ফিরোজায় প্রথম দিন যেমন কাটালেন খালেদা জিয়া

হাসপাতাল থেকে নিজ বাসা ‘ফিরোজায়’ গিয়ে গতকাল প্রথম দিনটি স্বাভাবিক রোগীর মতোই কাটালেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সামান্য তরল খাবার খেয়েছেন। ছোট ভাই শামীম ইসকান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা গিয়েছিলেন দেখতে। কানিজ ফাতেমা তার বাসা থেকেই রান্না করা স্যুপসহ তরল খাবার নিয়ে যান।

 

দিনে ও রাতে মিলে দুইজন নার্স দুই শিফটে ডিউটি করছেন। মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল মামুনসহ দুইজন চিকিৎসক বিকালে বাসায় গিয়ে দেখে এসেছেন তাকে। নতুন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি তাঁর। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে এ এসব তথ্য জানা গেছে।

 

জানা যায়, বর্তমানে বাসায় থাকলেও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে এবং গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই চিকিৎসা চলছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর। তবে মূল ফিজিশিয়ানের দায়িত্বে আছেন প্রফেসর ডা. এ এফ এম সিদ্দিকী। গতকালও গুলশানের এ ভাড়া বাসায় গিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের দুইজন সদস্য। তারা বেগম জিয়াকে দেখে এসে বোর্ডের কাছে রিপোর্ট করেছেন। বোর্ডের সব সদস্য (ভার্চুয়ালি) তা পর্যালোচনা করেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই বেশ কিছু টেস্ট করানো হতে পারে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

 

এসব বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৭ দিন হাসপাতালে ছিলেন বেগম জিয়া। তারপর পোস্ট কোভিড জটিলতাও কাটিয়ে ওঠতে হয়েছে তাঁকে। এবার আক্রান্ত হলে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সে আশঙ্কা থেকেই মূলত তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

 

তবে তাঁর প্রধান চিকিৎসক হলেন- প্রফেসর ডা. এ এফ এম সিদ্দিকী। তাদের নেতৃত্বেই মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছেন। তাঁর ‘ক্রনিক ব্লাড লস’ এর বিষয়টি মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মেলিনা টেস্ট করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, বিএনপির মতো দলের চেয়ারপারসন।

 

অর্থাৎ নিঃসন্দেহে একজন অতীব সম্মানিত ব্যক্তি। সর্বোপরি তিনি একজন রোগী। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা তাঁকে একজন রোগী হিসেবেই দেখছেন। এখানে রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই এবং প্রশ্নও আসে না। এখানে তিনি না হয়ে যদি অন্য কোনো রোগী হতেন তবে তাকেও সেই একই দৃষ্টিতে দেখা হতো। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বেগম জিয়াকে একই রকমের পেশাগত দৃষ্টিতেই দেখছেন।

 

প্রয়োজনে তাঁর পুত্র (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমান, তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান, তাঁর ভাই-বোন ও ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গেও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ করছেন এবং দিচ্ছেন। গত বছর পোস্ট কভিড সময়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এভারকেয়ার হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের পরামর্শ দেন।

 

বিশেষ করে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা জার্মানির উন্নত কোনো (লিভার) চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ মেডিকেল বোর্ডের মতে, খালেদা জিয়ার এ রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। ‘টিপস’ পদ্ধতিতে এ চিকিৎসাটা করতে হবে। কিংবা ‘ট্রান্সপ্লান্ট’ করা হবে। যা দেশীয় কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে করার কোনো সুযোগ নেই।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিজিটাল বীমা পলিসি ডক্যুমেন্ট প্রদানের সেবা চালু করল মেটলাইফ বাংলাদেশ

» নওগাঁয় মহিলাসহ ৪ ভুয়া পুলিশ আটক

» প্রাইম ব্যাংক ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর মধ্যে পেরোল ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর

