সমাজচ্যুতি, ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু, মহানুভবতা

তসলিমা নাসরিন: ১. কী ঘটেছে? মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরীর পরিবারকে স্থানীয় মসজিদ কমিটি সমাজচ্যুত করেছে। ঝর্ণা চৌধুরী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় চলে যাওয়ার পরই মসজিদ কমিটির লোকেরা সালিশ বসায়। অভিযোগ কী? ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছে, ঝর্ণা ছোট কাপড় পরেছে, ঝর্ণা হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছে। সালিশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঝর্ণার পরিবারকে একঘরে করা হবে। করা হয়েছেও। ঝর্ণা আমেরিকায় গিয়ে কাকে বিয়ে করলো, কী কাপড় পরলো, কী বিশ্বাস করলো তা নিয়ে এত কেন মাথাব্যথা মসজিদ কমিটির? শোনা যায়, ঝর্ণা কৃষ্ণপুর গ্রামে থাকাকালীন নারী অধিকারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, সে কারণেই স্থানীয় মৌলবাদী দল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ঝর্ণার বিরুদ্ধে। তারা ঝর্ণার নিন্দে করতে থাকে, ছড়াতে থাকে অপবাদ। রাগের কারণ ওটিই, কেন সে নারীর অধিকার দাবি করে! নারীবিদ্বেষীরা আর যাকেই সহ্য করুক, নারীর অধিকারের দাবি যারা করে, তাদের সহ্য করে না।

 

হয়তো ঝর্ণার পরিবারকে একঘরে করার ব্যাপারে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেই আপত্তি করবেন এবং শেষ পর্যন্ত এই শাস্তিটি কার্যকর হবে না। কিন্তু কী কারণে ঝর্ণার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার চিন্তা মাথায় এলো, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। সেটি হলো, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছে, ছোট কাপড় পরেছে এবং এক হিন্দুকে বিয়ে করেছে। ঝর্ণা যদিও বলেছেন কোনও হিন্দু ছেলেকে তিনি বিয়ে করেননি। সবই তিনি দাবি করেছেন, অপপ্রচার।

 

অপপ্রচার হোক বা না হোক, সালিশ বৈঠকে যে অপরাধের উল্লেখ করে শাস্তির ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছিল, সেই অপরাধগুলোকে যে সমাজ অপরাধ হিসেবে স্বীকার করে, তা নিশ্চয়ই আমরা জানি। এখন প্রশ্ন হলো, সমাজের কি এগুলোকে অপরাধ বলে ভাবা উচিত?

 

একটি সমাজে যদি সুস্থ মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে, তাহলে কেউ এসবকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করবে না। কিন্তু অশিক্ষিত, মূর্খ এবং প্রতারকে সমাজ যদি ভরে যায়, তাহলে নাস্তিকতা, ছোট কাপড় পরা এবং ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করাকে সমাজ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে।

 

দুঃখ এই, শুধু মৌলভীবাজারের কৃষ্ণপুর গ্রামে নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে শহরে নগরে অশিক্ষিত, মূর্খ এবং প্রতারকের সংখ্যা হৈ হৈ করে বাড়ছে।

প্রতিটি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা সামাজিক মত এক হয় না। মতগুলো ভিন্নই হয়। একই রকম ধর্মীয় মতও ভিন্ন। সে কারণে পৃথিবীতে মানুষ কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী নয়। কোনও ধর্মেরই অনুসারী নয়, এমন মানুষও যুগে যুগে ছিল এবং আছে। ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইসলাম ইত্যাদি নানা ধর্মবিশ্বাসীদের সমাজেও বাস করে কিছু মানুষ যারা এসব প্রচলিত প্রাচীন ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তারা বরং আধুনিক মানববাদে এবং বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন। তাঁদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস কারও কোনও ক্ষতি করছে না, কারও পাকা ধানে মই দিচ্ছে না, কারও মাথার দাম ঘোষণা করছে না, কারও ফাঁসির দাবি নিয়ে মিছিল করছে না, কাউকে খুন করছে না, তবে তাঁদের কেন সমাজচ্যুত হতে হবে, তাঁদের কেন ঘৃণা পেতে হবে, হেনস্তা হতে হবে, নির্যাতন সইতে হবে?

