পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড়, নেই ক্রেতা

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় জমে ওঠতে শুরু করেছে কোরবানির হাট। এ উপলক্ষে জেলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার গবাদি পশু। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে।

 

কিন্তু বন্যার কারণে হাটে আমদানি বেশি থাকায় তুলনামূলকভাবে ক্রেতা সংকটে রয়েছে বিক্রেতারা।

 

আজ  সদর উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী পশুরহাট যাত্রাপুর ঘুরে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র দুধকুমার ও ধরলা নদীর অববাহিকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে এসেছেন পাইকারি বিক্রেতা, খামারি ও গবাদিপশু পালনকারী প্রান্তিক কৃষকরা। দেশি গরুতে বাজার ভরে গেছে। বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। কোরবানির সম্মিলিত ও একক ক্রেতাসহ জেলার বাইরে থেকে বেশ কিছু পাইকার এসেছেন। তবে ক্রেতা-সংকট থাকায় জমে উঠছে না ঐতিহ্যবাহী কোরবানির হাটটি।

 

জানা গেছে, জেলায় ছোট বড়-মিলে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা। এসব নদীর অববাহিকায় অসংখ্য চর দ্বীপ চর রয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ গবাদিপশু পালন করে থাকেন। তারা প্রতি বছর ঈদুল আজহায় তাদের পালিত গবাদিপশু বিক্রি করে সংসারের উন্নয়ন ঘটায়।

 

একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোখাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। এবার মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বিজিবির কড়া নজরদারিতে ভারতীয় গরু কম আসায় বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছিলেন তারা। কিন্তু আগাম বন্যার কারণে হাটে আমদানি অনেক বেশি থাকায় ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।

 

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার। আর প্রস্তুত আছে ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

ঝুনকার চর থেকে সদরের যাত্রাপুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত বন্যা হওয়ার কারণে হাটে গরুর আমদানি এবার অনেক বেশি। দুটি নিয়ে আসছি পাইকারও নাই, কেউ দামও বলছে না। কারণ আমাদের ওখানে এখনো সবমাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। গরুর খাদ্যের খুব সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিক্রি করতে হাটে নিয়ে আসছি।

 

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বন্যার কারণে আজ হাটে বিভিন্ন গবাদিপশুর আমদানি অনেক বেশি। আমদানি হিসেবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। আর দাম গতবারের চেয়ে একটু কম বোঝা যাচ্ছে। এই হাটে বেশিরভাগ গরু বিভিন্ন চর থেকে এসেছে।

 

যাত্রাপুর হাট ইজারাদার সেলিম মিয়া বলেন, আমাদের হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই নেই। এবার হাট জমবে কিনা তা নিয়ে দুঃশ্চিতায় আছি। তবে আরও তো সময় আছে দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।

 

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১ হাজার ৭০টি খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি। এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১লাখ ৩৪ হাজার পশু প্রস্তুত আছে। আর এখানকার চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার। বাকিপশুগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রামে প্রায় চার শতাধিক চরাঞ্চল আছে। সেখানে রয়েছে যথেষ্ট চারণভূমি প্রতিবছর এখানকার কৃষকরা ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু পালন করে থাকেন। ইতোমধ্যে কোরবানির হাট শুরু হয়ে গেছে হাট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ক্রেতার চাইতে গবাদিপশুর যে আতিথ্য সেটাই বেশি। তবে আমরা আসা করছি দেশের দূর-দূরান্তে থেকে পাইকাররা ও ক্রেতা সাধারণ আসলে এখানকার কৃষকরা তাদের গবাদিপশু সম্পন্ন বিক্রি করতে পারবেন এবং তারা লাভবান হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আইসিটিসহ উদীয়মান খাতে জাপানকে বিনিয়োগের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

» ফখরুলের আবৃত্তিতে শৈশবের স্মৃতি, বন্ধুত্বের মধুর মুহূর্ত

» সব ক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি ইসলামী আন্দোলনের

» খেলাধুলাকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে চাই : আমিনুল হক

» এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি চলাকালে হাতাহাতি ও হামলা, আহত ৯

