নদীতে নিষিদ্ধ জালে অবাধে নিধন করা হচ্ছে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের পোনা

ডাঃ নাসির উদ্দিন,পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি:পিরোজপুরের সন্ধ্যা, কঁচা, কালীগঙ্গা ও বলেশ্বর নদীতে নিষিদ্ধ বাঁধা জালে নির্বিচারে মারা ধারা হচ্ছে ইলিশসহ নানান প্রজাতির পোনা মাছ ও ড়িম। প্রতিদিন শত শত মন পোনা নিধন হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। এসব মাছের পোনা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১শ’ থেকে ২শ’ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এক কেজি (দুই থেকে তিনশটি) ইলিশের পোনা দেড় থেকে দুইশ টাকা উপকূলের বাসিন্দারা কিনে খায়। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা মঠবাড়িয়া উপজেলা অংশে বলেশ্বর নদের বড় মাছুয়া ইউনিয়নে কাটাখাল, পুরানোখাল, লঞ্চঘাট, তুষখালীর তুলাতলা, হোতাখাল ও বেতমোরের সাংরাইল এলাকায় নিষিদ্ধ বেন্দি ও চরগড়া জালে যেভাবে ইলিশ ও বাগদা-গলদাসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা নির্বিচারে নিধন চলছে এতে অচিরেই পিরোজপুরের মাছের ভান্ডার শূন্য হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিন কি পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন।

স্থানীয় সাধারণ জেলে ও সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, নদীতে ছোট ফাঁস জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। মৎস্য আইনে মাছের পোনা সংরক্ষণে সোয়া চার ইঞ্চির কম ফাঁস জাল ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ উল্লেখিত এলাকায় আধা ইঞ্চি থেকে পৌনে এক ইঞ্চি ফাঁস, কোথাও কোথাও মশারি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এক শ্রেণির মাছ বিক্রেতা গ্রামে, গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পোনা মাছ বিক্রি করে। যার অধিকাংশ ক্রেতা মহিলারা।

 

দেখা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী থেকে বড়মাছুয়া হয়ে খেতাছিড়া পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার বিশাল এলাকা জুড়ে নিষিদ্ধ বাধা জাল (বেন্দি জাল), গড়া ও জাল পাতা হচ্ছে। ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী, হরিণপালা, নদমূলা ও পাঙ্গাশিয়া এলাকার কঁচা নদীতে জেলেরা অবাধে বেন্দি জাল পেতে লক্ষ লক্ষ মাছের পোনা নিধন করে চলছে। নদী থেকে ধরা মাছ ট্রলারে করে ঘাটে এনে প্রকাশ্যে খোলা ‘ডাক’ দিয়ে মাছ বিক্রি করা হয়। সেখানে বিভিন্ন মাছের মধ্যে ইলিশের পোনা, ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি পাঙ্গাসের পোনাও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

 

বড়মাছুয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল আকন অভিযোগ করে বলেন, জেলেদের নিষিদ্ধ বাঁধা জালে নদীতে প্রচুর পরিমানে ইলিশের পোনা মারা পড়ছে। জেলেরা ইলিশের ছোট পোনাগুলো নদীতে ফেলে দিয়ে আসে। দেড় দুই ইঞ্চি সাইজের পোনাগুলো ঘাটে এসে প্রকাশ্যে খোলা ডাকে বিক্রি করছে।

 

মৎস্য ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, অসাধু জেলেদের মাছের পোনা নিধনের ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তাকে বারবার অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নির্মম এ নিধনযজ্ঞের কারণে প্রজননকালীন সময়ে ইলিশ রক্ষায় সরকারের গ্রহন করা সকল উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

 

মঠবাড়িয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অলিউর রহমান জানান, রমজানের কারণে আমাদের অভিযান কিছুটা ভাটা পড়েছে। শুনেছি মাছের পোনা নিধনের প্রকোপ বর্তমানে বেড়ে গেছে। শীগ্রই পোনা নিধনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারি বলেন, আমরা নিষিদ্ধ জাল আটকের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। গত একদিনে নাজিরপুরে ১০টি বেন্দি জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ভারতের মিডিয়া ‘সার্কাস’ দেখাচ্ছে- বললেন সোনাক্ষী

» দুঃখের সঙ্গে বলছি, বিনিয়োগ নিয়ে সার্কাস হচ্ছে : আমীর খসরু

» আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনরতদের শাহবাগে ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ছাত্রশিবির

» আ.লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার: তারেক রহমান

» দ্রুত সিদ্ধান্ত না আসলে সারা দেশ থেকে ঢাকা মার্চ : নাহিদ

» সরকার চাইলে ১৯ ধারায় আ. লীগ নিষিদ্ধ করতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

» আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন ছাত্র-জনতা

» বাগেরহাটে আধুনিক ‘পর্যটন মোটেল এ্যান্ড ইয়ুথ ইন উদ্বোধন   

» ইসলামপুরে ওরা ১১জন শহীদ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

» ই-ক্যাব নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলো ‘টিম ইউনাইটেড’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নদীতে নিষিদ্ধ জালে অবাধে নিধন করা হচ্ছে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের পোনা

ডাঃ নাসির উদ্দিন,পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি:পিরোজপুরের সন্ধ্যা, কঁচা, কালীগঙ্গা ও বলেশ্বর নদীতে নিষিদ্ধ বাঁধা জালে নির্বিচারে মারা ধারা হচ্ছে ইলিশসহ নানান প্রজাতির পোনা মাছ ও ড়িম। প্রতিদিন শত শত মন পোনা নিধন হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। এসব মাছের পোনা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১শ’ থেকে ২শ’ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এক কেজি (দুই থেকে তিনশটি) ইলিশের পোনা দেড় থেকে দুইশ টাকা উপকূলের বাসিন্দারা কিনে খায়। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা মঠবাড়িয়া উপজেলা অংশে বলেশ্বর নদের বড় মাছুয়া ইউনিয়নে কাটাখাল, পুরানোখাল, লঞ্চঘাট, তুষখালীর তুলাতলা, হোতাখাল ও বেতমোরের সাংরাইল এলাকায় নিষিদ্ধ বেন্দি ও চরগড়া জালে যেভাবে ইলিশ ও বাগদা-গলদাসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা নির্বিচারে নিধন চলছে এতে অচিরেই পিরোজপুরের মাছের ভান্ডার শূন্য হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিন কি পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন।

স্থানীয় সাধারণ জেলে ও সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, নদীতে ছোট ফাঁস জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। মৎস্য আইনে মাছের পোনা সংরক্ষণে সোয়া চার ইঞ্চির কম ফাঁস জাল ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ উল্লেখিত এলাকায় আধা ইঞ্চি থেকে পৌনে এক ইঞ্চি ফাঁস, কোথাও কোথাও মশারি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এক শ্রেণির মাছ বিক্রেতা গ্রামে, গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পোনা মাছ বিক্রি করে। যার অধিকাংশ ক্রেতা মহিলারা।

 

দেখা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী থেকে বড়মাছুয়া হয়ে খেতাছিড়া পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার বিশাল এলাকা জুড়ে নিষিদ্ধ বাধা জাল (বেন্দি জাল), গড়া ও জাল পাতা হচ্ছে। ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী, হরিণপালা, নদমূলা ও পাঙ্গাশিয়া এলাকার কঁচা নদীতে জেলেরা অবাধে বেন্দি জাল পেতে লক্ষ লক্ষ মাছের পোনা নিধন করে চলছে। নদী থেকে ধরা মাছ ট্রলারে করে ঘাটে এনে প্রকাশ্যে খোলা ‘ডাক’ দিয়ে মাছ বিক্রি করা হয়। সেখানে বিভিন্ন মাছের মধ্যে ইলিশের পোনা, ডিমওয়ালা গলদা চিংড়ি পাঙ্গাসের পোনাও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

 

বড়মাছুয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল আকন অভিযোগ করে বলেন, জেলেদের নিষিদ্ধ বাঁধা জালে নদীতে প্রচুর পরিমানে ইলিশের পোনা মারা পড়ছে। জেলেরা ইলিশের ছোট পোনাগুলো নদীতে ফেলে দিয়ে আসে। দেড় দুই ইঞ্চি সাইজের পোনাগুলো ঘাটে এসে প্রকাশ্যে খোলা ডাকে বিক্রি করছে।

 

মৎস্য ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, অসাধু জেলেদের মাছের পোনা নিধনের ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তাকে বারবার অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নির্মম এ নিধনযজ্ঞের কারণে প্রজননকালীন সময়ে ইলিশ রক্ষায় সরকারের গ্রহন করা সকল উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

 

মঠবাড়িয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অলিউর রহমান জানান, রমজানের কারণে আমাদের অভিযান কিছুটা ভাটা পড়েছে। শুনেছি মাছের পোনা নিধনের প্রকোপ বর্তমানে বেড়ে গেছে। শীগ্রই পোনা নিধনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারি বলেন, আমরা নিষিদ্ধ জাল আটকের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। গত একদিনে নাজিরপুরে ১০টি বেন্দি জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com