অপরাধের আখড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প

অপরাধীদের অভয়ারণ্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক পাচার, চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে অনেক রোহিঙ্গা। অনেকের ভাষ্যমতে, অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। তাই ড্রোন ক্যামেরা এবং ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান। 

 

কক্সবাজার-১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এবিপিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। বাড়ানোর হয়েছে চেকপোস্টের সংখ্যা। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে ক্যাম্প এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকার ক্যাম্পগুলোতে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কঠোর নজরদারির কারণে শরণার্থী ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শুরুর দিকে শান্ত ছিল। একপর্যায়ে উত্তপ্ত হতে থাকে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো। গাণিতিক হারে বাড়তে থাকে অপরাধ। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার-বাংলাদেশি অপরাধীদের সঙ্গে সমন্বয় করে গড়ে তুলে আলাদা নেটওয়ার্ক। জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসা, অস্ত্র, মানব পাচারসহ নানা অপরাধে। সব শেষ চার বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় রোহিঙ্গাদের নামে কমপক্ষে দেড় হাজার মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন কমপক্ষে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বেশির ভাগ ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুট, খুন, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্র মামলা। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৬টি। আসামি ছিলেন ১৫৯ রোহিঙ্গা। চার বছরের ব্যবধানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার হার বেড়েছে ৪০০ গুণেরও বেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আধিপাত্য বিস্তার এবং দ্রুত ধনী হতে হিংস্র হয়ে উঠছে তারা। জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। তৈরি হচ্ছে অপরাধীদের গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ। ক্যাম্পে আধিপত্য ধরে রাখতে প্রায়ই সংঘাত হচ্ছে। ব্লকে ব্লকে মাদক, মানব পাচার, অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। কিছু কিছু ঘটনা খুন পর্যন্ত গড়াচ্ছে। মিয়ানমার থেকে মাদকের চালান সরাসরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসার কারণে দেশের মাদকের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। শরণার্থী ক্যাম্প হয়ে প্রতিদিন শত কোটি টাকার ইয়াবা এবং নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর তৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিউয়তুল মুজাহিদীনের সাংগঠনিক তৎপরতা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ ঘটনা। টেকনাফের স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। সন্ধ্যার পর ক্যাম্প এলাকায় ভীতিকর অবস্থা নেমে আসে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। রোহিঙ্গা অপরাধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় কিছু দালাল। এই দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

» আওয়ামী লীগের শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

» বঙ্গবন্ধু সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন : খাদ্যমন্ত্রী

» ট্রাকচাপায় প্রকৌশলী নিহত

» অপহরণকারী চক্রের সদস্য সিরাজকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার

» কেনিয়ায় বৃষ্টি-বন্যায় নিহত বেড়ে ১৬৯

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ২১জন গ্রেপ্তার

» নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য শ্রমিক ও জনগণের জন্য অভিশাপ : ইনু

» শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : রিজভী

» যতবার সরকারে এসেছি ততবার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অপরাধের আখড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প

অপরাধীদের অভয়ারণ্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক পাচার, চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে অনেক রোহিঙ্গা। অনেকের ভাষ্যমতে, অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। তাই ড্রোন ক্যামেরা এবং ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান। 

 

কক্সবাজার-১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এবিপিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। বাড়ানোর হয়েছে চেকপোস্টের সংখ্যা। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে ক্যাম্প এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকার ক্যাম্পগুলোতে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কঠোর নজরদারির কারণে শরণার্থী ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শুরুর দিকে শান্ত ছিল। একপর্যায়ে উত্তপ্ত হতে থাকে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো। গাণিতিক হারে বাড়তে থাকে অপরাধ। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার-বাংলাদেশি অপরাধীদের সঙ্গে সমন্বয় করে গড়ে তুলে আলাদা নেটওয়ার্ক। জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসা, অস্ত্র, মানব পাচারসহ নানা অপরাধে। সব শেষ চার বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় রোহিঙ্গাদের নামে কমপক্ষে দেড় হাজার মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন কমপক্ষে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বেশির ভাগ ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুট, খুন, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্র মামলা। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৬টি। আসামি ছিলেন ১৫৯ রোহিঙ্গা। চার বছরের ব্যবধানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার হার বেড়েছে ৪০০ গুণেরও বেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আধিপাত্য বিস্তার এবং দ্রুত ধনী হতে হিংস্র হয়ে উঠছে তারা। জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। তৈরি হচ্ছে অপরাধীদের গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ। ক্যাম্পে আধিপত্য ধরে রাখতে প্রায়ই সংঘাত হচ্ছে। ব্লকে ব্লকে মাদক, মানব পাচার, অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। কিছু কিছু ঘটনা খুন পর্যন্ত গড়াচ্ছে। মিয়ানমার থেকে মাদকের চালান সরাসরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসার কারণে দেশের মাদকের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। শরণার্থী ক্যাম্প হয়ে প্রতিদিন শত কোটি টাকার ইয়াবা এবং নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর তৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিউয়তুল মুজাহিদীনের সাংগঠনিক তৎপরতা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ ঘটনা। টেকনাফের স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। সন্ধ্যার পর ক্যাম্প এলাকায় ভীতিকর অবস্থা নেমে আসে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। রোহিঙ্গা অপরাধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় কিছু দালাল। এই দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com