» ইসির ২ আইন সংস্কার প্রস্তাবের অনুমোদন

» কল্কির সিক্যুয়েল থেকেও বাদ পড়লেন দীপিকা

» সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

» বাংলাদেশের মানুষ পিআর পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করেছে: টুকু

» বায়তুল মোকাররম এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ শুরু

» সীমানা বিরোধ: আদালতের রায়ের পর সিদ্ধান্ত নেবে ইসি

» নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের একগুচ্ছ নির্দেশনা তারেক রহমানের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফিরোজায় প্রথম দিন যেমন কাটালেন খালেদা জিয়া

হাসপাতাল থেকে নিজ বাসা ‘ফিরোজায়’ গিয়ে গতকাল প্রথম দিনটি স্বাভাবিক রোগীর মতোই কাটালেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সামান্য তরল খাবার খেয়েছেন। ছোট ভাই শামীম ইসকান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা গিয়েছিলেন দেখতে। কানিজ ফাতেমা তার বাসা থেকেই রান্না করা স্যুপসহ তরল খাবার নিয়ে যান।

 

দিনে ও রাতে মিলে দুইজন নার্স দুই শিফটে ডিউটি করছেন। মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল মামুনসহ দুইজন চিকিৎসক বিকালে বাসায় গিয়ে দেখে এসেছেন তাকে। নতুন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি তাঁর। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে এ এসব তথ্য জানা গেছে।

 

জানা যায়, বর্তমানে বাসায় থাকলেও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে এবং গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই চিকিৎসা চলছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর। তবে মূল ফিজিশিয়ানের দায়িত্বে আছেন প্রফেসর ডা. এ এফ এম সিদ্দিকী। গতকালও গুলশানের এ ভাড়া বাসায় গিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের দুইজন সদস্য। তারা বেগম জিয়াকে দেখে এসে বোর্ডের কাছে রিপোর্ট করেছেন। বোর্ডের সব সদস্য (ভার্চুয়ালি) তা পর্যালোচনা করেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই বেশ কিছু টেস্ট করানো হতে পারে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

 

এসব বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৭ দিন হাসপাতালে ছিলেন বেগম জিয়া। তারপর পোস্ট কোভিড জটিলতাও কাটিয়ে ওঠতে হয়েছে তাঁকে। এবার আক্রান্ত হলে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সে আশঙ্কা থেকেই মূলত তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

 

তবে তাঁর প্রধান চিকিৎসক হলেন- প্রফেসর ডা. এ এফ এম সিদ্দিকী। তাদের নেতৃত্বেই মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছেন। তাঁর ‘ক্রনিক ব্লাড লস’ এর বিষয়টি মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মেলিনা টেস্ট করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, বিএনপির মতো দলের চেয়ারপারসন।

 

অর্থাৎ নিঃসন্দেহে একজন অতীব সম্মানিত ব্যক্তি। সর্বোপরি তিনি একজন রোগী। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা তাঁকে একজন রোগী হিসেবেই দেখছেন। এখানে রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই এবং প্রশ্নও আসে না। এখানে তিনি না হয়ে যদি অন্য কোনো রোগী হতেন তবে তাকেও সেই একই দৃষ্টিতে দেখা হতো। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বেগম জিয়াকে একই রকমের পেশাগত দৃষ্টিতেই দেখছেন।

 

প্রয়োজনে তাঁর পুত্র (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমান, তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান, তাঁর ভাই-বোন ও ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গেও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ করছেন এবং দিচ্ছেন। গত বছর পোস্ট কভিড সময়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এভারকেয়ার হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের পরামর্শ দেন।

 

বিশেষ করে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা জার্মানির উন্নত কোনো (লিভার) চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ মেডিকেল বোর্ডের মতে, খালেদা জিয়ার এ রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। ‘টিপস’ পদ্ধতিতে এ চিকিৎসাটা করতে হবে। কিংবা ‘ট্রান্সপ্লান্ট’ করা হবে। যা দেশীয় কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে করার কোনো সুযোগ নেই।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com