নঈম নিজাম : আমাদের একজন আকবর আলি খান ছিলেন। চলে গেলেন তিনি। অসাধারণ সাহসী একজন মানুষ। কখনই সত্য উচ্চারণে পিছপা হতেন না। যা বিশ্বাস করতেন তা বলতেন। ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না’- এই সাহসী কণ্ঠ কোনো কবিতার লাইন ছিল না। রাষ্ট্রের এক জটিল সময়ে ছিল পাল্টা জবাব। তখন তিনি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। ইয়াজউদ্দিনের টানাপোড়েনের সময়ে তাকে এই সাহসী অবস্থান নিতে হয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশাও ছিল। তিনি সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। তিনি সেই সময়ে ডেকে নিয়ে জবাবদিহিতা চেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র ও আইন সচিবের কাছে। বলেছিলেন, আমাকে সাচিবিক কাজ শেখাবেন না। আপত্তি করেছিলেন হুট করে সেনা নামানো নিয়ে। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থ সচিব ছিলেন। অর্থমন্ত্রী ছিলেন তখন শাহ এস এম কিবরিয়া। এরপর অবসরে গেলেন। বেছে নিলেন জীবনের নতুন গতিপথ। শুরু করলেন লেখালেখি। সেই লেখনীতে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি কোনো কিছুই বাদ ছিল না। শাস্ত্রীয় সংগীত শুনতেন। ক্লাসিক মানুষ ছিলেন। শুধু শাস্ত্রীয় নয়, ভিন্ন মেজাজের সংগীতও ছিল পছন্দ। একবার ফোন করলাম। একটু দূর থেকে সুরের মূর্ছনা ভেসে আসছে। খুব আস্তে আস্তে বাজছে, জয় গোস্বামীর কবিতা, ‘বেনীমাধব, বেনীমাধব, তোমার বাড়ি যাব/বেনীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?’ লোপামুদ্রা মিত্রের অসাধারণ কণ্ঠ। কথা শেষ করে গানটি আমিও শুনলাম। আরেকবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারটি পড়ছিলাম। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সহকর্মী বললেন, এটি পড়ে আওয়ামী লীগ খুশি হবে না। জবাবে বললাম, তিনি তো কাউকে খুশি করতে কথা বলেন না। লেখেন না। কাউকে তোয়াজ করেন না। তিনি কথা বলেন দেশের কথা ভেবে। এখন কেউ কথা বলেন না। সবাই নিজেকে খোলসের আড়ালে রাখেন। গাছেরটা খান। তলারটাও কুড়ান। আকবর আলি খান ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি কথা বলতেন। লিখতেন সময়কে নিয়ে। সবাইকে দিতেন সঠিক পথের লাইন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেননি। উন্নত চিন্তার পরিধি নিয়ে চলেছেন। সাহসী কণ্ঠস্বরকে ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়েছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। এখনকার আমলারা কী ভাবতে পারেন একজন আকবর আলি খানের বিশালত্বের কথা? বুঝতে পারেন তিনি কতটা শ্রদ্ধার আসন নিয়ে গেছেন? তার ক্ষুরধার লেখনীর বই বাজারে সমানে বিক্রি হয়। কোনো প্রকল্প তৈরি করে বিক্রি করতে হয় না। নির্দেশ দিতে হয় না অধীনস্থদের। সাধারণ পাঠকরাই বই কেনেন। বোদ্ধারা শোনেন বক্তৃতা। শুধু আকবর আলি খান নন, আমাদের আরও অনেক ব্যুরোক্রেট ছিলেন লেখালেখি করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই যুগের আমলাদের মতো বই লিখে প্রকল্প তৈরি করে বিক্রি করেননি। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কার লেখা? তিনিও ছিলেন একজন আমলা। নাম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। সরকারের একজন সচিব ছিলেন। কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৮২ সালে। পরে আমেরিকায় রাষ্ট্রদূতও হয়েছিলেন। পারিবারিক বংশ মর্যাদা অনেক উঁচুতে ছিল। বাবা আবদুল জব্বার খান ছিলেন পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার। ভাই রাশেদ খান মেনন, এনায়েতউল্লাহ খান, সাদেক খান, মুক্তিযোদ্ধা বাদল খান, বোন সেলিমা রহমানকে সবাই চেনেন বাংলাদেশে। লেখালেখি তিনিও করতেন। তার লেখা, ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ অনেক আলোচিত ছিল। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক পেয়েছিলেন। এ নিয়ে কেউ কোনো দিন প্রশ্ন করেনি। তার লেখক পরিচয় ছিল আলাদা। কেউ আঙুল তুলে তাকাতে পারেনি। ১৯৫৫ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। প্রথম বই, ‘সাত নরী হার’। এরপর ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়, ‘কখনো রং কখনো সুর’। দীর্ঘদিন লেখালেখি করলেও বিখ্যাত হন ১৯৮১ সালে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ প্রকাশের পর। এরপর ১৯৮৩ সালে ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ বের হয়। তার আরও অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো পাঠকরা টাকা দিয়ে বইমেলা থেকে কিনেছে। কষ্ট করে প্রকল্প তৈরি করতে হয়নি। ঠিকাদারদের দিতে হয়নি।
সেদিন এক বন্ধু ফোন করলেন। বললেন, মিডিয়ার যন্ত্রণায় কি আমলারা লেখালেখি করতে পারবে না? তাদের কি সাহিত্যচর্চার অধিকার নেই? জানতে চাইলাম, সমস্যা কোথায়? কে বাধা দিয়েছে তাদের? তিনি তখন এক অতিরিক্ত সচিবের ২৯ খানা বই নিয়ে সমালোচনার বিষয়টি তুলে আনেন। বললেন, এ নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে। বই প্রকল্প নিয়ে লিখল মেইনস্ট্রিম মিডিয়া। তারপর ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানুষ শুধু সমালোচনাই করতে পারে। আর কিছু পারে না। তাকে বললাম, তার লেখাগুলো সাহিত্য হলে নিশ্চয় কেউ এত কথা বলত না। শ্যালিকা, বউ নিয়ে তিনি যা খুশি লিখতে পারেন। সেই অধিকার তার আছে। এই বই বাজারেও যেতে পারে। মানুষের মন চাইলে কিনবে। না চাইলে কিনবে না। এমন অপসাহিত্য অনেক বের হয়। ‘কাকের ছা’, ‘বকের ছা’ মার্কা লেখনী কেন রাষ্ট্রীয় অর্থে কিনতে হবে? তিনিও বা কোন আক্কেলে এভাবে নিজের বই সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কিনতে বাধ্য করছেন? ভালো বইয়ের কদর সব সময় ছিল। এখনো আছে। দুনিয়ার অনেক দেশেই আমলারা লেখালেখি করেন। আমাদের দেশে এক সময় অনেক জনপ্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন সিভিল সার্ভিসে। তারা দুই হাতে লিখতেন। তাদের লেখা প্রকাশিত হতো পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। ঈদ সংখ্যায়। পরে বই আকারে প্রকাশিত হতো বইমেলায়। আশির দশকে তেমনটা দেখেছি। কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখিনি। কে রাষ্ট্রপতি এরশাদের বেশি কাছের, সেই সব নিয়ে প্রশ্ন হতো। লেখালেখির মান নিয়ে কথা ওঠেনি। এখনকার লেখক আমলাদের বেশির ভাগ বোঝেন না কী লিখছেন।
বাংলা সাহিত্যকে শ্রেষ্ঠত্বে নিয়েছেন একজন আমলা। বাংলা ভাষার গাঁথুনিকে তিনি অতি উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ব্রিটিশ রাজের সময় কিংবদন্তি এই লেখক আমাদের যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনাতে কাজ করেছেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। আমলাতান্ত্রিক জীবন বঙ্কিমের লেখনী থামাতে পারেনি। কমলকান্ত নামে তিনি প্রবন্ধ লিখেছেন আলাদাভাবে। করেছেন সাংবাদিকতাও। তার লেখা বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হচ্ছে-আনন্দমঠ, দুর্গেশনন্দিনী, মৃণালিনী, কপালকুন্ডলা, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাধারানী, দেবী চৌধুরানী, রাজসিংহ। বঙ্কিমের বই এখনো বাঙালির ঘরে ঘরে শোভা পায়। এত বছর পরও বাজারে বিক্রি হয় সমানে। সেই যুগে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ রাজের একজন আমলা লেখালেখি না করলেও পারতেন। তখন বাংলা সাহিত্য বলতে তেমন কিছু ছিল না। বঙ্কিম লিখে নতুন একটা জগৎ তৈরি করেছেন। নিজেও অর্জন করেছেন খ্যাতি। তার বাবাও সরকারি আমলা ছিলেন। বঙ্কিমের জন্ম ১৮৩৮ সালে। আর মারা গেছেন ১৮৯৪ সালে। বাংলা সাহিত্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল তার লেখা দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের ভিতর দিয়ে। বাংলা ভাষার বড় আসন বা মর্যাদা তিনি তৈরি করেছেন। ভাষার শক্ত গাঁথুনি নিয়ে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখতেন। বাদ ছিল না লোকরহস্য, বিবিধ সমালোচনা। বঙ্কিম যুগে যুগে আসেন না। আমরা আশাও করি না।
