্স বন্ধ করতে বলছে। কিন্তু বললে কি আর কাজ দেয়? সুন্নি মৌলবাদ যেমন ক্ষমতায় থাকার জন্য সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে ভায়োলেন্স করে শিয়া মৌলবাদও ঠিক একই কাজ করে। ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে, মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে, মানবাধিকারকে বিদেয় করতে, নারীর অধিকারের সর্বনাশ করতে ধর্মান্ধ অপশক্তি চিরকালই ভায়োলেন্সের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে ভায়োলেন্সের ব্যবহার কোনও সভ্য দেশই মেনে নেবে না। সমালোচনা করবেই। এবং এই একবিংশ শতাব্দিতে পৃথিবীর উন্নত এবং সভ্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে শত্রুতা করে একা একা বাঁচাও সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে ইরানের মৌলবাদী সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্রে এবং নারীর অধিকারে বিশ্বাসী সরকারের ক্ষমতায় আসা অত্যন্ত জরুরি। মৌলবাদের কবল থেকে ইরান এবং ইরানের জনগণকে মুক্তি দিতে হলে এ ছাড়া আর কোনও পথ নেই।

 

২. কত কিছুর দিবস যে পালিত হচ্ছে। শুনলাম কাল নাকি ‘কন্যা দিবস’ ছিল। জানি না পুত্র দিবস বলে কোনও দিবস আছে কি না। আসলে পুত্র দিবস তো প্রায় প্রতিদিনই পালিত হয়। কন্যা যেহেতু অনেক সংসারেই অবহেলিত, তাই কন্যাকে মূল্য দেওয়ার জন্য, আমার ধারণা, একটি দিবস তৈরি করা হয়েছে। আমার কন্যাও নেই, পুত্রও নেই। যৌবনে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সন্তান না জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্তটি আমার সঠিক ছিল। ৭৮০ কোটি লোকে পৃথিবী উপচে পড়ছে, এই দুঃসময়ে আমি মনে করি জনসংখ্যা বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। যারা জন্মেছে তারা কি সবাই খেতে পরতে পাচ্ছে, শিক্ষা স্বাস্থ্য পাচ্ছে?

 

ইতর প্রাণীর মধ্যে বংশ বিস্তারের ইচ্ছেটা কিলবিল করে, এই কিলবিল ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করতে তারা পারে না। মানুষের মধ্যেও এই ইচ্ছেটি আছে, তবে এটি আরোপিত। আরোপিত বলেই এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছে নেই বলে সন্তান জন্ম দেয় না। কিছু মানুষ, আমার অবাক লাগে, মনে করে সন্তান জন্ম না দিলে তাদের জীবনই ব্যর্থ, অর্থহীন। তারা সন্তানের জন্য ইতর প্রাণীদের মতো কিলবিল করা ইচ্ছের আমদানি করে। আমার এক বোন উচ্চশিক্ষিতা, নামি কলেজের অধ্যাপিকা, কিন্তু সন্তান নেই বলে এমনই দুঃখে-কষ্টে ডুবে থাকে যে তার জীবনটিই সে উপভোগ করে না। তার এমন অর্থপূর্ণ জীবনটিকে সে যে অর্থহীন মনে করছে, এ দোষ কার বা কাদের? তার কানের কাছে যারা শৈশব থেকে গুনগুন করেছে সন্তান না জন্মালে জীবনের কোনও মানে নেই, দোষ নিশ্চয়ই তাদের অনেকটা, বাকি দোষ তাদেরও যারা যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে নারীবিদ্বেষী রীতিগুলোকে ভাঙার কোনও চেষ্টা করে না।

 

প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যদি প্রজননের প্রয়োজন পড়তো, কথা ছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে মানুষের আধিক্য একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। লক্ষ কোটি অরণ্য-নির্ভর প্রাণীর আবাসস্থল উড়িয়ে দিয়ে মানুষের জন্য শহর নগর বানাতে হয়েছে। পৃথিবীর কত প্রজাতি যে আমাদের মানুষ-প্রজাতির হিংস্রতা আর বোধবুদ্ধিহীনতার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই গ্রহে আমাদের যতটা অধিকার, ততটা অধিকার তো তাদেরও। অস্ত্রের জোরে কী অরাজকতাই না আমরা চালিয়েছি! আমরা পৃথিবীর বন জঙ্গল ধ্বংস করেছি, নদী সমুদ্র আকাশ বাতাস দূষিত করেছি আমাদের স্বার্থান্ধ জীবন যাপন এবং আমাদের অর্থহীন জনসংখ্যা দিয়ে। অনেকে মনে করেন, জ্ঞানীগুণীদের সন্তান জন্ম দেওয়া উচিত। কিন্তু বারবার প্রমাণিত হয়েছে, জ্ঞানীগুণীদের সন্তান জ্ঞানীগুণী হয় না। আর কত প্রমাণ দরকার! মৃত্যুতেই জীবনের চিরকালীন সমাপ্তি। বংশ রয়ে গিয়ে, রক্তের ছিটেফোঁটা রয়ে গিয়ে কারও কোনও লাভ হয় না।