 

অন্য কোনও মতবাদে বিশ্বাস না করার জন্য এই ভোগান্তি তো হয় না! কেউ যদি কোনও রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাস না করে, তাকে তো কেউ একঘরে করবে না। কেউ যদি কোনও অর্থনৈতিক যত মত আছে, কোনওটিতে বিশ্বাস না করে, তার বিরুদ্ধে তো সালিশ বসে না! ধর্মকে কারা এমন অসহিষ্ণু বানালো, তাদের চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তাদের চিহ্নিত না করে দিন দিন তাদেরই সমাজের কর্তা বানানো হচ্ছে। অশিক্ষিত, মূর্খ, নারীবিদ্বেষীদের হাতেই সমর্পণ করা হচ্ছে গোটা সমাজের দায়িত্ব। সমাজকে চূড়ান্ত নষ্ট করার জন্য এই ভুলটিই যথেষ্ট।

 

ঝর্ণা ছোট কাপড় পরবে নাকি বড় কাপড় পরবে, সে সিদ্ধান্ত ঝর্ণাই নেবে। ঠিক যেমন পুরুষরা সিদ্ধান্ত নেয় তারা কি বড় পাঞ্জাবি পরবে নাকি ছোট পাঞ্জাবি পরবে, ফতুয়া পরবে নাকি স্যান্ডো গেঞ্জি পরবে, নাকি একটি গামছা পরবে নাকি খালি গায়ে থাকবে। সিদ্ধান্ত নেয় তারা আরবের পোশাক পরবে, নাকি পাশ্চাত্যের পোশাক পরবে, নাকি দেশি পোশাক পরবে। পুরুষের কোনও পোশাকের বেলায় তো গেল গেল রব ওঠে না! মেয়েদের পোশাকের বেলায় কেন ওঠে! কোনও পোশাক পরলে যদি মেয়েদের মুখ-মাথা দেখা যায়, হাত-পা দেখা যায়, পেট পিঠ দেখা যায়, তাতে পুরুষ এত হিংস্র হয়ে ওঠে কেন? এই পুরুষদের কে অধিকার দিয়েছে পোশাকের জন্য মেয়েদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার? কে অধিকার দিয়েছে একটি মেয়ে কার সঙ্গে প্রেম করবে, কাকে বিয়ে করবে, তা নিয়ে হুলুস্থুল করার? মেয়েদের জীবননাশ করার, সর্বনাশ করার? এই পুরুষদের অনধিকারচর্চা বন্ধ করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতেই হবে।

 

মেয়েদের অধিকার এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষের জ্ঞান নেই। তারা মনে করে মেয়েদের শরীর, পোশাক, শিক্ষা, দীক্ষা, মন, মানসিকতা, প্রেম, বিয়ে, সন্তান, চাকরি, ব্যবসা, আচার ব্যবহার ইত্যাদি সমস্ত ব্যাপারে পরিবারের এবং পরিবারের বাইরের পুরুষরা সিদ্ধান্ত নেবে। মেয়েদের মানতে হবে সব সিদ্ধান্ত। তা না হলে তাদের জীবন দুর্বিষহ করার সব রকম ব্যবস্থা এই সমাজ নেবে। এই জীবনকে জীবন বলে না, এ নিতান্তই আগাছা-পরগাছার জীবন। স্বাধীন স্বনির্ভর জীবন নয়। শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে সারা জীবনের জন্য মেয়েদের বন্দি করে রাখা হয়, পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা হয়! ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। যারা শিউরে ওঠে না, এই বৈষম্য যাদের এতটুকু ভাবায় না, তাদের জন্য আমার করুণা হয় তো বটেই, তাদের নিয়ে ভয়ও হয়।

