শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করবেন যেভাবে

ডাঃ লুনা পারভীন: যে শিশুকে জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ঘুম খাওয়া হারাম করেন মা, একদিন সময় আসে তাকেই বুকের দুধ ছাড়ানোর। কারণ, তখন তার পুষ্টি নিশ্চিত হবে বাড়তি খাবারে, বুকের দুধের প্রয়োজনীয়তা তখন ফুরিয়ে যায়। বুকের দুধ ছাড়ানোর সেই ক্ষণটা মা ও সন্তান দুজনের জন্যই কষ্টকর হয়ে থাকে। চেষ্টা করতে গিয়ে মায়ের মন কেঁদে ওঠে। তবুও নিয়ম মেনে চলতে হয় সবাইকে। আর এই পরিবর্তনটুকু কিভাবে সহজে করবেন তাই আজ আলোচনা করা হবে। জেনে নিন বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় করণীয়-

 

১. সময় নির্বাচনটা খুবই জরুরি। মাকে মনস্থির করতে হবে এবং শিশুকেও প্রস্তুত করতে হবে। এমন একটা সময় বেছে নেবেন যখন শিশুর জীবনে আর কোনো নতুন পরিবর্তন না হয়। যেমন, বাসা পরিবর্তন, পটির অভ্যাস করানো বা  নতুন শিশুর আগমন। আর এ কাজে পরিবারের সহযোগিতা খুবই জরুরি।

২. হুট করে বুকের দুধ বন্ধ না করে আস্তে আস্তে সময় ও কয়েক বারে কমিয়ে আনবেন। প্রথমে দিনের বেলায় ও পরবর্তীতে সময় নিয়ে রাতের বেলায়ও বন্ধ করতে হবে। এতে মায়েরও সুবিধা হবে, বুকের দুধ জমে ব্যথা বা ঘা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

 

৩. বুকের দুধ বন্ধ করার জন্য বিকল্প কিছু দিন। সেটা হতে পারে গরুর দুধ, সয়ামিল্ক, হালকা কোনো নাস্তা কিংবা শিশুকে গান বা গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো। এমনকী কাপে করে ফর্মুলা বা পানিও দেয়া যেতে। শিশু কোনো খাবার খেতে না চাইলে তা খাওয়ার জন্য তাকে জোর করবেন না।

৪. প্রতিদিনের রুটিনে পরিবর্তন আনুন। যে সময়টা শিশু বুকের দুধ খায়, ওই সময় তাকে অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত রাখুন। সকালে ঘুম ভেঙে দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, ঘুম থেকে আগেই উঠে যান ও শিশুকে নিয়ে নাস্তা খেতে বসুন। দুপুরে বা বিকালে শিশুকে খেলা দিয়ে বা বাইরে ঘুরিয়ে আনুন। রাতে বাবা বা পরিবারের অন্য কাউকে দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে দিন।

 

৫. মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিন যেন শিশু বুকের দুধ খাওয়ার কথা মনে না করে। খেলনা, ছড়ার বই, গল্পের বই, গান শুনিয়ে বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে সহজেই শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারেন।

৬. স্ট্রাটেজিটা হবে শিশুকে নিজের থেকে বুকের দুধ দিতে চাইবেন না আবার শিশু যদি খেতে চায় তাহলে নাও করবেন না। বুকের দুধে তেতো কিছু লাগিয়ে দেবেন যেন শিশু নিরুৎসাহিত হয়।

 

৭. বুঝিয়ে বললে শিশুরা অনেক সময় বোঝে, বড় হয়ে গেলে আর খেতে হয় না, বুকের দুধ পচা, ময়লা বা তিতে হয়ে যায় বড় হলে এগুলো বিশ্বাস করাতে পারেন। সত্যিটাও অনেক সময় শিশুরা মেনে নেয় যে, বড় হলে বুকের দুধ আর খেতে হয় না।

 

৮. শিশু বুকের দুধ শুধু পেট ভরার জন্যই খায় না, এটাকে সে আদর ও ভরসার একটা জায়গা মনে করে। তাই বুকের দুধ বন্ধ করার পর তাকে বাড়তি আদর ও সময় দিতে হবে। তার সঙ্গে গল্প করা, সময় কাটানো, খেলা করার সময় দিতে হবে।

 

৯. শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারেন যদি সে সময় বোঝে। বলা যেতে পারে আগামী জন্মদিনের আগেই তোমাকে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং সময় এগিয়ে এলে তাকে তা মনে করিয়ে দিতে হবে।

 

১০. যাদের একেবারেই বন্ধ করা যায় না, তাদের অনেক সময় নিজে থেকেই বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা চলে আসে। সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে হয় যদি। এ ব্যাপারে শুধু ধর্মীয় বাধা-নিষেধ আছে তা নয়, WHO থেকেও বলা হয়েছে, ২ বছর হলে শিশুকে যেন আর বুকের দুধ না খাওয়ানো হয়।

এরপরও বুকের দুধ বন্ধ করা কষ্টকর হয়। বুকের দুধে করলা, তেঁতুল, তেতো ঔষধ লাগিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। একেক শিশু একেক রকম তাই মাকে নিজেই চিন্তা করে বের করতে হবে কীভাবে বুকের দুধ বন্ধ করবেন।

লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ, বহির্বিভাগ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শ্যামলী।  সূএ : ঢাকা পোস্ট ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাগরে জেলের জালে ধরা পড়েছে পাঁচ মণ ওজনের ‘পাখি মাছ

» খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল

» ঢামেকের মর্গে পড়ে আছে গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছয়জনের মরদেহ

» সংস্কার না করলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এর মতো নির্বাচন হবে: গোলাম পরওয়ার

