সন্তান জন্মে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিজারিয়ান ডেলিভারিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। পরিবর্তনের এই যুগে প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান জন্ম দেয়ার ব্যাপারটা খুব কমই হয়ে থাকে। কিন্তু সিজারের পর কী হয়, এই ব্যাপারে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। সিজারে সন্তান জন্ম দেয়ার পর অনেক দিকে সাবধানতা বাড়াতে হয়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সিজার করানোর ব্যাপারে দরকারি কিছু তথ্য-
. সিজার করে সন্তান জন্ম দিলে চার দিনের মতো হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। অনেক মা-ই জানেন না যে সিজার করানোর পরেও যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হয়। তবে এই রক্তপাতের পরিমাণ হবে সীমিত। খুব বেশি রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্গন্ধ এবং গাঢ় রঙের রক্ত যাচ্ছে কি না সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে, কারণ এগুলো ইনফেকশনের লক্ষণ।
. সিজার করানোর পর মাকে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হয়। তা ঠিকমতো খাওয়ানো হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে মা এবং তার পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে।
. সিজারের পরের দিন পা ফুলে যায়। এক্ষেত্রে ঘুমানোর সময় বা শুয়ে থাকার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। তাহলে পা ফোলা কমে যাবে।
. এর তিন দিনের মধ্যে বুকের দুধ না খাওয়ালে স্তনে চাকা চাকা অনুভূত হয় এবং ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে তোয়ালে গরম করে সেঁক দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও দুধ বাচ্চাকে না দিলে বের করে ফেলে দিতে হবে।
. আরেকটি ব্যাপার যা অনেক মা-ই জানেন না, তা হলো বুকের দুধ ফিডারে রেখে খাওয়ানো। মায়ের দুধ ফিডারে করে ফ্রিজে রেখে দিলে তা বাচ্চাকে দেয়া যাবে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এক্ষেত্রে এই দুধ চুলায় বা ওভেনে গরম করে দেয়া যাবেনা। গরম পানিতে ফিডার রেখে এই দুধ গরম করে দিতে হবে।
সিজারের পর আরো কিছু বিষয় লক্ষণীয়
ক্যাথেটার
সিজার করানোর পর রোগীকে ক্যাথেটার ব্যবহার করা লাগতে পারে। এটা শুধু প্রথম দিনেই রাখা হয়। পরের দিন খুলে ফেলা হয়। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
সেলাইয়ের দাগ :সিজারে সেলাইয়ের দাগ থেকে যায় অনেকদিন বা অনেক বছর পর্যন্ত। তবে সময়ের সাথে তা অনেক হালকা হয়ে যায়, আগের মতো উঁচুও হয়ে থাকেনা। অপারেশনের পর এই কাটা দাগ শুকাতে দিতে হবে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ। পুরো শুকিয়ে গেলে তারপরেই দাগ দূর করার জন্য তেল মালিশ বা দাগ দূর করার ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
অপারেশনের পর টয়লেটের কাজ সারা: এটা বেশ বড়সড় একটা অপারেশন সুতরাং অনেকেই এই অপারেশনের পর টয়লেটের কাজ সারতে ভয় পান। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রয়োজন হলে ডাক্তার কিছু ওষুধ দেবেন যা সহজে টয়লেটের কাজ সারতে সাহায্য করবে।
হাঁটাচলা:সিজারের পর রক্ত জমাট বাঁধার ভয় থাকে। তাই এর থেকে রক্ষা পেতে সিজারের পরের দিন থেকেই হালকা হাঁটাচলা করা ভালো।
শরীরে কাঁপুনি:শরীর থেকে অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাব কেটে যাবার সময়ে অনেকের কাঁপুনি দেখা যায়। শরীরের নিচের অংশে বিশেষ করে পায়ে অসাড়তা অনুভব হতে পারে। তবে কয়েক ঘন্টার মাঝে এই অনুভুতি কেটে যাবে।
রক্তপাত: প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম না হলেও রক্তপাত হবেই। একে বলা হয় পোস্টপারটাম ব্লিডিং। এটা খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।
ভারী কাজ নিষেধ: প্রথম ২ থেকে ৩ সপ্তাহ বাচ্চার চেয়ে ভারী কিছু তোলা যাবেনা । ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ ব্যায়াম বন্ধ রাখতে হবে। আর সেই সাথে শারীরিক সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে প্রথম ছয় সপ্তাহ।
হাঁচি-কাশিতে ব্যথা হতে পারে:সার্জারির পর হাঁচি-কাশি দিতে গেলে পেটে ব্যথা লাগতে পারে। এ সময়ে পেটের ওপর বালিশ চেপে ধরে রাখলে ব্যথা কম হবে। অনেকেই এ সময়ে বেল্ট পরে থাকেন। এই বেল্টও ব্যথা কমাতে সহায়ক। প্রথম সপ্তাহে এই সমস্যা বেশি হবে। তবে পরে কমে যাবে।