 

মেয়েদের কি এখনও বাকি আছে প্রমাণ করার যে পুরুষেরা যা পারে, মেয়েরাও তা পারে? মেয়েরাও শ্রমিক হতে পারে, কর্মকর্তা হতে পারে, মিলিটারি হতে পারে, নভোচারী হতে পারে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানী বৈমানিক সবকিছুই হতে পারে? পুরুষেরই এখনও প্রমাণ করতে বাকি যে তারা গৃহকর্মে নিপুণ, শিশুপালনে পারদর্শী। কেউ কেউ বলে পুরুষেরা কঠিন, মেয়েরা মমতাময়ী। মেয়েরা শাসক হয়ে কম কি প্রমাণ করেছে তারাও পুরুষ-শাসকের মতো নির্মম নিষ্ঠুর, নৃশংস হতে পারে? তাহলে কোন ক্ষেত্রে নারী আর পুরুষ সমান হওয়ার যোগ্য নয়? শারীরিক গঠনে বা পেশিতে পার্থক্য আছে, কিন্তু মানুষ তো পেশি দিয়ে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না। নারী এবং পুরুষের যেসব পেশি সাধারণ কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয়, সেই পেশিগুলো বাদ দিলে যে বাড়তি পেশি পড়ে থাকে, সে পুরুষের পেশি। সেই বাড়তি পেশি দিয়ে নানা কিসিমের দুষ্কর্ম করা যায়, দুষ্কর্মগুলোর অন্যতম মেয়েদের ধরাশায়ী করা, ধর্ষণ করা। আমরা নিশ্চয়ই সমাজ পরিচালনার জন্য পুরুষের বাড়তি পেশির দরকার বোধ করি না। তাহলে পুরুষের কোন গুণের জন্য পুরুষেরা পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, আইনে অগ্রাধিকার পায়? এই প্রশ্নগুলো কেউ করে না। প্রশ্ন করলে তাকেও সমাজচ্যুত করা হয়। প্রশ্ন করবে না, সমস্ত পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতি মুখ বুজে মেনে নেবে, সর্বস্তর থেকে এই আদেশই বর্ষিত হয়। আদেশ না মানলে সমূহ বিপদ।

 

আমি আদেশ মানিনি, সে কারণে নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, নির্যাতন, নির্বাসন সবই আমাকে দিয়েছেন গণ্যমান্য ক্ষমতাশালীরা।

 

২. বাংলাদেশ নাকি অর্থনৈতিক উন্নতি আর উন্নয়নে থই থই করছে! বাংলাদেশ নাকি সিঙ্গাপুর, দুবাই হয়ে উঠেছে। তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছেলেরা ইউরোপ আর আমেরিকা যেতে চায় কেন? কত যে গল্প শুনি। সবজির ট্রাকে লুকিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঢোকে। গন্তব্যে পৌঁছোনোর আগে দম বন্ধ হয়ে মারাও যায়। একবার পূর্ব ইউরোপের কোনও এক দেশ থেকে শীতকালে বরফের রাস্তা দিয়ে জার্মানিতে ঢোকার জন্য দৌড়েছিল কিছু ছেলে, ভালো দৌড়োতে পারবে বলে জুতো খুলে নিয়েছিল। এরপর ফ্রস্ট বাইট হয়, জীবন বাঁচানোর জন্য সবারই দুটো করে পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। আরও কত ভয়াবহ সব গল্প শুনি। কেউ কেউ বলে, ভূমধ্যসাগরের তীরে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের যে ছেলেরা অবৈধভাবে ঢুকতে চায়, তাদের নৌকো ইচ্ছে করেই তীরে নিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। অসংখ্য ছেলে এভাবেই সাগরে ডুবে মরেছে। আর, এই চার-পাঁচ দিন আগে সাত জন বাংলাদেশের ছেলে লিবিয়া থেকে নিঃশব্দে অন্ধকারে নৌকো চড়ে যাচ্ছিল ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপে। গরমের দেশের ছেলেরা ইউরোপের শীতে কী কাপড় পরতে হয় তা কী করে জানবে! অবশ্য জানলেও ধরা যেন না পড়ে সেই চিন্তাটি প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলেই হয়তো কাপড় জামার দিকে তাকায়নি। নৌকোর মধ্যেই ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে মরে গেল! কী অপচয় জীবনের!