» দ. আফ্রিকায় স্বর্ণ খনি থেকে ৬০ জনের মরদেহ উদ্ধার

» ‘পাহাড় কাটা মনিটরিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’

» ছাগলকাণ্ডের মতিউর রিমান্ডে, স্ত্রী কারাগারে

» যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনে সম্পর্ক হোঁচট খাবে না : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রোগ্রামার শাহেদা মুস্তাফিজকে নিয়ে বই

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড়, নেই ক্রেতা

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় জমে ওঠতে শুরু করেছে কোরবানির হাট। এ উপলক্ষে জেলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার গবাদি পশু। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে।

 

কিন্তু বন্যার কারণে হাটে আমদানি বেশি থাকায় তুলনামূলকভাবে ক্রেতা সংকটে রয়েছে বিক্রেতারা।

 

আজ  সদর উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী পশুরহাট যাত্রাপুর ঘুরে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র দুধকুমার ও ধরলা নদীর অববাহিকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে এসেছেন পাইকারি বিক্রেতা, খামারি ও গবাদিপশু পালনকারী প্রান্তিক কৃষকরা। দেশি গরুতে বাজার ভরে গেছে। বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। কোরবানির সম্মিলিত ও একক ক্রেতাসহ জেলার বাইরে থেকে বেশ কিছু পাইকার এসেছেন। তবে ক্রেতা-সংকট থাকায় জমে উঠছে না ঐতিহ্যবাহী কোরবানির হাটটি।

 

জানা গেছে, জেলায় ছোট বড়-মিলে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা। এসব নদীর অববাহিকায় অসংখ্য চর দ্বীপ চর রয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ গবাদিপশু পালন করে থাকেন। তারা প্রতি বছর ঈদুল আজহায় তাদের পালিত গবাদিপশু বিক্রি করে সংসারের উন্নয়ন ঘটায়।

 

একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোখাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। এবার মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বিজিবির কড়া নজরদারিতে ভারতীয় গরু কম আসায় বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছিলেন তারা। কিন্তু আগাম বন্যার কারণে হাটে আমদানি অনেক বেশি থাকায় ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।

 

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার। আর প্রস্তুত আছে ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে বাকিগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

ঝুনকার চর থেকে সদরের যাত্রাপুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত বন্যা হওয়ার কারণে হাটে গরুর আমদানি এবার অনেক বেশি। দুটি নিয়ে আসছি পাইকারও নাই, কেউ দামও বলছে না। কারণ আমাদের ওখানে এখনো সবমাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। গরুর খাদ্যের খুব সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিক্রি করতে হাটে নিয়ে আসছি।

 

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বন্যার কারণে আজ হাটে বিভিন্ন গবাদিপশুর আমদানি অনেক বেশি। আমদানি হিসেবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। আর দাম গতবারের চেয়ে একটু কম বোঝা যাচ্ছে। এই হাটে বেশিরভাগ গরু বিভিন্ন চর থেকে এসেছে।

 

যাত্রাপুর হাট ইজারাদার সেলিম মিয়া বলেন, আমাদের হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই নেই। এবার হাট জমবে কিনা তা নিয়ে দুঃশ্চিতায় আছি। তবে আরও তো সময় আছে দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।

 

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১ হাজার ৭০টি খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি। এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১লাখ ৩৪ হাজার পশু প্রস্তুত আছে। আর এখানকার চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার। বাকিপশুগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রামে প্রায় চার শতাধিক চরাঞ্চল আছে। সেখানে রয়েছে যথেষ্ট চারণভূমি প্রতিবছর এখানকার কৃষকরা ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু পালন করে থাকেন। ইতোমধ্যে কোরবানির হাট শুরু হয়ে গেছে হাট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ক্রেতার চাইতে গবাদিপশুর যে আতিথ্য সেটাই বেশি। তবে আমরা আসা করছি দেশের দূর-দূরান্তে থেকে পাইকাররা ও ক্রেতা সাধারণ আসলে এখানকার কৃষকরা তাদের গবাদিপশু সম্পন্ন বিক্রি করতে পারবেন এবং তারা লাভবান হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com