সেদিন কেউ প্রতিবাদ করেনি, আগামীতে করবে?

সৈয়দ বোরহান কবীর : আগামীকাল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল। আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর বীভৎস উন্মত্ততা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নির্বিচারে গ্রেনেড হামলা চালানো হলো। লক্ষ্য একটাই- শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া। সেদিন অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। কিন্তু আইভি রহমানসহ ২৩টি নিরীহ প্রাণ ঝরেছিল। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। এখনো পঙ্গুত্বকে বরণ করে সেই দুঃসহ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছেন বহু মানুষ। আমরা যারা ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ওই দিন যারা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের মনে অনেক প্রশ্ন। কত বীভৎস এবং হিংস্র হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ রকম একটি কান্ড ঘটাতে পারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল? পাশাপাশি আমার কাছে একটি বিষয় বিস্ময়কর মনে হয়। আওয়ামী লীগ এত বড় একটা সংগঠন। এত নেতা-কর্মী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিকভাবে যথার্থ প্রতিবাদ করতে পেরেছিল? ঘটনার পরদিন আওয়ামী লীগ একটি হরতাল ডেকেছিল। আমার মতো অনেকেই ভেবেছিল এ ঘটনার পর গণঅভ্যুত্থান হবে। দেশ অচল হয়ে যাবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে এভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় নির্মূলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ গণজোয়ার তৈরি করবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আক্রান্ত। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। তাঁর মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্য নেতারা রাজপথে নেমে আসবেন। সবকিছু অচল করে দেবেন। কিন্তু কোথায় কী? নেতারা বিভ্রান্ত। কর্মীরা সাহসী কর্মসূচির জন্য তাকিয়ে থাকলেন। ২০০৪ সালের ঘটনার পর, আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়সারা ভাব আমাকে অবাক করেছিল। সেদিন যদি বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য পূরণ হতো তাহলে আওয়ামী লীগ কী করত? আওয়ামী লীগ কি প্রতিবাদ করতে পারত? প্রতিরোধ করতে পারত?

 

২১ আগস্ট এলেই বারবার এ প্রশ্নটা আমাকে বিদ্ধ করে। এ ভাবনার যোগসূত্র পাচ্ছি কয়েক বছর ধরে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ১৯৭৫-এ প্রতিবাদহীন, প্রতিরোধহীন আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

 

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় পরদিন ১৬ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সরাসরি উপস্থিতি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে কর্মীরা উদীপ্ত হয়েছেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে আবার শেখ হাসিনা তাঁর আক্ষেপের কথা বললেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় কেন প্রতিবাদ হয়নি? জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন। কোথায় ছিলেন তারা? একটি মানুষও ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার! একটি মানুষও ছিল না প্রতিবাদ করার! কেন করতে পারেনি?’ শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় সংগঠন। এত লোক। কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি। কত সেøাগান- ‘বঙ্গবন্ধু তুমি আছ যেখানে আমরা আছি সেখানে। অমুক তমুক অনেক সেøাগান। ছিল কোথায় সেই মানুষগুলো? বেঁচে থাকতে সবাই থাকে। মরে গেলে কেউ থাকে না।’ 