 

বাংলাদেশ থেকে শুধু নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত নয়, উচ্চবিত্ত লোকেরাও ইট বিছিয়ে রেখেছে বিদেশে। ফাঁক পেলেই দৌড় দেবে। লুটপাট করে নিয়ে গেলে বাকি জীবন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারবে। ধনীরা তো ভিসা নিয়ে যায়। আর গরিবের তো ভিসা জোটে না, তাই জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়।

আহ কী অপচয় জীবনের!

 

ভালো যে আমি ক্ষমতাসীনদের ভাষণ শুনি না। ভাষণে নিশ্চয়ই তারা বলেন যে বাংলাদেশকে তারা বিরাট এক ধনী দেশ বানিয়ে ফেলেছেন, জনগণের কারও কোনও অভাব নেই, অভিযোগ নেই, সকলে পরম সুখে শান্তিতে বাস করছে। ব্রিজ আর ফ্লাইওভার আর মেট্রোরেল থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে হীরের দ্যুতি। এত উন্নয়ন, উন্নয়ন এত, যে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না! এই যে উন্নত দেশে ঢুকতে গিয়ে মৃত্যু হলো বাংলাদেশের কিছু লোকের, তাহলে কি দেশের ছেলেরা আর ইউরোপে ঢুকতে চাইবে না? আলবৎ চাইবে। এবং আবারও মৃত্যু হবে হয় শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে, নয় বরফের কামড়ে, নয় ভূমধ্যসাগরে ডুবে, নয় সবজির ট্রাকে শ্বাস বন্ধ হয়ে। মানুষ কাঁদবে, দুদিন পর চোখ মুছে জীবনের ঝুঁকি নিতে তৈরি হবে আবার।

 

৩. খুব ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা নেই। আমি ঠিক জানি না তাঁরা কী রকম জীবনযাপন করেন। তবে মাঝে মাঝে যা শুনি, তা মন খারাপ করে দেয়। আজই একটি খবর পড়লাম, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি নিজের জন্মদিন পালন করেছেন ১১ হাজার এতিম শিশুকে সুস্বাদু খাবার খাইয়ে। নিজের জন্মদিন তিনি ঘটা করে তাঁর প্রাসাদেই ধনাঢ্য আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গেই উৎযাপন করতে পারতেন। এতিম গরিবদের কথা না ভাবলে তাঁকে কেউ তিরস্কার করতো না। কিন্তু তিনি গরিবের কথা ভেবেছেন, তাদের মুখে একদিনের জন্য হলেও হাসি ফুটিয়েছেন! এই মহানুভবতা খুব কম মানুষই আজকাল দেখান। তাঁকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। স্বার্থপরতার অন্ধকারে যখন পৃথিবী ছেয়ে থাকে, মানুষ যখন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে তখন কিছু দীর্ঘকায় দীপ্তিময় মানুষ আলো হাতে বেরিয়ে আসেন। তাঁরাই নিঃস্বার্থ হয়ে, উদার হয়ে, মহান হয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে রাখেন।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» আইনজীবী হত্যার তদন্তের নির্দেশ, দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» ‌আমরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেব না : হাসনাত আব্দুল্লাহ

» লক্ষ্মীপুরে জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের স্মরণে জেলা প্রশাসনের সভা 

» রবি আজিয়াটাকে অ্যাডভান্সড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