নওগাঁর এসডিও ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। কবি আবুল হোসেন ছিলেন সরকারের যুগ্ম সচিব। লেখক আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি। তিনি এসবির প্রধান ছিলেন এরশাদ আমলে। লবিং বুঝতেন না বলে আইজি হতে পারেননি। নিয়োগ পেয়েছিলেন দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে। গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা সবই লিখতেন আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন। তখন পশ্চিমবঙ্গের লেখক সাহিত্যিকদের ঢাকা আসা নিয়ে অনেক ঝামেলা ছিল। আমাকে কবি বেলাল চৌধুরী বলেছেন, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি অনুমতির ব্যবস্থা করতেন। আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের বই একুশের মেলাতে বের হতো। মুক্তধারা থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনী তার বই বের করত। বিচিত্রা, সন্ধানীর ঈদ সংখ্যায় থাকত গল্প, উপন্যাস। শুধু আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন নন, সচিব মনজুর উল করিমের কবিতার বই বাংলা একাডেমির বইমেলাতে যেত। তিনি লিখতেন ইমরান নুর নামে। আমলাদের মধ্যে খ্যাতিমান লেখকের অভাব ছিল না। মোফাজ্জল করিম সচিব থাকার সময়ে লিখতেন। তার লেখা কবিতাও প্রশংসিত ছিল। তিনি এখন অবসর জীবনে সংবাদপত্রে কলাম লেখেন। লিখতে কেউ কাউকে বারণ করেনি। সমস্যা আমড়া গাছে আম ধরানোর চেষ্টা করলে। এখন সবখানে তাই হচ্ছে। এখনকার আমলাদের বই মেলাতে যায় না। শাহবাগের বইয়ের দোকান, রকমারি ডটকমে পাওয়া যায় না। এখনকার আমলা লেখকরা নিজেদের বই নিজেরা পড়েন। শ্যালক, শ্যালিকাকে উপহার দেন। স্ত্রীকে নিয়ে মোড়ক উন্মোচন করান। মন্ত্রণালয়ে কাজের জন্য আগতদের সেই বই ধরিয়ে দেন। নিজেরা আইন বানিয়ে বই বিক্রির প্রকল্প করেন। নিজের বই সেই প্রকল্পে বিক্রি করেন। অধীনস্থদের নির্দেশ দেন বই কেনার জন্য। এভাবে কী সাহিত্যচর্চা হয়?
সেই দিন এক সামাজিক অনুষ্ঠানে কিছু আমলা বন্ধুর সঙ্গে দেখা। তারা সব জানেন, সব বোঝেন। তারা সাংবাদিকতা কীভাবে হবে তা নিয়ে অনেক জ্ঞান বিতরণ করছেন। আমাদের কিছু সহকর্মী মুগ্ধ হয়ে শুনছেন। মাথা নাড়ছেন। সহকর্মীদের কান্ড দেখে বঙ্কিমের কপালকুন্ডলার একটি লাইন মনে পড়ল-‘পথিক তুমি কী পথ হারিয়েছো?’ সবাই পথ চলে। মাঝপথে অনেকে পথ হারায়। এখন ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদ হচ্ছে। আর রাজনীতিবিদরা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়াচ্ছেন। চেষ্টা করছেন বিত্তশালী হতে। সবকিছু বদলে গেছে। একদা বাংলা একাডেমিতে আমাদের লেখকরা বইমেলাতে যেতেন। বইয়ের দোকানে বসতেন। পাঠকরা লাইন ধরে বই কিনত। হুমায়ূন আহমেদের ভক্তকুলের ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হতো। শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ অটোগ্রাফ দিতে দিতে ক্লান্ত হতেন। ইমদাদুল হক মিলন মধ্যরাত পর্যন্ত ভক্ত সামলাতেন। তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে একটা ভাঙচুর হয়ে যেত। সবকিছুতে একটা ক্লাসিক ব্যাপার ছিল। জোর করে সাহিত্য হয় না। এখন বাংলাবাজারে অনেক ছাপোষা মানুষের পেশা বই