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দার্শনিক চিন্তাপ্রসূত। নির্মম বাস্তবতার উপলব্ধি। আওয়ামী লীগ নিয়ে এ প্রশ্নগুলো তিন বছর ধরেই বঙ্গবন্ধুকন্যা করছেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, কাপুরুষতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক রহস্যময় অধ্যায়। ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর নিথর রক্তাক্ত দেহ যখন পড়ে আছে, তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য ছুটে গেলেন বঙ্গভবনে শপথ নিতে! খুনি মোশতাকের ক্রীতদাস হয়ে তাঁরা যেন ধন্য হয়েছিলেন। আমলারা খুনি সরকারের আনুগত্য স্বীকার করলেন। কী বিচিত্র! বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র তিন দিন আগে খুনি মোশতাক বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে প্রয়োজনে জীবন দেব।’ খুনির আরেক সহচর তাহের উদ্দিন ঠাকুর বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রয়োজনে জীবন দেব।’ কিন্তু এসব নেতাই ইতিহাসে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে নিজেদের নাম লিখিয়েছিলেন। সিনিয়র নেতারা যাঁরা খুনির মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি তাঁরাও ছিলেন নীরব। প্রতিবাদহীন। কর্মীদের রাস্তায় নামার নির্দেশটুকুও তাঁরা দিতে পারেননি। জাতীয় চার নেতাও গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রতিরোধের ডাক দিতে পারেননি। ১৭ আগস্ট খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। শফিউল্লাহ ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে খুনি মোশতাকের পদলেহন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিদায়ী একান্ত সচিব ফরাসউদ্দিন আহমেদ মোশতাকের এনওসি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন। এসব কি সবাই ভয়ে করেছেন? আমার তা মনে হয় না। এঁদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকও ছিলেন। সুবিধাবাদী ছিলেন। ছিলেন সুযোগসন্ধানী। কেন আওয়ামী লীগের নেতারা ’৭৫-এর সংকটে রুখে দাঁড়াতে পারেননি? সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এ বক্তব্য একটু গভীর পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুধু ’৭৫ কেন, যে-কোনো সংকটেই আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক নেতা বিভ্রান্ত হন। যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। ১৯৫৭ সালের মার্চে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ ত্যাগ করেন। ওই বছরের ২৫-২৬ জুলাই ভাসানীর উদ্যোগে ঢাকায় একটি গণতান্ত্রিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) আত্মপ্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়। মওলানা ভাসানীর ওই সিদ্ধান্তের বিচার ইতিহাস করেছে। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই সে সময় নিষ্ক্রিয়তার ভ্রান্তিতে আক্রান্ত হন। আওয়ামী লীগের ত্রাতা হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৪ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় দল পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত হয়। পুনরুজ্জীবিত দলে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বহাল থাকেন। ওই বছরের ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকার ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে মাওলানা তর্কবাগীশ এবং শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন। কিন্তু ছয় দফা নিয়ে বিভ্রান্ত হন মাওলানা তর্কবাগীশ। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা উত্থাপন করেন। ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা আহ্বান করেন। ১৯৬৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্কিং কমিটির সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করেন জাতির পিতা। কিন্তু সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এর বিরোধিতা করেন। তিনি তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে সভা ত্যাগ করেন। এ বিভ্রান্তি তর্কবাগীশকে রাজনীতির মূলধারা থেকেই ছিটকে দিয়েছিল। ওই বৈঠকে ছয় দফা অনুমোদিত হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ছয় দফা আবারও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। ওই কাউন্সিলেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

 

১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু জেল গেটেই আবার গ্রেফতার হন। এরপর শুরু হয় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়। ১৯ জুন, ১৯৬৮ সালে ক্যান্টনমেন্টের সামরিক আদালতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়। এ সময়ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিভ্রান্তিবিলাসে আক্রান্ত হন। তাঁরা প্রতিবাদহীন, প্রতিরোধহীন ছিলেন। আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। ছাত্রসমাজের উদ্যোগে ১৯৬৯ সালে ১১ দফা প্রণীত হয়। ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফার ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালে গড়ে ওঠে দুর্বার ছাত্র আন্দোলন। এ সময় আন্দোলন থামাতে আইয়ুব খান রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে- এ ঘোষণায় আপসকামী হন। তাঁরা গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু বেগম মুজিব প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এখানেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সংকটে সাহসী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

 

’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ই খুনি মোশতাক পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। মুজিবনগর সরকারেই বিশ্বাসঘাতকতার বীজ বপিত হয়েছিল।

 