» ১৫০ কৃষি উদ্যোক্তার জন্য ইউসিবির দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আয়োজন

» আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু

» বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা: পরিবেশ উপদেষ্টা

» চিন্ময় দাসকে গ্রেফতারের বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ

» ‘শ্রম অধিকার চর্চার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা জরুরি’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সমাজচ্যুতি, ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু, মহানুভবতা

তসলিমা নাসরিন: ১. কী ঘটেছে? মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরীর পরিবারকে স্থানীয় মসজিদ কমিটি সমাজচ্যুত করেছে। ঝর্ণা চৌধুরী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় চলে যাওয়ার পরই মসজিদ কমিটির লোকেরা সালিশ বসায়। অভিযোগ কী? ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছে, ঝর্ণা ছোট কাপড় পরেছে, ঝর্ণা হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছে। সালিশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঝর্ণার পরিবারকে একঘরে করা হবে। করা হয়েছেও। ঝর্ণা আমেরিকায় গিয়ে কাকে বিয়ে করলো, কী কাপড় পরলো, কী বিশ্বাস করলো তা নিয়ে এত কেন মাথাব্যথা মসজিদ কমিটির? শোনা যায়, ঝর্ণা কৃষ্ণপুর গ্রামে থাকাকালীন নারী অধিকারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, সে কারণেই স্থানীয় মৌলবাদী দল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ঝর্ণার বিরুদ্ধে। তারা ঝর্ণার নিন্দে করতে থাকে, ছড়াতে থাকে অপবাদ। রাগের কারণ ওটিই, কেন সে নারীর অধিকার দাবি করে! নারীবিদ্বেষীরা আর যাকেই সহ্য করুক, নারীর অধিকারের দাবি যারা করে, তাদের সহ্য করে না।

 

হয়তো ঝর্ণার পরিবারকে একঘরে করার ব্যাপারে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেই আপত্তি করবেন এবং শেষ পর্যন্ত এই শাস্তিটি কার্যকর হবে না। কিন্তু কী কারণে ঝর্ণার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার চিন্তা মাথায় এলো, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। সেটি হলো, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছে, ছোট কাপড় পরেছে এবং এক হিন্দুকে বিয়ে করেছে। ঝর্ণা যদিও বলেছেন কোনও হিন্দু ছেলেকে তিনি বিয়ে করেননি। সবই তিনি দাবি করেছেন, অপপ্রচার।

 

অপপ্রচার হোক বা না হোক, সালিশ বৈঠকে যে অপরাধের উল্লেখ করে শাস্তির ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছিল, সেই অপরাধগুলোকে যে সমাজ অপরাধ হিসেবে স্বীকার করে, তা নিশ্চয়ই আমরা জানি। এখন প্রশ্ন হলো, সমাজের কি এগুলোকে অপরাধ বলে ভাবা উচিত?

 

একটি সমাজে যদি সুস্থ মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে, তাহলে কেউ এসবকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করবে না। কিন্তু অশিক্ষিত, মূর্খ এবং প্রতারকে সমাজ যদি ভরে যায়, তাহলে নাস্তিকতা, ছোট কাপড় পরা এবং ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করাকে সমাজ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে।

 

দুঃখ এই, শুধু মৌলভীবাজারের কৃষ্ণপুর গ্রামে নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে শহরে নগরে অশিক্ষিত, মূর্খ এবং প্রতারকের সংখ্যা হৈ হৈ করে বাড়ছে।