 

আজ এতকাল পরও নিজেকে আরেকবার ধন্যবাদ দিই, না পুত্র না কন্যা কিছুই জন্ম না দিয়ে আমি একটি স্বাধীন এবং অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করেছি বলে। তুমি সন্তান জন্ম দিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ করার চেষ্টা কোরো না। তুমি তোমার কাজ দিয়ে জীবনকে অর্থপূর্ণ করো। তুমি কে, তুমি কী সেটাই বড়। সন্তান যে কেউ জন্ম দিতে পারে, যে কোনও গ মূর্খই; এ কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার নয়।

৩. বিদ্যাসাগরের জন্মবার্ষিকীতে ভাবছি-

বিদ্যাসাগরের মতো হিন্দু ধর্মের আরও কোনও সংস্কারক গত দুশো বছরে জন্মেছেন কি? কারও কথা তো জানি না। বিধবারা তো এখনও হবিষ্যি খান। একেবারে হবিষ্যি না হলেও মাছ মাংস বাদ দিয়ে খান। শাড়িও পরেন সাদা। একেবারে সাদা না পরলেও লাল রং এড়িয়ে চলেন। কপালে লাল টিপও পরেন না। এরকম আমি শিক্ষিত বাড়িতেই দেখেছি। বিধবার বিয়ে? হাজারে ক’টা হয় কে জানে!

 

মেয়েদের শিক্ষাটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিড ডে মিল জুটবে বলে, বা বিয়ের পাত্র জুটবে বলে। মেয়েরা পড়াশুনো করে বড় হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, স্বনির্ভর হবে, নিজের জীবন নিজেই পরিচালনা করবে- এমন মহৎ উদ্দেশে নয়।

 

ধর্মীয় কুসংস্কারে বিদ্যাসাগরের সময়ে সমাজ যতটা আচ্ছন্ন ছিল, তার চেয়ে তো এখন কিছু কম আচ্ছন্ন নয়।

 

জাত পাতের বিরুদ্ধেও তো লড়েছিলেন বিদ্যাসাগর। জাত পাত ওপরে ওপরে আজ নেই হয়তো, ভিতরে ভিতরে ঠিকই কিন্তু আছে।

 

বিদ্যাসাগরের বাংলা বর্ণ পরিচয়? কজন পড়ে আজকাল! বাচ্চারা তো অ আ ক খ নয়, এ বি সি ডি পড়ে। বাংলা শিখে নাকি কোনও লাভ নেই, তাই পড়ে না।

 

৪. বড় কিছু বাঙালি লেখক সম্পর্কে খুব গর্ব করে বলা হয় তাঁদের কোনও শত্রু নেই । শুনে আঁতকে উঠি আমি। শত্রু নেই, তাহলে কেমন লেখক তাঁরা, কী লেখেন যে শত্রু তৈরি হয়নি? তাঁরা এমন লেখা লেখেন, যে লেখা পড়ে সবাই খুশি থাকে। বামপন্থি ডানপন্থি কট্টরপন্থি নরমপন্থি সকলেই খুশি, ধনী গরিব নারীবিদ্বেষী নারীবাদী সকলেই খুশি, কেউ লেখার কোনও বিষয়ে আপত্তি করে না, মন খারাপ করে না, রুখে ওঠে না। কারণ আপত্তি করার, মন খারাপ করার বা রুখে ওঠার কিছু থাকে না তাঁদের লেখায়।

 

আমার ভয় হয় এমন লেখকের নাম শুনলেই। এই লেখকেরা এক নষ্ট সমাজে বাস করছেন, কিন্তু নষ্ট সমাজের নিন্দে করেন না, করলে নষ্ট সমাজের হর্তাকর্তারা তাঁদের পছন্দ করবেন না তাই। এই লেখকেরা বৈষম্যের মধ্যে বাস করেন, কিন্তু বৈষম্যের প্রতিবাদ করেন না, প্রতিবাদ করলে শত্রু তৈরি হবে, বৈষম্যে বিশ্বাস করা মানুষ তাঁদের ঘৃণা করবে এই ভয়ে। এই লেখকেরা বিস্তর জাতীয় পুরস্কার পান, বড় বড় সাহিত্য সভায় সভাপতিত্ব করেন, পুরু পুরু ফুলের মালা পরেন গলায়, উদ্বোধনের ফিতে কাটেন, প্রকাশকেরা এই লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ করেন। এই লেখকেরা নিষিদ্ধ হন না, বরং বিক্রি হন ভালো।