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশে আসার পর বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভ্রান্তি, পথভ্রষ্টতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা দেখা গেছে বারবার বিভিন্ন সংকটে। যে কোরবান আলী খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি, তিনিই এরশাদের হালুয়া-রুটির লোভ সংবরণ করতে পারেননি। আবদুর রাজ্জাক দল ভেঙে কার স্বার্থ উদ্ধার করেছিলেন? কোন সংকটে অন্য নেতারা দাঁড়াতে পারেননি বুক চিড়ে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৭ সালের এক-এগারোর সংকটটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ যেমন প্রতিরোধ করতে পারেনি, তেমনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা, কাপুরুষতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিল ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময়। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে শারীরিকভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ২০০৭ সালে রাজনৈতিকভাবে তাঁকে হত্যার নীলনকশার প্রণয়ন করা হয়। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার অধিকাংশই সংস্কারপন্থি হয়ে গেলেন। শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার জন্য ফতোয়া দিলেন। শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রঙিন স্বপ্নে বিভোর হলেন।

 

’৭৫-এ খুনি মোশতাকের অনুগত হয়ে যাঁরা বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছিলেন আর ২০০৭ সালে যাঁরা সংস্কার সংস্কার বলে মাতম তুলেছিলেন- এ দুইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?

 

’৭৫-এ যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন প্রতিবাদহীন। অনেকেই কাপুরুষের মতো আচরণ করেছিলেন। অনেকেই বিদেশে নিরাপদে থেকেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেননি।

 

’৭৫-এ আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা যা করেছেন, ২০০৭ সালেও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা একই কাজ করেন। আগামীতে যদি আবার কখনো আওয়ামী লীগ সংকটে পড়ে তাহলে বিভ্রান্ত, ভীরু এবং পলায়নপর নেতাদের পাল্লাই ভারী হবে। তৃণমূলের কর্মীরা ’৭৫-এর মতো নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবেন। কিন্তু নেতারা তখন এতটুকু সাহসের পরিচয় দিতে পারবেন না। শেখ হাসিনাও এটা ভালো করেই জানেন। এজন্যই ১৬ আগস্টের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আমি কারও কাছে কিছু আশা করি না’। ’৭৫ কিংবা ২০০৭ সালের সংকটের পর আওয়ামী লীগের মহাগুরুত্বপূর্ণ নেতারা চুপচাপ পাথরের মূর্তির মতো বসে ছিলেন। দুই ক্ষেত্রেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত ছিল। ’৭৫-এর ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে একান্ত অনুগত নেতাদের হাত ছিল। তাঁরা ষড়যন্ত্রে অংশ ছিলেন। একইভাবে এক-এগারোর অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় বসার সিঁড়ি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর একান্ত অনুগত কিছু নেতা। যাঁদের তিনি তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে বেশি দিয়েছিলেন। এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকাও কম নয়। শঙ্কাটা এখানেই। কিছু একটা হয়ে গেলে কেউ আসবে না। কিন্তু কিছু একটা ঘটানোর প্রেক্ষাপট যেন তৈরি না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সজাগ থাকতে হবে। ঘটার পর কী হবে ভাবনার চেয়ে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টাই সঠিক পথ। শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ এ ষড়যন্ত্র কি কেবল আওয়ামী লীগের বাইরে থেকেই হচ্ছে? ইতিহাস বলে, ঘরের বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে কখনো পরাজিত করা যায়নি। তাই যাঁরা ষড়যন্ত্র করছেন তাঁরা আওয়ামী লীগের লোভাতুরদের টোপ দেবেন না তা তো হয় না। ’৭৫-এ যেমন খুনি মোশতাক এবং তার চক্র ২০০৭-এ যেমন সংস্কারপন্থিরা ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন, তেমনি এখনো যে কেউ ষড়যন্ত্রের অংশ নন তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারে?

