কোথায় আত্মগোপনে আছেন ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি?

পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। প্রদীপকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই লাপাত্তা তার স্ত্রী চুমকি কারণ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। প্রদীপপত্নী দেশেই কোথাও লুকিয়ে আছেন না পালিয়ে বিদেশে গেছেন তা বলতে নারাজ স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চুমকির অবস্থানের সঠিক কোনো তথ্য স্পষ্ট করতে পারছে না।

বিভিন্ন সূত্র মতে, প্রদীপ কুমার গ্রেপ্তারের পর চুমকি কারণ প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাটে এক স্বজনের বাসায় কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর থেকে তার আর হদিস মিলছে না। অনেকে ধারণা করছেন তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধপথে ভারতে পালিয়েছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রদীপপত্নীকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাকে খুঁজছি। বিভিন্ন সংস্থার কাছেও এই পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। দেশে থাকলে তাকে অবশ্যই গ্রেপ্তার হতে হবে।

চুমকির অবস্থান সম্পর্কে বাবার ভাষ্য

চুমকি কারণের কোথায় আছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা অজিত কুমার কারণ বলেন, মেয়ে কোথায় আছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে তিনি অন্য কোনো কথা বলতেও নারাজ। চুমকি কারণের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর সম্পর্কেও কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

ঘুষ-দুর্নীতিতে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। চুমকি গৃহিণী। তাঁর বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকিকেও আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি জানান, প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন।

 

দুদকের এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তার সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নানা কারণে তিনি আলোচিত হতে থাকেন।

প্রদীপ দম্পত্তির যত সম্পদ

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হলেও চুমকি তা জমা দেন ২০১৯ সালের ১২ মে। দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোল শহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে। তাঁর ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এ ব্যবসায়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অভিযোগপত্রে সাক্ষী রাখা হয়েছে ২৯ জনকে।

 

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকির নামে চট্টগ্রামের কোতোয়ালিতে জমিসহ ছয়তলা বিলাসবহুল বাড়ি। আর এই বাড়ির বিষয়ে চুমকি দুদককে জানান, ২০১৩ সালে বাড়িটি তার বাবা তাকে দান করেছেন। কিন্তু চুমকির অন্যান্য ভাই ও বোনদের তার বাবা কোনো সম্পত্তি দান করেননি। শুধু তাই নয়, ২০০৬ সালে শ্বশুরের নামে কেনেন বাড়ির জমি। এরপর ৬ তলা বহুতল ভবন গড়ে তোলেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে বাড়িটি নির্মাণ ও জমি ক্রয় করেছেন।

মামলার অগ্রগতি কতদূর

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটিতে ওসি প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও তাঁর স্ত্রী মামলার পলাতক রয়েছেন।

 

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ-চুমকির মালিকানায় থাকা প্রায় চার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। ক্রোক করা অবৈধ সম্পত্তি দুদকের কাছ থেকে বুঝে নিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেয় আদালত।

 

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটিতে গত ১৮ জানুয়ারি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ।

 

আইনজীবীদের ভাষ্য

আসামিপক্ষের আইনজীবী রতন চক্রবর্তী বলেন, ‘গত ১৫ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ১৩ জানুয়ারি আমরা হাইকোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ (এ) ধারায় অভিযোগ গঠন চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছি। এই আবেদনের সার্টিফায়েড কপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

রতন চক্রবর্তী বলেন, ‘উচ্চ আদালত এই বিষয়ে কোনো আদেশ এখনো দেননি। আমরা আসামিপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু না করার জন্য আবেদন করেছি। পরে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ না করে ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।’

 

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, পলাতক আসামির বিরুদ্ধে আদালত পুনরায় নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আর প্রদীপ দম্পত্তির ক্রোক করা সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের জিম্মায় রয়েছে। আর ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। আশা করছি সেদিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

 

২০২০ সালের গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সিনহা হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামীকাল সোমবার আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।   সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রেলের ভাড়া বাড়ানো অযৌক্তিক ও অমানবিক : গোলাম মোহাম্মদ কাদের

» ছয় দিন ধরে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস

» রাজউকের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে নতুন বিধিমালা

» ফিলিস্তিনি প্রতি বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

» যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা দায়মুক্ত হয়েছি : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

» পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সহায়তা দেবে তথ্য মন্ত্রণালয়

» নকল স্যালাইন উৎপাদনকারী একটি চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

» ভোটারবিহীন নির্বাচনে আনন্দ নেই, সৌন্দর্য্য নেই: ইসি রাশেদা

» আমি ব্রেকআপ করলাম: সুহানা খান

» লড়াইয়ের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিন, নেতাকর্মীদের রিজভী

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কোথায় আত্মগোপনে আছেন ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি?

পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। প্রদীপকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই লাপাত্তা তার স্ত্রী চুমকি কারণ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। প্রদীপপত্নী দেশেই কোথাও লুকিয়ে আছেন না পালিয়ে বিদেশে গেছেন তা বলতে নারাজ স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চুমকির অবস্থানের সঠিক কোনো তথ্য স্পষ্ট করতে পারছে না।

বিভিন্ন সূত্র মতে, প্রদীপ কুমার গ্রেপ্তারের পর চুমকি কারণ প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাটে এক স্বজনের বাসায় কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর থেকে তার আর হদিস মিলছে না। অনেকে ধারণা করছেন তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধপথে ভারতে পালিয়েছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রদীপপত্নীকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাকে খুঁজছি। বিভিন্ন সংস্থার কাছেও এই পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। দেশে থাকলে তাকে অবশ্যই গ্রেপ্তার হতে হবে।

চুমকির অবস্থান সম্পর্কে বাবার ভাষ্য

চুমকি কারণের কোথায় আছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা অজিত কুমার কারণ বলেন, মেয়ে কোথায় আছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে তিনি অন্য কোনো কথা বলতেও নারাজ। চুমকি কারণের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর সম্পর্কেও কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

ঘুষ-দুর্নীতিতে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। চুমকি গৃহিণী। তাঁর বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকিকেও আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি জানান, প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন।

 

দুদকের এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তার সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নানা কারণে তিনি আলোচিত হতে থাকেন।

প্রদীপ দম্পত্তির যত সম্পদ

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হলেও চুমকি তা জমা দেন ২০১৯ সালের ১২ মে। দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোল শহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে। তাঁর ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এ ব্যবসায়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অভিযোগপত্রে সাক্ষী রাখা হয়েছে ২৯ জনকে।

 

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকির নামে চট্টগ্রামের কোতোয়ালিতে জমিসহ ছয়তলা বিলাসবহুল বাড়ি। আর এই বাড়ির বিষয়ে চুমকি দুদককে জানান, ২০১৩ সালে বাড়িটি তার বাবা তাকে দান করেছেন। কিন্তু চুমকির অন্যান্য ভাই ও বোনদের তার বাবা কোনো সম্পত্তি দান করেননি। শুধু তাই নয়, ২০০৬ সালে শ্বশুরের নামে কেনেন বাড়ির জমি। এরপর ৬ তলা বহুতল ভবন গড়ে তোলেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে বাড়িটি নির্মাণ ও জমি ক্রয় করেছেন।

মামলার অগ্রগতি কতদূর

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটিতে ওসি প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও তাঁর স্ত্রী মামলার পলাতক রয়েছেন।

 

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ-চুমকির মালিকানায় থাকা প্রায় চার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। ক্রোক করা অবৈধ সম্পত্তি দুদকের কাছ থেকে বুঝে নিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেয় আদালত।

 

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটিতে গত ১৮ জানুয়ারি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ।

 

আইনজীবীদের ভাষ্য

আসামিপক্ষের আইনজীবী রতন চক্রবর্তী বলেন, ‘গত ১৫ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ১৩ জানুয়ারি আমরা হাইকোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ (এ) ধারায় অভিযোগ গঠন চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছি। এই আবেদনের সার্টিফায়েড কপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

রতন চক্রবর্তী বলেন, ‘উচ্চ আদালত এই বিষয়ে কোনো আদেশ এখনো দেননি। আমরা আসামিপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু না করার জন্য আবেদন করেছি। পরে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ না করে ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।’

 

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, পলাতক আসামির বিরুদ্ধে আদালত পুনরায় নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আর প্রদীপ দম্পত্তির ক্রোক করা সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের জিম্মায় রয়েছে। আর ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। আশা করছি সেদিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

 

২০২০ সালের গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সিনহা হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামীকাল সোমবার আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।   সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com