প্রতিটি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা সামাজিক মত এক হয় না। মতগুলো ভিন্নই হয়। একই রকম ধর্মীয় মতও ভিন্ন। সে কারণে পৃথিবীতে মানুষ কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী নয়। কোনও ধর্মেরই অনুসারী নয়, এমন মানুষও যুগে যুগে ছিল এবং আছে। ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইসলাম ইত্যাদি নানা ধর্মবিশ্বাসীদের সমাজেও বাস করে কিছু মানুষ যারা এসব প্রচলিত প্রাচীন ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তারা বরং আধুনিক মানববাদে এবং বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন। তাঁদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস কারও কোনও ক্ষতি করছে না, কারও পাকা ধানে মই দিচ্ছে না, কারও মাথার দাম ঘোষণা করছে না, কারও ফাঁসির দাবি নিয়ে মিছিল করছে না, কাউকে খুন করছে না, তবে তাঁদের কেন সমাজচ্যুত হতে হবে, তাঁদের কেন ঘৃণা পেতে হবে, হেনস্তা হতে হবে, নির্যাতন সইতে হবে?

 

অন্য কোনও মতবাদে বিশ্বাস না করার জন্য এই ভোগান্তি তো হয় না! কেউ যদি কোনও রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাস না করে, তাকে তো কেউ একঘরে করবে না। কেউ যদি কোনও অর্থনৈতিক যত মত আছে, কোনওটিতে বিশ্বাস না করে, তার বিরুদ্ধে তো সালিশ বসে না! ধর্মকে কারা এমন অসহিষ্ণু বানালো, তাদের চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তাদের চিহ্নিত না করে দিন দিন তাদেরই সমাজের কর্তা বানানো হচ্ছে। অশিক্ষিত, মূর্খ, নারীবিদ্বেষীদের হাতেই সমর্পণ করা হচ্ছে গোটা সমাজের দায়িত্ব। সমাজকে চূড়ান্ত নষ্ট করার জন্য এই ভুলটিই যথেষ্ট।

 

ঝর্ণা ছোট কাপড় পরবে নাকি বড় কাপড় পরবে, সে সিদ্ধান্ত ঝর্ণাই নেবে। ঠিক যেমন পুরুষরা সিদ্ধান্ত নেয় তারা কি বড় পাঞ্জাবি পরবে নাকি ছোট পাঞ্জাবি পরবে, ফতুয়া পরবে নাকি স্যান্ডো গেঞ্জি পরবে, নাকি একটি গামছা পরবে নাকি খালি গায়ে থাকবে। সিদ্ধান্ত নেয় তারা আরবের পোশাক পরবে, নাকি পাশ্চাত্যের পোশাক পরবে, নাকি দেশি পোশাক পরবে। পুরুষের কোনও পোশাকের বেলায় তো গেল গেল রব ওঠে না! মেয়েদের পোশাকের বেলায় কেন ওঠে! কোনও পোশাক পরলে যদি মেয়েদের মুখ-মাথা দেখা যায়, হাত-পা দেখা যায়, পেট পিঠ দেখা যায়, তাতে পুরুষ এত হিংস্র হয়ে ওঠে কেন? এই পুরুষদের কে অধিকার দিয়েছে পোশাকের জন্য মেয়েদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার? কে অধিকার দিয়েছে একটি মেয়ে কার সঙ্গে প্রেম করবে, কাকে বিয়ে করবে, তা নিয়ে হুলুস্থুল করার? মেয়েদের জীবননাশ করার, সর্বনাশ করার? এই পুরুষদের অনধিকারচর্চা বন্ধ করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতেই হবে।

 

মেয়েদের অধিকার এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষের জ্ঞান নেই। তারা মনে করে মেয়েদের শরীর, পোশাক, শিক্ষা, দীক্ষা, মন, মানসিকতা, প্রেম, বিয়ে, সন্তান, চাকরি, ব্যবসা, আচার ব্যবহার ইত্যাদি সমস্ত ব্যাপারে পরিবারের এবং পরিবারের বাইরের পুরুষরা সিদ্ধান্ত নেবে। মেয়েদের মানতে হবে সব সিদ্ধান্ত। তা না হলে তাদের জীবন দুর্বিষহ করার সব রকম ব্যবস্থা এই সমাজ নেবে। এই জীবনকে জীবন বলে না, এ নিতান্তই আগাছা-পরগাছার জীবন। স্বাধীন স্বনির্ভর জীবন নয়। শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে সারা জীবনের জন্য মেয়েদের বন্দি করে রাখা হয়, পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা হয়! ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। যারা শিউরে ওঠে না, এই বৈষম্য যাদের এতটুকু ভাবায় না, তাদের জন্য আমার করুণা হয় তো বটেই, তাদের নিয়ে ভয়ও হয়।

 

মেয়েদের কি এখনও বাকি আছে প্রমাণ করার যে পুরুষেরা যা পারে, মেয়েরাও তা পারে? মেয়েরাও শ্রমিক হতে পারে, কর্মকর্তা হতে পারে, মিলিটারি হতে পারে, নভোচারী হতে পারে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানী বৈমানিক সবকিছুই হতে পারে? পুরুষেরই এখনও প্রমাণ করতে বাকি যে তারা গৃহকর্মে নিপুণ, শিশুপালনে পারদর্শী। কেউ কেউ বলে পুরুষেরা কঠিন, মেয়েরা মমতাময়ী। মেয়েরা শাসক হয়ে কম কি প্রমাণ করেছে তারাও পুরুষ-শাসকের মতো নির্মম নিষ্ঠুর, নৃশংস হতে পারে? তাহলে কোন ক্ষেত্রে নারী আর পুরুষ সমান হওয়ার যোগ্য নয়? শারীরিক গঠনে বা পেশিতে পার্থক্য আছে, কিন্তু মানুষ তো পেশি দিয়ে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না। নারী এবং পুরুষের যেসব পেশি সাধারণ কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয়, সেই পেশিগুলো বাদ দিলে যে বাড়তি পেশি পড়ে থাকে, সে পুরুষের পেশি। সেই বাড়তি পেশি দিয়ে নানা কিসিমের দুষ্কর্ম করা যায়, দুষ্কর্মগুলোর অন্যতম মেয়েদের ধরাশায়ী করা, ধর্ষণ করা। আমরা নিশ্চয়ই সমাজ পরিচালনার জন্য পুরুষের বাড়তি পেশির দরকার বোধ করি না। তাহলে পুরুষের কোন গুণের জন্য পুরুষেরা পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, আইনে অগ্রাধিকার পায়? এই প্রশ্নগুলো কেউ করে না। প্রশ্ন করলে তাকেও সমাজচ্যুত করা হয়। প্রশ্ন করবে না, সমস্ত পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতি মুখ বুজে মেনে নেবে, সর্বস্তর থেকে এই আদেশই বর্ষিত হয়। আদেশ না মানলে সমূহ বিপদ।

 

আমি আদেশ মানিনি, সে কারণে নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, নির্যাতন, নির্বাসন সবই আমাকে দিয়েছেন গণ্যমান্য ক্ষমতাশালীরা।

 

২. বাংলাদেশ নাকি অর্থনৈতিক উন্নতি আর উন্নয়নে থই থই করছে! বাংলাদেশ নাকি সিঙ্গাপুর, দুবাই হয়ে উঠেছে। তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছেলেরা ইউরোপ আর আমেরিকা যেতে চায় কেন? কত যে গল্প শুনি। সবজির ট্রাকে লুকিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঢোকে। গন্তব্যে পৌঁছোনোর আগে দম বন্ধ হয়ে মারাও যায়। একবার পূর্ব ইউরোপের কোনও এক দেশ থেকে শীতকালে বরফের রাস্তা দিয়ে জার্মানিতে ঢোকার জন্য দৌড়েছিল কিছু ছেলে, ভালো দৌড়োতে পারবে বলে জুতো খুলে নিয়েছিল। এরপর ফ্রস্ট বাইট হয়, জীবন বাঁচানোর জন্য সবারই দুটো করে পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। আরও কত ভয়াবহ সব গল্প শুনি। কেউ কেউ বলে, ভূমধ্যসাগরের তীরে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের যে ছেলেরা অবৈধভাবে ঢুকতে চায়, তাদের নৌকো ইচ্ছে করেই তীরে নিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। অসংখ্য ছেলে এভাবেই সাগরে ডুবে মরেছে। আর, এই চার-পাঁচ দিন আগে সাত জন বাংলাদেশের ছেলে লিবিয়া থেকে নিঃশব্দে অন্ধকারে নৌকো চড়ে যাচ্ছিল ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপে। গরমের দেশের ছেলেরা ইউরোপের শীতে কী কাপড় পরতে হয় তা কী করে জানবে! অবশ্য জানলেও ধরা যেন না পড়ে সেই চিন্তাটি প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলেই হয়তো কাপড় জামার দিকে তাকায়নি। নৌকোর মধ্যেই ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে মরে গেল! কী অপচয় জীবনের!