 

’৭৫-এ যাঁরা বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কাছে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা স্তুতি আর চাটুকারিতা করতেন। যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ছিলেন তাঁরাই ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিলেন। ২০০৭ সালেও একই ঘটনা। শেখ হাসিনার বদান্যতায় যাঁরা উড়ে এসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দয়ায় যাঁরা ‘রাজনৈতিক সচিব’-এর মতো বিশাল পদ পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা যাঁদের নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁরাই তাঁকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার কুৎসিত খেলায় মেতে ছিলেন। তাই এখন সরকারে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করেন। যাঁরা কারণে-অকারণে শেখ হাসিনার বন্দনায় গলা ফাটান। যাঁরা উড়ে এসে জুড়ে বসেই বড় পদপদবি পেয়েছেন। যাঁরা এক ধাক্কায় বেহেশতের মতো মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন এঁদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এঁরাই ষড়যন্ত্রকারী। এঁদের নাদুসনুদুস চেহারা আর হাবভাব দেখলেই বোঝা যায় লোভের ক্ষুধা এখনো মেটেনি। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সরকারি একান্ত সচিব উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছিলেন। তিনি কি জানতেন কিছু একটা হচ্ছে? এ আমলেও প্রধানমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে চাকরি হাতিয়ে নিচ্ছেন। কেন? কোনো সংকেত পেয়েছেন? ’৭৫-এর বাণিজ্যমন্ত্রী মোশতাক বড্ড বেশি কথা বলতেন। বেশি কথা বলতেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম, কে এম ওবায়দুর রহমান। বেশি কথা বলে এঁরা জনগণকে বিরক্ত করতেন। সরকারকে বিব্রত করতেন। বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতেন। এখনো সরকারের কিছু মন্ত্রী যেন সেই একই খেলায় মেতেছেন।

 

‘খেলা হবে’ ‘খেলা হবে’ বলে চিৎকার করে কাকে ইশারা করা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী যখন বলছেন ‘বিরোধী দলকে ডিস্টার্ব’ না করতে তখন যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন কারা? কী উদ্দেশ্যে? আওয়ামী লীগ-বিএনপির দাঙ্গা লাগিয়ে এরা কি আরেকটা এক-এগারো আনতে চান? এখন যাঁরা ‘বেহেশত, খায়া ফালান’-এর মতো কথা বলছেন, পাড়ার মাস্তানের মতো বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রদের এবং রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে টিটকারী করছেন, শাসাচ্ছেন- এঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু কিছু মন্ত্রী ইদানীং বেসামাল কথাবার্তা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন। সরকারকে বিব্রত করছেন। অহেতুক জনমনে বিরক্তি সৃষ্টি ষড়যন্ত্রের অংশ কি না খতিয়ে দেখা দরকার। আওয়ামী লীগের এক নেতা হঠাৎ ‘জেলে যাব, পালাব না’ বলে জাতিকে কী বার্তা দিলেন? আমলারা এখন পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন কেন? জাতীয় শোক দিবসের বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধুর ছবি উধাও হয়ে যাচ্ছে কোন মন্ত্রীর ইশারায়? এঁদের থেকে আওয়ামী লীগ ও জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। দায়িত্বের বাইরে অযাচিত কথা বলা এসব অযোগ্যই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আঁতাত করেন। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ভিতরের লোকদের সহযোগিতা ছাড়া কিছুতেই সফল হবে না। ইদানীং এঁদের লাফঝাঁপ বড় বেড়েছে। এঁরা যখন বেশি কথা বলেন তখন সন্দেহ হয় এ বাচালরাই কি সর্বনাশের সুড়ঙ্গ খুঁড়ছেন? ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দরকার মানবপ্রাচীর। মোহাম্মদ হানিফের মতো নেতারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মানবপ্রাচীর গড়েই শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছিলেন। এখন সত্যিকারের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মানবপ্রাচীর গড়তে হবে। শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাখা চাটুকার, লোভী, স্বার্থপর এবং বাচালদের অর্গল ভাঙতে হবে। তাঁকে আসল তথ্যগুলো দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সত্যিকারের নেতা-কর্মী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সাধারণ মানুষের জন্য শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ নেই। কিছু নেই।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

[email protected]       সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ডিবির মশিউর সাময়িক বরখাস্ত

» মোটরসাইকেলে চালকসহ দুইজনের বেশি বহন না করার নির্দেশ

» ইসলামী শাসনব্যবস্থা ছাড়া বৈষম্য দূর হবে না : মামুনুল হক

» নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে বিদেশি অংশীজনরা অপেক্ষা করছে : খসরু

» বিস্ফোরক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

» তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি

» রাশিয়ার নতুন ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চলবে: পুতিন

» গুজব প্রতিরোধে সহায়তা চায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

» পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত

» এআই নিয়ে কাজ করবে গ্রামীণফোন ও এরিকসন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সেদিন কেউ প্রতিবাদ করেনি, আগামীতে করবে?

সৈয়দ বোরহান কবীর : আগামীকাল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল। আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর বীভৎস উন্মত্ততা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নির্বিচারে গ্রেনেড হামলা চালানো হলো। লক্ষ্য একটাই- শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া। সেদিন অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। কিন্তু আইভি রহমানসহ ২৩টি নিরীহ প্রাণ ঝরেছিল। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। এখনো পঙ্গুত্বকে বরণ করে সেই দুঃসহ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছেন বহু মানুষ। আমরা যারা ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ওই দিন যারা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের মনে অনেক প্রশ্ন। কত বীভৎস এবং হিংস্র হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ রকম একটি কান্ড ঘটাতে পারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল? পাশাপাশি আমার কাছে একটি বিষয় বিস্ময়কর মনে হয়। আওয়ামী লীগ এত বড় একটা সংগঠন। এত নেতা-কর্মী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিকভাবে যথার্থ প্রতিবাদ করতে পেরেছিল? ঘটনার পরদিন আওয়ামী লীগ একটি হরতাল ডেকেছিল। আমার মতো অনেকেই ভেবেছিল এ ঘটনার পর গণঅভ্যুত্থান হবে। দেশ অচল হয়ে যাবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে এভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় নির্মূলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ গণজোয়ার তৈরি করবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আক্রান্ত। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। তাঁর মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্য নেতারা রাজপথে নেমে আসবেন। সবকিছু অচল করে দেবেন। কিন্তু কোথায় কী? নেতারা বিভ্রান্ত। কর্মীরা সাহসী কর্মসূচির জন্য তাকিয়ে থাকলেন। ২০০৪ সালের ঘটনার পর, আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়সারা ভাব আমাকে অবাক করেছিল। সেদিন যদি বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য পূরণ হতো তাহলে আওয়ামী লীগ কী করত? আওয়ামী লীগ কি প্রতিবাদ করতে পারত? প্রতিরোধ করতে পারত?

 

২১ আগস্ট এলেই বারবার এ প্রশ্নটা আমাকে বিদ্ধ করে। এ ভাবনার যোগসূত্র পাচ্ছি কয়েক বছর ধরে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ১৯৭৫-এ প্রতিবাদহীন, প্রতিরোধহীন আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

 

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় পরদিন ১৬ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সরাসরি উপস্থিতি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে কর্মীরা উদীপ্ত হয়েছেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে আবার শেখ হাসিনা তাঁর আক্ষেপের কথা বললেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় কেন প্রতিবাদ হয়নি? জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন। কোথায় ছিলেন তারা? একটি মানুষও ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার! একটি মানুষও ছিল না প্রতিবাদ করার! কেন করতে পারেনি?’ শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় সংগঠন। এত লোক। কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি। কত সেøাগান- ‘বঙ্গবন্ধু তুমি আছ যেখানে আমরা আছি সেখানে। অমুক তমুক অনেক সেøাগান। ছিল কোথায় সেই মানুষগুলো? বেঁচে থাকতে সবাই থাকে। মরে গেলে কেউ থাকে না।’ 

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দার্শনিক চিন্তাপ্রসূত। নির্মম বাস্তবতার উপলব্ধি। আওয়ামী লীগ নিয়ে এ প্রশ্নগুলো তিন বছর ধরেই বঙ্গবন্ধুকন্যা করছেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, কাপুরুষতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক রহস্যময় অধ্যায়। ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর নিথর রক্তাক্ত দেহ যখন পড়ে আছে, তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য ছুটে গেলেন বঙ্গভবনে শপথ নিতে! খুনি মোশতাকের ক্রীতদাস হয়ে তাঁরা যেন ধন্য হয়েছিলেন। আমলারা খুনি সরকারের আনুগত্য স্বীকার করলেন। কী বিচিত্র! বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র তিন দিন আগে খুনি মোশতাক বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে প্রয়োজনে জীবন দেব।’ খুনির আরেক সহচর তাহের উদ্দিন ঠাকুর বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রয়োজনে জীবন দেব।’ কিন্তু এসব নেতাই ইতিহাসে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে নিজেদের নাম লিখিয়েছিলেন। সিনিয়র নেতারা যাঁরা খুনির মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি তাঁরাও ছিলেন নীরব। প্রতিবাদহীন। কর্মীদের রাস্তায় নামার নির্দেশটুকুও তাঁরা দিতে পারেননি। জাতীয় চার নেতাও গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রতিরোধের ডাক দিতে পারেননি। ১৭ আগস্ট খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। শফিউল্লাহ ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে খুনি মোশতাকের পদলেহন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিদায়ী একান্ত সচিব ফরাসউদ্দিন আহমেদ মোশতাকের এনওসি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন। এসব কি সবাই ভয়ে করেছেন? আমার তা মনে হয় না। এঁদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকও ছিলেন। সুবিধাবাদী ছিলেন। ছিলেন সুযোগসন্ধানী। কেন আওয়ামী লীগের নেতারা ’৭৫-এর সংকটে রুখে দাঁড়াতে পারেননি? সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এ বক্তব্য একটু গভীর পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুধু ’৭৫ কেন, যে-কোনো সংকটেই আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক নেতা বিভ্রান্ত হন। যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। ১৯৫৭ সালের মার্চে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ ত্যাগ করেন। ওই বছরের ২৫-২৬ জুলাই ভাসানীর উদ্যোগে ঢাকায় একটি গণতান্ত্রিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) আত্মপ্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়। মওলানা ভাসানীর ওই সিদ্ধান্তের বিচার ইতিহাস করেছে। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই সে সময় নিষ্ক্রিয়তার ভ্রান্তিতে আক্রান্ত হন। আওয়ামী লীগের ত্রাতা হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৪ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় দল পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত হয়। পুনরুজ্জীবিত দলে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বহাল থাকেন। ওই বছরের ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকার ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে মাওলানা তর্কবাগীশ এবং শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন। কিন্তু ছয় দফা নিয়ে বিভ্রান্ত হন মাওলানা তর্কবাগীশ। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা উত্থাপন করেন। ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা আহ্বান করেন। ১৯৬৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্কিং কমিটির সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করেন জাতির পিতা। কিন্তু সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এর বিরোধিতা করেন। তিনি তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে সভা ত্যাগ করেন। এ বিভ্রান্তি তর্কবাগীশকে রাজনীতির মূলধারা থেকেই ছিটকে দিয়েছিল। ওই বৈঠকে ছয় দফা অনুমোদিত হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ছয় দফা আবারও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। ওই কাউন্সিলেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

 

১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু জেল গেটেই আবার গ্রেফতার হন। এরপর শুরু হয় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়। ১৯ জুন, ১৯৬৮ সালে ক্যান্টনমেন্টের সামরিক আদালতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়। এ সময়ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিভ্রান্তিবিলাসে আক্রান্ত হন। তাঁরা প্রতিবাদহীন, প্রতিরোধহীন ছিলেন। আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। ছাত্রসমাজের উদ্যোগে ১৯৬৯ সালে ১১ দফা প্রণীত হয়। ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফার ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালে গড়ে ওঠে দুর্বার ছাত্র আন্দোলন। এ সময় আন্দোলন থামাতে আইয়ুব খান রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে- এ ঘোষণায় আপসকামী হন। তাঁরা গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু বেগম মুজিব প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এখানেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সংকটে সাহসী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

 

’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ই খুনি মোশতাক পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। মুজিবনগর সরকারেই বিশ্বাসঘাতকতার বীজ বপিত হয়েছিল।

 

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশে আসার পর বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভ্রান্তি, পথভ্রষ্টতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা দেখা গেছে বারবার বিভিন্ন সংকটে। যে কোরবান আলী খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি, তিনিই এরশাদের হালুয়া-রুটির লোভ সংবরণ করতে পারেননি। আবদুর রাজ্জাক দল ভেঙে কার স্বার্থ উদ্ধার করেছিলেন? কোন সংকটে অন্য নেতারা দাঁড়াতে পারেননি বুক চিড়ে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৭ সালের এক-এগারোর সংকটটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ যেমন প্রতিরোধ করতে পারেনি, তেমনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা, কাপুরুষতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিল ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময়। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে শারীরিকভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ২০০৭ সালে রাজনৈতিকভাবে তাঁকে হত্যার নীলনকশার প্রণয়ন করা হয়। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার অধিকাংশই সংস্কারপন্থি হয়ে গেলেন। শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার জন্য ফতোয়া দিলেন। শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রঙিন স্বপ্নে বিভোর হলেন।

 

’৭৫-এ খুনি মোশতাকের অনুগত হয়ে যাঁরা বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছিলেন আর ২০০৭ সালে যাঁরা সংস্কার সংস্কার বলে মাতম তুলেছিলেন- এ দুইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?

 

’৭৫-এ যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন প্রতিবাদহীন। অনেকেই কাপুরুষের মতো আচরণ করেছিলেন। অনেকেই বিদেশে নিরাপদে থেকেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেননি।

 

’৭৫-এ আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা যা করেছেন, ২০০৭ সালেও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা একই কাজ করেন। আগামীতে যদি আবার কখনো আওয়ামী লীগ সংকটে পড়ে তাহলে বিভ্রান্ত, ভীরু এবং পলায়নপর নেতাদের পাল্লাই ভারী হবে। তৃণমূলের কর্মীরা ’৭৫-এর মতো নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবেন। কিন্তু নেতারা তখন এতটুকু সাহসের পরিচয় দিতে পারবেন না। শেখ হাসিনাও এটা ভালো করেই জানেন। এজন্যই ১৬ আগস্টের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আমি কারও কাছে কিছু আশা করি না’। ’৭৫ কিংবা ২০০৭ সালের সংকটের পর আওয়ামী লীগের মহাগুরুত্বপূর্ণ নেতারা চুপচাপ পাথরের মূর্তির মতো বসে ছিলেন। দুই ক্ষেত্রেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত ছিল। ’৭৫-এর ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে একান্ত অনুগত নেতাদের হাত ছিল। তাঁরা ষড়যন্ত্রে অংশ ছিলেন। একইভাবে এক-এগারোর অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় বসার সিঁড়ি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর একান্ত অনুগত কিছু নেতা। যাঁদের তিনি তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে বেশি দিয়েছিলেন। এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকাও কম নয়। শঙ্কাটা এখানেই। কিছু একটা হয়ে গেলে কেউ আসবে না। কিন্তু কিছু একটা ঘটানোর প্রেক্ষাপট যেন তৈরি না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সজাগ থাকতে হবে। ঘটার পর কী হবে ভাবনার চেয়ে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টাই সঠিক পথ। শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ এ ষড়যন্ত্র কি কেবল আওয়ামী লীগের বাইরে থেকেই হচ্ছে? ইতিহাস বলে, ঘরের বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে কখনো পরাজিত করা যায়নি। তাই যাঁরা ষড়যন্ত্র করছেন তাঁরা আওয়ামী লীগের লোভাতুরদের টোপ দেবেন না তা তো হয় না। ’৭৫-এ যেমন খুনি মোশতাক এবং তার চক্র ২০০৭-এ যেমন সংস্কারপন্থিরা ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন, তেমনি এখনো যে কেউ ষড়যন্ত্রের অংশ নন তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারে?

 

’৭৫-এ যাঁরা বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কাছে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা স্তুতি আর চাটুকারিতা করতেন। যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ছিলেন তাঁরাই ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিলেন। ২০০৭ সালেও একই ঘটনা। শেখ হাসিনার বদান্যতায় যাঁরা উড়ে এসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দয়ায় যাঁরা ‘রাজনৈতিক সচিব’-এর মতো বিশাল পদ পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা যাঁদের নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁরাই তাঁকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার কুৎসিত খেলায় মেতে ছিলেন। তাই এখন সরকারে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করেন। যাঁরা কারণে-অকারণে শেখ হাসিনার বন্দনায় গলা ফাটান। যাঁরা উড়ে এসে জুড়ে বসেই বড় পদপদবি পেয়েছেন। যাঁরা এক ধাক্কায় বেহেশতের মতো মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন এঁদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এঁরাই ষড়যন্ত্রকারী। এঁদের নাদুসনুদুস চেহারা আর হাবভাব দেখলেই বোঝা যায় লোভের ক্ষুধা এখনো মেটেনি। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সরকারি একান্ত সচিব উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছিলেন। তিনি কি জানতেন কিছু একটা হচ্ছে? এ আমলেও প্রধানমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে চাকরি হাতিয়ে নিচ্ছেন। কেন? কোনো সংকেত পেয়েছেন? ’৭৫-এর বাণিজ্যমন্ত্রী মোশতাক বড্ড বেশি কথা বলতেন। বেশি কথা বলতেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম, কে এম ওবায়দুর রহমান। বেশি কথা বলে এঁরা জনগণকে বিরক্ত করতেন। সরকারকে বিব্রত করতেন। বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতেন। এখনো সরকারের কিছু মন্ত্রী যেন সেই একই খেলায় মেতেছেন।

 

‘খেলা হবে’ ‘খেলা হবে’ বলে চিৎকার করে কাকে ইশারা করা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী যখন বলছেন ‘বিরোধী দলকে ডিস্টার্ব’ না করতে তখন যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন কারা? কী উদ্দেশ্যে? আওয়ামী লীগ-বিএনপির দাঙ্গা লাগিয়ে এরা কি আরেকটা এক-এগারো আনতে চান? এখন যাঁরা ‘বেহেশত, খায়া ফালান’-এর মতো কথা বলছেন, পাড়ার মাস্তানের মতো বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রদের এবং রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে টিটকারী করছেন, শাসাচ্ছেন- এঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু কিছু মন্ত্রী ইদানীং বেসামাল কথাবার্তা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন। সরকারকে বিব্রত করছেন। অহেতুক জনমনে বিরক্তি সৃষ্টি ষড়যন্ত্রের অংশ কি না খতিয়ে দেখা দরকার। আওয়ামী লীগের এক নেতা হঠাৎ ‘জেলে যাব, পালাব না’ বলে জাতিকে কী বার্তা দিলেন? আমলারা এখন পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন কেন? জাতীয় শোক দিবসের বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধুর ছবি উধাও হয়ে যাচ্ছে কোন মন্ত্রীর ইশারায়? এঁদের থেকে আওয়ামী লীগ ও জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। দায়িত্বের বাইরে অযাচিত কথা বলা এসব অযোগ্যই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আঁতাত করেন। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ভিতরের লোকদের সহযোগিতা ছাড়া কিছুতেই সফল হবে না। ইদানীং এঁদের লাফঝাঁপ বড় বেড়েছে। এঁরা যখন বেশি কথা বলেন তখন সন্দেহ হয় এ বাচালরাই কি সর্বনাশের সুড়ঙ্গ খুঁড়ছেন? ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দরকার মানবপ্রাচীর। মোহাম্মদ হানিফের মতো নেতারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মানবপ্রাচীর গড়েই শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছিলেন। এখন সত্যিকারের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মানবপ্রাচীর গড়তে হবে। শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাখা চাটুকার, লোভী, স্বার্থপর এবং বাচালদের অর্গল ভাঙতে হবে। তাঁকে আসল তথ্যগুলো দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সত্যিকারের নেতা-কর্মী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সাধারণ মানুষের জন্য শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ নেই। কিছু নেই।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

[email protected]       সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com