» ২৪–এর ঘোষণাপত্রে খুনি হাসিনার বিচার দেখতে চায় জনগণ: সারজিস

» দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ : মির্জা ফখরুল

» ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশা

» গৃহবধূ হত্যা মামলায় আসামি গ্রেফতার

» আমি মানুষ দেবতা নই, আমারও ভুল হয় : মোদি

» দেশে প্রথমবার ৫ জনের শরীরে রিওভাইরাস শনাক্ত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করবেন যেভাবে

ডাঃ লুনা পারভীন: যে শিশুকে জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ঘুম খাওয়া হারাম করেন মা, একদিন সময় আসে তাকেই বুকের দুধ ছাড়ানোর। কারণ, তখন তার পুষ্টি নিশ্চিত হবে বাড়তি খাবারে, বুকের দুধের প্রয়োজনীয়তা তখন ফুরিয়ে যায়। বুকের দুধ ছাড়ানোর সেই ক্ষণটা মা ও সন্তান দুজনের জন্যই কষ্টকর হয়ে থাকে। চেষ্টা করতে গিয়ে মায়ের মন কেঁদে ওঠে। তবুও নিয়ম মেনে চলতে হয় সবাইকে। আর এই পরিবর্তনটুকু কিভাবে সহজে করবেন তাই আজ আলোচনা করা হবে। জেনে নিন বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় করণীয়-

 

১. সময় নির্বাচনটা খুবই জরুরি। মাকে মনস্থির করতে হবে এবং শিশুকেও প্রস্তুত করতে হবে। এমন একটা সময় বেছে নেবেন যখন শিশুর জীবনে আর কোনো নতুন পরিবর্তন না হয়। যেমন, বাসা পরিবর্তন, পটির অভ্যাস করানো বা  নতুন শিশুর আগমন। আর এ কাজে পরিবারের সহযোগিতা খুবই জরুরি।

২. হুট করে বুকের দুধ বন্ধ না করে আস্তে আস্তে সময় ও কয়েক বারে কমিয়ে আনবেন। প্রথমে দিনের বেলায় ও পরবর্তীতে সময় নিয়ে রাতের বেলায়ও বন্ধ করতে হবে। এতে মায়েরও সুবিধা হবে, বুকের দুধ জমে ব্যথা বা ঘা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

 

৩. বুকের দুধ বন্ধ করার জন্য বিকল্প কিছু দিন। সেটা হতে পারে গরুর দুধ, সয়ামিল্ক, হালকা কোনো নাস্তা কিংবা শিশুকে গান বা গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো। এমনকী কাপে করে ফর্মুলা বা পানিও দেয়া যেতে। শিশু কোনো খাবার খেতে না চাইলে তা খাওয়ার জন্য তাকে জোর করবেন না।

৪. প্রতিদিনের রুটিনে পরিবর্তন আনুন। যে সময়টা শিশু বুকের দুধ খায়, ওই সময় তাকে অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত রাখুন। সকালে ঘুম ভেঙে দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, ঘুম থেকে আগেই উঠে যান ও শিশুকে নিয়ে নাস্তা খেতে বসুন। দুপুরে বা বিকালে শিশুকে খেলা দিয়ে বা বাইরে ঘুরিয়ে আনুন। রাতে বাবা বা পরিবারের অন্য কাউকে দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে দিন।

 

৫. মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিন যেন শিশু বুকের দুধ খাওয়ার কথা মনে না করে। খেলনা, ছড়ার বই, গল্পের বই, গান শুনিয়ে বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে সহজেই শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারেন।

৬. স্ট্রাটেজিটা হবে শিশুকে নিজের থেকে বুকের দুধ দিতে চাইবেন না আবার শিশু যদি খেতে চায় তাহলে নাও করবেন না। বুকের দুধে তেতো কিছু লাগিয়ে দেবেন যেন শিশু নিরুৎসাহিত হয়।

 

৭. বুঝিয়ে বললে শিশুরা অনেক সময় বোঝে, বড় হয়ে গেলে আর খেতে হয় না, বুকের দুধ পচা, ময়লা বা তিতে হয়ে যায় বড় হলে এগুলো বিশ্বাস করাতে পারেন। সত্যিটাও অনেক সময় শিশুরা মেনে নেয় যে, বড় হলে বুকের দুধ আর খেতে হয় না।

 

৮. শিশু বুকের দুধ শুধু পেট ভরার জন্যই খায় না, এটাকে সে আদর ও ভরসার একটা জায়গা মনে করে। তাই বুকের দুধ বন্ধ করার পর তাকে বাড়তি আদর ও সময় দিতে হবে। তার সঙ্গে গল্প করা, সময় কাটানো, খেলা করার সময় দিতে হবে।

 

৯. শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারেন যদি সে সময় বোঝে। বলা যেতে পারে আগামী জন্মদিনের আগেই তোমাকে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং সময় এগিয়ে এলে তাকে তা মনে করিয়ে দিতে হবে।

 

১০. যাদের একেবারেই বন্ধ করা যায় না, তাদের অনেক সময় নিজে থেকেই বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা চলে আসে। সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে হয় যদি। এ ব্যাপারে শুধু ধর্মীয় বাধা-নিষেধ আছে তা নয়, WHO থেকেও বলা হয়েছে, ২ বছর হলে শিশুকে যেন আর বুকের দুধ না খাওয়ানো হয়।

এরপরও বুকের দুধ বন্ধ করা কষ্টকর হয়। বুকের দুধে করলা, তেঁতুল, তেতো ঔষধ লাগিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। একেক শিশু একেক রকম তাই মাকে নিজেই চিন্তা করে বের করতে হবে কীভাবে বুকের দুধ বন্ধ করবেন।

লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ, বহির্বিভাগ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শ্যামলী।  সূএ : ঢাকা পোস্ট ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com