লেখা। তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে লিখেন। প্রকাশকরা সেই সব প্রকাশ করেন রাজনীতিবিদ, আমলা, সাংবাদিক, অধ্যাপক সাহেবের নামে। লেখালেখির এই নোংরামিটা কেন করেন প্রকাশকরা? বিখ্যাত নেতা, আমলাদের নামে বই বের হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিনে নেয়। প্রকাশকের বড় মুনাফা হয়। টিকে থাকতে বাংলাবাজারের প্রকাশকরা অসুস্থ পথটি বেছে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আমলে বঙ্গবন্ধুর ওপর বই হয় আমলা লেখকের। এই বই পদোন্নতিতে সহায়তা করে। আবার বিএনপির শাসনকালে বের হয় জিয়াউর রহমানের ওপর। টার্গেট সবার একই।
লেখালেখির বিষয়টি পুরোপুরি সৃষ্টিশীলতা। দ্য ক্যান্টারবেরি টেলসের লেখক জেফ্রি চসার আমলা ছিলেন। রাজউপদেষ্টা কূটনীতিক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল। ইংরেজি সাহিত্যে বিশাল অবদান রেখেছেন। ১৩৪৩ সালে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। সেই যুগে সেই সময়ে তিনি সমাজ পরিবর্তন আর বিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন। এই যুগে আমলাতান্ত্রিক ভাব ধরা ছাড়া কী করছেন? এই যুগের আমলারা তাদের পূর্বসূরিদের লেখা পড়েন কিনা জানি না। পড়লে নিশ্চয় লেখালেখি নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হতো না। বঙ্কিম পড়ার দরকার নেই, হাসনাত আবদুল হাই পড়লেও হয়। হাসনাত আবদুল হাই একুশে পদক পেয়েছেন। তার লেখা নভেরা, একজন আরজ আলী, আমার আততায়ী, সুলতান, মহাপুরুষসহ এক ডজন বই পাঠকদের কাছে আলোচিত। হাসনাত আবদুল হাইয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়ে উপন্যাস নিয়েছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঈদ সংখ্যায়। মোকাম্মেল হকের মতো ডাকসাইটে সিএসপিকে অনেকবার অনুরোধ করেছি লিখুন। আপনার মতো এত বেশি জানা মানুষ খুব কম আছেন। কবি পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য লিখে যান দীর্ঘপথ চলার অভিজ্ঞতা। তিনি সব সময় বলেন, লিখব। আর লেখার সময় বের করতে পারেন না। আমার অনুরোধে সৈয়দ রেজাউল হায়াত বাংলাদেশ প্রতিদিনে নিয়মিত কলাম লিখতেন। লেখনীর গাঁথুনি ছিল শক্তিশালী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখে গেছেন আমার কাগজে। তার লেখনীতে রাজনীতিবিদদের প্রতি সম্মান ছিল।
রাজনীতিবিদদের সেই সম্মানটা এখন নেই। তারা নিজেরা সেই পথ তৈরি করেছেন গণতান্ত্রিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই আমলাতন্ত্র রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতায় তৈরি। গত নির্বাচনের পর আমলাদের দাম্ভিকতা বেড়েছে। তারা মনে করছে, সরকার বসিয়েছে। জনগণের কাজ নেই। রাজনীতিবিদদের দরকার নেই। তাদের সুবিধা হয়েছে দুর্বল মন্ত্রিসভার কারণে। সবারই বোঝা দরকার ভালো হোক মন্দ হোক রাজনীতিবিদরাই দেশটার পরিবর্তন এনেছেন। রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে কিছুই হতে পারে না। তারা ২৪ ঘণ্টা মানুষ নিয়েই থাকেন। রাজনীতিবিদদের এখন সময়টা খারাপ। তাই তারা অনেক কিছু হজম করে যাচ্ছেন। ভাগ্য খারাপে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদরা মন্ত্রিসভার বাইরে। কপালগুণে জাতীয় রাজনীতিতে অবদানহীন অনেকে মন্ত্রী হয়েছেন। তাদের অদক্ষতায় আমলাদের বাড়াবাড়ি হচ্ছে। কেউ বুঝে না এই দিন চিরদিন নাও থাকতে পারে। আজকের এই ক্ষমতার দম্ভ হতে পারে বিলীন। দক্ষ অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ চেয়ারে বসলে ইয়েস বস ইয়েস বস করতে হবে। অথবা আমলাতান্ত্রিক জীবন শেষে অবসরের পর চলে যাবে ক্ষমতার ফানুস। নতুন সহকর্মীরাই তখন ফোন ধরবে না। ইতিহাস তাই বলে।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন