ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর বন্দিদশায় যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা এবার সরাসরি জানালেন আলোচিত আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী শহিদুল আলম। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে চোখে পানি এনে দেওয়ার মতো বাস্তবতার বিবরণ দেন তিনি।]
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে দেশে ফেরেন তিনি। বিকেলে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে জানান, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর তাকে ও অন্য সহযাত্রীদের যে অবমাননা ও মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
শহিদুল আলম বলেন, জাহাজ থেকে আমাদের নামানোর পর হাত পেছনে বেঁধে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়। সেখানেই দেখি, আগেই ওই জায়গায় ইসরায়েলি সেনারা মূত্রত্যাগ করেছে। আমাদের সেই জায়গায়ই বসতে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, আমার বাংলাদেশি পাসপোর্টটি ইসরায়েলি বাহিনীর এক সদস্য ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আমি যতবার সেটা তুলতে গেছি, ততবারই তারা আমার ওপর চড়াও হয়েছে। এ সময় তার দুই সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে কথা বলায়, ইসরায়েলি বাহিনীর এক সদস্য মেশিনগানের ব্যারেল দিয়ে তাদের মারধর করে বলেও জানান তিনি।
শহিদুল আলম বলেন, আটক অবস্থায় তাদের একটি গোপন ইসরায়েলি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই কারাগারে রাখা হয় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। কারাগারে থাকা এক সহযাত্রীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, তাকে আটকের সময় ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি বলে— ‘তুমি হামাসের এজেন্ট, তোমাকে গুলি করা হবে।’
শহিদুল বলেন, ‘আমরা সেখানে অনশন করেছিলাম। প্রায় কিছুই খাইনি। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কয়েকজন পরে অল্প কিছু খেয়েছেন। আড়াই দিনে আমাদের মাত্র একবার খাবার দেওয়া হয়।’ তাদের শোয়ার জায়গা ছিল লোহার তৈরি, এবং শৌচাগারের অবস্থা ছিল ভয়াবহ।
তিনি আরও বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ করে ইসরায়েলি সেনারা মেশিনগান হাতে সেলের মধ্যে ঢুকে পড়ত। জোরে চিৎকার করত। দরজায় ধাক্কা দিত। আতঙ্ক তৈরি করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম বলেন, শুধু এটুকু বললেই হবে না, ‘এটা অন্যায়’। বরং, বিশ্বের মানুষকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, যেভাবে আমরা একসময় রাস্তায় নেমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলাম, এবার আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে সেটাই করতে হবে। বড় বড় রাষ্ট্রনায়কেরা এই কাজ করবেন না, তাই আমাদের, অ্যাকটিভিস্টদেরই সামনে আসতে হবে।
তিনি জানান, একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত তারা ইতিমধ্যে নিয়েছেন। আমরা একটা ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে রেখেছি। এবং ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আবার যাবো। এবং এবার হাজারটা জাহাজ যাবে, বলেন দৃকের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন শহিদুল আলম। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালি থেকে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর জাহাজ ‘কনশানস’-এ তিনি যুক্ত হন। জাহাজটি গাজা অভিমুখে রওনা দেয় প্রায় ১০০ জন যাত্রী নিয়ে। তবে ৯ অক্টোবর ভূমধ্যসাগরে ওই জাহাজটি ইসরায়েলি বাহিনী আটক করে এবং যাত্রীদের অপহরণ করে আশদদ বন্দরে নিয়ে যায়।
পরে তাদের ইসরায়েলের গোপন কারাগার ‘কেৎজিয়েত’-এ বন্দি রাখা হয়। দীর্ঘ চেষ্টার পর বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় তিনি তুরস্ক হয়ে দেশে ফিরে আসেন।