 

বাংলাদেশ থেকে শুধু নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত নয়, উচ্চবিত্ত লোকেরাও ইট বিছিয়ে রেখেছে বিদেশে। ফাঁক পেলেই দৌড় দেবে। লুটপাট করে নিয়ে গেলে বাকি জীবন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারবে। ধনীরা তো ভিসা নিয়ে যায়। আর গরিবের তো ভিসা জোটে না, তাই জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়।

আহ কী অপচয় জীবনের!

 

ভালো যে আমি ক্ষমতাসীনদের ভাষণ শুনি না। ভাষণে নিশ্চয়ই তারা বলেন যে বাংলাদেশকে তারা বিরাট এক ধনী দেশ বানিয়ে ফেলেছেন, জনগণের কারও কোনও অভাব নেই, অভিযোগ নেই, সকলে পরম সুখে শান্তিতে বাস করছে। ব্রিজ আর ফ্লাইওভার আর মেট্রোরেল থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে হীরের দ্যুতি। এত উন্নয়ন, উন্নয়ন এত, যে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না! এই যে উন্নত দেশে ঢুকতে গিয়ে মৃত্যু হলো বাংলাদেশের কিছু লোকের, তাহলে কি দেশের ছেলেরা আর ইউরোপে ঢুকতে চাইবে না? আলবৎ চাইবে। এবং আবারও মৃত্যু হবে হয় শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে, নয় বরফের কামড়ে, নয় ভূমধ্যসাগরে ডুবে, নয় সবজির ট্রাকে শ্বাস বন্ধ হয়ে। মানুষ কাঁদবে, দুদিন পর চোখ মুছে জীবনের ঝুঁকি নিতে তৈরি হবে আবার।

 

৩. খুব ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা নেই। আমি ঠিক জানি না তাঁরা কী রকম জীবনযাপন করেন। তবে মাঝে মাঝে যা শুনি, তা মন খারাপ করে দেয়। আজই একটি খবর পড়লাম, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি নিজের জন্মদিন পালন করেছেন ১১ হাজার এতিম শিশুকে সুস্বাদু খাবার খাইয়ে। নিজের জন্মদিন তিনি ঘটা করে তাঁর প্রাসাদেই ধনাঢ্য আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গেই উৎযাপন করতে পারতেন। এতিম গরিবদের কথা না ভাবলে তাঁকে কেউ তিরস্কার করতো না। কিন্তু তিনি গরিবের কথা ভেবেছেন, তাদের মুখে একদিনের জন্য হলেও হাসি ফুটিয়েছেন! এই মহানুভবতা খুব কম মানুষই আজকাল দেখান। তাঁকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। স্বার্থপরতার অন্ধকারে যখন পৃথিবী ছেয়ে থাকে, মানুষ যখন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে তখন কিছু দীর্ঘকায় দীপ্তিময় মানুষ আলো হাতে বেরিয়ে আসেন। তাঁরাই নিঃস্বার্থ হয়ে, উদার হয়ে, মহান হয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে রাখেন।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com