 

৫. অনেকে বলে ‘ব্যক্তির সমালোচনা নয়, তার কাজের সমালোচনা করা উচিত’। কাজ বলতে লেখকের লেখার, শিল্পীর শিল্পকর্মের, ডাক্তারের ডাক্তারির, সম্পাদকের সম্পাদনার…। আমি কিন্তু ব্যক্তির সমালোচনারও পক্ষে। আমি একজন সিরিয়াল কিলারের চমৎকার প্রেমের গল্প পড়ে, বা একজন পিডোফাইলের চমৎকার নাটক দেখে তাদের গুণগান গাইতে চাই না। আমার অনুরাগী পাঠকরা অনেক সময় আমাকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে দুর্মুখদের বলেন, ‘ব্যক্তি তসলিমার কেন, তসলিমার লেখার সমালোচনা করুন’। আমার প্রশ্ন, ব্যক্তি তসলিমার সমালোচনা নয় কেন? আমার পক্ষের মানুষেরা ভয় পায় যেহেতু বিরোধীরা আমার চরিত্র মন্দ- এর উদাহরণ দিতে গিয়ে বলে, আমি একাধিক পুরুষের সঙ্গে শুয়েছি। যদিও একটি সম্পর্ক থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় কোনও সম্পর্কে আমি যাইনি, কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি, কিন্তু মেয়ে হয়ে আমি জীবনে একের বেশি সম্পর্ক করেছি- এ নিয়ে আপত্তি, ঘৃণাটা মূলত এ কারণেই। আমার বিপক্ষের এবং পক্ষের মানুষেরা যারা মানুষের চরিত্রের ভালো মন্দের এই সংজ্ঞা মানেন, তাদের উচিত আমাকে নিয়ে আপাতত দুশ্চিন্তা না করে নিজেদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করা, নিজেদের ভুলগুলো চিহ্নিত করা, নিজেদের শুধরে নেওয়া।

 

ব্যক্তি তসলিমা সম্পর্কে বিরোধীরা যা বলে তার কতটা সত্য, কতটা জেনে বলে, কতটা শুনে বলে, কতটা নিজের ভিতরের কূপমন্ডুকতা, নারীবিদ্বেষ, পৌরুষিক হিংসে-দ্বেষ, আর অজ্ঞতা থেকে বলে, সেটা কেউ পরিমাপ করে দেখে না। আমি কিন্তু যতটা নম্বর দিই ব্যক্তি তসলিমাকে, ততটা দিই না লেখক তসলিমাকে। লেখক তসলিমাকে আমি যদি ১০০য় ৪৫ দিই, ব্যক্তি তসলিমাকে ১০০য় ১০০ দিই। লেখক তসলিমার ৪৩টি বইয়ের মধ্য থেকে ২২টা কলাম, ১৫টা কবিতা, ৪টা ছোটগল্প, ৩টা আত্মজীবনী, ২টা উপন্যাস ছাড়া বিশেষ কিছু আমার ভালো লাগে না। বাকি লেখাগুলোয় অযত্ন, অবহেলা আর অদক্ষতা পাই। কিন্তু ব্যক্তি তসলিমার সমালোচনা করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁত খুঁজলেও খুঁত পাই না। মানুষটা সৎ, নিষ্ঠ, উদার। মানুষটাকে সোজা সরল পেয়ে অনেকে ঠকায়, মানুষটা কাউকে ঠকায় না। মানুষটা সবাইকে বিশ্বাস করে, ঠকতে ঠকতে নিঃস্ব হয়েও বিশ্বাস করে। মানুষটা অতি সাধারণ জীবনযাপন করে, শত প্রলোভনেও নিজের আদর্শ বিসর্জন দেয় না। মিথ্যে বলে না, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না। মানুষটা নিজের দুঃখে কাঁদে না, অন্যের দুঃখে কাঁদে।

 

আমিই সবচেয়ে কাছ থেকে লেখক তসলিমা আর ব্যক্তি তসলিমাকে দেখেছি। এ আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, লেখক তসলিমা থেকে ব্যক্তি তসলিমা অনেক ওপরে।

 

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com